দৃশ্যাবলি
আমি এখনো ভুলতে পারি না তোমার ওই মায়াবী দীঘল কালো রোদ ঝলমলে রেশমি চুল। গহিন নদীর জলের মতো কাজল কালো সবুজ দুটি হরিণী চোখ। ভোরের সূর্যের মতো রক্তজবা লাল, কাঁপা কাঁপা জেরিন ঠোঁট– যা ছিলো নেশার মতো নীল-নরম রাঙা রসায়ন-পূর্ণ…
কি ছিলো তোমার তনু-দেহ– সেদিনের, সেই বালিকাবেলার সারা অঙ্গে? কি?
আমি আজও ভুলতে পারি না শরতের শুভ্র কুয়াশার ভেতর তোমার আলতা রাঙা পায়ে মেঠোপথে হেঁটে যাওয়া এবঙ আমার কাছে আজও ফিরে ফিরে আসে তোমার সেই নির্মম রৌদ্দুর- অচেনা গহিনে চলে যাবার দৃশ্যাবলি…
খোয়া ওঠা অমাবস্যা রুগণ রোড
খোয়া ওঠা অমাবস্যা রুগণ রোড
দুপাশে পুষ্টিহীন গাছ, ডাঙ্গা
কালিক মেশানো ন্যায্যমূল্যের বাতাস;
ছিন্ন বিদ্যুৎ–
এবঙ এখানে আমি একা হেঁটে যাই অন্ধ চোখে–
যাই কুয়াশার তাঁতে বোনা বিচ্ছেদের ভীষণ শরীরে
ছেঁড়া কার্পেট
খরস্রোতা যৌবনে।
প্রতিদিন ভুলে থাকি মর্ত্যরে মানুষ- আম-আপেল
জবড়জং এই জীবাশ্ম, জন্ম-জন্মের অলৌকিক আয়োজন।
রুটি, ভাত-কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল; নাস্তার টেবিলে কিছুই পাই না
ভরা ফার্মেসির জানালায় ওঠে নষ্ট হওয়া নারী ও বৃষ্টি–
দাগী, দৃষ্টিহীন শীষের মতো লকলক করে চেয়ারম্যান
চেয়ারম্যানের চোরা চিন্ময় জিহবা…।
যেনো চোখে ভাসে খোয়া ওঠা অবাবস্যা রুগ্ণ রোড
আনন্দ-অশ্রু, ম্লান শিশির কণা- ভাঙে কুমারী মন
আর এইভাবে আর্তনাদ ওঠে অবহেলিত
পৃথিবীর পুষ্টিহীন পিঠে, ফসলের মাঠে, খালে-বিলে
কাশবনে–
এবঙ আমি একা এখানে হেঁটে যাই অন্ধ চোখে-
খোয়া ওঠা অমাবস্যা রুগণ রোড কালিক মেশানো পুষ্টিহীন গাছ-মাছ
রাত-রৌদ্র, পচা আম-আপেল সব আমারই থেকে যায়–
থেকে যায় অসহায়, আর্তনাদ ভেজা ভারবাহী বৃষ্টির মতো।
পৃথিবী বাড়ন্ত বৃক্ষ ও ঝরনা হবে
তোমরা নদীর জলে রৌদ্রের সার দাও
ঢেউ লাগাও মাটির মার্গণ মউলে
এবঙ দেখে নিঅ রাত্রিরে, একদিন
নদী ও মাটিরা গর্ভবতী হলে
মানুষ ফিরে পাবে কল্যাণময় কস্তুরি রাত…
তোমরা রেলের দৌড়ের সাথে পাল্লা দাও
পাল্লা দাও কোনো এক সগন হৃদয়হীন ঘড়ির কাঁটার সাথে
তোমরা পাল্লা দিলে গাছেরা ফিরে পাবে
বর্ণালী বরাঙ্গ বোধ ও জলের উত্তাল তরঙ্গ।
তোমরা আদ্র-কোমল ষড়ৈশ্বর্য শব্দের দিকে হাত বাড়াও
হাত বাড়াও সোনালি চাঁদ ও প্রজাপতির ডানার দিকে।
