spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যসাম্প্রতিক বাংলা কবিতা : তিন

ধারাবাহিক রচনা রচনাকাল : ডিসেম্বর ২০১৬ লিখেছেন : সাজ্জাদ বিপ্লব

সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা : তিন

হাসান রোবায়েত

……

হাসান রোবায়েত  (Hasan Robayet) আর হাসনাত শোয়েব (Hasnat Soyeb), নাম দু’টির মিলের কারণে গোলমাল লেগে যায়, তাদের মধ্যে কে কোনজন পার্থক্য করতে (রূপকার্থে)। এবং আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম এরা দু’জন-ই জটিল কবিতা লিখেন!

জটিল মানে, সুন্দর এবং দুর্বোধ্য, উভয় অর্থে। এবং শক্তিমান। তুলনায়, হাসান রোবায়েত, আমার কাছে একটু বেশী-ই কঠিন, পরাবাস্তব। কেমন?

চলুন, দেখে আসি, হাসান রোবায়েত এর কবিতা:

১.

মাঠ

*

নিমের আশ্চর্য কাছে কামিনীর সংসার

হাওয়া দিলে এ বাড়ির নৈঃশব্দ্যে

ধূলা ঝরে—

কেমন শূন্য হতে হতে মিইয়ে যায় করতল!

যে বাতাস তোমাকে ভেজায়

সে-ও কি আসে এই পথে, এই জামগাছটির নিচে

বিলাপমুখর কোনো সুরে দহলিজে ঝরে যায় ফুল!

অলক্ষে পথের পাশে যদি দেখা হয়, কদাচিৎ বাক্যালাপ তুলে

এইসব কথোপকথন কোনোদিন পৌঁছে যাবে

ফুল তোলা সিথানের পাশে!

সেখানেও পারাবত ওড়ে প্রাক্তন বীজের সাথে—

একটি ঘোড়ার ভেতর সারাদিন ভান করে মাঠ!

২.

দূরের শরৎ

*

পুরনো সংসার ধুয়ে যেটুকু বেঁচে যায় গৃহমূক 

অন্য হাঁসের দিকে ফিরে গ্যাছে ছাতিমের বন—

অর্জুন-হাওয়া, কেন থেমে আছো! 

বৃষ্টির ওপারে আর ভাসবেনা ব্রিজের আকাশ

তখন রোশনি আক্তার মনে হয় দূরের শরৎ!

কোথাও সমুদ্র এক সামান্য কাগজের ইতিহাস—

এই ঘাস মর্মপতনের দিন—  

যদি চোখের ফসল জুড়ে ফুটে ওঠে ঢেউ,

বিবাহিত হাওয়া 

হাতিরা আনাজভর্তি মেঘ নিয়ে যায় পুলপারে—

৩.

অর্জুন গাছ

*

যে কোনো ওয়েটার রোববার বন্ধক রেখে বলে দেবে, মেয়েটার হাঁটু থেকে রাজহাঁস অব্দি

কতগুলো মোম উপুড় করছে পরিবেশ ; চুল থেকে নাভিতক সেই থই থই করা ফল যেন

বলরুমের বাইরে লাফিয়ে ওঠে চাঁদ ; একদিন সহিস ছিলো সে-ও; দুধের কিছু কাছেই

একলা জিয়ল মাছ । হয়ত মৃদুল গাছের ছায়া ; একটা আওয়াজ কিছুতেই মেলোডি

হচ্ছে না পাতায় । সে মেঘ মনে হয় রেশনের ব্যাগ

…..

আমার জন্য আশার কথা যে, ইদানীং হাসান রোবায়েত এর কবিতা, আমার মতো পাঠকদের জন্য একটু সহজবোধ্য হয়ে আসছে।

এই কবি’র কাব্যগ্রন্থ : ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে

……

নয়ন আহমেদ

…..

আমার সমকালীন, ( ইচ্ছে করেই দশক কথাটি আনছি না, কারণ আমরা দশকের পরিচয় বা গণ্ডী পেরিয়ে পরিচিত হতে চাই) অর্থাৎ আমাদের উত্থান ও বিকাশকালীন, বলা চলে, সাহিত্য শুরুর সময়কালে, যারা কবিতা লিখেছি, তাদের মধ্যে একেবারেই ব্যতিক্রমী এক ভঙ্গী ও স্বর নিয়ে আবির্ভূত হলেন, শক্তিমত্তার পরিচয় দিলেন, কবি নয়ন আহমেদ।

তার সঙ্গে সঙ্গী হয়ে সে সময় আমাদের আশান্বিত করেছিলেন, কবি আল হাফিজ (Al Hafiz) ও কবি কামাল আহসান (Kamal Ahsan)। এই কবিত্রয় এর গুচ্ছ-গুচ্ছ চমৎকার কবিতা পড়ে আমরা শিহরিত, আনন্দিত এবং উৎসাহিত হতাম। পরে, এ দলে যুক্ত হন, কাশেম নবী (Kashem Nabi), পথিক মোস্তফা (Pathik Mostafa),  খৈয়াম আজাদ ( Khoyam Azad), সজীব তাওহিদ (Sajib Tauhid), সালমান রাইয়ান (Salman Raiyaan) প্রমুখ।

