ঈশ্বরালোকে
কে না জানে আমি ঈশ্বরালোকে থাকি
তিতির পাখির যেন কল্যাণ হয়
সর্বক্ষণ তাই মনে ভাবি,
কিছু কাজ থাকে উঠানে, কিছু বারান্দায়
টুলের ছায়ার চালাকি
মানে সরে যাওয়াটাকে
দেখে আড়চোখে হাসি,
চিন্তা করি গভীর আস্থায়
বলি ‘ওরে, সূর্য অস্ত গেলে কোথায় দাঁড়াবি!’
টুল মানে বসা– বসে বসে পরিশ্রান্ত যে– কিযে সেও হাসে যদিওবা বোকার মতন!
ঈশ্বরালোকে
তখন আচমকা যে শোভাদিই আসে
দূরবর্তী তারার গন্ধ নিয়ে
‘এখন এসো না প্লিজ’, আমি বলি মাথাটা ঝাঁকিয়ে।
ঈশ্বরালোকে
যেখানে আমি– সেখানেও
শোভাদি এসে
দুম করে খোঁপাটা খুলে
খালি খালি আমাকে বকে!
ভূতোভূতির রূপকথা
এক চিলতে অন্ধকারে
কে কার শ্বাস নিয়ে
পালিয়ে গেল খোলা দরজা দিয়ে
বলল বোধয় : এই অন্ধটারে
এই দুনিয়ায় দরকার কি
রাখো না বাঁধিয়ে?
বিশ শতকের পয়লা যেমন
সাদাকালোয় ভুল সাহেবি ঢঙে
বাঁধিয়ে রাখা হত ছবি মরচে পড়া বকুল ফুলের রঙে,
যে শ্বাসগুলি নিয়ে গেলাম
ওগুলোতেই বাঁচব তুমি-আমি,
পদ্যমাতাল শাহবাগে মদ না খেয়েই করব মাতলামি!
যখন তুমি চুমু দেবে
একটি শ্বাস পড়বে আমার গালে,
আমি তখন তলিয়ে যাব তোমারি পাতালে।
সরকারি যে বাগান থাকে
দেয়াল ঘেরা তার,
সেইখানেতে দুয়েকটি শ্বাস চাদর তুলে করব বিস্তার
এই যে হত্যাকাণ্ড হল
আবার কিন্তু বোলো না আম্মাকে?
তুমি তো খুব খরুচে আর
সবতে তাড়াতাড়ি
তোমার জন্যে এ সংসার- কি টেকাতে পারি!
হিসাব করে চলতে হবে
মাত্রা ছাড়া কবি,
নইলে কিন্তু বন্ধ হবে সাধের চলচ্ছবি।
পরের শ্বাসে বেঁচে আছি
আমরা ভূতো-ভূতি,
সাহেব হারামজাদা বুঝুক আদর্শ বিচ্যূতি।
বেটা বরং ছবি হয়ে ঝুলে থাকুক পলেস্তারা খসা দেয়ালটিতে
এত্ত দেরি! আসছে না বাস
তোমায়-আমায় বাসর ঘরে পোঁছিয়ে দিতে!
মন্দোদরী
হতভাগা, ফিরে এসেছিস যদি
মাথা কেন নীচু, মুখ কেন কালো?
ভাবছিস ওরা কিভাবে কিভাবে নিশিদিন ধরে শরীর জুড়াল?
গাধা কোথাকার!
শরীর জুড়ানো মানে কি
শরীরে কুলায় ঠিক যতটা পরিধি!
নাকি আরো কিছু, পাহাড় শীর্ষে আরোহন?
নাকি বাতি নেভাবার আগে মাথা-মন টন টন টন।
পালিয়ে কি এলি তুই আত্মক্ষয়ের থেকে বাঁচতে?
এত ভয়? বলছিস কথা এমন আস্তে আস্তে!
হ্যা রে, তুই ছিলি ফেটে পড়া লাল
আর আজ? স্তব্ধ হয়ে যাই তোকে দেখে–যেন চুরি করে দুধ খাওয়া নির্লজ্জ বিড়াল!
চাঁদি ও কপাল একাকার–
শিঠিয়ে গেছিস, আর– সময়ও শেষ–সরসে পাকার!
ওরে তুই! পা হড়কে পড়ে গিয়েছিলি? চিবুকের ছায়াও গেল এত দূর
যে, ছুঁয়ে র’ল ঠোঁট মৃত্যুর!
এসেছিস, যাক, কথা বল নতুন লক্ষ্য বা ঠিকানার
শোন রে কলের গান ফুঁসে ওঠা ভজন মীরার!