তোমরা হাত বাড়ালে বাতাসের সাথে উড়ে যাবে
সুরভিত প্রতারক পাপড়ির দীর্ঘশ্বাস
এক ষাড়যন্ত্রিক নদীর জীবন।
তোমরা আকাশে সূর্যের দিকে তাকাও
আমি সূর্যকে স্বর্ণের থালা বানিয়ে দিয়েছি
সূর্য থালা হলে তোমরা বাড়িতে বাড়ন্ত বৃক্ষ পাবে।
এবঙ এখন প্রতারক পাখি, পাখিদের ফিরে যাওয়ার কথা
পাখিরা ফিরে গেলে– আজই
আম্বর-মেশকে মেশানো পৃথিবী ঝরনা হবে।
সমুদ্ভাসিত
জল-ডাঙায় সমুদ্ভাসিত হয়ে দেখি রাস্তা সরে গ্যাছে রাস্তায়। কোথাও কোনো মেঘ নেই। ক্ষত নেই। রৌদ্দুরে ভেসে গ্যাছে শুঁড়িখানা…
জ্যাভলিন
আমাকে ক্ষত-বিক্তষ করলো একটি মাত্র জ্যাভলিন তারপর, চলে গ্যালো একজন শাদা চামড়ার বর্বর মানুষ। একজন শাদা চামড়ার মানুষ… তবে ওরা ভালো কথা বল। বক্তৃতায়ও মন্দ না…
কাবারাস্তানই বাহোত আচ্ছা হ্যায়
গোলবাহার আর গুলিস্তামে তাকাকে দেখো বাঁচকে রাহেনেকো তোক্ষার রাওশ্নি শুঁড়িখানাসে মেরা মাট্টিকা জিন্দাগি —কাবারাস্তানই বাহোত আচ্ছা হ্যায়
কাবারাস্তানই বাহোত আচ্ছা হ্যায়…
কষ্টের হাঁসগুলো
এখন হাঁসদের প্রচণ্ড ইচ্ছে হচ্ছে তারা ভাজা ডিম পারবে। অথচ পৃথিবীর ভয়ে তারা পারছে না ভাজা ডিম পারতে।
কেননা, মানুষরা হয়তো তাদের এ ভাজা ডিমকে গ্রাহ্যই করবে না।
বলবে, এ হাঁসদের আরেক ভণ্ডামি। জাতে ওঠার পাঁয়তারা। যেমনটি কিছুকাল আগে করেছিল গাছদের মধ্যে কেউ কেউ– সরে গিয়েছিল কোনো কোনো গাছ– আপেল আমরুজ হিজল তমাল পাইন আর মেপল পাতাও গিয়েছিল সরে।
অথচ, মানুষরা কেবলই চুষে খায় গীবৎ
ধান দূর্বা
জাকাত, জাকাতের অর্থ
জহুরি জাঁদলের জোছনা। নষ্ট হয় নারী নদীÑ নরম শিশুরা
হিরোসিমা থেকে নাগাসাকির বদলে যায় ভ‚মি। স্বাধীনতার সবুজ ভূমি– ইরান ইরাক কসোভো– মিয়ানমারের মুসলমান মানেই অজস্র ছিন্নভিন্ন পাপড়ির লাশ।
সবুজ পাখিরাও পারছে না সুখ ও কল্যাণ বয়ে আনতে।
এখন সভ্যতা মানেই গোলাপের বাগানে একটা পাগলা হাতি।
এখন সভ্যতা মানেই রাস্তায় একটা ধর্ষিতা মেয়ে।
এখন সভ্যতা মানেই মানুষরা চুষে খার নারীর হাড় মাংস অস্থি-মজ্জা…
আর এতে কিছুই হয় না পৃথিবীর। শুধু হাঁসেরাই পারছে না ভাজা ডিম পারতে
এবঙ একদিন হাঁগুলো কষ্টের ভাজা ডিম পারতে পারতে উৎসবমুখর মুরগি হয়ে যাবে।
উজানে বয়ে যাওয়া নদী হয়ে যাবে।
প্রহরের প্রথম রৌদ্র
হে প্রহরের প্রথম রৌদ্র!