নয়ন আহমেদ এর : অসম্ভব অহঙ্কার (১৯৯৬), আল হাফিজ এর অপরিহার্য ক্রোধ(১৯৯৬), কামাল আহসান (বগুড়া অবস্থানকালীন) এর : আহসান জেনে গেছে বরফের ছল(২০০০), খৈয়াম কাদের এর : পারদ বিশ্বাস (১৯৯৯), সাজ্জাদ বিপ্লব এর : পৃথিবী তোমার নয়(১৯৯৭) ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ, সে সময়ে তাদের সচলতার স্বাক্ষ্যবাহী।

উত্তর আধুনিক আন্দোলন এর ঢেউ এসে তখন সারাদেশের মতো, বগুড়াতেও আলোড়ন তুলছে। প্রতিদিন আমার ব্যবসায়িক(!) ও আড্ডাকেন্দ্র “পার্বণ ” এ তখন জমজমাট আড্ডা।

প্রকাশিত হচ্ছে : স্বল্পদৈর্ঘ্য, বিকেল, উদ্যান, দরুদ, নেমেসিস প্রভৃতি পত্র-পত্রিকা। তথা লিটলম্যাগাজিন আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে। 

গদ্য কবিতার বিশেষ একটি নিজস্ব ঢঙে দক্ষ কবি আল হাফিজ এর কবিতার একটি লাইন তখন আমাদের সকলের পছন্দের, আমাদের মুখে-মুখে : যে শহরে আমি নেই, তুমি তাকে বোলো না শহর। দোহাই…

সে সময়ে আমাদের সাহিত্যচর্চায় একটি মাত্রা যুক্ত হয়। সারাদেশ থেকে বাছাইকরা ২৩ জন কবি’র গুচ্ছ কবিতা নিয়ে নব্বইয়ের কবিতা : অন্য আকাশ নামে একটি সংকলন এর প্রকাশ। এই সংকলন বইটি এবং মাহবুব কবির সম্পাদিত “নব্বইয়ের কবিতা”, এই দু’টি বই নিয়ে কবি আল মাহমুদ প্রথমে “স্বল্পদৈর্ঘ্য”তে এবং পরে দৈনিক যুগান্তর-এ দীর্ঘ আলোচনা লিখে আমাদের স্বীকৃতি দেন এবং স্বাগত জানান।

এই সংকলনে’র একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি ছিলেন নয়ন আহমেদ। কবি আল মাহমুদ নয়ন আহমেদ সহ আরো পাঁচজন কবি’র কবিতা উল্লেখ করে বিস্তারিত বয়ান করেন।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, কবি নয়ন আহমেদ এর সঙ্গে আমার হৃদ্যতা এবং সখ্যতা কত পুরনো এবং কত গভীর।

আমি নিজে তার কবিতার ভক্ত পাঠক। তিনি আমাদের কালের নি:সন্দেহে প্রথমসারির শক্তিমান একজন, এ কথা স্বীকার করতেই হবে।

সাম্প্রতিককালেও এই কবি সমান দক্ষতায় বুনে যাচ্ছেন, তার আপন কবিতার নকশী কাথা:

…..

ঋণ

প্রারম্ভিকা শেষে কথা বললো আর্তনাদ।

যুগপৎ বিস্ময় তাকালো ছুতারের মেয়েটির দিকে।

সভ্যতার কাছে আছে তার ঋণ।

তাকে শেখাচ্ছে-এখনই এনো না পৃথিবীতে,

অস্তিত্ব তোমার।

এই নির্দেশ পেয়ে বাতাস আছে থেমে।

কোনো শব্দ হবে না- ওঁয়া ওঁয়া ট্যাঁ ট্যাঁ।

.

কৃতজ্ঞতার শেষ নেই মেয়েটির।

.

সভ্যতার কাছে আছে তার অপরিশোধ্য ঋণ!

২৭ অক্টোবর ২০১৬

১২ কার্তিক ১৪২৩

২.

বকুনি

..…

আকাশটা ভাঁজ করতে চেয়েছিলাম কাগজের মতো।

প্রায় শেষ করে এনেছি।

ভেবেছি তারা বসাবো,

মোড়ে মোড়ে চাঁদ,

কোণে কোণে সূর্য।

আমার সুবিধামতো টানিয়ে রাখবো যত্রতত্র;

একটা জামদানি শাড়ি শুকোতে দেয়ার মতোও হতে পারে।

মেঘ থাকবে বাদামি,লাল,নীল,হলুদ,সবুজ ও কালো রঙের।

বাদামি মেঘ সারাক্ষণ ঘুড়ি ওড়াবে।

লাল ও নীল চায়ের লিকারের মতো ঘন হয়ে বসবে।

হলুদ ও সবুজ পুদিনা পাতার বিকল্পে পাশাপাশি বসে হইহুল্লোড় করবে।

কালো বেড়াতে যাবে ইচ্ছেমতো।

সমুদ্র তার খুব পছন্দ।

আকাশটা ঘুমিয়েছিলো।

জাগলো একটু আগে।

তার গায়ে এত ভাঁজ দেখে আমাকে খুব বকা দিলো।

বললো,”লোকদের এতসব দেখাতে হবে ক্যানো?

