spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতামহিবুর রহিম এর কবিতা

মহিবুর রহিম এর কবিতা

আশার ওঙ্কার

একদিন আগুন স্বপ্নের মাঠ পার হয়ে

পৌঁছে যাই তিয়াসা নদীর কাছে

যার ঢেউ থেকে উথলে উঠে

ক্ষুধা নিবৃত্তির নিগুম উচ্ছ্বাস

যার ঢেউ লেগে অব্যক্ত যুগের মতো বিরান প্রান্তরও

কথা বলে অর্থবোধক ধ্বনি ব্যঞ্জনায়

তীরভাঙা রেখাচিহ্নগুলো যেন নিয়তির মতো

আমি এক বটের শিষ্যত্ব নিয়ে তার নিগূঢ় ছায়ার আশ্রয়ে

শিখলাম নির্জনতার বিয়াল্লিশ হরফ

আমার অন্তরাত্মা হয়ে উঠলো চাষ দেয়া জমিনের

মাটির রহস্য ঘ্রাণ

দগদগে ক্ষতের মলম হলো সবুজ পাতার ক্লোরোফিল

আমার সাদা দীলের আকাশে উড়লো সেই আশার পাখিরা

যার জন্যে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে মাটিকে বিদীর্ণ করতেন পূর্বপুরুষেরা

প্রতিটি ব্যর্থতার রোয়ায় তারা পুতে রাখতেন

অসম্ভব আশাবাদের জরজরে অক্ষর

আজও ঢেউয়ের গর্জনে শুনি সেই

অপরাজেয় পৌরুষের গান

আমি আজও গুল্মের প্রচ্ছদে আঁকি সম্মিলিত হরফ চাষের ইতিহাস

আমার মনন থেকে নেমে যায় আশার সন্ধানী যত শিকড়—বাকর

বুকের লোমশ চরে ভেসে ওঠে সেই মানচিত্র বা স্বাধীনতা

পাদদেশে যার আজও বয়ে চলে অদম্য রক্তের নদী

যেখানে জন্মায় ধ্বনি—শব্দ—বর্ণ সম্মিলিত আশার ওঙ্কার!

মানবিক শিল্পের সপক্ষে

(মুশতাক খন্দকার ও ক্বণন শিল্পীদের)

কখনো এমন হয় চারপাশে শুদ্ধতম ঢেউ নেই

নগরে আছড়ে পড়ে ব্যধিগ্রস্ত দীর্ঘশ্বাস

বাতাসে সিসার গন্ধ ঘুরে ফিরে অজানা উদ্বেগ

কর্পোরেট নগরীতে দিনের ভিতরে রাত হানা দেয়

একটা গোলক ধাঁধা ধবধবে সাদাকেও করে দেয় ম্লান

কেমন নিস্প্রভ  সব গৌরবের কৃতিত্ব সম্ভার

সবকিছু ঢেকে দিয়ে নামে যেন এক বালিয়ারি

উড়ায় শঙ্কার ধূলো, দীর্ঘ হয় নিঃসঙ্গতার ছায়া

ভূত আর ভবিষ্যত একাকার শুধু নেই বর্তমান!

এমন দুঃসহ দিনে আলোর মশাল হয়ে জ¦লে এই মানবিক মন

বুক থেকে সহসাই নেমে আসে মনন বিক্ষোভ

লোকে যাকে দ্রোহ বলে, মানবিক শিল্পের সপক্ষে

কবিতা কবিতা বলে আছড়ে পড়ে চেতনার উপকূলে!

এতটুকু আশাবাদ

কোন এক হিংসার কাটাবন পার হতে গিয়ে

আমার কঁচি পা দু’টো  রক্তাক্ত করেছিলাম

তা দেখে মা ভীষণ আফসোস করেছিলেন—

‘হা পুত্র আমার

এই বুক—পীঠ সরলতা নিয়া

কেমনে দুনিয়ায় চলবা!’

এখন তিনিও… অতি সুদূরের স্মৃতি

আর আমার অদৃষ্টের লেখন হয়ে গেছে

                       দুনিয়ার জিল্লতি

এই পৃথিবীর কত যে স্বার্থপর গলিপথ

একটা কবুতর হয়ে পার হতে হতে

মুখ থুবড়ে পড়েছি পথের কিনারে

দেখেছি বিশ্বাস ভঙ্গকারী শেয়ালেরা

            কীভাবে সুযোগের লেজ নাড়ে

কতোবার পড়েছি প্রতিহিংসার ঝড়ে

ডানাগুলো মুচড়ে গেছে

        বিধ্বস্ত হয়েছে পালকের গৌরব

আবার গড়ে তুলেছি স্বরচিত বিশ্বাসের ঘর

স্বজনের পিছুটান, বন্ধুর বিদ্বেষ

কখনো হিংসার আগুন হয়ে ভস্মিভূত করেছে বিশ্বাস

কতোবার মানুষের ভন্ডামীর বিশাল পাহাড়

হস্তিবাহিনির মতো পথ আগলে দাঁড়িয়েছে আমার

ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছে সাধনার সাজানো বাগান

তবু হাতে ধরে রেখেছি মায়ের আশীবার্দের মতো

এতটুকু আশাবাদ।

পুনরুত্থান

স্বপ্নের ভেতর আর আকাঙখার ভেতর

সুপ্ত ইচ্ছাটির নাম পুনরুত্থান

সজল সত্তায় আছড়ে পড়া

সময়ের প্রতিটি ঢেউ মূলত পুনরুত্থান

জন্ম ও জীবনের পক্ষে প্রতিটি চিৎকারও পুনরুত্থান

এই স্বভাবজাত চেতনাকে কোন ভাবে রোধ করা যায় না

ব্যক্তিগত বা বস্তুগত ক্রোধ দিয়ে তা কখনো রোধ করা যায় না

জলে স্থলে অন্তরীক্ষে অনবরত এক সত্য— পুনরুত্থান

রোরূদ্যমান শোকের ভেতরে

কান পেতে শুনি তার গান।

প্রতিদিন

কর্পোরেট এই যুগে সোনার ডিমের সেই হাঁস

তুমি যদি কেটে ফেলো একদিনে লাভবান হতে

নিশ্চিত তোমারও হবে অপরিমেয় সমূহ সর্বনাশ

জ্বলবে আগুন শুধু প্রত্যাশার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতে।

যেমন মৌসুম ছাড়া উৎপাদিত হরমোনিক ফলে

ক্ষণিক ব্যবসা হয়, থাকেনা ফলের সেই স্বাদ

প্রকৃতি বিরুদ্ধ কোন নীতি নিয়ে অগ্রসর হলে

একদিন ভরসার স্থানগুলো হবে বরবাদ।

ভালবাসা প্রতিদিন প্রতিক্ষণে লেনদেন হবে

সবার অন্তরে প্রেম ফুল্ল হবে প্রকৃতির মতো

সৃষ্টির নিগূঢ় রস জারিত করবে মন তবে

সহৃদয় চেতনায় অগ্রসর হবে তুমি যতো।

একটি দিবসে যদি বন্দি করো ভালবাসা প্রেম

নিশ্চিত মলিন হয়ে যাবে সেই প্রত্যাশার হেম।

অভিজ্ঞতা

মনে হচ্ছিল, কৌশলী সমরতন্ত্র এবং কূটনীতির কাছে

হাঁটু গেড়ে বসে আছে নিরীহ সময়!

যেন ভূমধ্য সাগর পাড়ি দেয়া কোন বিষণ্ণ উদ্বাস্তু

তার আকাশ কেবলি ছেয়ে আছে হতাশার মেঘে

আমি স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছিলাম

বিতাড়িত অমঙ্গল একরোখা সুখে

তার কালোকুৎসিত লেজটুকু নাড়ছিল

মানব স্বপ্নের মাঠ আহা কী রক্তাক্ত

চিরায়ত প্রত্যাশার লাঞ্ছিত ক্ষত—বিক্ষত দেহ

ক্ষুধার্ত বিধ্বস্ত সব জীবনের সামনে

সভ্যতার নামে তারা একেকটা মূলা ঝুলিয়ে রেখেছিল

এই সব সন্ধিক্ষণ বিষণ্ণ সময়কে

নতুন ভোরের কোন সংবাদ দিতে অনাগ্রহী

যান্ত্রিক তাড়না ছাড়া কোনরূপ সহনশীলতা দিতে অনাগ্রহী

তরতাজা পৃথিবীকে মনে হয় জিম্মি

আর সব ঘটনাগুলোকে মনে হয় ফিল্মি

আরোপিত মন্দা, যুদ্ধ এবং ধ্বংস

একটা কৃষ্ণ গহ্বরের মতোই সর্বগ্রাসী

চোখ মুছে আমি দেখলাম

ত্রিশ বছরের রেখা মুছে গেল

দিগি্বজয়ীদের পরিত্যক্ত কবর থেকে

উড়ছিল ব্যবিলনীয় ধূলো

আর সময়ের ভেঁজা হাতে আরও একটি সম্ভাবনার শিশু!

অধ্যাদেশ

একদা শৈশবে সব রকমের নৈরাশ্যকে নিজের জন্যে

নিষিদ্ধ করেছিলাম

আজও সেই অধ্যাদেশ বলবত রেখেছি

কতদিন প্লাবিত দুঃখের সমুদ্রকে বলেছি

আমি পর্বতের সন্তান

নিজস্ব নির্ভরতার শৃঙ্গ আছে আমার সত্ত্বায়

যখন অনন্ত যুদ্ধের ডামাডোল বাজায়

মেকি সভ্যতার নাকারচিরা

পৃথিবীর সহনশীলতাকে লেপ্টে দেয়

মানুষের রক্তে ক্ষোভে দুঃখে

আমি জলভার অশ্রম্নতে লাগিয়ে দিই

পরম আশাবাদের আরও একটি চারাগাছ

মন্দার গোধূলীবেলা শবযাত্রা নিয়ে আসে

আমাদের বস্তির সকরুণ রাস্তা বরাবর

মুমূর্ষু গণতন্ত্রের অনাথ বোনটি ভবিষ্যত আশঙ্কায়

কান্না জুড়ে দেয়

আমি তাকে বলতে পারি না আগামীকালও সূর্য় উঠবেই

তবু আমি আমার আদি শেকড়ের

আস্থাটুকু টলাতে পারি না

আমার বিক্ষত বুক জুড়ে লেপ্টে থাকে সেই 

আশাবাদের অনঢ় অধ্যাদেশ। 

শিরোনামহীন

অনেকে বিশ্বাসই করবে না

চল্লিশ বছর ধরে আমি মানুষের সন্ধান করছি

যাদের কথা শুধু শুনেছি আজও বাস্তবে দেখিনি!

মানুষেরা শুধু কী রূপকথায় থাকে?

নাকি তারা শুধু স্বপ্নের ভিতরে বাস করে?

মানুষের পদচিহ্ন ধরে হাঁটতে হাঁটতে

পথের সীমান্তে চলে এসেছি

সামনে দেখছি শুধু সীমাহীন ধুধু

এখন দুহাত ভরে আছে কিছু নিকষ হতাশা!

বিশ্বাস করুন, কতদিন

বাস্তবিক মানুষের সত্যিকার গন্ধটা পেয়েছি

তখন পুরনো আত্মবিশ্বাস বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে

স্বপ্ন—আশা—ভালবাসা আমার মনুষ্যত্বে

মেলে দিতে চেয়েছে ডানা!

কিন্তু এসবই ছিল নিতান্ত আবেগের মতোই কল্পনা

আমি দীর্ঘ হতাশার ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছি নীরবে

দেখেছি যান্ত্রিক যুগ অভিন্ন আমেজে

হেঁটে যায় শেষ দৃশ্যপটে

মানুষের নামে চতুর জন্তুরা হাঁটে প্রত্যাশার সড়কগুলোতে

সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও

থামতে পারে না নিরপেক্ষ পোশাকী সময়

জানি না কেন এখন,

     মনের ভেতরে হাঁটে

               গুচ্ছ গুচ্ছ ভয়!

