spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতানির্বাচিত ১০ কবিতা : জব্বার আল নাঈম

নির্বাচিত ১০ কবিতা : জব্বার আল নাঈম

heart suit

০১.

যে যুবক বখাটে

*

সংসারের অকর্মা আমি প্রতিদিন বাবার কাছে হাত পাতি

মায়ের জমানো টাকায় পাড়া-মহল্লায় বন্ধু বানাই

মেয়েদের উত্যক্ত করি

মদের আসরে- জুয়ার আসরে 

সোনাগাছি রানীর অদম্য নৃত্য দেখি…

এরপর চাদার ফান্ড ভারি করি

ভদ্র মানুষদের লজ্জায় বিব্রত করে 

পাছায় লাত্থি মেরে

ছেলে মেয়ে অপহরণ করি মুক্তিপণ দাবিতে।

রাগে-ক্ষোভে

বাবা প্রতিদিন আমাকে খুন করতে চায়

ভাইয়েরা গুণ্ডা ভাড়া করে

পুলিশ অস্ত্র তাক করে তাড়া দেয়

আর মা সহিসালামতে আমার মৃত্যু কামনা করেন

আল­াহর দরবারে মগ্নধ্যানে বসে।

একদিন মাকে ডেকে বলি—

আদি পিতা-মাতা আদম-হাওয়া 

মরে গেছেন আদিকালেই

পরম্পরায় রয়ে গেছো তোমরা

ইনসান প্রতারিত করতে অনন্তকাল 

বেঁচে থাকবে শয়তান

মা, আমিই সেই শয়তান

০২

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন

*

দিনের বেলা আমার চোখে ঘুম আসে না

রাতের বিছানায় যাই

নির্ভয়ে কপাট লাগিয়ে

শব্দগুলো থামিয়ে

সোডিয়াম বাতি নিভিয়ে

আয়াতুল কুরসি পাঠ শেষে বুকে ফুঁ দিয়ে

দিশেহারা হয়ে শার্ট-প্যান্টের পকেটে ঘুম খুঁজি

ওয়্যারড্রোব, টিভি, ফ্রিজ, ডাইনিং টেবিলের ওপর খুঁজি

কাগজ-কলম ছুঁড়ে ফেলে কয়েক ঢোক পানি ঢকঢক গিলি

তবুও ঘুমহীন চোখ!

মোবাইল হাতে নিয়ে পরিচিতজনদের সঙ্গে

ফোনালাপ করি

এসএমএস পাঠাই 

ভুলে সংবাদপত্র অফিসে ফোন দেই

রেডিওতে কান পাতি

পাশের ফ্ল্যাটের ভাবিদের জিজ্ঞেস করি-

বলতে পারে না ঘুমপিয়নের খবর!

এরপর মধ্যরাতের কম্বল সরিয়ে 

শূন্যের মধ্যে দৌড় দেই 

দেখি মায়ের ফোন

কান্নাভেজা কণ্ঠ…

তোমার বাবার কবরঘুম হয়েছে

সকালে বাড়ি এসো!

০৩

কুকুর

*

একজন শিল্পপতির সঙ্গে কথা হয়

তার শখ একটি দেশি কুকুর পালবে

বিদেশি কুকুর পালতে খরচ খুব বেশি

কুকুর বাড়ি পাহারা দেবে

শত্রু তাড়াবে–

এবং লেজ নাড়াতে নাড়াতে তাকে সম্মান জানাবে।

কারো সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই বললাম–

আমিই সেই কুকুর

খুব অল্প বেতনে নিয়োগ দিন আমাকে।

০৪

বর্ণবাদ

*

একজন কালো মানুষের সামনে

প্লেট-ভরতি শাদা ভাত!

কালো কালি শ্বেতখাতায় লেখে ইতিহাস

মানুষে মানুষে এতো সর্বনাশ!