তোমার লাজশরম নেই!

আমাকে তোমার বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারো না?”

…..

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

১২ আশ্বিন ১৪২৩

৩.

অন্ধকার

.…

আমার প্রিয়– একজন শাদা অন্ধকার।

আরও দুজন অন্ধকার আছে।

ভাঁজকরা অন্ধকার ঈষৎ সবুজ;

হেমন্তের ধানখেতের দিকে তাকিয়ে আছে।

একদিন রাস্তায় সে আমাকে একটা ঢেউমিশ্রিত ভেংচি কেটেছিলো।

আমি কুড়িয়ে নিয়েছি রৌদ্র মনে করে।

লাল অন্ধকার শাদাকে একদম দেখতে পারে না।

এদের মধ্যে লবণের মতো পরিমিত ঈর্ষা আছে।

….

১৭ অক্টোবর ২০১৬

…..

কবি নয়ন আহমেদ এর টাইমলাইন থেকে কবিতা কবিতা বাছাই করতে গিয়ে আমাকে বিপদে পড়তে হয়েছে, কোনটা রেখে কোনটা পেশ করি। তার প্রত্যেকটি কবিতাই উদ্ধৃতিযোগ্য। এটিকে দ্রুত বাছাই বলা যেতে পারে।

…..

মঈন চৌধুরী

……

রঙ ও তুলি নিয়ে ছবি আঁকেন কবি-চিত্রকর মঈন চৌধুরী (Mayeen Chowdhury)। কলম আর মন ও মনন দিয়ে আঁকেন কবিতা।

হ্যাঁ। বহুবর্ণিল ও বিচিত্র রঙের ও স্বাদের কবিতা লিখেন কবি মঈন চৌধুরী। তিনি একাধারে কবি-চিন্তক-দার্শনিক-সম্পাদক ও চিত্রকর।

এই বহুমাত্রিক মানুষটি আশির দশকে সম্পাদনা করতেন, প্রান্ত, লিটলম্যাগাজিন। দর্শন-কবিতা ও নন্দন চর্চার ক্ষেত্র ভূমি ছিলো পত্রিকাটি।

এতো-এতো গুণের সমন্বয়ে তিনি বিকশিত হলেও, আমাদের কাছে তিনি এ সময়ের একজন প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কবি বলেই বিবেচিত। চিহ্নিত। আদৃত।

চকিতে তার কয়েকটি কবিতায় ঘুরে আসা যাক:

১.

পরাবাস্তব থেকে বাস্তবে

একটা বিড়াল সমুদ্র দিয়ে হেটে হেটে

আমার কাছে এসে বলল ম্যাও!

আমি তখন ট্যাবাসকো সসে কবিতা চুবিয়ে

প্যারিসের ম্যাপ দেখছি। হঠাৎ

উত্তর মেরু এসে আমার পাশে বসে

আইসক্রিম খায়, উড়ে যায় শত চিল,

আর আমি দেখি চারদিকে বিবস্ত্র আগুন।

আগুন উসকে দিয়ে নিজেই পুড়েছি খুব

উড়িয়ে দিয়েছি ছাই আকাশের ঘরে

যে জ্বালা আগুন দিল, সে আগুন আমিই নিজে

এ সত্য বলার মতো ছিলনাতো কেউ।

এখন মেঘের খোঁজে বারবার চেনা-অচেনায় যাই

যদি তুমি মেঘ হও আমাকে বাঁচাও,

আমি তোমাকেই চাই।

২.

করমচা গাছ

যদি প্রশ্ন রাখো, তোর চোখে কী?

তবে তো বলতে হবে, করমচা গাছ,

দু একটা ছোট পাখি, নাম জানা নেই

নৃত্য করে খুব আজো, পালাতে জানে না।

আমিও ওদের মতো, প্রশ্নহীন সুখ

করমচা গাছের ফাঁকে কিছুটা আকাশ,

আামাকে পাখির মতো তোলে বৃন্দাবনে

পোড়ে মন সঙ্গোপনে করমচার ফুলে।

কেন যে এমন হয়, জানি না বৃহৎ

সবুজ শাখার কাছে পরাজিত হই,

পাখির ভাষার কাছে শব্দ ভুলে গিয়ে

চোখে রাখি সমাহিত করমচার রূপ।

৩.

তিল

সৃষ্টিকালে ঈশ্বরের যে রঙ ছিটকে পড়ে তোমার গালে হঠাৎ এক বিন্দু হয়েছিল, সেখানেই আমি।

আমি এক অবাক বিস্ময়ে আজো ঈশ্বরের ভুলে তোমার ঐ গালে এক সর্বগ্রাসী তিল।

…..

এ ভাবেই তিনি দর্শন ও বিস্ময়ে কবিতায় আমাদের ভুবন সমৃদ্ধ করে চলেন। 

……

চঞ্চল মাহমুদ

……

ইদানীং, অবশ্য ইদানীং নয়, অনেকদিন যাবৎ, মানে বেশ কিছু দিন হলো, একটি নেশা, প্রায় জেঁকে বসেছে, অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, বলা যেতে পারে। তা হলো, ভালো কবিতা দেখলেই, তার প্রেমে পড়া। যে কবিতা বা কবি’র লেখা ভালো লাগছে, তাকে তুলে রাখি, সেভ করে রাখি সযত্নে, পরে পড়া বা উপভোগ করার জন্য। তরুণ, অতি-তরুণ, সমসাময়িক-অগ্রজ, যে কেউ বা যার কবিতা ভালো লাগে সংরক্ষিত করার চেষ্টা করি। শুধু তা-ই না, তা অন্যকে শেয়ার করার জন্যও মন আনচান করে। কেন? কে জানে?

যাই হোক। প্রায় বৎসরাধিক কাল আগে হঠাৎ এরকম ভালো লেগে যায়, চঞ্চল মাহমুদ এর “এলেক্স সিরিজ”-এর কবিতাগুলি।

সেই থেকে আমি চঞ্চল মাহমুদ-এর কবিতা পড়ি।

এই তরুণ কবিদের টাইমলাইন পরিভ্রমণ করে আমার খুব ভালো লাগে। বিশেষকরে, এদের জীবন-যাপন দেখে। এরা সকলেই এদের জীবনকে ভোগ করে। উদযাপন করে বলে আমার মনে হয়েছে। এটি দরকারী। জরুরী।

কারণ কবিতা জীবন থেকেই লেখা হয়। বানোয়াট কল্পনার কবিতা লিখে বেশী অগ্রসর হওয়া যায় না। জীবনের ছোঁয়া, সঙ্গে পঠন-পাঠন এর মেলবন্ধন ঘটলে তার যে রূপ ও দ্যুতি, এতো আশ্চর্যময়, এতো বিভাময় হয়, যা কল্পনাতীত।

আমি এই উজ্জ্বলতা, উচ্ছলতা খুঁজে পাই, এসব তরুণদের লেখায়।

চলুন, চঞ্চল মাহমুদ এর সাম্প্রতিক কিছু কবিতার স্মরণাপন্ন হওয়া যাক:

১.

একজন অভিজ্ঞ মানুষই মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর অভিজ্ঞতা পার হয়ে আমার মা এখন পরকালের দিকে অভিজ্ঞ হচ্ছে।

ইহকালের মতো আমার পরকালও

মা তার অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাকে আগলে রাখবেন। আসন্ন শীতকে সামনে রেখে, ডাঙায় হাঁসের প্যাকপ্যাক ধ্বনি এবং পানিতে মাছের প্রবল উপস্থিতি দেখতে দেখতে আমার এসবই মনে হচ্ছে, মা।

২.

তুমি জল, ভাসিয়ে রাখো মাছ

তোমার ভাসমান মাছ আমি ট্যাটায় কোপায়ে মারি।

তুমি লুকাতে চাও

আমি খুঁজে আনি প্রাণ

শোভন নয়, আমি তবু শিকারী হয়েছি জলে!

এ শিকার দস্যুরা জানে

গর্বে অসহায় প্রতিবেশী বুক ফুলিয়ে বাঁচে;

চেয়েছি মুক্ত হও, নিরীহের শাসন থেকে;

ঢুকে যাও এসে আমার প্রবাহে সকল আয়তনজুড়ে

৩.

ময়দাকবলিত গ্রাম থেকে বেঁকে গেছে আমাদের গ্রাম । এ গ্রামে হাঁটলে কয়লা খনির ধারণা পাওয়া যায় । এরকম খনিজপ্রবণ গ্রামও কখনো কখনো ভ্যানগাড়ি হয়ে ওঠে । আমাদের নিয়ে যায় খাদ্যগুদামের দিকে । ক্ষুধার সমান ময়দা নিয়ে আমরা ফিরে আসি বাঁক-খাওয়া অঞ্চলের দিকে । গুদাম মালিকেরা টের পেয়ে যায় । তারা ঘোড়ায় চড়ে ছুটে এসে  আমাদের বিচার করতে বসে যায় । তারা কোন কথা বলে না । তাদের ভেতরের সাপ ফনা তোলে শুধু  আর বিষ উগরিয়ে দেয় আমাদের দিকে । ততক্ষণে আমাদের হাতে উঠে এসেছে গরম রুটি । রুটির সাথে বিষ মিশিয়ে সেটাকেও আমরা ক্ষুধার্তের প্রয়োজন বানিয়ে তুলি । বিচারকেরা বুঝে যায়, তাদের সাপের বিষ ক্ষুধার চেয়ে মারাত্মক নয়! তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করে । আমরা তার কিছুই শুনিনা । ভাবি, তারা বোধহয় অশ্লীল কথা বলে । তাই, আমাদের সামনে গোপনে বলছে।

…….