আমি তোমার জন্য গড়েছি একটি বড় বাড়ি বারান্দা
যেখানে খাল আছে– রাত্রিরে ডেকে যায় ডাহুক।
তুমি প্রাণ-প্রকৃতিরে ভালোবেসেছিলে
এখানে হাঁসেরা সোনার ডিম পারে।
তুমি প্রেমের কথা বলেছিলে
আমি বাতাস কেটে কেটে বাহারি বসন্তে তৈরি করেছি রাস্তা–
তুমি সাগর-সমুদ্র চেয়েছিলে
এখানে ছলছল করে রাত্রিরে ধবল জোছনায় পাহাড়ি ঝরনা।
হে রৌদ্র! এখন বলো তুমি কার? পৃথিবী না আমার…
যদিও আমি অল্পই করেছি তোমার জন্য
আমি অল্পই করেছি আমার জন্য।
স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ হবে ফের
আমরা আবারও সাবয়া মুয়াল্লাকা, বৈষ্ণব কবিতা অথবা সাগরের জলরাশির সরল সৌন্দর্যে অবগাহন করতে চাই– যেনো পৃথিবী সুদ্ধ হয় একটা শৈবতান্ত্রিক কাপালিক, কালচিটে– কৃষ্ণকালো নগ্ন নারীর দৈহিক আনন্দ থেকে…
একদিন আমরা সামেরি, আজর অথবা আর্যদের আমন্ত্রণও প্রত্যাখান করেছিলাম। আমরা প্রত্যাখান করেছিলাম বর্বর-বেহায়া, ষাড়যান্ত্রিক শাদা চামড়া, পর্তুগিজ জলদস্যুদেরও– কেননা, বহুদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে আমরা আর পালদের মতো সংকুচিত হতে চাইনি; কিন্তু ওদের একটা ধারণা আমরা বুঝি ঈগলের মতো উড়ে উড়ে ক্লান্ত হয়ে ঝরে যাবো বৈশাখী ঝড়ের মতো– যেমন ঝরে যায় আমের ডালপালা– সঘন রৌদ্দুরে অনেক মুকুল।
আমরা বর্তমান এই বাংলাদেশের একটা স্থিতিশীলতা চাই, ডুবে যেতে চাই ষড়ৈশ্বর্য ভক্তিধারার কবিপুরুষ– সুফি অথবা প্রেম-তত্ত্বের দারুণ দিগন্তে। রৌদ্দুরে– আয়নায়…
আমরা নবী-রাসুলদের মতো পৃথিবীর যেখানে যতো সত্য আছে তা খুঁজে পেতে চাই যেনো বখতিয়ার খিলজির অশ্বারোহীর মতো প্রচণ্ড প্রতাবে জয় করতে পারি এই পীর-মুর্শিদ– বারো আউলিয়ার বাংলাদেশ এবঙ আমরা আবারও একটা স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করতে চাই– স্বাধীনতার মূলমন্ত্র…
কোনো এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়…
কোনো এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় তোমাকে দেখছিলাম
বেহায়া বাতাস উড়াচ্ছে তোমার চুল ও শাড়ির আঁচল
স্বর্গ-অপ্সরীর মতো কটিদেশ, নদী ও নিতম্বসহ তুমি চলে যাচ্ছ–
আমি বিলীন হয়ে যাচ্ছি সন্ধ্যার শেষ সূর্যের মতো
মথিত সঙ্গমশেষে দিগন্ত যেখানে নুয়ে পড়ে–
গোলাপি ঠোঁট, তোমার মায়াবী চোখের মিটিমিটি তারায়।