বাংলাদেশ

অবিস্মরণীয় তার প্রাকৃতিক শোভা

স্বপ্নের মতন থোকা থোকা জলোগন্ধময়

চারদিকে লতাপাতা গুল্ম ও উদ্ভিদ

সবুজ ঐশ্বর্যে ঢাকা, কত শতাব্দী প্রাচীন

পরাহত আকাক্সক্ষায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়

আর বহমান নদীগুলো ঢেউ তোলে—

রক্তের স্পন্দনে। হাজার কাহিনি তার

বিচিত্র কথার জাল জন্ম—জন্মান্তরে

অজস্র উত্থান হয়ে অবিরত জ্বলে

বুক জুড়ে মরমিয়া স্বপ্নের আঙ্গিনা

অনাদির ছায়া ঢাকা পাখিপ্রীতি বৃক্ষসুখ

মানবিক রোদের বিন্যাসে।

বপন

সম্ভাবনার উত্তরাধিকারী চাষি আমি

চেতনার বীজ রুয়ে গড়ে তুলেছি নাসার্রি

প্রতিদিন বপন করে যাচ্ছি স্বপ্ন প্রেম মনুষ্যত্ব

বপন করে যাচ্ছি দুর্মর স্বাধীন চেতনা

নিশ্চিত এখানে দ্রোহি চোখে গজিয়ে উঠবে চারা

পানির বদলে তাই প্রতি বীজে ঢেলে যাচ্ছি রক্তরস

প্রতিদিন এখানে অদম্য সাহসে বেড়ে উঠবে গাছ

একদিন বটবৃক্ষ হবে আমার স্বপ্ন

সম্ভাবনার উত্তরাধিকারী চাষি আমি

শিল্পের লাঙ্গলে চাষ করি চেতনার জমি

আশার ফসল পেতে বিশ্বাসের বীজ বপন করেছি

জীবন স্বপ্নের যতো জৈবসার ছিটিয়ে দিয়েছি 

আরও বৃহৎ কোন প্রতিপক্ষ

আমেরিকা কোনদিন ভাবে নাই

                  নিরাপত্তা শুধু

ন্যাটো পেন্টাগন মারণাস্ত্রের বিষয় নয়

ইউরোপ চীন রাশিয়া ভারত ভাবে নাই

শুধু কর্পোরেট সমরাস্ত্র কূটনীতি চাণক্য কৌশল

                                         নিরাপত্তা নয়

মিথ্যার আলখেল্লা পরা  মানুষেরা ভাবে নাই

খসে যেতে পারে তাদের স্বার্থপর নিরাপত্তা বলয়

মনুষ্যত্বকে প্রতিপক্ষ বানানো খোলস মানুষেরা ভাবে নাই

আরও কোন প্রতিপক্ষ আরও বৃহৎ ক্ষমতা থাকতে পারে

ক্ষুদ্র কোন অণুজীবও মিথ্যার জৌলুশে সাজানো ক্ষমতাকে

একেবারে উলঙ্ঘ করে দিয়ে যেতে পারে!

কথিত সভ্যতা, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের নামে

মানুষ কতটা আত্মকেন্দ্রীক অর্বাচীন আত্মঘাতী

তারই দলিল নিয়ে এলো কোভিড—১৯

ধরাশায়ী হলো চীন, আর্তনাদ করলো ইতালি ফ্রান্স স্পেন

কুপোকাৎ হলো আমেরিকা বৃটেন ব্রাজিল ভারত

পৃথিবী হয়ে পড়লো অচেনা অরক্ষিত কোন অরণ্য

উদ্বেগে লকডাউনে সেটিয়ে গেল চিরাচরিত কর্মচাঞ্চল্য

মৃত্যু হলো অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষের

এই মহাপতনের নগ্ন মাঠে উলঙ্ঘ বাস্তবতায়

মন্দার রাহুঘ্রাস হাতছানি দিচ্ছে আসন্ন যুদ্ধের!

শামুকের প্রতিরক্ষা নীতি

অক্ষর জ্ঞান না জানা শামুকেরা মূলত

এই বিশ^ প্রকৃতি থেকেই সবকিছু শেখে

খাদ্যগ্রহণ প্রজনন আর আছে নিজস্ব ধরনের

দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা কৌশল

জলের বেবিচারি রাজত্বে টিকে থাকতে হলে

যে কূটনৈতিক চাতুর্য প্রয়োজন

শামুকেরা তা শিখে নেয়

মহান প্রকৃতির উন্মুক্ত স্কুলে

আমিও শিখেছি সেই ফিলোসফি

যুক্তির বদলে যুক্তি

হার রা মানা জীবন স্ট্যাটেজি

শামুকের মতো আমিও শিখেছি

এখন আমারও আত্মরক্ষার কৌশল

শামুকের খোলের মতন

আয়ত্ব করেছি সেই বায়োটেকনোলজি

দাঁতাল শূয়োরদের থেকে বাঁচার প্রযুক্তি!

বৃষ্টির রাত

অঝোর বৃষ্টির শব্দে

ঝিম ধরে আছে মধ্যরাত

গাছগুলো ভিজে ভিজে একাকার

মিকাঈলের উদাত্ত হাত

খুচরো মুদ্রার মতো ঢেলে দেয়

জলের ঐশ্বর্য

তাপিত জমিনে শুনি তৃষ্ণার জিকির

গূঢ় নীরবতার হৃদয়ে

স্বকীয় মহিমা

অতীতের কালো পর্দা সরিয়ে

ত্রিকালে ভাসিয়ে মন

বুক ভরে নিয়েছি নিঃশ্বাস

না বাচক নেতিবোধ

ডুবে যাচ্ছে চর্চিত কাদায়

কতকাল অনন্তকে ভেবে 

বন্ধ হয়ে গেছে দ্বার

অবিকল মরুভূমি হয়ে গেছে

অকথিত হাহাকার

এইসব অনুতাপ

আজ যেন সান্ত্বনার কথা বলে যায়

আর এ পৃথিবী বুনে দেয় আরও কিছু

বিশ্বাসের চারাগাছ!

শিকড়

সবুজ সম্পর্কের শিকড় ছড়িয়েছি

       মাটির নিঝুম উর্বরতায়

অনেকটা জৈবনিক রক্ত প্রবাহের মতো

      বিশ্বাস জড়ানো,  থোকা থোকা

অবশ্য তারও একটা কাহিনি আছে

সকলেই জানে, এই স্বচ্ছ নদী

            এই টিয়া রঙ বদ্বীপের চরাচর

পোষমানা পাখিদের মতোই বন্ধনে আবদ্ধ

ডাক দিলেই উড়ে আসে

       নির্ভয়ে বসে যায় বিশ্বাসের ডালে।

কোন স্বরচিত অভিমান নেই

কোন অঘোষিত দ্বিধা—দ্বন্দ্ব নেই

সব বাঁধা কাটিয়ে

     সোজা সান্নিধ্যের দিকে ধাবমান।

এমন কোন সময় বা দুঃসময় নেই

      সে আমার ডাক শুনতে পায় না

এমন কোন বেড়ি নেই,

      নেই কোন আচানক আড়ম্বর

আমি শুয়ে থাকি তার সবুজাভ বুক বরাবর

তার অকৃত্রিম বিশ্বাসের গন্ধ আমাকে আপ্লুত করে

তার ডানার উষ্ণতা ছুঁয়ে

     আমি একটা জনপদের স্বপ্ন রচনা করি।

শস্যের গন্ধের মতো শুদ্ধতম তার সান্নিধ্য

    অদৃশ্যের বন্ধনে আমাকে বাঁধে।

সান্ত্বনার সুগন্ধি পাপড়ি

কত যোগ বিয়োগের এ জীবন

ধূর্তামীর অভিধান থেকে কাটা পড়ে যায় নাম

বাঁচতে হলেও পাকা খেলোয়াড় অয়ন লাগে

তা না অইলে শান্ত সুবোধ ছেলে

গো টু দ্য পেভেলিয়ন

আমার তো পেভেলিয়নও নেই প্রভু

অসংখ্য ছেঁড়া মর্মাহত উদযাপনের অক্তে

বোল্ড আউটের লাঞ্ছনা নিয়ে হেঁটে যাই

বিদ্রুপের জয়ধ্বনি শুনি চারপাশে…

বিখ্যাত যুগের নীতি ছিড়ে খায় রোজ

আশাবাদী প্রচেষ্টার ক্ষুদ্র সব আয়োজন

যখন শূন্য হাতে দাঁড়াই

কী আশ্চর্য, তুমি আবার পাঠাও সেই আবাবিল

পাথর নয়, চঞ্চুতে তাদের সান্ত্বনার সুগন্ধি পাপড়ি!

সন্ধি

যন্ত্রের যুগ রাখে কিছু অপশন

হত্যার গেম হয় না ওভার তবু,

ভাচুর্য়ালি ভারী হয়ে থাকে মন

বাঁচার স্বপ্ন চারদিকে জবুথবু।

সিয়ানের হাতে যুদ্ধবাদের খেলা

যন্ত্রের মতোই ঘোরতর কৌশল,

উদ্বেগে যেন শেষ হয়ে আসে বেলা

কপালের ফের টেকনোক্রেটের ছল!

ডিজিটাল গেমে দাসযুগ আসে নেমে

শ্রম ধর্ষণে হাপায় যুগের বন্দি,

‘আশাবাদ’ চলে বেদনায় থেমে থেমে

অন্তিমে তবু হয় না কোন সন্ধি!

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