বেঁকে যাওয়া গ্রাম / পাণ্ডুলিপি থেকে

……

এভাবেই এগিয়ে যাক আমাদের আগামী প্রজন্ম, কবিতার হাত ধরে।

…..

সাইয়েদ জামিল

…..

সাম্প্রতিক বাংলাদেশে, তরুণ কবিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত নাম : সাইয়েদ জামিল (Sayed Jamil) । এই আলোচনার সূত্রপাত তার কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ ঘিরে। প্রথম আলো, প্রবর্তিত পুরস্কার, তাকে দেওয়া ও না নেওয়ার নাটকীয়তা, তাকে অনেকটাই প্রচারের পাদপ্রদীপে আনে।

জনপ্রিয়তা বা খ্যাতির মোহে পথ ভুল না করলে, বাংলা কবিতার পথে পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি ও সম্ভাবনা এবং শক্তি লক্ষ্য করা যায়, সাইয়েদ জামিল-এ।

গদ্য কবিতা লিখতে পারার একটি সহজাত দক্ষতা বা ক্ষমতা ইতিমধ্যেই তার আয়ত্বে এসেছে, তা, তার কবিতা পড়ে আঁচ করা যায়।

সাইয়েদ জামিল ইতিমধ্যে তার কিছু পাঠকও তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে। সমর্থ হয়েছে অল্প সময়ে মিডিয়া বা প্রচার জগতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। এটি তার জন্য ক্ষতি না উপকার, বলে দিবে ভবিষ্যত।

আসুন, আপাতত সবরকম তর্ক-বিতর্ক-শংকা, সবকিছু দূরে রেখে, আশা ও ভরসা নিয়ে তার কবিতা উপভোগ করি।

সাইয়েদ জামিল-এর কয়েকটি কবিতা:

১.

বুক শেলফ

……

আমার ঘরের বুক শেলফটা আজ কথা ব’লে উঠলো। বললো,

তোমরা বলো, একটা বই একটা জ্ঞানের রাজ্য। কখনও একটা

বই দশটা জ্ঞানের রাজ্যও। তাহলে দ্যাখো, আমি একা এতো

এতো জ্ঞান ধারণ করি অথচ তোমরা আমাকে পড় না। পড়

কেবলই বই।

বুক শেলফটার কথা বলার ভঙ্গি আমার পছন্দ হ’লো। আমি

চাইলাম পড়বো তাঁকে। তাঁর তাক থেকে সব বই নামিয়ে তাঁকে

আমি পার্ট পার্ট ভেঙে ফেললাম। বই কীভাবে পড়তে হয়

জানি। কিন্তু বুক শেলফ কীভাবে পড়তে হয় জানি না। সকল

বিদ্যার ভঙ্গি এক নয় বুঝলাম। হায়, মূর্খ আমি। তবু বুক শেলফটার

কান্না আমার কানে ধ্বনিত হ’লো।

২.

প্যালেস্টাইনের মেয়ে

রওছা আমার বন্ধু। ও প্যালেস্টাইনের

মেয়ে। অন্তর্জালে আমাদের পরিচয়। পরিচয়ের

প্রথম দিনেই ও আমাকে বলে, ‘ইশ! আমি যদি

তোমার কবিতা হতাম!’ এরপর একরাশ হতাশা

আর দীর্ঘ নিস্তব্ধতা! রওছা আবার বলে,

‘আমাকে বিয়ে করবে? তুমি তো কবি, জানি তুমি

ভালোবাসো সুন্দর। হে কবি, আমাকে উদ্ধার

করো। আমিও তো সুন্দর। ভালোবাসো

আমাকে। আমি এই প্যালেস্টাইন ছেড়ে যেতে

চাই। এই যুদ্ধবিদ্ধস্ত মানচিত্র থেকে আমি মুক্তি

চাই। এই হত্যা এই ধ্বংসযজ্ঞ আমাকে ক্রমশ

বিকারগ্রস্ত ক’রে দিচ্ছে। আমি একটি নতুন

মানচিত্র চাই। দোহাই কবি, আমাকে একটি

মানচিত্র দাও। যেখানে রক্তপাত নেই। যুদ্ধের

বীভৎসতা নেই। আমাকে এই নরক থেকে নিয়ে

যাও তোমার বাঙলায়। শান্তির কসম, কবি,

আমি তোমার চিরকালের দাসী হবো।’

