শিমুল আজাদ
মানুষের সভ্যতার কথা আমরা জানি, জানি তার নানা অগ্রগতির কথা। বাস্তববোধসম্পন্ন মানুষের কাছে কবিতা মারাত্মকভাবে অপাংক্তেয়। তারা উপায়হীনভাবে কবিতাকে অস্বীকার করে। কবিতার ভাব, ভাষাকে উপেক্ষা করে বাঁচে। তারা কোনোক্রমে অনুধাবন করতে পারে না যে, জীবনের প্রয়োজনে কবিতা কতটা জাগ্রত হতে পারে? কতটা বোধ ও সমৃদ্ধি নিয়ে জীবনের শূন্য পাতাগুলি পূর্ণ করে দিতে পারে। সভ্যতার ইতিহাস যেমন তার স্থাপত্য বিদ্যায়, ব্যবহারিক জিনিসপত্তরে, ধর্মে, কর্মে, দেব-দেবীতে তেমনি তা ভাষায় কবিতায়, শিল্পে, দার্শনিকতায়, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে। কাজেই সময়ের সচেতন প্রকাশে, সভ্যতার অগ্রগতির স্বার্থে উপরোক্ত বিষয়সমূহের নিভৃত চর্চার প্রয়োজন। এ সমস্ত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারলে ব্যক্তি পুরুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে, পিছিয়ে পড়তে বাধ্য।
প্রত্যেক সত্তাই জীবনকে ব্যয়িত করে। কেউ অসাড়তায়, কেউ সাড়তায়। কেউ মূল্যহীনে, কেউ মূল্যে। কেউ কর্মে, কেউ অকর্মে। কেউ বিশ্বাসে, কেউ অবিশ্বাসে। কেউ শব্দে, কেউ নিঃশব্দে। এভাবেই দিন চলে যায় রাত আসে। সময়ের নিঃশব্দ রূপ কারো চোখে, কারো বোধে ধরা দেয় মারাত্মক ক্ষতে, বিপর্যয়ে। তাই সময় চিন্তাকে আমরা সব কিছুর মূলে গুরুত্ব দিতে মরিয়া হয়ে উঠি। মরিয়া হয়ে ওঠাটা যৌক্তিক এবং কাজের। সময়ের নিভৃত শরীরে আমরা যারা বাস করছি এবং আছি তাদের প্রত্যেকের উচিত এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের সুষ্ঠ সমন্বয় করা নইলে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ এই সত্যে পৌঁছে কিছুই করার থাকবে না। কবিতা এই সময় চিন্তার উৎকৃষ্ট ফসল। স্ব-সময় ও স্ব-কালের ছবিটি তুলে আনতে কবিতা সর্বাগ্রে হাঁটে। কবিতা তার মূল্যবান দৃশ্যটুকু অনুভবটুকু ছেকে তুলতেই ব্যস্ততা পায়। কবিতা দেশ কাল ছাপিয়ে ব্যক্তি থেকে নৈর্ব্যক্তিক পর্যায়ে পড়ে। দেশ, জাতি, সমাজের বাইরে বসে তার যাবতীয় সীমাবদ্ধতা গুড়িয়ে হাঁটে। কবিতা সচেতনা সৃষ্টি করে। কবিতা প্রকৃত পথটি চিনিয়ে দিতে পারে। কবিতা বিষয়ে যৌক্তিকতা দান করে। কবিতা প্রকৃত উপলব্ধিকে বোঝাতে সহায়তা করে। কবিতা নানা সব উপলব্ধির জনক হয়ে ব্যক্তি থেকে নির্বিশেষ পৌঁছে। তাই কবিতার পথে হাঁটতে লাভের পরিমাণ বাড়ে; কবিতা জীবনকে সমৃদ্ধ করে। কবিতা জীবনের অসাড়তাকে হটিয়ে সারবত্ততা আনয়ন করে। কবিতা এক শক্তিশালী অনন্ত প্রাণ যার শুরু কবি ও পাঠকের হৃদয় পরিণতি বা শেষও ভবিষ্যত কবি ও পাঠকের নিকট। কবিতার জন্ম প্রকৃতিতে। উপযোগ ও প্রকৃতির প্রতিটি অণু-পরমাণুতে। মহৎ কবি ও কবিতা দুর্লভ। পৃথিবীতে ভাল জিনিসের সংখ্যা যেমন কম তদ্রুপ ভাল কবি ও কবিতার সংখ্যাও কম। পাঠককুলকে এই ভাল কবিতা ও কবিকে খুঁজে নিতে হবে আপনার চোখ দিয়ে, হৃদয় দিয়ে। অন্যের দেখানো চোখ ও হৃদয় ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে উপযোগ সৃষ্টিতে অপরাগ হতে পারে কাজেই একান্ত নিজের রুচি, চিন্তা ও বিশ্বাসের পথে হাঁটাটাই মানব মুক্তির অন্যতম উপায় বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বাগানের একটি ফুলকে দেখে তোমার যে মুগ্ধতা, আমার ক্ষেত্রে সে একই মুগ্ধতা অনুপস্থিত পাবে। তোমার ভিতরে যা যা ঘটে যাচ্ছে আমার ক্ষেত্রে অন্যান্য কিছু ঘটছে–এটিই জীবনের আসল সত্য। সভ্যতার স য় হচ্ছে সেটা। যেটা তোমার বোধে আমার বোধে ঘটে যাচ্ছে। এই ঘটে যাওয়া অনুভব, ইতিহাস, চিত্রময়তা, শব্দ ও নিঃশব্দময়তা এগুলোই শিল্পের বিষয়, শিল্পের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তাকে তুলে আনা, তাকে রূপ দেয়া, ভাষা দেয়ার কাজটি শিল্প সৃষ্টির অন্যতম উপায় বা উচ্ছ্বাস। কবিতা একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয়ের সম্পূর্ণতা দাবী করে। কবিতা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রাণের মতো নিজে নিজে সচল হয়। নিজে নিজে এক একটি দৃষ্টিকোণের পরিচয় প্রদান করে। তদ্রুপ এক একটি বোধের, ঘ্রাণের, নন্দনের, দর্শনের, জীবনের, ঘটনার, একটি রূপময়তার, এক একটি প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে কবিতা সেই আদিকাল থেকে জেগে আছে। কেবল অপেক্ষা পাঠকের মর্মে পৌঁছানো, কেবল প্রতিজ্ঞা এক একটি বোধের, ধারণার জন্য। এক একটি সংস্কৃতি, নগরের, গ্রামের-পরিবেশ প্রকৃতি বোঝার জন্য। কবিতা চিন্তন রাজ্যে অন্যতম প্রধান ঘটনা। সে চিত্রশিল্পীর আঁকা শিল্পকর্মের মতো নানা রঙের, নানা জ্যমিতিক, গাণিতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চেতনে-অবচেতনে আমরা সেই শিল্প কর্মের জ্যমিতিক, গাণিতিক বিন্যাসের নানা রূপ, নানা বিত্ত-বৈভব টের পাই। মানবের নিমগ্ন সত্তা ঘরে সে আছে একক আধিপত্য নিয়ে। ব্যক্তি হৃদয়ে, ব্যক্তি উপলব্ধিতে যা কিছু সত্য স্বভাবে, সত্য গুণে, সত্য সাহসে ভাস্বর হতে চায় তার মূলে সেই সব রঙের, বর্ণের, ধ্বনির, বৈজ্ঞানিক, জ্যমিতিক, গাণিতিক, শৈল্পীকতার নানা মিশ্রণ, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সমৃদ্ধ উদ্ভাস। কবি এ সবের মধ্যে বাঁচেন। এ সব পথেতে হাঁটেন। আর তুলে আনার চেষ্টা করেন অব্যক্ত বাসনার, কামনার দীর্ঘসূত্রিতার নানা কালের খোঁজ খবরকে। পরিণতি দান করার চেষ্টা করেন জীবন যাত্রার প্রাত্যহিক প্রচার, প্রসারকে। তাই পাঠক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কবিতার কাছে এসে লাভবান হতে পারেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের অর্থে, নানা স্বপ্ন ও কল্পনার কালকে ছুঁয়ে যতটা বাস্তবতায় সওয়ার হওয়া যায় তার সমাধান কবিতায় অনেক পূর্ব থেকে এসে গেছে। অনেক পূর্বেই কবিতা জীবনের অনিবার্য ঘটনা-দুর্ঘটনাকে চিত্রে, ধ্বনিতে-প্রকাশ্যে, গোপনে দাগ টেনে গেছে। কাজেই আজকের কবিতার নির্মম বিচারকগণ কবিতাকে উপেক্ষা করে যতই বাহবা পান না কেন? আনন্দ পান না কেন! তা আপনার জন্য কোনো সুখকর, সুবিধার খবর বয়ে আনতে পারছে না। বর আপনার অন্তঃসারশূন্য হৃদয়, মেধার অবস্থানকে শণাক্ত করে জীবনের কাছে আপনার শূন্যতার, আস্বাদনের কাছে আপনার অবসাদ গ্রস্থতার খবর জানিয়ে দিচ্ছে। আপনি মৃত এবং অবসাদগ্রস্ত। আপনার জন্য কোথাও প্রকৃত আনন্দ নেই। কোনো আশ্চর্য নেই, বিস্ময় নেই। কোনো স্বপ্ন, কল্পনা নেই। প্রকৃতি নেই। বিশ্ব সংসারের নানারূপ খবরা-খবর নেই। জীবনের মৌল সম্পদের অভাব আপনাকে তাড়িয়ে নিয়ে ফিরছে। মুক্তির জন্য আপনার আপ্রাণ প্রচেষ্টাও কোনো কাজে আসছে না।
‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো!/ অসময়ে যাবো না/ তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো’ –শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
কবি, কবিতার মধ্য দিয়ে পাঠকের সাথে থাকেন। কবিতা রচনার কালে সজ্ঞানে এবং অজ্ঞানে পাঠকের কল্যাণ, সৌন্দর্য, ঐশ্চর্য কামনা করেন। বোধ, বুদ্ধিতে ঐশ্চর্যবান করে তুলতে কবির একটি আপ্রাণ প্রচেষ্টা, সর্বযুগে সর্বকালেই লক্ষ্যযোগ্য।
আমাদের এই দুঃখ দারিদ্র্যের দেশে দর্শন বেমানান। অনেকটা গরীবের হাতী পোষা রোগের মত। শিল্প, সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রেও এই সত্য, ধারণার চূড়ান্ত পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। তারপরও মানব চৈতন্যে বাস করে দার্শনিকতা, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি। প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিচরণ করে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাকে বুকে করে রাখে। সব কিছুর মূলে তাকে প্রাধান্য দেন। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ কম বেশী শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি টান বোধ করেন। এই টানবোধে ডুবে যাওয়া, গুরুত্ব দেয়া, স্বীকার করার নামই চৈতন্যের প্রসার।
জীবনের কাছে মানুষের নানা চাওয়ার আছে। আমরা কেবল আমাদের নিজ নিজ শ্রেণির প্রতি মনোযোগ প্রদর্শন করি। অন্য শ্রেণি ও তার অবস্থানকে নানাভাবে অবলোকন করে তার নিন্দা করি। উপেক্ষা করি ঈর্ষাতুর প্রাণের পরিচয়ও কখনো কখনো দিয়ে থাকি। আমাদের চেয়ে গরীব অসহায় যে রিকশাওয়ালা, নানা শ্রমিক, কৃষক, কুলিমজুর, ড্রাইভার, মিস্ত্রী, ব্যবসায়ী তাঁদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিকোণের ব্যাপক পার্থক্য আছে। তাঁদের প্রতি আমাদের কোনো দয়া নেই। ভালবাসা, মমতা, প্রেম সহানুভূতি নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদেরকে ঠকাতে আমাদের কোনো দ্বিধা, সংকোচ, কার্পণ্য নেই। অথচ তাঁরা সমাজ ও রাষ্ট্রেরই অংশ। প্রত্যেকের শরীরে একই রক্ত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে একই প্রক্রিয়া সংগঠিত। ব্যবহারিক জীবনের এই সমস্ত জনগোষ্ঠীর যে চাহিদা তা তাঁরা হাজার চেষ্টাতেও মেটাতে পারে না। চক্রান্তের রথে, ষড়যন্ত্রের কৌশলে তাঁরা প্রতি মুহূর্তে নাস্তানাবুদ হয় তথাকথিত সভ্য মানুষ দ্বারা। এই মানুষদের একটি অংশ ব্যবসা এবং রাজনীতিকে সমান ভালবাসেন, শোষণের নিত্য নতুন ফন্দি বের করেন আর ক্ষমতার মসনদে যেয়ে ঘাড় মটকে খান। দেশ, জাতি, সমাজ পরিবারের মঙ্গল চেয়ে তারা জনগণের ভোটের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করে। এই অভাবগ্রস্ত, দারিদ্র্যপিড়ীত জনগণের জীবনে দর্শন শাস্ত্রের কোনো প্রয়োজন পড়ে কি? জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতা তাদেরকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে, শিখিয়ে চলেছে। সেই কথা ভেবে আমরা প্রত্যহ ব্যথিত হতে পারি। সমব্যাথি হতে পারি। হৃদয়ের সত্যে নেমে তাঁদেরকে সার্বিক পরিচর্যা দিতে পারি। তাঁদের ভিতরেই লুকিয়ে আছে জীবনের প্রকৃত দর্শন। ভিন্ন শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি। বাংলাদেশের জাতীয় সত্তার বিকাশ ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ হতে পারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
কবিতা অনেক কিছুর বিপক্ষে দাঁড়াবার সাহস দেখায়। কবি সেই সাহস সৃষ্টির প্রধান নায়ক। আপাত সরল প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে নীরব-নিঃশব্দে কবির চেতনা অনেক কিছুকে দেখতে এবং বুঝতে চায়। তাঁর উপলব্ধিতে প্রকৃতির গোপন তন্ময়তা সুর ধ্বনি জাগ্রত পায়। যে দিকেই কবি দৃষ্টি ফেলেন তিনি দেখতে পান মানবের অনেক অজানা সব বিষয়ের রূপ। তাঁর পারিপার্শ্বে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম, বিভ্রম, ছলনা, ভণ্ডামিকে তিনি পারেন না একটুও সহ্য করতে, পারেন না মেনে নিতে। তাই তিনি প্রতিরোধে, প্রতিবাদে উচ্চকণ্ঠ হন। সাধারণ জনগণের রুচি, বিশ্বাস- চিন্তা-চেতনার যাবতীয় ভুল ভ্রান্তিকে শণাক্ত করতে কবির এক দায়িত্ববোধ আছে। কারণ কবির কলমের নিঃসৃত ধ্বনি চেতনার মহাসত্যকে প্রকাশ করতে দায়িত্ববোধপ্রাপ্ত। এ দায়িত্ব প্রকৃতি তাকে আপনা আপনি দেয়, দিয়েছে। শুধু মাত্র কবি নন যে কেউ এ দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারেন যদি তার চেতনা-সাধনা সব কিছু সঞ্চালিত হয় সত্য সাধনার পথে, সত্য ভাবনা ও কল্যাণকর পথে।
‘সেই কবি মোর মতো কল্পনা সুন্দরী/ আনন্দ ক্রোধ যার আজ্ঞা মানে/ অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা বলে’। –মধুসূদন দত্ত।
কবি কোনো সাধারণ বিষয় নয়। তিনি অসাধারণত্বের যাবতীয় গুণপনায় অভিষিক্ত। প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর একটা প্রস্তুতি থাকে। দেখা শোনার মাঝে থাকে তৃতীয় এক নয়ন, তৃতীয় এক শ্রবণযন্ত্র। তিনি সেই তৃতীয় নয়নকে, তৃতীয় শ্রবণযন্ত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্বিতীয় হৃদয় দিয়ে সব কিছুর মধ্যে ভিন্নতা আনেন। ভিন্ন ভাবনায় ভিন্ন নির্মাণে নিবিষ্ট হন এক অনন্ত সাধনায়। ইচ্ছে করলে তিনি পারেন না এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে। এই দায়িত্ব বলতে ভিন্ন পথ ভিন্ন ভাবনা, ভিন্ন সৃষ্টি থেকে দূরে সরে যেতে। প্রকৃতি তাকে এ কাজে উপযুক্ত মনে করে। এ কাজের দায়িত্ব দিয়ে থাকে। যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মরত তিনিই কবি। তিনিই শিল্পী। তিনি সেই ভিন্নতার স্রষ্টা হয়ে মানুষের পৃথিবীতে সরল, স্বিগ্ধ, স্বাভাবিক এক স্বত্তার প্রাণবন্ত প্রকাশ। কবিতাকে মেনে নিতে অসুবিধাটি কোথায়? কেবল লাভ ছাড়া! শিক্ষার মাধ্যম হয়ে কবিতা সভ্যতার অন্যতম অংশ হয়ে কালে কালে, লাখ লাখ যুগের, লাখ লাখ মণিষীর রহস্যের বিস্ময়ের উপযোগ হয়ে টিকে আছে। সভ্যতা তাকে মাথায় তুলে রেখেছে স্বজ্ঞানে এবং অজ্ঞানে। এখানে নিবিষ্ট হলে কেউ খালি হাতে ফেরে না। কিছু না কিছু সে পায়। হতাশার কালে আশা, প্রেমহীনতায় প্রেম, অত্যাচার, শোষণের পথে প্রচণ্ড দ্রোহে, প্রবল শুষ্কতায় বৃষ্টি পরম সিক্ততা। অনিয়মের কালে নিয়মের নিবিষ্টতা। অন্ধকারে আলো অবিশ্বাসে বিশ্বাস, নিষ্ফলা কালে ফল-সবই কবিতার প্রধানতর বিষয় ও ঘটনা হয়ে ইতিহাসের যাত্রাকে রেখেছে অব্যাহত। করেছে প্রসারিত। যাবতীয় সীমাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিয়েছে অসীম জগতে। চিন্তাশীল মানুষ চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন ভাষার ভূমিকার যে অবস্থান তার কোথা থেকে উৎপত্তি! কোথায় তার অবস্থান? কোথায় তার অসীমতা? সুযোগ সুবিধার নানা দিক?
প্রতিটি ভাল কবিতা, মহৎ কবিতা এক একটি দর্শনের ইঙ্গিত। এক একটি আবিষ্কার, বস্তু কাঠামোর বোধের ধারণা গড়ে তুলতে চিরকাল সচেষ্ট। জীবন সমৃদ্ধ হয় কবিতায়। চেতনা নিবিষ্ট পায় কবিতায়। সৌন্দর্য সৃষ্টি, সৌন্দর্য বোধ আনয়নে কবিতা সর্বাগ্রে জাগে। জীবনের উদ্দামতা, ভাল মন্দের ধারণা, রুচিবোধ সৃষ্টিতে কবিতা নীরবে, স্ব-শব্দে কাজ করে যায়। যে কারণে কবি ও কবিতার কাছে আমাদের যাবতীয় ঋণ। যাবতীয় ভালবাসা। যাবতীয় দায়িত্ববোধ।