একবার তুমিও চেয়ে দেখ এই নীল চোখের দিকে
ফেরাতে পারবে না চোখ– আটকে যাবে গভীর আইরিসে।
চলো দুজনেই ভিজে যাই কোনো নীরব নৈঃশব্দ্যে…
এবঙ আমাকে কাছে ডাক
জড়িয়ে ধরো
যেনো বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে যায় এই দেহমন।
আমাকে আর ফিরায়ে দিঅ না তোমার ওই নিপুণ সলজ্জ চোখের ভাষায়।
ছলাকলাহীন এই রাত্তিরে আমাকে ভাসাও তুমি, তোমার গ্রন্থিত সাগর-সমুদ্রে
তোমাকে ছাড়া এখন আমি একটা অস্থির অবহেলিত সময়ে পড়ে আছি।
দক্ষিণা বাতাসও লাগে না আমার শরীরে–
আমি একা
নিদারুণ একেলা পড়ে থাকি
সারাটা দুপুর বিকেল আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
তুমি এসো, এসো প্রিয়তমা! ঢেলে দাও অবিমিশ্র রোদ ও কামনার জল
দারুণ দহলিজে আমার…
প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসায় পৃথিবীতে নেচে ওঠে ব্যকুল বিমুগ্ধ ভ্রমর।
তুমি ছাড়া আশ্বিনের অমাবস্যায় ডুবে যাচ্ছে আমার সামনের মাঠ-ঘাট বৃষ্টিভেজা তেপান্তর।
অযাচিত, অন্ধকার শক্ত-শূন্য শিহরণে কেঁপে যাচ্ছে আমার সমস্ত বেলাভ‚মি।
তুমি এসো আমার এই নির্জলা নীল ভূমিতে
আপেল, আতর অথবা লেবুফুলের চাষে মগ্ন হবো দুজনে
বিপ্রতীপ মধুর হবে আমাদের এই চাষবাস, চাষের তৈজসপত্র বৃষ্টি ও বৃষ্টির বেসাতি–
যখন দেখি তোমাকে ছাড়া জোছনার তীব্র আলো আছড়ে পড়ে আমার ভিটেবাড়ি, বারান্দার চারপাশে;
আমি মর্মাহত হয়ে ফিরে আসি, আমি বারবার ফিরে আসি নৈঃশব্দ্যময় নিবু নিবু আমার জলের বিছানায়…
এসো প্রিয়তমা! আমরা পৃথিবীতে নামিয়ে আনি আরেকটা ঐশ্বর্যময় সাগর
মানুষের দেহঘরে আষাঢ়স্য রোদের রোশনাই।
তিরতির করে সামনে হাঁটি সমুজ্জ্বল তারার মতো;
পথ চলতে কখনও ব্যর্থ হয় না পাথর-প্রেমিক।
এবঙ আমি দ্রুত বুঝতে পারি
প্রেমের সরলতা
সফলতা
ব্যর্থতা–
ফিরে যাওয়া কোনো বিবসন মানবীকে আমার ভালো লাগে না–
তুমি কি ফিরে যেতে চাও কোনো এক অবারিত অন্ধকার গহ্বরে?
খুলে দিলাম দিগন্তসম খাঁচার দুয়ার…
বীক্ষ্যমাণ বশরাই গোলাপের আশীর্বাদে আমি পৌঁছে যাব আমার গন্তব্যে
অমীমাংসিত কোনো সৌন্দর্যের ভেতর আমি পৌঁছে যাব
আমার ব্যথার বিড়ম্বনাসহ…
আমি গলে গলে যাব কোনো এক শান্ত-শুভ্র শ্রাবণ সন্ধ্যায়
আমাকে আর পাবে না
আমি গলে গলে যাব
গলে গলে…
আদরের সাদা ঘাস
গতকাল গভীর রাতে পূর্ব পশ্চিমের প্রকট
প্রজ্বলিত রোদের রাজর্ষি থেকে আমি দেখে