যেহেতু আমি প্যালেস্টানের ইতিহাস

জানি আর যেহেতু আমি মুসলমান

আমি রওছাকে বললাম, ‘বোন, আমি তোমাকে

ভালোবাসি। শোনো, সারা পৃথিবীই আজ

যুদ্ধবিদ্ধস্ত। কোথাও শান্তি নেই। যে প্যালেস্টাইন

থেকে তুমি বের হ’তে চাইছো, সেই অপহৃত

মানচিত্র থেকে তুমি কোন্ মানচিত্রে যেতে

চাও! পুব থেকে পশ্চিম আমাদের সকল সকল

মানচিত্র আজ বেদখল হ’য়ে গ্যাছে

দ্যাখো, যে বাঙলায় আমি আছি, এখানেও

মুক্তির জন্য যুদ্ধ হয়েছিলো। আমরা লড়েছিলাম

কিন্তু, বোন আমার, আমার উপলদ্ধি হ’লো

মুক্তির যুদ্ধ কখনও থেমে যায় না। যুদ্ধ থামে নি

এই জনপদেও। এখানেও আমরা

শান্তিতে নেই। সংবাদপত্র খুললে রোজই

খুন আর ধর্ষণের খবর। শান্তির ধর্মকে এখানে

পণ্য বানিয়ে বাণিজ্যের পসরা সাজিয়েছে

লোভী আর চতুর রাজনীতিক। ফলে, ভাইয়ের

বিরুদ্ধে ভাই হাতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র। ভাইয়ের

বিরুদ্ধে ভাই ঘৃণা বর্ষণ করছে। আর সকলেই

ইতিহাস ভুলে গ্যাছে। ইতিহাস ভুলে যাওয়া জাতি

মুখ থুবড়ে প’ড়ে থাকে নর্দমায়। চিরকাল

এরকমই দেখেছি আমরা।’

মন্ত্র মুগ্ধের মতো কথাগুলো শুনলো

রওছা। অন্তর্জালের এপাড় থেকেও

আমি বুঝতে পারলাম রওছা মনোযোগী

শ্রোতা। আমি বুঝতে পারলাম,

বিষাদের কালো অক্ষরগুলি ওর হৃদয়কে

নাড়া দিলো। য্যানো ও সঙ্গীবিহীন

শাদা এক কবুতর। উড়ছে নীড়হীন

আকাশের প্রচ্ছদে।

‘আমরা কি আমাদের ইতিহাসের দিকে

আবার কখনও ফিরে যেতে

পারবো?’ — প্রশ্ন করলো রওছা

‘নিশ্চই আমরা পারবো’— বললাম আমি,

‘ইতিহাস আমাদেরই দিকে

তাকিয়ে আছে। এই পৃথিবীর প্রতিটি

জনপদে আবার উড়বে শান্তির পতাকা

বিপর্যস্ত সময়ের পরে শান্তি অনিবার্য হ’য়ে

ওঠে। সাম্যবাদ অনিবার্য হ’য়ে ওঠে

মনে রেখো,

অনিবার্যতাই ইসলামের আবির্ভাব ঘটিয়েছিলো

মানুষকে মুক্তি দিতেই নবী মহমমদ

আল্লার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলো মানুষের অন্তরে

ক্রীতদাসকে মুক্তি দিয়েছিলো

সুন্দরের দিকে মানুষকে ডেকেছিলো

ভাবো,

সেই সুন্দরের ডাক

সেই আহ্বান

সেই আজান

সেই সত্য স্বর

যা শুনলে এখনও কী রক্তে দোলা দিয়ে ওঠে না

মনে রেখো, আমরা মুসলমান

আমাদের কোনো দেশ নেই

পৃথিবীই আমাদের দেশ

পৃথিবীকে ভালোবেসে এখানেই

রচনা করতে হবে আমাদের

আগামীর নতুন ইতিহাস।’

এরপর, রওছার সঙ্গে প্রায়শই দীর্ঘ

আলাপ হতো

ও হিজাব পড়তো। আমি ওকে ঢাকার

জামদানি পাঠিয়েছিলাম। ক্যানোনা নেট সার্চ

ক’রে ও বাঙালি নারীদের দেখেছিলো। আর

আমার কাছে শাড়ি পরার তীব্র ইচ্ছা

ব্যক্ত করেছিলো।

রওছা যখন মেডিকেল থার্ড ইয়ারে

পড়তো, তখন ওর নিরাপরাধ

ভাই বর্বর ইসরাইলি সেনার গুলিতে

মারা যায়। ওই সময়টাতেই, ওর বাবা

চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করেন। আর

ওর মা অসুস্থ হ’য়ে শয্যাশায়ী হন। পারিবারিক

ও রাষ্ট্রিক ওই ভয়াল বিপর্যয়ের ভেতর রওছাকে

ঘুরে দাঁড়াতে হয়। রওছা আমার কাছে এক

অগ্নিকন্যার ইতিহাস।    

রওছা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো

ভদ্র আর নম্র মেয়ে। আমি ওকে

জানিয়েছিলাম, ‘আমি হলাম এমন মুসলমান,

যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না’

