spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতানয়ন আহমেদ এর কবিতা

নয়ন আহমেদ এর কবিতা

১.

পাথর

একদা , পাথরের পাশে আমি রাখলাম
                        দুইটি গোলাপ।  
ফিক করে হেসে উঠলো সে। প্রেমে সর্বাঙ্গ লাজরঙা হলো।
নববধূর মতোন তাকে একটা  প্রগাঢ় চুম্বন করলাম।
প্রকৃতই, আমার জানা ছিলো-
                        প্রেম এক গভীর সূর্যোদয়।
আমি,তার জন্য ছড়িয়ে দিলাম-
চব্বিশ হাজার দীর্ঘ রাত, বিরতিহীন ধ্রূপদী ইহকাল।
তার কালো কেশের মতোন আমি অনুভবযোগ্য
প্রথা বানিয়ে দিলাম।
বলো- জিন্দাবাদ ! জিন্দাবাদ !
একদা , পাথরের পাশে আমি রাখলাম
                        দুইটি গোলাপ।  
পাথর তার চোখ তুলে
                      আমার হৃদয় পাঠ করে প্রেমের মুরিদ হলো ।
বললো-“ হে আমার নবি, পরাও কলমা তোমার।”
মানুষেরই বড় বেশি বক্রস্বভাব।
প্রেম বুঝবে না।
                                    

২৮.০২.১৬

২.

 নখ
             
তার একটা নখের সমান আমি
                 পেয়েছি ভালোবাসা।
এই সঞ্চয় ঝরিয়ে দিলো একটা ঝরাপাতার হাহাকার।
কাকে বলে শুশ্রূষা? প্রেম কাকে বলে?
ঘাসেরও হৃদয় আছে্।
উদ্বাস্তু হলে সে ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
আনন্দেরও আছে অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি অবস্থা।
সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা আছে কিছু বেদনার।
         খুঁজে নেবে তীর্থপথ।পুণ্য অর্জনে মনোযোগী হবে।
এই বিবেচনায়, রোদও কুড়োতে যেতে পারে তার
                            নিজস্ব ছায়া, প্রলুব্ধ রঙ।
আমি যাবো না কোথাও।
আমি, নখগাছটার কাছে বসে থাকবো
                বেহায়ার মতো।
বলবো, ওটুকুনই দাও।
অনুগামী দুঃখের সাথে কিছু প্রযত্ন উত্তাপ মেশাই।
      একটা লেবুর পাতার মতো সার্থকতা হবে।

তার নখের সমান আমি
পেয়েছি ভালোবাসা।
খুব যত্ন করে রাখি মহামূল্য ধন।
একটুকরো মাটিরও রয়েছে মৌলরসায়ন,
                  স্বাধীন বিকাশ।
উদ্বাস্তু হলে তার হৃদয় পুড়ে যায়।
বেদনারও আছে সহজ সমাজবিজ্ঞন।
আমি, আঙটির মতো দৃষ্টিগ্রাহ্য করি তার ভালোবাসা।

২৯.০২.১৬

৩.

অরোরার প্রার্থনা

তোমাকে চেয়েছিলাম আমি, টিথোনাস:
যেমন দিবসের  অপরিহার্য আকাঙ্ক্ষা-রোদ;
রাত্রির পরিণামদর্শী প্রার্থনা-অপূর্ব গাঢ় কালো।
পৃথিবী চাইতে গিয়ে রোদের কথা ভূলে গিয়েছিলাম।
আসলে, আমাকে অমর দেবতারা  ঠকিয়েছিলো।
কে না জানে- পৃথিবী এক পাঠযোগ্য হৃদয়।
আমি হৃদয় চাইতে গিয়ে তার সহোদরা রাত্রিকে ভুলেগিয়েছিলাম।
আসলে, আমাকে অমর দেবতারা প্রতারিত করেছিলো।
এখন আমি দৈর্ঘ্য -প্রস্থহীন ঈর্ষা প্রার্থনা করি।
প্রভু দাও ঈর্ষাভর্তি হৃদয়, দেবতারা জ্বলুক, ছাই হোক তার রূপে।
টিথোনাস, আত্মা আমার! ঘাসফড়িং হয়েই আমার 
ঠোঁটে একটা হালকা চুম্বন আাঁকো চিরকাল।
আমি পাবো তোমার হৃদয়, স্মৃতিবিজড়িত সেই সব লালকামনা।
কামরাঙ্গার মতো টকমিষ্টির সহজাত প্রত্যয়।
আমি উষাদেবী। জীবনকে স্বাগত জানাবো।

তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে অশ্রু ঝরাবো।
রোকেরা জানবে- সকালের শিশির মুক্তোর দানার মতোন।

০৩.০৩.১৬

৪.

বাঘ ও হরিণ

সুন্দরবনে আসো একবার ।
বাঘের রাজনীতি শেখা হবে ।
তার আছে সম্ভ্রান্ত ওঁৎপাতা,
                    মহীয়ান থাবা ।
বাঘেরও শিল্পকলা আছে !
এসব খুব জানা দরকার ।

বাঘ থাকলে হরিণও থাকে ।
সুতরাং, ধাওয়া – পাল্টা ধাওয়া থাকা উচিত ।
কিন্তু, হরিণেরা পিছুটান ভালোবাসে ।
প্রতিরোধ শেখা হয় নাই তার ।
অতএব, তার মাতৃভাষা উন্নত করার
                      প্রস্তাব করা যেতে পারে ।
সুন্দর বনে আসো একবার ।
হরিণের প্রতি তোমার পক্ষপাত থাকতে পারে ।
হরিণেরও শিল্পকলা আছে :
সবুজ ঘাসের ওপরে আকাশ ।

০৪.০৩.১৬

৫.

একলব্য

: কে যাচ্ছে তীব্র রোদ, বাতাস আর যৌবন কাঁপিয়ে?
কে এমন শিস দেয়? কার তীর বিদ্ধ হয়?
কার এমন মাতৃভাষা হৃদয়ের খুব কাছে স্বপ্ন ছড়ায়?
কে এমন ছুড়ে দেয় সদ্যোজাত জীবনের ফুল?
কে এমন তীরন্দাজ সম্ভাবনা বিনির্মাণ করে?
– একলব্য।
: নামগোত্রহীন একলব্য? রৌদ্র উঠায় আর নদীর স্রোতের মতো প্রবাহিত করায় আনন্দ! পাখিরা সঘন সুরে সেই সুর ডাকে।প্রজাপতি সেই রঙে পাখনা দোলায়।
দোলায় সমূহ সম্ভাবনা। আমার লাগে না ভালো।
ও গুরু, ও আচার্য , কী করি!কী করি!
কী করে যে এত সুর একলব্য পায়?
-ও পেয়েছে স্থিরতা, শান্ত-নম্র উষা ও গোধুলি ; পেয়েছে অসীম এক চিরুনির মতো উদারতা।
কেবল সৌন্দর্য বোঝে। সাদা দাঁতের মতোন শুভ্র পৃথিবীকে বোঝে।
স্বাগত জানাও ওকে, শুভেচ্ছা জানাও। গোলাপে গোলাপে ওকে আলিঙ্গন দাও। অভিষিক্ত করো।
: না গুরু, এমন আমি চাই না কখনো। আমি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পছন্দ করি না। ওর হাত ও আঙ্গুলগুলো কেটে দাও। কেটে দাও গুরু! ওর জন্য পঙ্গুত্বের সু-সংবাদ দাও।
…………………………………………………………….
(টীকাঃ একলব্য মহাভারতের একটি অসামান্য চরিত্র। মহামতি অর্জুন তাকে সহ্য করতে পারেন নি। গুরু দ্রোনাচার্যকে তিনি একলব্যের আঙ্গুল কেটে দিতে বলেছিলেন: যাতে সে তীর না চালাতে পারে এবং তার সমকক্ষ না হয়ে উঠতে পারে।)

০৫.০৩.১৬

৬.

অ্যারিস্টটলের সর্বশেষ উক্তি

পাখিদের মারণাস্ত্র নেই।
তোমাদের আছে।
তোমরাও উড়বে আকাশে ।
তবু পাখিদের মতো নয়। আনন্দের প্রাচুর্য পাবে না।
উড়বে তোমরা প্রাজ্ঞজন আর ছড়াবে হিংসার ধুলি,
ঘৃণা ও ঈর্ষার বহুমুখী পণ্যসম্ভার।
ওহে, তোমরা প্রকৃত উড়াল জানবে না।
খুঁটে খাওয়া জীবন পাবে না।
পাখিদের ভিসা নেই।
পাখি কোনো সীমানা মানে না।
পাখিদের জাতীয়তা নেই।
কাঁটাতারে বিদ্ধ হবে তোমাদের আজন্ম নির্মাণ।
প্রত্নরোদ গুম হলে নামবে অন্ধকার।
ডুবে যাবে হতাশায়।
অন্ধত্বের অভিশাপ নিয়ে কতদূর যাবে?
হাবুডুবু খাবে।
শেষমূহূর্তে আমাকে আর একবার দ্যাখো।
আমি পছন্দ করেছি পাখিদের রাষ্ট্রসংঘ;
আর ইকারুসের আকাশ।
০৬.০৩.১৬

৭.

পৃথিবী

মেয়েটির মা বলে, “একটু যত্ন করে পড়াবেন, স্যার ।
ও আকাশের সমান ঔদার্য নিয়ে পূর্ণ হতে চায়।”
আমি তাকে পড়াই কী করে আকাশকে শাড়ির মতো
মেলে ধরতে হয়, শুকোতে দিতে হয় বুকের গভীরে।
জীবনকে ভাঁজ করতে হয় রুমালের মতো।
একটা সকাল পুষে রাখতে হয় পৃথিবীর জন্য।
সে পড়ে ঘাসের সহজ সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদের
          সবুজ দর্শন আর কলমিশাকের মতোন সহপাঠ।
আর্তনাদ বৃুঝবার জন্য দুঃখ
আনন্দ বুঝবার জন্য রোদ
ভাষা বুঝবার জন্য পাখির উড়াল
আর দাঁড়িয়ে থাকবার জন্য সূর্যের মতো উজ্জ্বল বিবেচনা।
ছোট্ট মেয়েটি পড়ে এইসব মানবিক বিজ্ঞান।

মেয়েটি একদিন কাঁদ কাঁদ স্বরে বলে, “ হঠাৎই রক্ত গড়াচ্ছে !
কেটে গেছে মনে হয়, স্যার !”
বলি,” তোমার মায়ের কাছে যাও।”
মেয়েটি পড়বে কিছু নিবিষ্ট জীবন।

মা, তুমি পৃথিবী বহনকারী হবে।

০৯.০৩.১৬

৮.

পাপোশ

আমার ব্যথা মুছে দিচ্ছে ঘাস।
এতো আরোগ্য জানে!
পা বলছে- একটু থামো, জিরাও।
তোমার দেখা হবে নৌকার গলুইয়ের মতো বাড়ি ফেরা।
টানটান হয়ে আছে মানুষের সংসার;
রক্তগোলাপের মতো যাবতীয় সহপাঠ।
কী দ্যাখো হে চোখ?
তুমি কি রচনা করো সম্পর্কের অশ্রুতপূর্ব অভিধান?

মুছে দিচ্ছে সব অশ্রুপাত।
ঘাস বলছে- তরকারির মতো টুকরো টুকরো করে কেটো না হৃদয়।
তোমার জানা হবে-মানুষের আছে নদীর মতো পূর্ণতা।
আনন্দ-পাকা ধান ভরা উঠান।
আর আমলকির মতো মনোযোগী প্রত্যয়।
বুঝবে-গভীর শুশ্রূষা?
বুঝবে ও -মানুষ? বুঝবে?

১০.০৩.১৬

৯.

প্রেমের নবি

তোমাদের নগরে নেমে আসবো আমি,
পোড়াবো হাহাকার।
ভেবে দেখেছি – একজন প্রেমের নবি দরকার।
তোমদের আছে –
বাসি রোদ
চূর্ণ-বিচুর্ণ অবকাশ
ভাঙ্গা দুপুর , উপুড় করা শূন্যতা
ঘর্মাক্ত, তেলচিটচিটে গোধুলি
মৃত মাছের চোখের মতো রাত
গম্ভীর আমলাতান্ত্রিক খাট-পালঙ্ক-চেয়ার
ফরমালিন মেশানো শুভ্র হাসি, একটা চৌকোণা জিঘাংসা
পোড়ারুটির মতো ফোসকাপড়া আকাশ।
বিশ্বাসভঙ্গের শ্রুতিলিপি, অতৃপ্ত সংগম।
আমার সাথে সাথে বলো-নাউজুবিল্লাহ!
আমি তোমাদের নগরে আনবো
নদীর চরের মতো ফরশা কিতাব।
বোনের চিরুনির মতো নিষ্ঠা
বসন্তের ঝিঁঝি ডাকা দুপুর
দোয়েলের অবশ্যসম্ভাবী মাঠ
ধানখেতের সরু পথ
গাছের পাতার মতো মানুষের উদারতা, প্রকৃত ঘরবাড়ি।
ফাল্গুনের কোকিলের মতো একবার সুর করে বলো-“কুহু”!
ভেবে দেখেছি- একজন প্রেমের নবি দরকার।

০৮.০৩.১৬

১০.


স্ত্রী, শিরিন আক্তারকে

আজ আমি ভাববো চুপচাপ।
আমার সংসারে এতো ঘোরলাগা রৌদ্রময়
ভালোবাসা কে ছড়িয়ে দিলো !
পানির গ্লাশে দেখি ঢেউ তুলছে
একটা নিজস্ব যমুনা।
মাছে-ঝোলে-তরিতরকারিতে হাসছে
বাংলার সব শাদা শাপলা,একাগ্রতা !
তার ডানহাত এতো স্বপ্ন বোনে ক্যানো !
কোন মাকু তার হাতে ? কোন ভাষা তার চোখে প্যাসিফিক হয়ে  বয়ে যায় !
তার দুইহাত ক্যানো সংসার সংসার শব্দে এতো উঁচু হয় ?
তার চুলে মেঘের মতোন নামে
রহস্যের ছায়া। নামে বৃষ্টিধারা।
তার কাছে একটু জিরাবো।
বলবো- নির্ভরতা দাও।
যেমন দিবস দেয় সব উজ্জ্বলতা।
কৃপণতা শেখেনি কখনো।
একটা লাউয়ের পাতার মতো সবুজের অনন্যো নির্মাণ।
আজ আমি ভাববো চুপচাপ।
আমার সংসারে এতো রঙলাগা খনিঘুম
কে ছড়িয়ে দিলো !
তার প্রাচীন নিশ্বাসের রোদে ও আলোতে
আমি ভালোবাসা হবো।
আজ ভাবনা -দিবস।
শিরিন আক্তার,
আমি হোরাসের মতো তোমাকে ভাববো চুপচাপ।


০৭.০৩.১৬

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