মানুষটা কিন্তু নেই
ঝুলন্ত লাশ দেখে ভাবা যায় অনেককিছুই
ভাবা যায় দোষটা লাশের নিজেরই
অথবা তার স্বামীর
অথবা স্ত্রীর
ছেলেমেয়েরও হতে পারে
হতে পারে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি কিংবা নিকটতম কোনো আত্মীয়-স্বজনের
অথবা দোষটা উল্লেখিত কারোরই না
যত দোষ লাশের মাংসের
আপনা মাংসে হরিণা বৈরী
সবকিছুর যেহেতু একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে
মেয়াদ থাকে ভাবাভাবিরও
একসময় সব ভাবনাই ফুরায়
বেঁচে থাকে কেবল একটা বোবাস্বর
ঘুরে বেড়ায় দৃশ্যহীন থেকে দৃশ্যহীনে
মানুষটা কিন্তু নেই।
কবিতা ও কুকুর
কবিতা একটি পথহারা কুকুর
ঘুরে বেড়ায় শহরের চা-স্টলে
চেয়ে থাকে তারে ঝুলন্ত রুটি-কলার দিকে
পরিস্থিতির এ পর্যায়ে সুযোগ পায় চতুর বণিক
ঢিল ছুঁড়ে দেয় একটা ছাতাপড়া রুটি
পাছে পাছে ঘুরায় সারাদিন সারাক্ষণ
স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে তেড়েও ওঠে কেউ কেউ
হাতে লাঠি চোখে আগুন
পথভ্রষ্ট কবিতা তখন ঘেউ ঘেউ করে দৌড়ায় সভ্যতার সড়কে।
ঘাতক
যাত্রার শুরু থেকে অনেকেই ছিলাম
মোড়ে মোড়ে অনেকেই পুঁতে রেখে এসেছিলাম পদচিহ্ন
আজ পেছন ফিরলে দেখা যায়
কিচ্ছু নেই কোথাও
সবখানে কেবল বুলডোজারের দাগ।
পথ ও পথিক
পথ কি পথিকের চেনা?
নাকি পথ চেনে পথিককে?
মন বলে– কেউ কাউকে চেনে না
না পথিক না পথ
দুজনেই হাঁটে যার যার কক্ষপথে।
নিয়তি
কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয়
এমন একটা কথা যখন চালুই
তখন আর বসে কেন
সাপই আনা হোক ডেকে
বড়ো বিপজ্জনক হয়ে গেছে ঘরের সাপ
সর্বনাশ ঘটিয়ে দেবে যেকোনো সময়
আর এটা কে না জানে
দূরের চেয়ে ঘরের সাপই ভয়ংকর।
গাজা
সবার চোখ গাজায়
কী জানি হয়
বুক ধড়ফড়
কবির চোখ অন্য গাজায়
ওটাও মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে
আটক ডোরাকাটা এক সাপের প্যাচে
বিষে নীল
কুঁকড়ে থাকতে থাকতে বাঁকা হয়ে গেছে শিরদাঁড়া
গাজার পায়ের নিচে রয়েছে পবিত্র রক্তসাগর
পাশে রয়েছে উসখুস বারুদ
রয়েছে শপথে গড়া বিশ্বস্ত মিত্রগোষ্ঠী
অন্য গাজার চারপাশ কেবলই শূন্যতায় ঠাসা
পায়ের নিচেও পাচ্ছে না শক্ত-সামর্থ কোনোকিছু
যেখানেই পা রাখে হাঁটু অবধি ডেবে যায় মিথ্যাস্তূপে
গাজার জন্যে কান পেতে রয়েছে কোটি কোটি বিশ্বাসী
রয়েছে আল জাজিরার চোখ
ওটার জন্যে কেউ নেই
তার চিৎকার শোনার জন্যে কোথাও সেট করা নেই কোনো রাডার
সবার চোখ গাজায়
কবির চোখে অন্যদৃশ্য
যেখানে এক গাজার সুড়ঙ্গের সঙ্গে জুড়ে যায় অসংখ্য গাজা
এক গাজার মুক্তিতে নির্ভর করে অসংখ্য গাজার মানচিত্র।
হয়ে ওঠে যদি কবিতা
কেবল কিছু একটা হয়ে ওঠা নয়
নয় কোনো জড় পদার্থ
কিংবা আহার্য কিছু
হয়ে ওঠে যদি কবিতা
আর তা যদি হয় শুকপাখী
যে মনের খোঁজ লয়
কিংবা খোঁজ দেয়
তখন ওটা কোন মূল্যে মাপা হবে?
আর যদি দেয় “মরার চোখে আগুন”
কিংবা হয় যদি কোনো ইসিম
যা পাঠ করা মাত্র ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যায় অ্যাকোরিয়াম
তখন কোন যন্ত্রে নির্ণয় হবে তার অপরিহার্যতা?
বন্দী
জানি কী বলবে
আর এও জানি, কথাগুলোয় থাকবে না সত্যের ‘স’ও
তারপরও শুনতে হবে
হাততালি দিতে হবে
ঠিক হ্যায় ঠিক হ্যায়
চিৎকার করতে হবে
করবোও
বন্দী মাত্রই জানে–এটাই কর্তব্য
সহ্য করা আর অপেক্ষা করা
নক্ষত্র
একটা নক্ষত্র খসে পড়বে আর টের পাবে না পৃথিবী
তা কী করে সম্ভব
টের পেলো এবং কেঁপে উঠল
কেঁপে উঠলো তাগুদ
কেঁপে উঠল মিথ্যার দেয়াল এবং ফেটে গেলো
মানুষ দেখলো মানুষকে
মানুষ দেখলো কতটা ভারি হতে পারে একজন মানুষের ওজন
দেখলো একজন মানুষ কীভাবে ছুঁয়ে যায় কোটি কোটি মন
কীভাবে জোর হারিয়ে ফেলে একটি দ্রুতগতিসম্পন্ন এম্বুলেন্সের চাকা
দশ সেকেন্ডের পথ পেরোতে লাগলো দশঘণ্টা
মানুষ দেখলো কীভাবে একজন মানুষ মৃত্যুকে অতিক্রম করে যায়
কীভাবে হয়ে গেল অন্তহীন মহাকালের যাত্রী
কোন প্রকার গান কবিতা আর ডুগডুগি ছাড়া
পরিচিতি :
শাদমান শাহিদ
রোহান মঞ্জিল। কলেজপাড়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ০১৯৩৭১২৫০১২
প্রকাশিত গ্রন্থ: যমকুলি (ছোটগল্প), একদিন হোসনে মিয়ার সঙ্গে (ছোটগল্প), পোস্টার চোখ (উপন্যাস), পাহারা (উপন্যাস), চেয়ারচক্র (উপন্যাস), সিজ্জিল (উপন্যাস), সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে (কাব্যগ্রন্থ), যে কথা জমা রেখেছি রক্তে (কাব্যগ্রন্থ), কামালমুড়া-গণহত্যা (গবেষণাগ্রন্থ)।