শুনে রওছা বলে, তুমি কবি, আল্লা তোমাকে

মাফ ক’রে দেবেন। শোনো, আমি শেখ সাদীর

গল্প জানি। আমি জানি আল্লা কবিদের

ভালোবাসেন। আমাদের নবীও কবিদের

সম্মান করতেন’—

ব’লে ও হাসির ইমো পাঠায়।

আমিও হাসি। আমার হাসির শব্দ

দিগন্ত পেরিয়ে চ’লে যায় অন্য শতাব্দীর দিকে।

সেই দূরের শতাব্দীতে রওছা আমাকে বলে,

প্যালেস্টাইন হ’লো শান্তির পয়মন্ত ভূমি

কবি, তোমাকে দাওয়াত। তুমি এই

শান্তির পয়মন্ত ভূমিতে কবিতা পড়তে এসো

শোনো, আমি এখানেই সংসার পেতেছি

আমার দুটো বাচ্চা এখন। স্বামী সংসার নিয়ে

সুখেই আছি। তুমি সত্য বলেছিলে কবি, প্যালেস্টাইন

পৃথিবীর সব শান্তিপ্রিয় মানুষের হৃদয়ের ভেতর

বহু শতাব্দী ধ’রে জেগেছিলো কবিতা আর

সঙ্গীত হ’য়ে, যা বুঝতে আমাদের দীর্ঘ সময়

লেগেছে। আমাদের অনেক প্রাণ ঝ’রে গেছে। প্রাণের

পবিত্র বেদি এই রক্তিম ভূমি। এই প্যালেস্টাইন।

৩.

অস্ট্রেলিয়া

চারদিকে থইথই করে নোনা জল

অস্ট্রেলিয়া, আমার তুমি প্রিয় দুধফল

দুধফল শাদা তার গোলাপী বোঁটা

বোঁটা থেকে ঝরে সুধা ফোঁটায় ফোঁটা

এক ফোঁটা দুধ হ’লে বেঁচে যাই আমি

মাগি তুমি আর আমি তোমার স্বামী

স্বামীর মুখেতে তুমি ঢেলে দাও দুধ

তোমার ভেতরে আমি দেখি বুদ্বুদ

বুদ্বুদ দেখি আর দূরে দেখি ঝাউ

আমার জেনানা তুমি প্রিয় রেড কাউ

……..

আমার দৃষ্টিতে, ছন্দোবদ্ধ কবিতার চেয়ে তার গদ্য কবিতা বেশী আকর্ষণীয়। যদিও তার ছন্দ প্রচেষ্টা সাধুবাদ যোগ্য। কেননা, তার প্রজন্মের কাউকেই খুব একটা ছন্দ মেনে কবিতা লিখতে দেখা যায় না।

এ নিয়ে বিতর্ক বা ভিন্নমত থাকতে পারে। সব কালেই ছিলো, এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে।

তবু, ছন্দ জানা এবং ছন্দে লিখে প্রমাণ করা, যে আমরা পারি, এটি কবিতার আলোচনায় সব সময়, সব কালেই উচ্চারিত হয়। এবং হবেই।

…..

সাইয়েদ জামিল এর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :

১। রাষ্ট্রবিরোধী গিটার (ফেব্রুয়ারি২০১৩, ২০১৫)

২। কায়কাউসের ছেলে (জুন২০১৫)

৩। হারানো প্রেমিকার মুখ (ফেব্রুয়ারি২০১৬)

৪। নিয়ম না মানা মাস্টার (ফেব্রুয়ারি২০১৬)

…..

পলিয়ার ওয়াহিদ

…..

কবি পলিয়ার ওয়াহিদ (Poliar Wahid)-এর সাম্প্রতিকতম কবিতা গ্রন্থের নাম : সিদ্ধ ধানের ওম

নামেই পরিষ্কার ধারণা করা যেতে পারে তার কবিতার পটভূমি ও বিষয়বস্তু। গ্রাম। তথা শিকড়।

আপনার,আমার, আমাদের প্রত্যেকের, গোড়ার কথা, মূলের কথা। নিজের দেখা শৈশব-কৈশোর ও বর্ত্তমান কালের গ্রামীণ চালচিত্র। সুখ-দু:খ,আনন্দগাঁথা ইত্যাদি।