নিলাম কীভাবে বৃষ্টি হয়; ঝড় আসে–
চেখে নিলাম কিছুটা পলিময় বিদ্যুৎ পরিশীলিত প্রজ্ঞার
পরাগের পারদ। আদরের সাদা ঘাস। কৈতর।
খুলে গেল নবোঢ়া নদী, অন্ধতম প্রদেশের
গহিন দুয়ার; অন্দরের গলিঘুঁচি–অন্ধকূপ।
আমি দেখে নিলাম প্রার্থনায় নত না হওয়া সগন জলের শিশির
বনের পশু, নরপিশাচ…
আমি দেখে নিলাম আকাশে উড়াল দেয়া ডানা ভাঙা আহত পাখি
মানুষের বর্বর আচরণ– ধর্ষিতা রোহিঙ্গার মাটি ও মানুষ
মানুষের চিৎকার এবং আমি দেখে নিলাম আমাজন
অস্টেলিয়ার পোড়া বন-বনাঞ্চল।
এবঙ এখানে একদিন গাছেরা ফিরে পায়
বাতাস; সিঁড়ি– সারাদিন রঙ-রৌদ্দুর
সরে যায় কালো মেঘ, চির্ণিত চা; প্রতারক
পামসু– যেনো মিলোসেভিচ, শ্যারন, বাজপেয়ী–
বুশেরা খুঁড়ে খায় ঘূর্ণিত ঘাম, পচা রৌদ্দুর
বেইমান বাদশা তুরুপের তাস।
আর আমি, আমরা চলে যাই যথেষ্ট আষফল
আকাক্সক্ষার আকরিক মেশানো বিশুদ্ধ বনে– আগুনের
পাখনায়…। যেনো অর্জুন-আপেল, রৌদ্দুরে
রাতদিন; শিরনি ও শরবত– মরশুম থেকে
মরশুমে চলে যায়, যেতে থাকে এক প্রেমময়
বৈদগ্ধ দেহ। আর পূর্ব-পশ্চিমের প্রকট প্রজ্বলিত
ডালপালা ধুয়ে দেয় দিগন্ত থেকে দারুণ দিগন্ত,
পরশীলিত পাখনায় মসৃণ মার্বেল; পরাগের পারদ;
আদরের সাদা ঘাস। কৈতর।
গতকাল গভীর রাতে…।
সেফটিপিন
আমার বোহেমিয়ান, দিশাহারা– এলোমেলো চুল চিবুক নাভি– নিবু নিবু রসায়নের ব্যস-বৃত্ত, সমকোণ আর এই ঘোলা দৃষ্টি দুটো দেখে তিনি একদিন বলেছিলেন– ওইখানে, ওই আগুনে নিক্ষেপ করো তোমার বসন্তহীন বড়ো বাড়ি-বারান্দা, বেদনা ভরা প্রেম ও অপ্রেমের নীল নীল নদী ছাড়া জীবনযাপন…
এবঙ এখনো সময় আছে ফিরে এসো প্রতারক, বেইমান নদী-রৌদ্দুর ফুলের বিশাল অট্টালিকা থেকে। সময় আছে শহরের সুন্দর বাসন্তী মেলা, সাজেকের পাহাড়-পর্বত আর চাটগাঁর বলী খেলা থেকে একবার ঘুরে আসো।
ঘুরে আসো পৌষের হিম হিম পূর্ণিমা রাত ও রৌদ্দুর থেকে…। বাজাতে পারো হাতির দাঁতের তার দিয়ে বানানো সৌখিন সব বাজনা। যা ছিল একদিন শুধুই তোমার আর আমার…
কিন্তু আজ যখন কবিতা ও নাচকেও ধারণ করলাম আমার শুঁড়িখানায়– ধারণ করলাম রসায়নের ব্যস-বৃত্ত, ত্রিভূজ। বাৎসায়নের কামকলা– আদি সেই কামসূত্র এবঙ যখন তীব্র বেগে ছিটকে পড়লো আমার হাত ফসকে পারত-পানি রাস্তায়-রৌদ্দুরে– তখন তিনি কোথায়? যার ব্রা ও ব্লাউজ থেকে রাত্রিরে খুলে দিতাম সেফটিপিন? কোথায় তিনি?