০৫

রক্তমাখা ইটের গল্প

*

একবার আমেরিকা গ্লাসভরা ক্রোধের পানি

আফগানিস্তানের দিকে ছুঁড়ে মারে

ব্যথা পাওয়ার পরিবর্তে হেসে ওঠে তারা–

আবার মুঠোভরা মাটি মারল ইরাকের গায়ে

গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে দাঁড়ায় খোমেনি

বিভ্রান্ত মজলিশ পানি আর মাটি একত্র করে 

কাদার পিরামিড বানিয়ে

আগুনে নিক্ষিপ্ত করল আমাকে

এর পর বেরিয়ে এলো রক্তমাখা ইটের শরীর

ইটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত বিশ্বের হৃৎপিণ্ড

কেউ জানে না–

সে যে রক্তমাখা ইটের আরেকটি নাম!

০৬

জিকির

*

গুলবদন

তোমার রূপে অন্ধ হয়ে পথ হারায় একবিংশ শতাব্দী

এশিয়া-মেরিকায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা

পুড়ে গেছে জাপান-ধ্বংস-বোমে

ফিলিস্তিন উদ্ধাস্তু শিবির

বিশ্বাসের খরায় 

বিপথে আফ্রিকা

মুমূর্ষু আদিবাসী অস্ট্রেলিয়া

ভেঙে পড়ে মানুষের শির

আজও পত্রপল্লবে গুলবদন গুলবদন জিকির

০৭

ছুরি

*

সব হারিয়েও যদি একবার দাঁড়াতে স্রোতের বিপক্ষে

কামারশালা গ্রামের কাছে

যারা ধরে এনে আগুনে পুড়িয়ে

নীল জলে ডুবিয়ে

মস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ছুরি;

জীবাত্মা থেকে দূরে বহুদূরে; আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদছে রমণী।

সেদিন ক্ষতের অতলে ডুবে গেছে জলের সমস্ত আয়োজন;

স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শ্যাওলা লতা-পাতা জড়িয়ে

বিলকুল হলো না স্থির;

অথচ, পাড়ার বখাটে তোমাকে ঢেলে ধুয়ে নেয় রক্তমাখা ছুরির শরীর।

০৮

সুরিয়া

*

সুরিয়া, পর্তুগাল প্রেমিক তোমার সাগরে নেমে বালু উত্তোলন করছে কোন দুঃসাহসে?

ভিখিরির অন্ধবিদ্যালয় মাঠে 

শুরুর ঘণ্টা বাজছে গত কয়েক শতাব্দী 

সুবে তসবি জপি নিরিবিলি-তৃষ্ণা মিটবে

বালুব্রিজ বানিয়ে গোধূলিলগ্নে ধ্যান ভেঙে

করাতকলে অন্ধকার কেটে কেটে

তোমার ডান হাতের কনিষ্ঠা স্পর্শ করলে-পৃথিবী খুশি হয়ে অভিবাদন জানাবে

বাঙালি প্রেমিক আমি-তোমার গভীরে নেমে ভাষাজ্ঞান আয়ত্ত করছি। 

আঁতুড় ঘরে মাছেরা সাঁতার কেটে পৃথিবীকে জানিয়েছে- আমিও মাছবংশের লোক। 

তুমি ফিরে এসো আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে বঙ্গসাগরে। 

তোমার বোন গুলবদন এখানে রাজরানি- যার মুখমণ্ডলের দিকে তাকালে বিশ্বসুন্দরী দেখা ভুলে যাই!

জানি, একদা পর্তুগিজরা ভ্রমণবাণিজ্যের নামে উপমহাদেশের ভ‚গোল থেকে কেড়ে নিয়েছিল তোমাকে

জানো, এখন এখানে পাখিরা মুক্তমনে উড়ে; শিশুরা নিরাপদ-মাতৃস্তনে রাখে মুখ

যুবক-যুবতী শততম প্রেমের পরেও প্রস্তুতি নেয় নতুন প্রেমের।

বহুরূপী সুরিয়া

তুমি প্রবল প্রেমের বাগানে হারানো ঢেউ

আনন্দ বণ্টন খেলে সঙ্গী-সাথিরা একমনে 

হৃদয়ে ঢেউ তুলে বর্ষা আনে শক্ত মাটিতে

যদি তুমি ফিরে না আসো 

হারানো বিজ্ঞপ্তি দেবো আবারও আন্তর্জালিক দেয়ালে 

সুরিয়া, তোমাকে অন্ধের মতো পান করে আশ্লেষে ঘুমাব আগামী কয়েক শতাব্দী

০৯

একটি অন্যরকম বেঁচে থাকা

*

কত কাল হেঁটেছি একা একা– এসব কালো রাস্তায় 

আঁধার মেখেছি আলো ডুবিয়ে

আবার আলো মেখেছি অন্ধকারে ডুবে

তবু রকমফের দেখিনি জীবনের।

কেনো আসতে বলেছ?

