spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগল্পপেঁয়াজ থেরাপি

লিখেছেন : টুটুল রহমান

পেঁয়াজ থেরাপি

টুটুল রহমান

পুরান ঢাকার চার কুট্টি যুবক। এদের মধ্যে কেউ অর্ধ বেকার, কেউ পুরো বেকার। কেউ ছদ্ম বেকার। অসুবিধা নাই। এদের বাপেরা কেউ বাড়ি ভাড়া দেয়, কেউ বাড়ির নিচতলায় গোডাউন বানিয়ে ভাড়া দেয়, কেউ সাইকেল রিকসার পার্সের দোকান করে। এদের মধ্যে দু‘একজনের নব বিবাহিত বউ আছে। কেউ মহল্লার হাজি সাবের মেয়েটার সাথে টাংকি মারছে। এরা কেউ কেউ রাজনীতিও করে। সরকারি-বিরোধী। মুছে যাওয়া বিরোধী দল। সরকারে থাকতে টেন্ডার পায়। রাস্তার কাজ পায়। সরকারি অফিস আদালতে তদবির করে। সরকারের বাইরে থাকলে টেংরিতে পুলিশের বারি পড়ে। কোমরে ইয়াবা-গাঞ্জার পুরিয়া পাওয়া যায়। কয়েক মাসের জেল হয়। জামিন হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এদের বন্ধুত্ব কিন্তু নিখাদ। দিনে একবার দেখা হওয়া চাই মোড়ের চায়ের দোকানে। লাল চা টোস্ট বিস্কুট খাবেই খাবে। তারপর মহল্লার গল্প। রাজনীতির গল্প। সেক্স-ভায়োলেন্স। ঢাকাই ছবি।

ওমা আজ গল্প শুরু করে নান্নু। তাও আবার পেঁয়াজ নিয়ে।

–ওই তরা হুনছতনি। দুপরে কি হইছে। বিরানী খাইতে গেছি মহল্লায়। হালায় পিঁয়াজ দিবো না। মেজাজটা ক্যামুন লাগে। অর মায়রে বাপ। দিছি হালারে চটকানা লাগায়ে। হালায় কান্দে আর কয় দাম বেসি ওস্তাত। দিমু কেমতে?

নড়ে চড়ে মন্টু বলে, ‘হ আমার ভি আরেক গল্প। হালায় বউ ডিম ভাজছে পিঁয়াজ দেয়নাইক্কা। ‘মায় কয় বউ তোমরা এ কালের মাইয়া। পিঁয়াজ ছাড়া রান্ধন পারো নি? সরকার তো কইছে পিঁয়াজ ছাড়া রানতে। পারোনি?’ 

হালার বউ কেরামতি দেহায়।

খাওনের সময় পিঁয়াজের কচকচ আওয়াজ না হইলে খাবার ভি পারি না।।’

দুই বন্ধু আক্ষেপ করে। কি যুগ আইলো। হালায় ২৫০ টাকা পিঁয়াজের দর? খামু কি? ওর মায়রে বাপ।

তাদের তুমুল আড্ডার মধ্যে, মূল্যস্ফীতির আনাড়ি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মধ্যে মনে পড়ে রমজান হাজি মহল্লার আড়তদার। কাঁচামালের বাপ-দাদার ব্যবসা তার। শোনা যাচ্ছে সে পেঁয়াজ মজুদ করে মহল্লার মানুষরে কষ্ট দিচ্ছে। রোজার সময়ে করে ছোলা-বুট মজুদ।

নান্নু চা শেষ না করেই টুল থেকে উঠতে উঠতে বলে, আয় আমার লগে।

তিনজন সমস্বরে বলে, কই যাবি। চা খা?

–না আয়। কাম আছে। ডিম থেরাপি তো হুনছস। মাগার পিঁয়াজ থেরাপি আজ হুনবিও, দেখবিও। আয় জলদি ল।

তারা হনহন করে উঠে যায়। উত্তেজনায় কাঁপে নান্নুর হাত পা। দু‘মিনিট হেঁটেই রমজান হাজির আড়তের সামনে দাঁড়ায় চার বন্ধু।

রমজান হাজি গদিতে বসে আছে। চেহারার কি রোশনাই। চুলে হালায় কলপ দিয়েছে। বুকে মাখছে সুগন্ধি। এমন ভাবে বসে আছে যেন পেঁয়াজ নয় হালায় ডায়মন্ডের বিজনেস খুলছে।

চার যুবকের আদর আপ্যায়ন শুরু করে আড়তদার রমজান হাজি।

–আহো ভাতিজারা? কি খবর তোমগো। প্রোগ্রাম-মোগ্রাম আছে নি? চাঁন্দা লাগবো? বও। এই ছেরা দুইডা ঠান্ডা আন।

নান্নু বলে, ঠান্ডা গিলবার আহি নাইকা। হুনলাম। গুদামে পিঁয়াজ ভরছেন। হালার দ্যাশের মাইনসে পিয়াজ পায়না। আপনের গোডাউনে পিঁয়াজ পচে। লন আমগো লগে। গুদামে রেড দিমু?

–তোমার ক্যামতে কি হোনো বাবারা জানি না। একদানা পিয়াজ নাইক্কা। বও বও। মাথা ঠান্ডা করো। বাড়ায়ে দিমুনে।

–নানা চাচা। আইজ টেকাটুকা চাই না। পিঁয়াজ দেখবার চাই।’

ওরা আর কথা বাড়ায় না। রমজান হাজিকে চেংদোলা করে তার আড়তের পেছনে নিয়ে যায়। যেখানে বস্তা-বস্তা পেঁয়াজ সারি সারি করে রাখা। ছেলেটা ততক্ষণে ঠান্ডার বোতাল খুলে গেলাসে ঢেলেছে।

নান্নু বলে, ওই চাচারে উবুড় কর। ঠ্যাং ফাঁক কইরা হোগার ছিদ্র সই কর।

মন্টু বলে, কি করবার চাস তুই?

–বুজবার পারতাছস না। হোগার মইদ্যে পিঁয়াজ হান্দায়ে দিবু।

সব চেয়ে চুপথাকা হীরাও কথা বলে উঠে। হালা, ছিলকাসহ যাইবো? বাইজা পড়বো না?

নান্নু বলে, তয় যা গ্যারেজ থিকা গিরিজ আন?

যেই কথা সেই কাজ। গিরিজ আসে। রমজান হাজির গুহ্যদ্বারে মাখায়। পটাপট পেঁয়াজ ঢোকায়। একজন খিলখিল করে হাসে আর বলে, ২০ লম্বর। রমজান কোকায়। শব্দ বের হয় না। এক বন্ধু তার মুখ চেপে আছে।

কাম সেরে ওরা বেরিয়ে যায়। রমজান হাসি ঠেলাপেরে রাস্তায় আসে। ততক্ষণে হোগার মধ্যে, পেটের মধ্যে ব্যথা শুরু হয়েছে।

ডাক দেয়, ওই ছেরা, রিক্সা ল। ঢাকা মেডিকেল। পেটভি ফাইটা যাবার পারে।

ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি বিভাগের তরুণ ডাক্তার রমজান হাজির পেট টিপে বলে, চাচা কি খাইছেন?

–রমজান হাজির পেটে তখন তুমুল ব্যথা। আর ঘটনার পরম্পরায় সে মহা বিরক্ত হয়ে ককাতে ককাতে বলে, কি খামু, বিরানি খাইছি, গোস খাইছি, পায়েস খাইছি, ফিরনি খাইছি। জনমের খাওন একবারে খাইছি। হারা জমন ভর খালি খাইছি। ওমাগো। বাবাগো। হুমন্দির পোলারা কি কারবারডা করলো গো..

তরুণ ডাক্তারের সন্দেহ মনে দানা বাঁধে।

–না চাচা। গোটগোট শক্ত শক্ত কি যেনো আঙ্গুলে বাঁধছে। সত্যি কথা বলেন। ডাক্তারের কাছে কিছু লুকাতে নাই।

হালার ছাপামু ক্যালা। হুমুন্দির পোলারা হোগার মইদ্যে পিঁয়াজ হান্দায় দিছে। পেট ভরতি পিঁয়াজ। অহন কাটেন। বাইর করেন। পরাণ পাখি ভি লৌড় না দেয়… ও মাগো। বলেই রমজান হাজি অজ্ঞান হলো। তার পেট কাটা হলো। আস্ত এক কেজি পেঁয়াজ বের হলো। ডাক্তার সেগুলো যথা সম্ভব খাওয়ার উপযোগি রাখলো। টিভিতে স্ক্রল গেলো। পুরানো ঢাকার এক আড়তদারে পেট থেকে এক কেজি পেঁয়াজ উদ্ধার। সুন্দরি প্রেজেন্টার নিউজ পড়ার সময় একটু মুচকি হাসলো। নান্নুরা টিভিতে খবর দেখে বলে, হালায় বাঁইচা রইছে তাইলে।

তিনদিন পর চোখ খুলে হাসপাতালের বেডে শুনে রমজান হাজি বিড়বিড় করে বলে, অগো নামে আমি মামলা দিমু।

কিন্তু হোগায় পেঁয়াজ হান্দানোর মামলার আরজিতে সে কি লিখবে? ভেবে কুল পায় না। তার পেটের সেলাইয়ে টান লাগে। সে কো কো করে উঠে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