সামনের শীতে মানুষ রৌদ্র হবে
মানুষ আর মানুষ থাকবে না
সামনের শীতে সে রৌদ্র হবে
ঝরনা হবে পৃথিবীর অর্ধেক।
একদিন খাটাসও খর্ব হবে
থাকবে না খোয়া ওঠা খাল,
সরে যাবে ঘিচিমিছি, ঘিঞ্জি প্রতারক ঘাস
কাক, কাকের কর্কশ– আওয়াজ
পুড়ে যাবে বেহায়া বাতাস, জবড়জং জীবাশ্ম
নষ্ট হওয়া নারী, ছেঁড়া নাও
নৌফেল–
হে নদী! অশ্বারোহী আপেল
গাছের রৌদ্র ছেড়ে দেবো
এবঙ অভিন্ন ভ্রণ, খুলে যাবে খাল
খালের খোল,
খৈয়াম–
যেনো সামনের শীতে, শীত মানুষ রৌদ্র হয়
ঝরনা হয় পৃথিবীর অর্ধেক।
মৃধা আলাউদ্দিন। মাতা : ফুলবানু বেগম। পিতা : মৃত মোসলেম মৃধা। জন্ম : ০২.০২.১৯৭৮। জন্মস্থান : কাংশী, উজিরপুর, বরিশাল। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকাতেই আছেন– নকুনি, তলনা, খিলক্ষেত, ঢাকা। মৃধা নব্বই দশকের অন্যতম নিভৃত কবিদের অন্যতম একজন। লিখছেন গল্প, কবিতা, ছড়া ও সমালোচনা সাহিত্য। দেশের জাতীয় দৈনিক ও লিটলম্যাগে নিয়মিত তার লেখা ছাপা হচ্ছে। মৃধা একজন ছন্দ সচেতন নাগরিক কবি। তার কবিতায় উঠে এসেছে সমাজের কুসংস্কার, নীতিহীন-বিপ্রতীব সময়ের ছবি, নোংরা রাজনীতি এবং একই সাথে নিপুণ কারিগরের মতো মৃধা তার কবিতায় প্রেম, দ্রোহ ও ভালোবাসার গান গেয়েছেন। সমাজ বিনির্মাণের গাথা কবিকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছে। কবির দোঁহাগুচ্ছ কাপলেটে পরিণত হয়েছে বলেই পাঠক সমাজের দৃঢ় বিশ্বাস। নিঃসন্দেহে বলা যায় সমালোচনা সাহিত্যে কবি তার নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। কবি মৃধা আলাউদ্দিনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ রৌদ্দুরে যায় মন (প্রকাশকাল : ২০০৫), প্রকাশক : রেলগাছ, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সামনের শীতে মানুষ রৌদ্র হবে (প্রকাশকাল : পহেলা জানুয়ারি, ২০২০। প্রকাশক : রাজুব ভৌমিক, ফিফথ এভিনিউ, ৩০তম রোড, ম্যানহাটন, নিউইয়র্ক। পরিবেশক : বার্নস এন্ড নোবল, ১২২ ফিফথ এভিনিউ, রোড, ২, নিউইয়র্ক-১০০১১। প্রকাশিতব্য গ্রন্থ : প্রজাপতি হয়ে গ্যাছে কোনো কোনো মাছ (কবিতা), জঙধরা পিনালকোড (গল্পগ্রন্থ), চড়ুইয়ের চিড়িপ চিড়িপ শব্দ (কিশোর কবিতা), শুঁড়িখানার নরম দেহ (দোঁহা কাব্যগ্রন্থ), অল্পকিছু বিষ প্রয়োজন (দোঁহা কাব্যগ্রন্থ), আল মাহমুদ ও অন্যান্য সন্দর্ভ প্রভৃতি। কবি মৃধা আলাউদ্দিন দুই ছেলে সন্তানের জনক। মৃধা শব্দশীলন সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চেয়ারম্যান। পুরস্কার ও সম্মাননা : অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক। বঙ্গভ‚মি সাহিত্য সম্মাননা, বঙ্গভ‚মি সাহিত্য পরিষদ। শীর্ষবিন্দু সাহিত্য পদক, শীর্ষবিন্দু লিটলম্যাগ। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতিপ্রাপ্ত ক্রেস্ট ও স্বর্ণপদক। সম্পাদনা : একটি কাব্যভাঁজ (লিটলম্যাগ প্রায় ১০টি সংখ্যা বের হয়ে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে লিটলম্যাগটি)। মৃধার সম্পাদনায় বের হয়েছে সিলেটের মরহুম কবি মিছবাহুল ইসলাম চৌধুরীর কবিতা ‘শেরশাহ’ (একটি মহাকাব্য)। কবি মৃধা আলাউদ্দিন বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত আছেন।