কবি তথা মানুষ, জীবন ও জীবিকার টানে গ্রাম ছেড়ে আসেন। বসত গড়েন, মেট্রোপলিটন এলাকায়। কেউ-কেউ (ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়) দেশ ছেড়ে দেশান্তরী হন। হন মাইগ্র‍্যান্ট। কিন্তু দেশ বা ছেড়ে আসা ভূমি ও মানুষদের কি ভুলতে পারেন? ভোলা যায়? না। তাদের মনেও পাওয়া যায় : অনেক-অনেক “সিদ্ধ ধানের ওম”। তারা প্রত্যেকে এক-একজন পলিয়ার ওয়াহিদ হয়ে যান অথবা প্রত্যেক পলিয়ার ওয়াহিদ-এ, খুঁজে ফেরেন অথবা খুঁজে পান নিজেকে। নিজের অস্তিত্ব।

চলুন শিকড় সন্ধানী এই কবি’র কবিতায় দৃষ্টিপাত করে আসি :

কইন্না দর্শন সিরিজ : এক

প্রথমে আড়ষ্টে বুনে ছিল তার শরীলে

তারপর বিরক্ত নোঙর ফেলে মুখে

প্রশ্ন কল্লাম—তোমার নাম কী বোন?

এবার তার মুখে নথের মতো বিস্ময় চিহ্ন ঝুলে রইল!

এবং আমার দিকে এমনভাবে তাকালো..

আমি কতি বাধ্য হলাম—

পিতারা মেয়ের চক্ষুদান করেন না,

কন্যাদান করেন শুনেছি!

ঠোঁটদুখানে পানসি নৌকার মতো বড় ঢেউ তুলে

সে একবার তার নাম বলে গেল।

আমি শিউর হতে পাল্লাম না

জেসমিন নাকি ইয়াসমিন!

কী রঙ পছন্দ তোমার?

ঢঙ রাখেন তো—আপনার বউ দরকার নাই

আপনি রঙ নিয়েই সংসার বান্ধেন!

বোনেরা বউ হলি—কবিতা লেখা হবে তো মহুয়া?

আহ—বোন সম্পর্ক কতো না মধুর ও প্রীতির!

২.

হেমন্ত

হেমন্ত ঋতুর মতো আমার উপর প্রভাব সৃষ্টি করছো

কুয়াশামথিত সকালে শিশিরের মতো ঝরে পড়ছি

শীত না এলেও জড়তা গেড়ে বসেছে গায়ে 

কিন্তু আমার জন্ম তো কোনো শেষ বিকেলের ফাল্গুনে

তবে কেন দিন দিন বিষণ্নতার মুখে নিজের ছবি দেখি?

বসন্তে আমাদের দেখা হবার কথা ছিলো নাকি?

বর্ষায় কদম ফুটলো, থইথই হলো মনের সব স্বাদ

কিন্তু শরীরের ওম পাওয়া হলো না আজও!

নিজেকে ব্যস্ত পিঁপিলিকার মাঝে আবিস্কার করি

যেন মানুষের খাদ্য ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চাহিদা থাকতে নেই!

কই কতোদিন হলো পেলাম না কাচা মাংসের ঘ্রাণ!

অথচ বিশেষ কোনো তাড়া নেই আমার

কোথায় যাবো? জীবন কি কখনো ফেরে?

আমার জন্য পথের রেখার অপেক্ষা করেছিল কেউ কেউ

তবু নিজের ছায়ার দীর্ঘ আমি’র উপর ক্রমাগত ছুটছি

কই আমি তো কখনো কারো কাছে ফিরিনি

কাউকে বলিনি ভালোবাসি

কিন্তু তোমাকে কেন ভুলতে পারি না মহুয়া?

৩.

মহুয়া : এক

জীবন একটা অবাস্তব খেলনা

মহুয়া আমাকে সেই খেলা শেখায়

এবং সে বলে—

জীবনকে খেলতে হয় স্বপ্নে!

অবহেলায়, ফেলনার মতো!

অথচ কী সিরিয়াস ভাবেই না

কবিতা আমাকে গোল করে গেল!

হাততালিতে মুখর অপেক্ষা

কিন্তু আমি জীবনকে পাহারা দেই

মহুয়ার তাবৎ ডালপালায়!

…..

এ কালের তরুণেরা প্রত্যেকেই প্রস্তুত তাদের ভবিষ্যতের জন্য। যেন তারা জানে, তাদের গন্তব্য। এটি আমাদের সাহিত্যের জন্য পজিটিভ দিক সূচক। এদের প্রস্তুতির কথা বললাম, এ কারণে যে, আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, এদের কবিতায় এরা (প্রায়) প্রত্যেকে তাদের কবিতার নায়িকা অথবা প্রেমিকার নাম ঠিক করে নিচ্ছে। যেমন টি পাওয়া যায়,জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, আল মাহমুদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, এদের কবিতায়।

কারণ এরা জানে, এরা বহুদূর যাবে। এবং বাংলা কবিতায় এরা প্রত্যেকে নিজের-নিজের ঘর তৈরী করবে।

আমরা, বাঁধা দেবার কে?

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

এ্যাডঃমনিরুল ইসলাম মনু on গুচ্ছ কবিতা : বেনজীন খান
পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা