অনুপম মুখোপাধ্যায়
মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিঃসন্দেহে বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। কিন্তু আজ তিনি বিস্মৃত। একটু অদ্ভুত শোনালেও একথা সত্যিই যে আজ মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বিদ্যায়তনের বাইরে কেউ পড়ে না। এ যে কত বড় অভিশাপ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আজও সিরিয়াস কবিতাচর্চার এভারেস্টের নাম মাইকেল মধুসূদন। এমতাবস্থায় ‘কবিতীর্থ’-র মত একটি অগ্রণী পত্রিকা এগিয়ে এসেছে এক বিশেষ সংখ্যা নিয়ে। এই সংখ্যা এক রত্নখনি। অনুবাদের মাধ্যমে এই প্রথম আমাদের চোখের সামনে এল মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচনার একটা বিরাট অংশ। তাঁর দীর্ঘ কবিতা ‘রাজা পুরু’ এর আগে কজন বাঙালি পাঠক পড়েছেন আমার সন্দেহ আছে। এভাবেই আছে তাঁর আরো কিছু ইংরেজি কাব্য, পত্র কাব্য, চিঠিপত্র এবং প্রবন্ধের অনুবাদ। আছে সেই রাজনারায়ণ বসু থেকে শুরু করে আজকের তরুণ প্রাবন্ধিকের মূল্যায়ন।
এই সংখ্যার শুরুতেই রয়েছে মহাকবি মাইকেলের কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র, মধুসূদনের লেখার নির্বাচিত অংশ-গীতিকবিতা, চতুর্দশপদী কবিতা, পত্রকাব্য বীরাঙ্গনা কাব্য থেকে। এরপর সংযোজিত হয়েছে বাংলা ভাষায় একেবারে নতুন, মধুসূদনের ১০টি ইংরেজি সনেটের বাংলা-অনুবাদ; অনুবাদ করেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি সায়ীদ আবুবকর। মধুসূদনের দীর্ঘ ইংরেজি কবিতা ‘রাজা পুরু’, যেটা আমার মতে বাংলা ভাষার এক বড় অর্জন। এটিও অনুবাদ করেছেন সায়ীদ আবুবকর। ক্যাপটিভ লেডি-র বাংলা অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট কবি অংকুর সাহা। এটিও বাংলা ভাষায় প্রথম অনুবাদ।
ছাপা হয়েছে মধুসূদনের উপর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। প্রবন্ধ লিখেছেন রাজনারায়ণ বসু, শ্রীশচন্দ্র মজুমদার, আশুতোষ ভট্টাচার্য্, হুমায়ুন আজাদ, মলয়রায় চৌধুরী, বিপ্লব মাঝি, সায়ীদ আবুবকর, হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়, ইউসুফ মুহম্মদ, অনুপম মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, বোধিস্বত্ব ভট্টাচার্য প্রমুখ। নিবেদিত কবিতা লিখেছেন রেজাউদ্দিন স্টালিন, ওমর কায়সার, দেবাশিস তেওয়ারি, প্রবাস দত্ত, লীনা দাস প্রমুখ। উপরি পাওনা হিসেবে আছে বিনয় মজুমদারের উপর একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র। সেখানে বিনয় মজুমদারের কবিতায় গণিতের ভূমিকা নিয়ে অমলকুমার মন্ডলের প্রবন্ধটি এক বিশেষ প্রাপ্তি। অমলকুমার মন্ডল ‘কবিতীর্থ’-এর নতুন সম্পাদক হিসেবে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। উৎপল ভট্টাচার্যের অনুপস্থিতি আমরা টের পাচ্ছি না, যদিও তাঁর শোক আজও হৃদয় দগ্ধ করছে। এ কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়।।