শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ৫০ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিল্পকলা চর্চায় দেশ বহুদূর এগিয়েছে। ক্যালিগ্রাফি শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শুধু চর্চা নয়, সমাজের একটি প্রভাবশালী শিল্পমাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি ঘর সজ্জার উপকরণ থেকে ইমারতগাত্রে একটি সম্মানজনক শিল্প হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এর স্বীয় শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।
মানব হৃদয়ের গভীরে সৌন্দর্যবোধের প্রতি যে তিয়াস, তা মেটায় শিল্পকলা। হৃদয় গহীনে একই সাথে জৈবিক ও মানবিক বা নৈতিক শিল্পপিয়াস পরস্পর ঠেলাঠেলি করে একে অপরকে পেছনে ফেলার জন্য। চোখ দিয়ে সৌন্দর্য আস্বাদন, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা আর কান দিয়ে যে সুর সৌন্দর্যের খোরাক মনের কাছে পৌঁছে তা জৈবিক বা নৈতিক হতে পারে। ধর্মই এখানে সৌন্দর্যের প্রতিরূপ বিবেচনা করে এর কতটা গ্রহণীয়-বর্জনীয় এবং বৈধ-অবৈধ, পরিণতি কী হতে পারে তা নির্ধারণ করে দেয়। সুতরাং যে শিল্পকলা মনের জৈবিক আকাংখাকে জাগিয়ে তোলে, লজ্জার চাদরকে ছিন্ন ভিন্ন করে, পবিত্র চেতনাকে বিবশ করে দেয়। সেটার পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ এবং সমাজ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তা ভয়ঙ্কর টর্নেডোর আঘাতের মতো। একথার সাথে সুকুমার শিল্প, অন্যদিকে পুজা অর্চনার জন্য শিল্প বলে যে শিল্পজগত রয়েছে সে সম্পর্কেও ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম সুস্পষ্ট সীমানা নির্দেশ করেছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করেছে। আত্মা বা রুহ নিষ্কলুষ ও পবিত্র শিল্পকে গ্রহণ করতে চায় এবং এই নির্মল আনন্দদায়ক ও পূণ্যানুভূতি জাগানিয়া শিল্পের রস আস্বাদনে সে পরিতৃপ্ত হয়।
ক্যালিগ্রাফি এমনই একটি শিল্পকলা। যাকে একদিকে বিশ্বশিল্পকলার অরিজিন বলা হয়েছে। অন্যদিকে একে বেহেস্তী শিল্পকলা (আর্ট অব হেভেন) এবং আধ্যাত্মিক শিল্পকলা বলা হয়েছে। ইসলাম সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ রূপ দান করেছে। ক্যালিগ্রাফি তাই একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পকলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে শিল্পী সাইফুল ইসলাম বলেন, “যে কোন লেখা নকশা করে লিখলেই সেটা ক্যালিগ্রাফি। আমি যখন কোরআনের কথা লিখছি তখন তা ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, যখন বাংলায় লিখছি তখন তা বাংলা ক্যালিগ্রাফি।”
“ক্যালিগ্রাফি লেটারকে অন্য কোন রূপ (প্রতীক) দেয়াকে আমি বাঞ্ছনীয় মনে করি না। এতে ফাইন আর্টের কোন সম্বন্ধ থাকে না” বলেছেন সাইফুল ইসলাম।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশের খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আরিফুর রহমান বলেন, “সর্বজনীন স্বীকৃত শৈলী বা মুক্তভাবে উদ্ভাবিত প্যাটার্ন অনুযায়ী অক্ষর বা অক্ষরসমষ্টির বিন্যাসিত ও নান্দনিক হাতের লেখার রূপই ক্যালিগ্রাফি। এক কথায়, ছন্দোবদ্ধ অক্ষরনৃত্য হচ্ছে ক্যালিগ্রাফি।”
ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ইতোপূর্বে বাংলাভাষায় বেশ কিছু লেখালেখি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে ক্যালিগ্রাফির অবস্থান কী, শৈল্পিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব ও বিকাশ কতটুকু এবং ভবিষ্যতে এ শিল্পকলার অবস্থান কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো। শিল্পকলার অঙ্গনে যারা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন, এ বিষয়ে লেখালেখি করছেন এবং করেছেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু নিয়ে একটি সার্বিক আলোচনার প্রয়াস থাকবে এখানে।
বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির আগমন ১২ শতকে সালতানাত আমলে। ইসলামী শিল্পকলার প্রধান উপাদান ক্যালিগ্রাফির উন্নয়নে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিলেন সুলতানগণ। যেজন্য সে সময় (১১৯২-১৫৭৬ ই.) নির্ভেজাল আরবী ক্যালিগ্রাফির একটি স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধারা তুগরার প্রচলন দেখা যায়। বাংলায় এই তুগরার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরবি হরফের প্রয়োগ চাতুর্য্যে একে পানিতে ভাসমান হাঁস, তীর-ধনুক, চালাঘর, পানিতে চলমান নৌকার আকৃতিতে দেখা যায়। এছাড়া ”বাহরি আল বাঙ্গালী”(বিহারী) নামে একটি স্বতন্ত্র শৈলীর উদ্ভব হয়। সুলতানী আমলের পর মুঘল আমলে (১৫২৬-১৮৫৬ ই.) আরবী ক্যালিগ্রাফির সাথে নাস্তালিক ও শিকাস্তে নাস্তালিক ফার্সিধারা সংযুক্ত হয়। ইংরেজ আমলে (১৮৫৭-১৯৪৭ ই.) বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির চর্চা প্রায় অস্তমিত হয়ে পড়ে। ঢাকার নবাব-নাজিমদের প্রচেষ্টায় কিছু কিছু ধারা যেমন গুলজার, তালিক, নাসখ প্রভৃতির প্রচলন ছিল ও ধীরে ধীরে তা সীমাবদ্ধ হয়ে আসে। কলকাতায় ছাপার যন্ত্রে এ সময়ে কলকাতা ছাপা নামে একটি সুদূর প্রসারী ধারা এদেশে প্রচলন করা হয়। যে জন্য সাধারণ মুসলিম জনসমষ্টি এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে আরবীর মূল ধারাগুলোর এখানে বলা যায় বিলুপ্তি ঘটে, এত সবের মধ্যেও লৌখনু ছাপা যেটি আরবী নাসখী ধারার এ দেশীয় প্রকরন, সেটি কোনমতে টিকে থাকে।
১৯ শতকে ঢাকার বেচারাম দেউড়ীর মির্জা গুলাম হোসাইনের পুত্র মির্জা বাহাদুর হোসাইনের একটি ক্যালিগ্রাফির সন্ধান পাওয়া যায়। নাস্তালিক শৈলী গুলজার ধারায় অঙ্কিত এই ক্যালিগ্রাফি চিত্রে মুসলিম প্রার্থনার তাসবিহ চমৎকার ফুলেল আঙ্গিকে করা হয়েছে। হরফের ভেতর ফাঁকা স্থানটি ফুল-লতা-পাতার সুক্ষ্ম নকশা দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। হরফকে অন্য হরফের মধ্যে চাতুর্যের সাথে প্রবিষ্ট করা হয়েছে। স্থানীয় ক্যালিগ্রাফারদের এই সুনিপুন দক্ষতা কর্মকুশলতা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ইংরেজ আমলে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। ১৯ শতকের প্রথম দিকে আবুল ফাতাহ সিরকা নামের একটি কুরআন স্ক্রল ক্যালিগ্রাফি করেন। যাতে বড় হরফে “ওয়া আলাল ইমাম হুসাইন আল শহীদ আল কারবালা” এবং হরফগুলো ক্ষুদ্র হরফ দিয়ে লেখা হয়েছে নাসখ শৈলীতে। অষ্টাদশ শতকে ঢাকার ডেপুটি গভর্ণর মির্জা লুৎফুল্লাহ মাকসুর একজন খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঢাকার প্রশাসক নায়েব নাজিম নুসরাত জং বাহাদুর একজন ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফার ছিলেন, তার অনেক ছাত্র পরবর্তীতে খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়া নাস্তালিক শৈলীতে ওস্তাদ আগা আবদুল আলীর ক্যালিগ্রাফি সমাজের ধনী ও আগ্রহী ব্যক্তিরা সংগ্রহ করেন। মুন্সী আরহাম ছিলেন সিকাস্তাশৈলীর ওস্তাদ। ঢাকার হোসনী দালানের গায়ে উৎকীর্ণ লিপির ক্যালিগ্রাফার ছিলেন আলী হোসাইন। ঢাকার আরেক বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন মুন্সী মীর নূর আলী। তিনি ছিলেন নাস্তালিক ও কুফি শৈলীর ওস্তাদ।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ক্যালিগ্রাফি চর্চার তেমন কোন প্রামাণ্য দলিল আমাদের হাতে নেই। ১৯৬০ সালে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের মিহরাবে, গম্বুজের অভ্যন্তরে যে লিপির উপস্থাপন দেখি, বিশিষ্ট কাতিব সিরাজুল হক ইসলামাবাদী সেগুলোর ডিজাইন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকে তিনি আরবী ক্যালিগ্রাফি করেছেন। ষাটের দশকে বাংলায় ক্যালিগ্রাফি করা যায় কিনা সে বিষয়ে পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। সোসাইটির উৎসাহে শিল্পী আ. রউফ ‘রেনেসাঁ’ শব্দটি ক্যালিগ্রাফি করে আলোড়ন তোলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চার একটি আবহ তৈরী হয় শিল্পী ও এ বিষয়ে আগ্রহী লেখকদের ব্যক্তিগত প্রয়াসের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য প্রধানত দু’ধরনের। এক. শৈলী ভিত্তিক বা ট্রেডিশনাল দুই. পেইন্টিং নির্ভর।
শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির আলোচনায় স্বাভাবিকভাবে নন্দনতত্ত্বের বিষয়টি এসে যায়। আক্ষরিক অর্থে শৈলী বিষয়ে গভীর অভিনিবেশ দাবী করে সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও শিল্প সমালোচকদের ওপর। শিল্পীদের কাজের মূল্যায়ন যেহেতু শিল্প সমালোচকরা করে থাকেন, এজন্য ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে সমালোচকদের দায় দায়িত্ব একটু বেশী রয়েছে বলে মনে করি। শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এদেশের প্রচলিত আরবী হরফ সম্পর্কে সাধারণের মাঝে যে ধারণা রয়েছে সেটা বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ দেশের জনগোষ্ঠির বৃহত্তম অংশ আরবি হরফ বলতে কোলকাতা ছাপার কুরআনের হরফ বুঝে থাকেন। এই হরফ মূলত: নিশ্চল বা গতিহীন টাইপ সেট। এতে হাতের লেখার জীবন্ত প্রবাহ খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও খুব সীমিত পরিসরে লৌখনু ছাপার কুরআন রয়েছে, তবু তা অধিকাংশের কাছে পাঠ করা কঠিন বলে অনুযোগ রয়েছে। সুতরাং শৈলী বিষয়ক নন্দন তত্ত্বের আলোচনায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরবী হরফের শৈলী বিষয়ক বিশুদ্ধতা যেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সেটা আরব দেশসমূহে ও বিশেষ করে তুরস্কে রয়েছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মগুলো যা গত পাঁচ দশক ধরে ক্যালিগ্রাফার ও শিল্পীগণ করেছেন। তার শৈলী ভিত্তিক বিবেচনা দেশীয় আঙ্গিকে যথেষ্ট আশাপ্রদ। এ কথা এজন্য বলা হচ্ছে, কারণ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফিতে শৈলীর উৎকর্ষতা উন্নীত এবং আন্তরিক। নিবেদিত প্রাণ শিল্পীগণ একক ও দলগত প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। বিদেশের ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে তাদের সরব অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মত। ২০০৭ সালে তুরস্কের আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে ৫ জন শিল্পী, শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা নুরুল্লাহ, মোরশেদুল আলম, মাসুম বিল্লাহ ও সিদ্দিকা আফরিন লামিয়া অংশগ্রহণ করেন। শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশের সদস্য। যেহেতু প্রতি বছর আয়োজিত বিভিন্ন প্রদর্শনীতে শৈলীগত সৌন্দর্যরূপের পরিবর্তন হচ্ছে তাই সাম্প্রতিক শিল্পকর্মের এবং ৫ দশক আগের শিল্পকর্মের শৈলীগত পার্থক্য বেশ বড় ধরনের। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র আয়োজিত ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মগুলোতে শৈলীর উৎকর্ষতা চোখে পড়ার মত। হরফের গতি প্রকৃতি, বিভিন্ন শৈলীর নিপুন উপস্থাপন, কম্পোজিশনে নতুনত্ব, এমনকি সাম্প্রতিক মুয়াল্লা শৈলীর বেশ কয়েকটি মানসম্মত কাজ প্রদর্শনীতে স্থান পায়। আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দন তাত্ত্বিক স্বরূপ বা দর্শন কি? কয়েকটি বিষয় এর সাথে জড়িত, হরফের সঠিক সেইপ ও সাইজ যেটা আল খাত আল মানসুব বা আনুপাতিক লেখনীর সাথে সম্পৃক্ত এবং ইবনে বাওয়াবের মানসুব আল ফায়েক অর্থাৎ সৌন্দর্যময় লেখনী আক্ষরিক অর্থে আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া ইয়াকুত আল মুস্তাসিমীর কলম কাটার কলাকৌশল এতে পূর্ণতা এনেছে, কালির প্রস্তুতবিধি, ব্যবহার নীতিমালা ও কাগজ বা উপায়-উপকরণ একটি নির্দিষ্ট বিধিমালার অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সুলুস লিপির আলিফটি ক্যালিগ্রাফি কলম দিয়ে লিখতে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। র’স বা মাথা হবে দেড় থেকে দুই ফোটা বা নোকতা বরাবর এবং জেসম বা শরীরটি ৫-৬ নোকতা বরাবর লম্বা হবে। শেষে মাথার নিচে কলমের ডান কোনা দিয়ে পূরণ করতে হয়। এটা হল সাধারণ নিয়ম কিন্তু হরফের আকৃতি ও পরিমাপ ঠিক রাখার সাথে সাথে এর রৈখিক বাঁক ও ভাজগুলোও যথাযথ করতে হয়। এটি সরাসরি নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট যেটা হাতে কলমে ওস্তাদ ছাত্রকে শিখিয়ে থাকেন। দর্শককেও এ বিষয়ে হাতে কলমে আত্মস্থ করতে হয়। আর বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি হাতে-কলমে ক্যালিগ্রাফি শিখিয়ে আসছে ১৯৯৮ সাল থেকে। যেজন্য নবীন ক্যালিগ্রাফারদের বৃহৎ অংশটি শৈলীতে দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক অগ্রগতি আসে। ২০১৮ সালে ক্যালিগ্রাফি শিক্ষার আরো কিছু উদ্যোগ দেখা যায়, যদিও এদের অধিকাংশের কোন প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই। বাংলাদেশে শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি যারা চর্চা করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, শহীদুল্লাহ এফ. বারী রহ., শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা, নেসার জামিল প্রমুখ। আরিফুর রহমানের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে খাগের কলমের সরাসরি প্রয়োগ অনুপস্থিত। কিন্তু তিনি শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির প্রতি যত্নশীল। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে সুলস, নাসখ, দিওয়ানী, কুফী, রুকআ, নাস্তালিক, রায়হানী, মুহাক্কাক, মুয়াল্লা, সুম্বুল ও সম্প্রতি বাহরি আল বাঙ্গালী শৈলীর উপস্থাপন লক্ষ্য করা যায়। ২০২০ সালে ”বাহরী আল বাঙ্গালী” শৈলী চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ দেখা যায়। বাংলাদেশে সুলতানী আমলের এ শৈলীটি পুণর্জীবন, সংস্কার ও পুণপ্রচলনের কৃতিত্ব ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীমের। রঙের মাধ্যম হিসেবে পানি রং, কালি, এ্যাক্রিলিক, তেল রং, মেটাল রং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাগজ, ক্যানভাস, কাঠ, পাথর, ধাতব মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি করা হয়ে থাকে। চিত্রকলায় যেমন শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির উপস্থাপন রয়েছে তেমনি স্থাপত্যে বিশেষ করে মসজিদ গাত্রে আরবি ক্যালিগ্রাফি ও ইদানিং বাংলা ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক উপস্থাপন দেখা যায়। শিল্পী আরিফুর রহমান ২০০২ সালে কুমিল্লার গুনাই ঘর ও ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ বরিশালের গুঠিয়ায় ২টি মসজিদে বাংলা-আরবীতে শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেছেন। ক্যালিগ্রাফার শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম ২০০০ সালে চট্টগ্রামে পতেঙ্গায় সলগোলা জামে মসজিদ, ২০০৩ সালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার সুন্ধিসার জামে মসজিদ, ২০০৫ সালে ঢাকা সেনানীবাসে সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদ, ২০০৪ সালে বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদ, ২০০৬ সালে ঢাকা উত্তরার ৫নং সেক্টর জামে মসজিদ, ২০০৭ সালে হবিগঞ্জে শাহ সোলেমান ফতেহ গাজী (রহ:) দরগাহ-এ এবং ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে পুরান ঢাকায় একটি ইমারাত ভবনের চারটি ফটকে আগ্রার তাজমহলের ফটকের অনুরূপ সুরা ইয়াসিনের শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেন। এছাড়া ২০১০ সালে পুরান ঢাকার হোসনী দালানে, ২০১০-২০১৬ সালে গাজীপুরের ভাংনাহাটিতে সাত্তার জামে মসজিদ, ২০১২-২০১৫ চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মাইজভান্ডার দরবার, ২০১৩-২০১৪ সালে গাজীপুরের চর দমদমা ঢালী জমে মসজিদ, ২০১৬ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ, লক্ষ্মীপুর চকবাজার জামে মসজিদ, লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজ সংলগ্ন মসজিদ-এ নুর, ঢাকার মিরপুর কালশি সাংবাদিক এলাকার জামে মসজিদ, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি সেরাজাবাদ জামে মসজিদ, ২০১৭-২০১৮ সালে ঢাকার বনশ্রী আবে জমজম জামে মসজিদ, ২০১৭-২০১৮ সালে চট্টগ্রামের হাজিপাড়া চাঁন সওদাগর জামে মসজিদ, ২০১৮ শরিয়তপুর লাকার্তায় শিকদারবাড়ী জামে মসজিদ এবং ঢাকার গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক মসজিদ ও ইমারতগাত্রে ক্যালিগ্রাফি করেছেন। এসব স্থানে কুফি, সুলুস, বেঙ্গল তুগরা, নাসখ, দিওয়ানী প্রভৃতি শৈলীতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। শিল্পী মনিরুল ইসলাম, শহীদুল্লাহ এফ. বারীসহ কয়েকজন শিল্পী বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদ, ধর্মীয় ইমারতে ক্যালিগ্রাফি করেছেন।
বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বৃহত্তম অংশ হচ্ছে পেইন্টিং নির্ভর। আর এই পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে প্রবীন ও খ্যাতিমান শিল্পী মরহুম মুর্তজা বশীরের শিল্পকর্ম এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের শিল্পকলার পেইন্টিংয়ে কিভাবে ক্যালিগ্রাফির সার্থক উপস্থাপন হতে পারে তা দেখিয়েছেন তিনি। তাকে বাংলাদেশের পেইটিং ক্যালিগ্রাফির পথিকৃত বলেছেন শিল্পবোদ্ধারা। প্রবীণ শিল্পী মরহুম আবু তাহের, মরহুম শামসুল ইসলাম নিজামী, সবিহ-উল আলম, ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহিম মণ্ডল, আমিনুল ইসলাম আমিনসহ অর্ধ শতাধিক প্রবীণ নবীন শিল্পী আরবী-বাংলা হরফকে অনুসঙ্গ করে অসাধারণ সব ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং করে চলেছেন। শিল্পী আবু তাহের অর্ধবিমূর্ত ঢংয়ে পেইন্টিং করে থাকেন। আরবী হরফের পরস্পর ছন্দ ও গীতিময়তা একটি টান টান আকুলতা নিয়ে ফুটে ওঠে তার শিল্পকর্মে। রং, ফর্ম ও রেখার আশ্চর্য সম্মিলন দেখা যায় তার ক্যালিগ্রাফিতে। শিল্পী সবিহ-উল আলমের ক্যালিগ্রাফিতে ত্রিমাত্রিক ব্যঞ্জনা ফুটে ওঠে। শিল্পী ড. আব্দুস সাত্তারের ক্যালিগ্রাফিতে প্রাচ্যকলার আবেশ মূর্ত হয়ে ওঠে। সাইফুল ইসলাম নিজস্ব স্টাইল ও রংয়ের সমন্বয়ে এক ভিন্ন জগত তৈরি করেছেন। তার ক্যালিগ্রাফিতে তাই নাগরিক ক্যালিগ্রাফির ম‚খরতা দেখা যায়। ইব্রাহীম মণ্ডলের ক্যালিগ্রাফিতে বাংলার নিসর্গ, ফর্ম ও রেখার সাথে রঙের উজ্জ্বল্য উপস্থিতি দর্শককে আকর্ষণ করে। আমিনুল ইসলাম আমিন চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বাস্তব জগতের সাথে আধ্যাত্মিক ক্যালিগ্রাফির সমন্বয় তুলে ধরেন তার শিল্পকর্মে। নিপুন তুলির ছোঁয়ায় তার শিল্প ভাস্বর হয়ে ওঠে। এছাড়া আরো খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফি শিল্পী রয়েছেন, যেমন– আমিরুল হক, মাহবুব মুর্শিদ, ফরেজ আলী, রেজাউল করীম, রাসা, প্রমুখ তাদের ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং ও ভাষ্কর্য চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি অঙ্গনে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে হরফ যেহেতু অনুসঙ্গ হয়ে আসে, সেক্ষেত্রে শৈলীর উপস্থাপন হয় গণ্য। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে শৈলীও সমানভাবে পেইন্টিংয়ে উঠে আসে। তবে সেটা সংখ্যায় একেবারে হাতে গোনা। মূলত: পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে রং, ফর্ম, দর্শন চিন্তা, ব্যাকরণ প্রভৃতি লক্ষ্য রাখা হয়। পেইন্টিংয়ে শিল্পকর্ম হতে গেলে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন শিল্পী সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখেন। ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে প্রায় সব শিল্পকর্মে এমন উপস্থাপন লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে পবিত্র কুরআন হাদিসের বাণী মূখ্য হয়ে আছে। এর সাথে শুধুমাত্র হরফের কম্পোজিশন যেমন আরিফুর রহমানের আলিফ বিন্যাস, ইব্রাহীম মণ্ডলের আলিফ নৃত্য শিল্পকর্মের কথা উল্লেখ করতে হয়। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বাংলালিপি নির্ভর বহু উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহীম মণ্ডল, আরিফুর রহমান সহ অধিকাংশ শিল্পী তাদের শিল্প চর্চায় বাংলা ক্যালিগ্রাফিকে সযত্নে লালন করেছেন। এসব শিল্পকর্মে হরফের প্রান্তীয় স্ট্রোকগুলো প্রলম্বিত করে এবং কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে হরফকে ভেঙ্গেচুরে সমন্বয় ও ছন্দায়িত করার প্রয়াস চালানো হয়। অনেক শিল্পী তাদের কাজে বাংলা ক্যালিগ্রাফির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য না দিয়ে আরবী কুফি, সুলুস প্রভৃতির আদলে করতে চেয়েছেন, এতে অনেক শিল্পবোদ্ধা ভিন্ন মতামতও ব্যক্ত করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পেইন্টিংয়ে যে বাংলা ক্যালিগ্রাফি দেখছি সেটা ৯০ দশকের শেষ দিকেও তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প আক্ষরিক অর্থে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পাঁচ দশক পর এই শিল্পের পথ চলায় প্রয়োজনীয় উপাদান উপকরণ যেমন সহজ লভ্য হয়েছে। তেমনি এর প্রতিষ্ঠায় একটি মজবুত ভিত্তিও পেয়েছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জানার জন্য বইপত্র, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ সম্পর্কে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের এখন দেখা মেলে। একটা কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শিল্পীদের ব্যক্তিগত প্রয়াসকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে হয়। সেই সাথে যারা এ শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাদের অবদানও কম নয়। লেখালেখি, গবেষণার মাধ্যমে এ শিল্পের ইতিহাস সংরক্ষণ গতি প্রকৃতি মূল্যায়ন ও সবার কাছে এর পরিচয়, সৌন্দর্য, গুরুত্ব, অপরিহার্যতা তুলে ধরার জন্য নিরলস সাধনা যারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অবদান যেন আমরা ভুলে না যাই। এদেশে ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন, প্রসার ও জনপ্রিয় করতে ইতোমধ্যে যে রচনা সম্ভার ও বইপত্র প্রকাশ পেয়েছে তা নিতান্ত কম নয়। শতাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদনের সাথে বাংলাভাষায় এর ইতিহাস ক্রমধারা, শৈল্পিক বিশ্লেষণ নিয়ে গ্রন্থও রচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ওপর সা¤প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিও নিচ্ছেন অনেকে। ক্যালিগ্রাফির এই বিস্তৃতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেশ লক্ষণীয় প্রভাব পড়েছে। ৮০ দশকের গোড়ার দিকে ক্যালেন্ডারে সিনেমার নায়িকা ও নারীচিত্র প্রধান উপাদান ছিল। কিন্তু এখন সেখানে ক্যালিগ্রাফি, মসজিদ বা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীই একচ্ছত্র স্থান দখল করে চলেছে। সরকারি বেসরকারি ইমারতে ইন্টেরিয়র সজ্জায় ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম বড় ধরনের স্থান করে নিয়েছে। এমন কি বিদেশে সরকারি উপহার সামগ্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম গুরুত্ব লাভ করেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে বহু ইমারতে ক্যালিগ্রাফি মুরাল, ফ্রেস্কো প্রভৃতি প্রাধান্য লাভ করছে। বাংলাদেশে সা¤প্রতিক ক্যালিগ্রাফির যে বিস্তৃতি, তার মূল্যায়নে দেশের প্রথিতযশা কয়েকজন শিল্পীর মন্তব্য এখানে তুলে ধরছি। শিল্পী মুর্তজা বশীর বলেন, আমি একজন পেইন্টারের দৃষ্টি দিয়ে এটা বলতে পারি অক্ষর দিয়ে পেইন্টিং করার একটি প্রয়াস এখানে রয়েছে যাতে ক্যালিগ্রাফি ছাপিয়ে নান্দনিক রসের অনুভব আমরা পেতে পারি। শিল্পী আবু তাহের বলেন, বেশ কিছু শিল্পী গভীর মমত্ব ও আনুগত্য নিয়ে ক্যালিগ্রাফি চর্চায় মনযোগ দিয়েছেন এবং আনন্দের বিষয় এদের মধ্যে কেউ কেউ শিল্পবোদ্ধাদের মনে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হয়েছেন। শিল্পী সবিহ-উল আলম বলেন, ১৬২টি ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম নিয়ে ৬ষ্ঠ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৩ গুণে মানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা নি:সন্দেহে যেমন আনন্দের তেমনই গৌরবের। স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পী মনিরুল ইসলাম ক্যালিগ্রাফিকে মিস্ট্রিক্যাল ফর্ম উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তিনি শিল্পীদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। ১২তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে গ্রান্ড প্রাইজ প্রাপ্ত ইরানের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সিদাঘাত জাব্বারী বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি চর্চার ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। এজন্য তিনি ক্যলিগ্রাফি প্রদর্শনীগুলোর আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। পাকিস্তানের বিখ্যাত শিল্পী গুলজীও বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফির প্রশংসা করেছেন এবং উত্তরোত্তর উন্নয়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। ক্যালিগ্রাফি চর্চা বাংলাদেশে এখনো সেইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেনি। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ কোর্স, ওয়ার্কশপ, ডেমন্সট্রেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যস‚চীতে অন্তর্ভ‚ক্ত কিংবা আলাদা ফ্যাকাল্টিও হতে পারে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ভবিষ্যত উজ্জ্বল। ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য একটি স্থায়ী গ্যালারী এখনো নেই। তবে এরও ব্যবস্থা হয়ে যাবে এমন আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে ক্যালিগ্রাফি আর্কাইভ গড়ে উঠছে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যে আয়োজন ও উপায়-উপকরণ ও ভিত্তির প্রয়োজন, তার বহুলাংশ ইতোমধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও বলিষ্ঠ শিল্প মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এগিয়ে চলেছে। এর ভবিষ্যত উজ্জ্বল ও কুসুমাস্তীর্ণ করতে সংশ্লিষ্ট সবার যেমন গুরু দায়িত্ব রয়েছে তেমনি রাজকীয় শিল্পকলা হিসেবে সরকারের অকুণ্ঠ পৃষ্ঠপোষতার দাবি রাখে। স্বাধনীতা অর্জনের ৫০ বছর পূর্তিতে বিষয়টিকে বিবেচনার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাই।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, প্রাচ্যকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিল্পী, গ্রন্থকার ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন, উস্তাদ(খত ও পেইন্টিং), ক্যালিগ্রাফির আন্তর্জাতিক শৈলী বিষয়ক কোর্স, বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
বাহরি আল বাঙ্গালী শৈলী, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২১
বাহরি আল বাঙ্গালী তুগরা শৈলী, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২৩
বাহরি কুফি কাইরোয়ানী আল বাঙ্গালী শৈলী, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২২
ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২১
সিরামিক পটারি, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০০২
হুরুফিয়া, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২১
কুরআনের পাতা, সুরা ফাতিহা, বাহরি আল বাঙ্গালী, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২০
আলহামদুলিল্লাহ, কুফি আল বাঙ্গালী, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২১
হুরুফিয়া পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২০
মুুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। পেইন্টিং। ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২১
ক্যালিগ্রাফির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ক্লাস ওয়ার্ক, হরফ দাল। ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০২২
লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। মারবেল পাথরে ইনলে ক্যালিগ্রাফি, দোহার নবাবগঞ্জ মসজিদ। ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০১৭
মারবেল পাথরে ইনলে ক্যালিগ্রাফি, শ্রীপুর মাওনায় হাজী আব্দুস সাত্তার জামে মসজিদ। ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০১৫
মারবেল পাথরে ইনলে ক্যালিগ্রাফি, শ্রীপুর মাওনায় হাজী আব্দুস সাত্তার জামে মসজিদ। ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০১৫
গম্বুজের অভ্যন্তরে প্লাসারে অলঙ্করণ, শ্রীপুর মাওনায় হাজী আব্দুস সাত্তার জামে মসজিদ। ক্যালিগ্রাফার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম। ২০১৫
মোহাম্মদ আবদুর রহীম
আপনার লেখাগুলো অনেক তথ্যবহুল , তবে বিগত ৫০ বছরে যারা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে ভেবেছেন তাদের অধিকাংশই খুবই সীমিত সময়ের জন্য ভেবেছেন। তাদের জীবদ্দশায় হয়তো ২/৪ টা ক্যালিগ্রাফির বেশী কাজ তার করেননি-যা আমাদের চোখের সামনেই আছে। লেখনিতে ৩সাল, ৫সাল, ১০সালের কথা উল্লেখ করেছেন কিন্ত তখনকার প্রদর্শনীর কাজগুলো ছিল একেবারে আনাড়ি হাতের, খুব বেশী গর্ব করার মত কিছু ছিলনা। কিন্তু ১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশীয় ক্যালিগ্রাফির ব্যাপক চাহিদা তৈরী হয়েছে এবং দেশে হাজার হাজার শিল্পীরা কাজ করছে এ বিকল্প শিল্পধাো ক্যালিগ্রাফি নিয়ে -যা সত্যিই গর্বের ও প্রশংসার। দুঃখ আর আফসোস থেকে যায় এখন ক্যালিগ্রাফি নিয়ে যত লেখা আর ছন্দ তৈর করা সহজ হয়েছে বিগত ২০১৮ সালের আগে এমন গর্বিত কোন লেখা এত সহজ করে লিখতে কষ্ট পেতে হতো। তাই বলি এই পবিত্র শিল্পের লেখনীতে লুকোচুরির কোন সুযোগ নেই , যা সত্য, যা আয়নার মত পরিস্কার তা বলা বা লেখায় লজ্জার কিছু নেই।
মাহবুব মুর্শিদ
ক্যালিগ্রাফি আর্টিষ্ট