নে, আগে তো নাস্তা খেয়ে নে,
বই একটা এসেছে বটে, একটু আরাম শেষে পড়ে নিস নে।
কে জানে নতুন বাচ্যার্থ মিললেও মিলতে তো পারে,
মিথ্যা দুষিস না তুই পরা–আয়নারে।
জানিস তো–নিজেরও নামপদে ক্রিয়াভিত্তি থাকে,
কত শক্তি জানিস না হাজার মৌমাছির এক মৌচাকে!
রুখু দাড়ি, চোখের ময়লা আর এলো চুল,
এখনও কি খুঁজে তুই পেলি না পারুল!
একি অসম্ভব কথা, স্পর্শ করে দ্যাখ না নাভিতে,
ওখানেই মূল নাম লেখা ফারসিতে!
কত যে ছুটতে পারতিস তুই, শুয়ে র’তি পিটিআই মাঠে,
তোকে দেখেছিল জলি আর ওরাও তো– যমুনার ঘাটে!
একদম নিভে গিয়েছিস, লাল নাই, তাতে কি? হয়ত নীলেই
খোঁজ পাবি তার–চিদঘন কোন মুহূর্তেই!
যা, মুখ ধুয়ে আয়, উর্ধ্ব জিবে চুম্বন করি,
আরে বোকা আমিই তো পারুল, শোভাদি–একই মন্দোদরী!
বৃষ্টি
হোতো যদি এক পশলা বৃষ্টি ক্ষতি হোতো তাতে?
পুলিশ তো ঠিকই নামে সদর রাস্তায়
তার মধ্যে একটি লাল গাড়ি কি ছুটে যায়
আমরাও তখন ব্যস্ত ছিলাম পাহাড় ধসাতে
কঠিন প্রতিজ্ঞায় দাঁত চেপে দাঁতে!
এক পশলা বৃষ্টি মাত্র– আর তার কয়েকটি ফোঁটা
ছিটকে এসে লাগতে পারত না আমাদের মরণের কালে!
দুই বোন দুজনকে কিন্তু ঠিকই দিয়ে যাচ্ছে খোটা,
রক্তমাখা জামাখানি শুয়ে আছে ইতিহাসপাতালে।
কি এমন হোতো নামলে বৃষ্টি-
লাইব্রেরি ছিল আরো কিছু দূর,
ততক্ষণে, ততক্ষণে গল্পের ছলে
ভেজা বৃষ্টির গন্ধ মাখা আতস কাঁচে
দেখতে পারতাম নাকি একজোড়া আগুনে মসুর!
দ্যাখো, দণ্ডমুণ্ডের ছেলেরা নেমে গেল দলে দলে
তাহলে আমরা কিভাবে পড়ব ‘রাত ভরে বৃষ্টি’ বুদ্ধদেব বসুর!
রাত ১১:৩০ এর পদ্য
কি দিয়ে কি হল তালগাছের অপমান– অসার্থক জনম মাগো– হাতপাখা আর কে বানাবে, রুলি দোলা হাতে হাতপাখা কে চালাবে গ্রীষ্ম মৌসুমে, চায়ের বাসরে যে মেয়েটিকে আশু প্রয়োজন হয়েছিল আমার, জিজ্ঞেস করা লাগবে ওকে, জগন্নাথ ঘাট এখনো আছে কিনা, খলবল সেই ঘোলা জল! এই দ্যাখো এতক্ষণ পর বাকীদের মত আমারও হুঁশ হল যে আমি মদ খেয়েছি যদিও সামান্যই আর তার ফলে কিঞ্চিৎ মাতালও হয়েছি- এখন, যেভাবেই হোক যমুনাকে বুকে নেব, আচ্ছা, একটা কথা, ওকে কি শ্যালিকা বলতে পারব আমি যদি ইচ্ছা জাগে তা না হলে এ কেমন বদমায়েসি হল দু হাজার চব্বিশ শেষে? তবে তার আগে শুনি, ও ভোট দ্যায় কাকে আর হার খুলে দিয়ে বলে কিনা মদ খাও আরো মাত্র তো পোনে বারো তালগাছখানি এরই মধ্যে প্রবেশ করাবে- না করলে যার যার তালগাছ অপমানিত হবে, হলে, আমাদের রাজনীতি এবং সংস্কৃতি নিয়ে মোহাম্মদ আজম কিছু বললে ভালই তো হয় আর আমি তো প্রস্তুত যথারীতি জগন্নাথ ঘাটে আম্মা-আব্বার হাত ধরে দামি দামি লেকচার শুনতে… ঢেউ গুনে গুনে ঢেউবিদ্যা বিশেষ না জেনে…