১.
রাত ও নিঃসঙ্গ মানুষের কথা
একটা সাতান্ন–
ঘরটায় হুহু করে বিষন্নতা ঢুকছে। ভেতর-বাহির সর্বত্ব ঢুকে পড়ছে অজ্ঞাত কালো ভয়। এই ভয়ঙ্কর শশ্মানের মত নিঃসঙ্গ একা জীবনটাকে, দু বছরের শিশুর মতোই রাতের পর রাত ভেংচি কাটছে ঘড়ির কাটা।
দু’টো পঁয়তাল্লিশ–
মনে হচ্ছে ভাদ্রের উত্তাপ গায়ে। আর বিষাদের ঘাতক বুলেট সিনা ফুঁড়ে ঢুকে পড়ছে। চারিধারে নিমজ্জিত শূন্যতার আহুতি।যেন কারফিউ চলছে। আর হৃদয়ের তর্জমা পাঠ করছে গলির কয়েকটি কুকুর।
তিনটে সাতাশ–
ঘড়ি থেকে খুলে রাখছি হৃদপিণ্ড। সামন্যতম প্রেমের অভাবে–রাত দীর্ঘ হলেই, কেমন যেন বিশ্বস্ত জানলার গ্রীলও কারগার হয়ে যায়। কার ভাল্লাগে?
পাঁচটা দশ–
ভোরের আযান ভেসে আসছে। আঁধার কেটে যাচ্ছে। ঘড়ির হৃদপিণ্ড নেই এখন আর। এইরকম ভেজা ভোরে নিজেকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছা করে খুব।
২.
প্রেম হোক অনুরূপ মুসার ধ্যান
তোমার সম্মতি পেলে, আমরা আমাদের তৃষ্ণার ঠোঁটে অফুরান জমজমের জল রেখে পান করতে পারি অমৃত। তোমার সম্মতি পেলে, আমাদের আজন্ম নিলাজ শামুক কফিনজাত আব্রু খুলে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যেতে পারে প্রাতঃভ্রমণে। যুগপৎ – তুমি ও আমি আমাদের মোহন নিদ্রা উৎযাপিত হতে পারে পৃথিবীর নরম জাজিমে।
বস্তুতঃ প্রেমই জায়নামাজ ;
আমি প্রেমের উপর দাঁড়িয়ে তোমাকে লক্ষবার উচ্চারণ করি, অনুমান– ঝিঁঝির জিকিরের চেয়েও মগ্ন আমার ইবাদত, অনুরূপ — যোগীর অভ্যেসে জিহবায় ভিজিয়ে রাখি
তোমার নাম,
জানবে,
তোমার প্রতি আমার যত ভিখেরীপনা স্বভাবজাত।
আমি ফুল ও ঘাসের অনুশীলনে অচঞ্চল।
আমি তোমার জন্যই মত্ত গাজরের মতন রঙিন বিকেলে। আমি তোমার জন্যই সুখী হাওয়ার তাড়া খেয়ে দ্রুতই যৌবনে গমন করে ফেলি হলুদ ফড়িং অথচ এখনো শিশু। তোমার সিম্ফনি হাসি, আমাকে অনন্ত যৌবনে পদার্পণের জটিল মানসাঙ্কের বৃত্ত ভরাটে ঔদ্ধত্য করে;
আমি তোমার দিকে অগ্রসর হই।
তবু – তোমার নামের দরুদ জানি না বলেই কী
আমার ধ্যান ও মগ্নতা নিতান্ত তুচ্ছ বলে মনে হচ্ছে তোমার।
৩.
অজান্তেই কত কী আছে তোমার
যতবার হাসো—একটি গাছ রোপন করি অন্তরে ।
জানো কী মেয়ে , সাতশত আট কোটি অর্জুন গাছ ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে হৃদয়ে? তুমি—বিষ ছড়ালেও তা শুষে নিয়ে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়ার মত এতটা বনাঞ্চল হৃদয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াই এখন ।
যদি ঘৃণা দাও অথবা বিষ , যা-ই দাও–
বনাঞ্চল বাড়ুক—বনাঞ্চল বাড়িয়ে চলেছি নিরন্তন
হাসি থামিও না মেয়ে—হাসতে হয় অনন্তকাল ।
সমুদ্র— ভালো লাগে না মেয়ে তোমার ? তাই অশ্রু লুকিয়ে পাহাড় গড়েছি অন্তর্লীনে । সিঁড়ি কাটি ; কাটতে কাটতে ঘর পাতি ; সেই ঘর নিয়ে ঘুরে বেড়াই অন্তরপুরে । যদি ক্লান্ত হও , এসে জিরোও , শুতে চাও , ঘুমোতে চাও—
যদি নাই চাও —ঘরে আলো জ্বলে—জ্বলুক, ঘরে জোনাক জ্বলে—জ্বলুক। পাহাড় কেটনা মেয়ে—পাহাড় কাটতে নেই ।
যদি তৃষ্ণার্ত হও , হও যদি , জেনো —
একটি মিঠা নদী আজন্ম বয়ে বেড়াই ঠোঁটে ।
অথচ—এক কোটি বছর ! এক কোটি বছর
কত অজানা ঘর , বনাঞ্চল ও নদী আছে তোমার -অজানাই ।
৪.
তোর নামে কুকুর পুষি আজকাল
তোর নামে কুকুর পুষি আজকাল
তোর নামেই–ডাকি যদি, এক ছুটে চলে আসে পায়ের কাছে
আসে, চুকচুক ঘেষে
জিভ দিয়ে চাটে শরীর,
সে-ও ভালোবাসা বোঝে
তুই বুঝিস–কচু
নইলে কী আর এইভেবে ছেড়ে যেতিস অবহেলায়?
সে-ও জাগে, কাঁদে মাঝরাতে—
যদি বা দ্যাখে জল টলমল চোখ,
সিগারেটে পুড়ছি খুব;
বোবা জাত
কয় না
সয় না
গা ঘেষে
বোঝে ও খোঁজে ব্যথার নিত্য অসুখ।
৫.
আপনার প্রেমিকা হতে চাই
শুনেছি–
পিথাগোরাসের মারপ্যাঁচ বোঝেন; ক্যামিস্ট্রি মোটেও বোঝেন না। অথচ কী না পিওর ব্যাচেলর..
ঘরে ইঁদুরের সাম্রাজ্য, মনে জং ধরেছে
আপনার ঠোঁটে ছাপ পড়েছে আগুনের;
একবার সুযোগ দিন না প্লিজ—
চুমুর ছাপ ফেলে দিই…
শুনেছি–
ইদানীং চায়ে চিনি ঢালছেন বেশি।রোজ রোজ হাত পুড়িয়ে ফেলছেন। ভুলে যাচ্ছেন স্বল্পায়ু জীবনে একজন প্রেমিকা থাকা কতটা জরুরী।
একটি সুযোগ দিয়েই দেখুন প্লিজ,
তল্পিতল্পা গুটিয়ে আপনার ভেতরে ঢুকে পড়ি; প্রেমিকা হই–
প্রেমিকা হয়ে খুব করে গুছিয়ে দেই আপনাকে।
মাহবুবা করিমের এক গুচ্ছ কবিতা পড়লাম। নিবিড় শৈল্পিকতা , ভাবনার অভিনবত্ব এবং কাব্যভাষার মাধুর্যময় প্রাতিস্বিকতা—এই সবকিছু মিলে দারুণভাবে উপভোগ্য সবকয়টি কবিতা। কবিতাগুলোর ভাঁজে ভাঁজে কিছু পঙক্তি আছে চমক ও মুগ্ধতায় ভরে দেওয়ার মতো। এই প্রথম আমি মাহবুবা করিমের কবিতা পড়লাম। তাকে অভিনন্দন জানাই। তার কবিতা আরও বেশি বেশি পড়তে চাই ।
ধন্যবাদ
মাহবুবা করিম মুগ্ধ করেছেন।
অসাধারণ। আপনার একগুচ্ছ কবিতা পড়ে মুগ্ধ হলাম।