কেনো এনেছ আমায় ভুল জন্মে?

দেখা মেলে পথের- রাস্তায় দাঁড়ালে

যে রাস্তা সন্ধান দেয় অন্যরকম দুঃখের

অন্যরকম দুঃখরা আমাকে গ্রাস করে-

সমুদ্র বিলীন করে স্বমহিমায়।

মা প্রায়ই বলতেন, বড়ো পাত্রে জীবন সাজাও

যেখানে চাঁদ ও তারারা অনায়াসে খেলতে পারবে

(অ) সমান দূরত্ব বজায় রেখে

একটা বনসাই জঙ্গলের ম্যানুফ্যাকচার

আমাকে ধ্বংস করতে ফোঁস ফোঁস করবে সর্পরাজ!

পালিয়ে যেতে পারতাম, ভাবছি যাব না!

পুকুর পাড়ের তাল গাছের নিচের ছোটো পুকুর ঘাট ফেলে

জোৎস্না রাতে তারাদের লুকোচুরি

হাস্নার ঘ্রাণ

বর্ষা বৃষ্টির বিলে ভাসমান হাসের অনাবিল সুন্দর

যখন ঘুঘু এসে ঘুম ঘুম কণ্ঠে ভাঙে সকাল

ভেঙে চৌচির হয়ে যাই

না জেনে আত্মহত্যার কৌশল

একা হাঁটতে থাকি- অরণ্যে

অথবা অন্য দিগন্তে

অযাচিত ছুরির নিচে

ঘুমক্লান্ত রাতে- একা রেখে তোমাকে।

১০

কফিনে মোড়ানো বাংলাদেশ

*

শহিদ মিনারে আনা হবে 

কবি শহীদ কাদরীর লাশবাহী কফিন

সাদা মার্কিন কাপড়ে চকোলেটের মতো মোড়ানো

কফিন খুলে দেখলাম মরে আছে বাংলাদেশ…

অঘোরে ঘুমাচ্ছে

কফিনে সংসারের দায়িত্বশীল বাবা

পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরিহিত 

শুভ্র সুন্দর দস্তানায় ইসরাফিলের বাঁশি হাতে

তাড়া দিচ্ছেন আমাকে- বেঘোরে ঘুমাতে

স্মরণিকার সামনে দাঁড়িয়ে মৃত সব কবি-আত্মা

ছিপি খুলে আতরের সুগন্ধ ডান হাতের কবজি ও নাকে

মুগ্ধতায় মিছিলের অগ্রভাগে মৌনমিছিল-

                      ‘৪৭ ও ‘৫২ সাল

আমার দিকে আজরাইল ‘৭১ এর মতো এগিয়ে আসছে

সামান্য নিচে নিসর্গের মতো ছায়া বিলিয়ে যাচ্ছি 

শোকের কাতারে; সহকর্মী ও কবিবন্ধুদের জিজ্ঞাসু চোখ

লাশ আনা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে 

এমন সুযোগে–

কবি কাজী নজরুল ইসলাম আর জয়নুল আবেদিন

ফুলের মালায় প্রথম অভিবাদন জানায়;

আলসেমি রেখে পটুয়া কামরুল জানাজার ইমামতিতে দাঁড়ায়

লাল সবুজের টুপি মাথায়। হায়! এখানেও সাইফুদ্দিন নেই

পটুয়ার টুপি বর্গা হয়ে গেছে, খুঁজে হয়রান

কোথায় পাব দ্বিজেন্দ্রলাল?

শেষতক টুপি না-পেয়ে

আমরা কফিনবন্দি বাংলাদেশ মাথায় নিয়ে হাঁটতে থাকলাম

মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানের দিকে…

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

এ্যাডঃমনিরুল ইসলাম মনু on গুচ্ছ কবিতা : বেনজীন খান
পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা