১.
মৌমাছির আত্মরমন
একটি গরু অথবা একটি ছাগলের মতো মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়ায়েও
ঘাস কিংবা কাঠাল গাছের পাতা চিবুতে থাকি–
আমার হুঁশ হয়না এ জনমে
রাণী মৌমাছির যৌনতায় আমি বেসামাল
তাঁর যৌনাঙ্গের মুগ্ধ মাতাল সৌগন্ধে
নিজেকে তার নিকট সমর্পণ করি,
কি এক মৌলোভে মাথা ঝিম ধরা সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ আমি
মৃত্যুমুখে ছুটে চলি,
আমি যোনিমুখে ছুটে চলি ফাঁসির আসামি যেন
আমার নিস্তার নেই –সঙ্গমে সঙ্গমে আমৃত্যু আমাকে
ছুটে যেতে হয় সমুদ্রের চুম্বনে অনন্ত গভীরে!
আমি আমার মৃত্যুর কথা জানিনা,
আমি আমার প্রজন্ম প্রসূনের কথা জানিনা
কেমন অবাধ্য আমি গোঁয়ার ষাঁড়ের মতো
জালা -মুখে, মৃত্যু মুখে ছুটে যাই!
কি মুগ্ধতা তার সহবাসে?
কি মাতাল হাওয়া তার যৌন আবেদনে?
আমি চাকরের মতো,
আমি দাসের মতন
তার অঙ্গুলি নির্দেশনায় আপাদমস্তক ছুটে চলি,
কি এক মাতাল কৃষ্ণগহ্বরের তুখোড় তুফানে–
আমি জানিনা কেন আত্মরমনে
কেন এই আত্মবিসর্জনে
এত উত্ফুল্ল এত উত্তুঙ্গ উচ্চণ্ড সঙ্গমে নিরত হই,
আমি অতলান্ত সহবাসে নিজেকে হারাই
আমৃত্যু সঙ্গমে তার যোনিদেশে পুরুষাঙ্গ ভেঙে লেগে থাকে–
মৃত্যুর গরলে সহবাস আরামে আমার মৃত্যু হয়
রাণীর বাসর ঘরে শত শত পুরুষ মৌমাছি
কি এক আমৃত্যু আরামের কারাগারে আত্মাহুতি দেই,
আত্মরমনের উত্সবে আত্মহননের যজ্ঞে–
২.
আম্রপালি তোমার যৌনতা
তোমার সুগন্ধি আর মনোমুগ্ধকর মিষ্টির মৌতাত
আমাকে উন্মূল পাগল করে দেয়
আমি শ্যামলী বা মোহম্মদপুর নয়
সমস্ত মার্কেট থেকে তোমাকে খরিদ করে আনি
দুধে-আমে মাখিয়ে আরামে ভোগ করি তোমার মধুর রস,
মাধুরীময় মধুর মাধুকরী যেন আমি!
মগধের বিম্বিসার কিংবা অজাতশত্রুর মতো
আমি কি বৈশালে ছুটে যাই
তোমার রুপের চৌম্বিক আকর্ষে দিশেহারা নাবিকের মতো,
ফিরে আসি বিফল মনোরথে,
আম্রপালি তোমার ঐশ্বর্য অহংকারে আমি পুড়তে থাকি
আষাঢ়াস্য বৃষ্টির চুম্বনে,
আমার ভেতরে জ্বলে বহ্নিশিখা —
হে গৌতম তুমি আমাকে পাঠিয়ে দাও বৈশালী প্রাসাদে
শ্রমণের দিকে তার নিগুঢ় ইশারা,
আমি অক্ষত রাখবো আমার যৌবন
নবী ইউসুফ -এর মতো আমার জামার পবিত্রতা
অটুট রাখবো–
সম্মুখের বোতাম পাবেনা ছেঁড়া।
প্রৌঢ় বয়সেও ক্ষুধা- ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণে
আম্রপালি তোমার যৌনতা আমাকে বিমুগ্ধ প্রলুব্ধ করে
আমি জানি আমি ফিরে আসবো-
তুমিই বেরুবে দরজা খুলে
আকাশের খিড়কি গলিয়ে দস্তরখানায় ঝরে পড়বে
সুমিষ্ট সুখাদ্য মান্না সালওয়া!
৩.
আসহাবে রাশ : সিন্ধু সভ্যতার মৃত্যু কূপ
আমি কেবল আদ আর সামুদ জাতির কথা বলছিনা
আমার নিকট প্রতিবেশী কূপ নগরী আহলে রাশ বা সিন্ধু সভ্যতার কথা বলছি –
হরপ্পা, মোহেনজোদারো সভ্যতার কথা বলছি–
ধুলোমাটি আর মৃত্তিকার স্তরে স্তরে বিন্যাস্ত ধ্বংসের কথা বলছি,
আমরা এতদিন আরব ইয়েমেন আর ধুলিমাখা মরুতপ্ত জীবনের কথা শুনেছি
অথচ বাড়ির নিকটে এতটা উজ্জ্বল ইতিহাসের কথা বলতে ভুলে গেছি
অথবা অজনা ধুসর বিশুষ্ক জগতের কথা কত আর টেনে টেনে বলা যায়
আশংকা আর ভয়ের ডোরাকাটা বাঘ আমাদের তাড়া করে–
এইতো খৃস্ট পূর্ব ছ,হাজার কিংবা আরও দূর বীজন বিদূরে
ঘটেছিলো সেই এক বিয়োগান্ত ঘটনা
হানজালা নবী এক এসেছিলেন সিন্ধুর — কূপের নগরে
তারাতো ভালোই ছিলো, ক্রমে ক্রমে ভুলে যায় মহান প্রভুর অনন্য নিদর্শন,
তার আরাধনা, বিমূর্ত প্রার্থনা ছেড়ে সাকার পূজার অন্তড়ালে
তারা ফিরে যায় অন্য এক উদ্ভট রহস্য জগতের হাতছানি পেয়ে–
হানজালা বাধ সাধে তাদের এসব কর্মযজ্ঞ সাকারের
মৃৎশিল্প, ভাস্কর্যের প্রার্থনা প্রকারে–
নগর পতীর নির্দেশে নিক্ষিপ্ত হন কূপের গভীরে নবী হানজালা,
মৃত্যুর কঠিন যন্ত্রনায় সমাহিত হন।
আর নগরের শত সহস্র কূপের জলাধার মুহূর্তে শুকিয়ে যায়
নবীর মৃত্যুর মর্মান্তিক শোকে!
হাজার হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ সভ্যতা মুহূর্তে বিবর্ণ,বিমূঢ় বিবর্তনে ধ্বস্তবিধ্বস্ত হয়ে যায়–
আদ সামুদ জাতির মতো তারাও হারিয়ে যায় কালের করাল গ্রাসে–
অথচ আমরা খুব সহজেই ভুলে আছি অথবা জানিনা
এই আসহাবে — রাশ, – কূপ নগরের করুন কাহিনি!
৪.
একজন ইউসুফ -এর ঘ্রাণ
আমি একজন ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি,
সে বেঁচে আছে
সে আসছে সাড়ম্বরে,
এগারো সূর্য তাকে সেজদা দেবে অচিরেই!
আমার এ কথা শুনে বৈমাত্রেয় ভায়েরা হো হো করে
হেসে ওঠে, ইউসুফকে অন্ধকার কুয়োর মধ্যে সেই কবে
ফেলে দেওয়া হয়েছে,
হে পিতা অন্ধ ইয়াকুব তুমি বোকার স্বর্গে বসবাস করছো,
মৃত ইউসুফের ঘ্রাণ পাও কি ভাবে?
তার দুর্গন্ধও বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
তাকে আর পাবেনা ফিরে,
তোমার আকুতি আর কাজে আসবেনা।
তুমি ভুলে যাও তাকে,
আমাদের ভাগ করে দাও সহায় সম্পদ,
আমাদের ফিরিয়ে দাও নবুয়তী-মুকুট!
বৃদ্ধ ইয়াকুব পুত্র শোকে পাথর
অশ্রুর নির্ঝর নেমে শুকিয়ে গেছে চোখের আলো!
তবুও তার বুকের চরে জেগে আছে আশার আলোক
তার নাসারন্ধ্রে সুড়সুড়ি দেয় পুত্রের গায়ের ঘ্রাণ,
পুত্র তার আবার আসবে ফিরে
সম্রাটের মতো দৃপ্ত পদক্ষেপে!
অতঃপর ইউসুফ ফিরে আসে
ইউসুফেরা হারেনা কখনো,
ইউসুফেরা ফিরে আসে মানুষের প্রয়োজনে,
আমরা ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি,
তিনি শীঘ্র ফিরে আসবেন
চেয়ারে বসবেন শতাব্দীর অন্যতম সোনালী সম্রাট
জনতার একান্ত স্বজন!
৫.
নিষ্প্রাণ জড়ের কথা
কত লক্ষ কোটি কত বিলিয়ন কত ট্রিলিয়ন বছরের পর
জড়ের কেন্দ্রিণে পরমাণু থেকে দুলে উঠল প্রাণ!
আহা আমি কিছুই জানিনা
কীভাবে সে কার হাত ইশারায় কার ইচ্ছের রুমাল নড়ে উঠে
ছড়িয়ে দিল সুপ্রাণ!
অদৃশ্যের গোলাঘর থেকে
এখনো বাতাসে উড়ে আসে বীজের জীবন,
মৃত্তিকা মমতা পেয়ে জলের আদরে ফুটে ওঠে সবুজ বনানী আর পুষ্পল প্রাণেরা!
আহা আমি কীভাবে মৃত্তিকা মর্ম থেকে খটখটে কঠিন মাটির
কিংবা কোন পাথরের বুক ঝর্ণা থেকে ফুটে উঠি পুষ্প যেন!
আবার হঠাৎ কেন যে উড়ে যাবে ও আলোর তরঙ্গ,
কোথায় কোন সুদূরে?
আবার মৃত্তিকা বিবরের খুব খুব নিবিড় মায়ায় মিশে যাবো জড় হয়ে যাবো-
জড় হয়ে বিমূর্ত হয়েছে লক্ষ কোটি আপন স্বজন!
কেউ কারো রাখেনা খবর
কী এক কঠিন কবরের নীরবতা, শুনশান!
কেউ কোন কথা আর বলে না নীরবে চুপে চুপে,
গভীর মমতা মেখে
জড়েরা ফিরেছে হায় জড়ের নৈশব্দ বিবরের ঘোরে!
আবার উঠবো কী জেগে? জেগে উঠবো মায়াময় ঘোরের ভেতরে!
আবার আকাশে তাকাবো, তারার মেলা, লাল মেঘ স্বর্ণময় আলোর গোলকে!
সবুজ কান্তারে জলচ্ছ্বল বিতানে আবার আসবো যেন বা,
আবার নিশ্চিত ফিরে আসবো– কঠিন কাকর, বালু আর মৃত্তিকার
জরায়ু কোহল থেকে!
৬.
মোজেজার ফাঁদ
আমরা সকলে ফাঁদের মধ্য থেকে
খাদে পড়ে যাচ্ছি!
এ থেকে রেহাই দেবে কে? কে আসবে সামনে?
আকাশ আর জমিন ছিঁড়ে আলাদা করে ফু দিয়ে ফাঁক করে দিল
ফাঁকা স্হানে ভেসে আছে, ভেসে ভেসে ঘুরে ঘুরে আমাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
মৃত্তিকা থেকে আলাদা করে আবার মিশিয়ে তাতে
বললেন আবার ওঠানো হবে!
আমি টেবিলের ওপরে রাখা দ্রাক্ষার ফার্মেন্টেড
তরলের পাত্র
আলাদা করে দিলাম,
উদ্বায়ী তরল মিশে গেলো মুহুর্তে বাতাসে..
বাতাস আবার ঘনীভূত হবে, বৃষ্টির চুম্বনে গর্ভবতী হবে রমণীরা
নতুন শাবক জন্ম নেবে
মাতৃ জরায়ূ বিচ্ছিন্ন হয়ে
সে আলাদা হয়ে যাবে!
মিশে ছিল, জমাট বাঁধা প্রেমের সুদৃঢ় বন্ধনে একাত্ম ছিল আত্মারা!
আহা মোজেজার ফাঁদে পড়ে কেমন বিরহ বেদনার
বেলেহাস তড়পাচ্ছে…
৭.
অদৃশ্যের আগুন
কাবিলের দেহে কামের আগুন জ্বলেছিল
সে তার জোড়ার সহোদরা
তার আপন জনকেই চায়,
সে চায়না হাবিলের জোড়া
কদাকার নারী!
অথচ এটাই ছিল তার জন্য নির্ধারিত।
সে তার জোড়ার অপূর্ব সুন্দরী নারী পেতে চায়
সে তাই কোরবানি দেবে জমিনের ফসল
আর হাবিল এনেছে হৃষ্টপুষ্ট পশু
তারা দুজনে খোদার জন্য উপঢৌকন হাজির করেছে
আকাশ থেকে অদৃশ্য আগুন পুড়িয়ে দিল গাভী
হাবিলের পশু!
পরম প্রভু কবুল করলেন হাবিলের কোরবানি
কাবিলের ফসল জ্বলেনা আগুনে
আগুনে জ্বলছে তার কপট হৃদয়ে,
কামনার বহ্নিশিখা তার সমস্ত শরীরে হু হু করে জ্বলে,
সে হত্যা করে আপন ভাই
হাবিলের খুনে লাল হয় মাটি!
অবৈধ আগুনে জ্বলে কাবিল, অদৃশ্য আগুনের শিখা তাকে পোড়াতে পারেনা–
কাবিলের অবৈধ সন্তানে ভরে গেছে পাপের পৃথিবী!
অদৃশ্যের বহ্নিশিখা নেভাতে পারেনি কামনার বহ্নি,
আগুন আকাশ থেকে নেমে আবার আকাশে চলে যায়–
কাবিলেরা কামনার নিষিদ্ধ লোবানে জ্বলে!
৮.
সোনার বাছুর
তারা বাছুর পূজায় সাড়ম্বরে উত্সব করে
ভুলে যায় পরম প্রভুর শরণ!
অদৃশ্যের আরাধনা তারা ভুলে যায়
স্রষ্টার আসনে তারা বসায় সোনার বাছুর
সামেরীর গাভী!
মূসা তার ঠেটা জাতিকে যতই বলে গাভীকে কোরবানি দিতে
অদৃশ্য প্রভুর অদৃশ্যের আরাধনা করে যেতে
তারা কর্ণপাত করেনা মূসার সে সব কথা।
তারা বলে কোন ধরনের বাছুর, কতোটা বয়স হবে?
কী রঙের হবে সেই কাঙ্ক্ষিত বাছুর!
নিখুঁত হলুদ রঙ সোনার বাছুর দিতে হবে কোরবানি।
তারা খোঁজে সোনার বাছুর…
লোকালয়ে, প্রান্তরে সমস্ত শহরে নগরে খোঁজে…
তারপর আরো কতকিছু…
কিবতির লোকেরা তার কথা শোনে অবশেষে,
না হলে সামেরীর গাভী টুকরো টুকরো হয়ে নিক্ষিপ্ত হবে সমুদ্রে!
সোনার সে গাভী সামেরীর ঈশ্বর কোরবানি হল
কিবতির আঘাতে–
আর লা-মোসাসা পালিয়ে যায় হিন্দুকুশ পর্বতে…
সামেরী- বাছুর এখনো রয়েছে কোথাও কোথাও….
৯.
হারুত মারুত জোহরার ফুলে
বাবেলে নাজিল হল মনুষ্য শরীরে হারুত মারুত
তারা যাদুর আঁধার থেকে
পাপের কুসুম থেকে
শেখালেন মোজেজা,
সংসার ভেঙে নারীরা,পুরুষেরা
বের হয়েও পারেনা বের হতে
আহা মাটির শরীরে কী যাদুর মোহ মাত্সর্য!
পাপের কুসুমে মানুষেরা মৌমাছি যেমন।
ফেরেশতারাও ভুলে যায়
পবিত্র ছোঁয়ার সুগন্ধি আতর!
জোহরার প্রেমে পড়ে মিলনের নিষিদ্ধ গন্দমে
মেতে ওঠে, দ্রাক্ষারস মদীরায় তারাও রক্তনেশায় ডুবে যায়…
আহা কী লোভের বহ্নিশিখা জ্বেলে ভুলে যায় নিজস্ব নিলয়!
সোলেমান নবির জিনেরা বন্দি করে রাখে তাদের আঁধার কূয়োর কোহলে..
আলোর তারকা গুলো মাটির মায়াবী কুঠরিতে পড়ে হারিয়ে ফেলেছে শুভ্রতার বস্ত্র!
আলোর আলেয়া মৃত্তিকা বিবরে ঢুকে আবার কী ফিরে পাবে আলোর নহর!
১০.
তাবুতে সাকিনা : জালুত তালুত
তখতে সোলায়মান –সেই কবেকার কথা,
ইসরায়েলীরা সারা শহর নগর খুঁড়ে খুঁড়ে পেতে চায়
বাদশা নবীর বসত,
তাবুতে সাকিনা!
জালুতের কঠিন আক্রমে
তারা মেনে নিতে চায়না তালুত তালুক —
মুলকে সোলায়মানে আর কারো সিংহাসন তারা নেবেনা মেনে,
অথচ এটা নির্ধারিত –
শামিলের কোন কথা শোনেনা, তারা মেনে নেবেনা বেনজামিন বনিইয়ামিনের বংশ,
তালুত তাদেরই লোক, সামান্য নগন্য —
তারা নিদর্শন চায় তালুতের
বলা হল,গোপন সিন্ধুক হেঁটে হেঁটে চলে আসবে তালুতের ইশারায়!
তারা ফিরে পাবে দাউদ, এহুদ আর জ্যাকবের তৈজসপত্র, কাপড় চোপড়-
অলৌকিক স্বর্ণ-তাবুতে সাকিনা ফিরে আসে!
তারপর তারা ধীরে ধীরে অবাধ্য ষাঁড়ের মতো শিং উঁচিয়ে চলে —
তাবুতে-সাকিনা আবার কোথায় যেন!
তারা সমগ্র বেথলেহেম, জেরুজালেমের বুক চীরে ফেলে!
১১.
সমীকরণ সূত্র
বস্তুর ভেতরে আছে সাত চক্র প্রাণ
প্রাণীর মধ্যেও আছে জীবনের জয়গান
বস্তু থেকে প্রাণ, প্রাণ থেকে আরও অনেক প্রাণ
X=0
Y=O
X=Y
X আর Y সমানে সমান,
শূন্যের কল্যানব্রতে সমীকরণের প্রাণ।
জড়বস্তু আর গতিময় বস্তু
কখনো কখনো প্রাণ –
সর্বত্র জীবন, চারপাশে বস্তুময়,
কোথাও শূন্যতা নেই, শূন্য অর্থ ফাঁকা নয়–
না পারা না বোঝা, অস্পর্শ অসীমা স্পর্শ না করা কখনো শূন্য নয়।
না, নাস্তি নেই, কোথাও শূন্যতা নেই, নাস্তিকতা সত্য নয়–
সবকিছু ইনফিনিটি
শূন্যের মধ্যে রয়েছে অসীমের গান,
শূন্য ভাজকে ভাজ্যের অসীমাকে খুঁজে পাবে!
কোথায় আমার শুরু, কোথায় আবার মিশে যাবো
বের হবো বৃক্ষের মতোন
সবুজ শ্যামলে..
জানিনা কত লক্ষের পর, কত শূন্যের পর আবার
ইন্টিগ্রেশন হবে।
১২.
তোমার সারল্য :সরল কোনের
শীর্ষ বিন্দু থেকে সোজা দৃঢ় পায়ে মাথা উঁচু করে
ভূমিতে পা দাও–
তুমি ছোট হয়ে যাবে না কখনো
তোমার ভূমিকা, ভূমি পদস্পর্শে দুটো কোন হবে,
দুটো বাড়ি হবে-
বাড়ি দুটো কারো নয়
বরং তোমারই, তোমার পদধূলি!
দুটো ঘরেই সমতা হবে
তুমি সৃষ্টি করবে সারল্য অনন্য
ত্রিকোনের যোগাযোগে পাবে সরলতা, সরল কোন মমতা।
ভূমি রেখার সরল অংকে জ্যামিতিক ভালোবাসা
তোমাকে দেবে সমতা,
দেখ সকল মানুষ সমান সমান
কোন ভেদাভেদ নেই
ত্রিভুজে ত্রিভুজে নেই জটিলতা
সরল কোনের ভালোবাসা
কি অবাক কি মধুর সুন্দর!
১৩.
বিন্দু বৃত্ত :বিন্দু কথা
আমার ইচ্ছেরা খলবল করে ওঠে
আমি ইচ্ছে করি, আর করে যাই–
চতুর্ভুজে চাপ দেই সে তখন পঞ্চভুজ হয়ে যায়,
আবার হাত বোলালে চাপ দিলে ষড়ভুজ, সপ্তভুজ অষ্টভুজ হয়ে যায়…
এবার বাসনা জাগে অষ্ট ভুজের কেন্দ্রে প্রবল বেগে ফুঁকে দেই রুহ
সে বেলুন হয়ে ফুলে ফেপে ওঠে
সে বৃত্তের মতো বড়ো হয়
বড়ো হতে হতে সে অসীম বৃত্তের মতো..
আবার ইচ্ছের মত পাল্টে যায়…
এবার বিপূলা বৃত্ত, সুবিশাল বৃত্ত, মহাবৃত্ত হাতের তালুতে তুলে
পাচ আঙুল গুটিয়ে চেপে ধরি,
চেপে চেপে বিন্দু করি –
আবার প্রচণ্ড চাপে মহাসূক্ষ বিন্দু করে ফেলি..
আবার বিন্দু কেন্দ্রে ফু দেই, বিপুল বাতাসে ফুলে ওঠে বিন্দু বৃত্তের মতন,
আরও বাড়তে বাড়তে মহাবৃত্ত হয়ে যায়..
আমার ইচ্ছেরা খুব চঞ্চল, এ ভাবে বার বার খেলতে থাকি, এ এক অদ্ভুত গানিতিক খেলা!
১৪.
একটি ইন্টিগ্রেশন
একটি ইন্টিগ্রেশন কর
আর বলো সুনিশ্চিত করে
এই গণিতের ফল মহান একক সত্তা
তার কোন ফাংশন নেই,
নেই কোন ভ্যারিয়েবল ফ্যাক্টর,
একটি মাত্র ফাংশন
আর কিছু প্রযোজ্য নয়
এ ফাংশন অভাব শূন্য ।
এই ফাংশনটি কারো ইন্টিগ্রাল নয়
এই ফাংশনের নেই কোন ডিফারেন্টশিয়াল
এই ফাংশনের কোন সমকক্ষতাও নেই।
১৫.
প্রেমের ক্যালকুলাস
একটি ফাংশন কোটি বিলিয়নে অসংখ্য
ডিফারেন্সিয়েশন করে ফেলো–
একটি শক্তির একজন প্রভুকে
অসংখ্য প্রভুতে খণ্ড খণ্ড করে সমস্ত সৃষ্টিতে বিলি বণ্টন করে দাও-
না হলে সৃষ্টি বাঁচবেনা,
সৃষ্টির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে
অসংখ্য ডিফারেন্সিয়েশনে তিনি বসবাস করেন–
স্রষ্টা অসংখ্য অযুত,নিযুতে একক সত্য সুন্দরম!
অসংখ্য খন্ডিত অংশ
অসংখ্য স্রষ্টার ইন্টিগ্রেশন কর
তাহলে একক স্রষ্টা পাবে —
ইন্টিগ্রেশনের এককত্ত্ব পরম সত্য।
ইন্টিগ্রেশনে ইন্টিগ্রিটি —
আমাদের আকাশের একটি সূর্যের আলো কে কোটি কোটি কাঁচের বোতলে ভরে দেখ
আবার তাদের অবমুক্ত কর আকাশ সমুদ্রে –
একটি আলোর সূর্যকে পাবে।
তোমরা আপাত বিভক্ত হলেও
আবার তোমরা কোন এক সময়ে
সুপ্রচণ্ড কেন্দ্রাতিগ গতিবেগে মিলিত হবে
একক বিন্দু ভালোবাসা ইলেক্ট্রো-চৌম্বিক চুম্বন পরশে–
ভালো করে বোঝ ,
জীবনের ক্যালকুলাস কর!
১৬.
আমি রসায়ন বুঝি
(মাহবুবা করিম– কোন এক কবির পঙক্তি পাঠ করে)
আমি কেমিস্ট্রি বুঝি
আমি রসায়নের মেধাবী ছাত্র
ফলিত রসায়নের রস মালাই ললিত কলা খুব ভালো বুঝি
তুমি যদি দ্রাবক হও তাহলে আমি হব দ্রাব্য
দারুণ দ্রবণ হবে আমাদের সম্মিলিত রসায়ন,
সমসত্ত দ্রবনের সুপেয় সিরাপ যদি পেতে চাও
তাহলে তোমাকে নির্দিষ্ট তাপের বহ্নি শিখায় জ্বলতে হবে
বিরহের আগুনে জ্বলে গলিত দ্রবনের মিশ্রণ বানাতে হবে
নিজেকে পোড়াতে হবে,
যদি তুমি পুড়তে চাও, দরবিগলিত ধারায় নিজেকে মিশিয়ে দিতে চাও,
যদি তুমি আমার আত্মার দ্রাবকে নিজেকে বিসর্জন দাও
তাহলে আগুনে আসতে পারো,
শুধু ঠোঁট, মুখ নয় সর্বাঙ্গে তোমাকে একান্তে একাত্ম হতে হবে,
ঘর ভেঙে, বাড়ি ভেঙে, নদী ভেঙে
আকার আকৃতি ভেঙে কুল নাশ করে
পালিয়ে আসতে হবে
জ্বলতে হবে কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরীতে!
১৭.
পুষ্পকথা-১
পুষ্প, প্রিয়ন্তিকা পুষ্প –,তুমি বিবর্তীত পত্রপল্লবের
রঙিন পোস্টার —-
যৌনাঙ্গ!
তোমার অবাক সুন্দর বর্ণীল সাজসজ্জায়-
তোমার হৃদয় হরণ করা খুশবু –পুষ্পালী মৌতাতে —
তাবত কীট পতঙ্গ তোমার মাধুরি গর্ভমুণ্ডে, পুষ্পমঞ্জরির
উষ্ণীষে হুমড়ি খেয়ে পড়ে,
প্রাণপাত করে প্রাণীন উচ্ছ্বাসে–
পুষ্প, তুমি বৃক্ষ গুল্ম লতার যৌনাঙ্গ —
তোমার ভেতরে আছে যোনি, পুরুষাঙ্গ, রেণু, পরাণ-পরাগ,
পরাগধানীর আবাহন–পরাগায়নের লোভ –
যদি না হতে সুন্দর মৌ মৌ সুবাসের অনন্য চমক!
তবে কী সুমিষ্ট শস্য, ফল-ফলারে ক্ষুধিত মানুষেরা তৃপ্তি পেতো?
মানুষের পুষ্পল–যৌনাঙ্গে আছে ঘাম,অপরিচ্ছন্নতা,
কখনো কখনো রক্ত, পঙ্কের ক্লেদাক্ত পোকা–
তারপরও মানুষেরা অসুরের মতো ধর্ষণ মচ্ছবে মেতে ওঠে,
চেতে ওঠে অশ্লীল শীত্কারে-
মানুষেরা পুষ্পের মতন হলে মানবতা ধ্বংস হতো-
মানুষেরা, বৃষ-পুরুষেরা, মাতঙ্গী নারীরা
পরস্পরের পুষ্পল যৌনাঙ্গ খুবলে খুবলে খেতো-
রাক্ষস+খোক্কশে ভরে যেতো
নরকাগ্নি পৃথুলা পৃথিবী!
১৮.
পুষ্পকথা -৩ : অলকানন্দা
তুমি ফুটে আছো হরিদ্রাভ স্বর্ণালী পাপড়ির ঠোঁটে —
কি এক অবাক সুন্দরের ইশারায় তুমি ডাকো
কাছে আসো কাছে আসো–
আমি অলোকানন্দের ফুল, -অলোক আলোকে
বিস্ফারিত আনন্দের রেণু ছেড়ে, বাতাসে বাতাসে
আমি অপেক্ষার দীপ জ্বেলে আছি —
প্রগাঢ় মমতা মেখে– জড়িয়ে জড়িয়ে কেমন লতিয়ে আছি,
তোমার প্রতীক্ষা পিলসুজ জ্বেলে–
বলছো, আমি কি, চন্দ্রপ্রভা?আমি কি সবিতা-মুখো
কন্টিকুমারী? অমল জোছনার প্লাবন?
আমি কি ঘণ্টি –মুখো হলুদ -ফানেল?
দেখ, বিধাতা শরীরে মেখে দিয়েছেন রুপালি -হলুদে
যৌবন, মৌবন!
ঘ্রাণহীন অনিন্দ্য সুন্দর!
তুমি কি আসবে আমার কানন-বিহারে?
তুমি কি শূড় বসিয়ে দেবেনা গর্ভমুণ্ডে?
আমাকে দেবেনা প্রগাঢ় উল্লাস –শীত্কার নিঃশব্দ চিতকার?
অলকানন্দা সুনন্দা আমি চাই ফলবতী জয়গান
বৃষ্টি -বন রোদ্র ছায়া প্রাণোচ্ছল সকাল বিকাল
আমি ডাকছি তোমাকে হে মাধুকরী
হে বৈকুন্ঠ –বিলাশ হে মধুপ-গুঞ্জন –
তুমি আসো তুমি আসো হে কুমার
বেহায়া -জোছনা জ্বলে জল যমুনায়
তুমি আসো, তুমি আসো
মিনতি তোমার, শোন প্রতীক্ষার চিতকার!
১৯.
হাইপার এসিডিটি
আমাকে দেখলে তোমার আর হবেনা
অম্লের ক্ষরণ
হাইপার এসিডিটি হবেনা তোমার
আমি এখন কমল এন্টাসিড।
আমাকে এখন খেয়ে দেখ
তোমার ভয়ের নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যাবে
তোমার ক্ষতে পরশ দেবো,
হালকা আবরণ দেবো পাকস্থলীতে
দেখবে কেমন ভালো লাগে!
আর যদি অম্লাধিক্য ঘটে
এসিড ক্ষরণ হয়
তবে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর দেবো
ইসমিপ্রাজল দেবো
তুমি সেরে উঠবে —
আমাকে দেখলে কোঁচকায়ে যাবেনা —
এসিড গলিয়ে ঝরবেনা
চন্দ্রিমা জোছনার রেশমি পরশে
তুমি আশ্চর্য আরাম পাবে!
২০.
মূর্ত বিমূর্তের দোলাচালে
মূরতির আড়ালে
আমি যা বলছি, যে ছবি আঁকছি আসলে আমি তা বলিনা
শব্দের আড়ালে আছে লুকিয়ে যে শব্দ আরেক সুন্দর
আমি তাকে মূর্ত করতে চাই,
সরাসরি কথা বলে বোকা সোজা লোকেরা, কবিরা
পোশাক আশকে সজ্জিত হওয়ায় খুব ভালো বাসে
রঙ তুলির আচরে ফুটিয়ে তুলে সুন্দর আরেক না জানা
ভালো লাগা বৃষ্টির ক্রন্দন রিমঝিম স্পর্শ!
তুমি পোশাক পরা সুন্দর, উপরের আবরণে দেখোনা সুন্দর,
মূর্তির ভেতরে তীব্র ভাবে বিমূর্ত সুন্দর দেখো,
মূর্তি পূজায় বিমূর্ত সুন্দরের চিরন্তন আবাহন যেওনা ভুলে!
মূর্তের মূরতি দেখে মাথা ঠুকে প্রকৃত কবিতা নিহত করোনা,
বিমূর্ত কবিতা, পরাবাস্তব সুন্দরে তুমি মগ্ন হও!
অযথা হৈ হুল্লোড়ে যে কবিতা পালিয়ে যায়।
২১.
মূর্ত বিমূর্তের দোলাচালে
রীতার গোলাপ
দরজার কলিং বেলে যত টিপ দেই, রীতা রীতা বলে চিতকার করি,
আমার সে লোক কিচ্ছু কানে শুনেনা,
অথচ আমার ডাকে পৃথিবীর সমস্ত রীতা নামের মেয়ে
ঘর দোর ভেঙে চলে আসে –
আমার ডাকে সমস্ত সুন্দরী নারীরা ঘাই -মৃগীর মতন
দৌড়াতে দৌড়াতে চলে আসে আমার বাগানে,
ঝর্ণার পানিতে জলকেলি করে রাজহংসীবৃন্দ!
নারীর শরীর থেকে উড়ে আসে বক,হরিয়াল হুদহুদ পাখি
পাখির শরীর থেকে উড়ে আসে রফ রফ আলোর সারসী,
রীতারা, নারীরা সুন্দরী পাখিরা কোথায় কোন আড়ালে
চলে যায়, বিমূর্ত সুন্দর নেচে ওঠে দুলে ওঠে দূর নীল
নীলিমায়,অনন্ত অলোকানন্দ ঝরোকায়!
২২.
মূর্ত বিমূর্তের দোলাচালে
বিমূর্ত শয়তান
শয়তান কখনও মূর্ত হয়না কারো কাছেই,
সে খুব আবেদ আর পরহেজগার ছিলো,
সে খুব জ্ঞানীও ছিলো,
অথচ সে একটি কথা না মানতে, সিজদা না করতে
কেমন অবাধ্য হয়ে গেলো।
যাক সে কথা, সে কি করে এতটা নীচে নামতে পারে?
সে কি ভাবে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনায় শুড়শুড়ি দেয়!
তার তো একটা রুচি বোধ থাকা উচিত!
একজন জ্ঞানীর এমন অসভ্য আচরণ করা ঠিক কি?
একজন এবাদতকারীর এমন নীচে নামা ঠিক নয়।
কখনো সাক্ষাৎ শয়তানকে দেখিনি –
শয়তান তুমি বেহেশতে কি ভাবে প্রবেশ করলে
তুমি কি ভাবে বাবা আদমকে ধোকা দিলে!
আদম কি তোমাকে দেখেছে?
আমি তো তোমাকে দেখার কতটা চেষ্টা করি,
অথচ আমার মধ্যে একটা অদেখা বদমাশ মাঝে মাঝে
খুব বদমায়েশি করে, ধোকা দেয় –
আমি মূর্ত মূর্তিমান মানুষ বিমূর্ত শয়তানী খেলায় পড়ে যাই,
খানা – খন্দে পড়ে যাই,
মাঝে মাঝে রক্তের ভেতর কি একটা অদৃশ্য ভাইরাস
সংক্রমিত হয়,জ্বরে পড়ে এক অসভ্য আনন্দ ঝর্ণা ছোটায়,
শেষমেশ বিমূর্ত বদমাশ মূর্তিমান হয়-
অথচ চিনিনা তাকে আমি!
২৩.
মূর্ত বিমূর্তের দোলাচালে
ফেরেশতার চোখ
আমি মাঝে মধ্যে স্বপ্নে উড়ে বেড়াই আকাশে —
নক্ষত্রের, তারকার, গ্রহের ঝরোকা থেকে আরও উর্ধে
কেবল স্বর্নালী ঈগলের মতো সপ্তাকাশ ভেদ করে
পরম প্রভুর আরশের নীচে, শ্যামল ছায়ায়
পরমানন্দের জোছনা মেখে হারিয়ে যাই বৈকুণ্ঠধামে!
আমি জ্যোতির পরাগ মেখে চোখে মুখে কী এক অনির্বচনীয়
সুন্দরের আবাহনে বিমুগ্ধ বিস্ময়াবিষ্ট হই
আমি অদৃশ্য পাখার শব্দে চোখ মেলে দেই
আমি আনন্দ সারস যেন কী এক না বলা আলোর দ্যূতিতে কী এক
অব্যক্ত আনন্দ বেদনায় তড়পাতে থাকি,
জানিনা কোথায় আমার স্বজন, জানিনা কোথায় আমার জননী,
কোথায় আমার পিতা,আমার জন্মদাতার রেশমি পরশ!
কোথায় বাবা আদম,কোথায় রসূল আমার হৃদয় -পদ্ম!
কোথায় বাণীর রাজা কোথায় জীবরিল,
তুমি মূর্ত হও প্রিয় ফেরেশতা, তুমি বিমূর্ত থেকোনা
আলোর প্রোটন, কেন্দ্র থেকে প্রস্ফুটিত হও
হে আলোর পাখি, ছয় শত ডানার স্বর্ণালী শামিয়ানা
আমার শিরোপা কর!
আমাকে বিমূর্ত করে নিয়ে যাবে কোন অলোকায়!
২৪.
মূর্ত বিমূর্তের দোলাচালে
পোকামাকড়ের চিতকার
কয়েক লক্ষ চকচকে কালো পিপড়ের শ্লোগানে উত্তপ্ত রাজপথ –
কী এক অদ্ভুত দাবি , প্লাকার্ড পোস্টার হাতে করে
দারুণ গরম করছে হাস্যস্পদ বক্তব্য বয়ানে!
ওরা আর মানুষের শাসন মানবেনা,
ওরা বলছে মানুষ আবার কি ভাবে সৃষ্টির সেরা হলো,
মানুষ কে তাদের ওপর খবরদারী করার?
ওরা বলছে মানুষকে আমরা চিনতে পারছি না,
আমরাই সেরা,
আকাশ নক্ষত্র, চাঁদ সূর্য এ আবার কি জিনিস?
আকাশ কি আছে? মহাবিশ্ব, মহাকাশ?
পৃথিবী মহাপৃথিবী?
আমরা ঢাকা, দিল্লি, মস্কো, বেজিং,ক্রেমলিন,হোয়াইট হাউস
কিংবা মদীনা মক্কা এসব দেখিনি।
সুন্দর বন অথবা কঙ্গোর জঙ্গলে আমাদের বসবাস,
আমরা আর কিচ্ছু বুঝতে চাইনা বুঝলে?
আমরা যা দেখিনা তা মানতে পারিনা,মানিনা
যা দেখিনা, যা বিমূর্ত মূর্ত মূর্তি নয় যা তা বিশ্বাস করিনা।
২৫.
ডাডাবাদ : উল্টো কথা
1.
একটি মাঠে জড় হয়েছে লক্ষের অধিক শিশু
মেয়ে শিশু ছেলে শিশু একেবারে উলঙ্গ সুন্দর
ঘরের ভেতরে নাতি পুতি নীরেট কুসুম খেলা করে
ছোটাছুটি করে নিষ্পাপ হুর গেলমান!
ওদের কোন আগ্রহ নেই অবৈধ আসঙ্গলিপ্সা
কিংবা কোন শয়তানি বেহায়াপনায়!
না ওদের মোটেও খেয়াল নেই লীলা লাম্পট্যে,
ওরা প্রজাপতি আনন্দ জোছনায় ভিজে যায়
ওরা পাখির মতন কলরব করে,
ওরা হাসে কাঁদে, অস্পষ্ট সোহাগ শব্দে কোলাহল করে,
কেন ওরা বেহায়া বেলাজ ছেলে মেয়েদের মত নয়?
আমরাও একদিন ওইসব শিশুদের মতো
আনন্দ মেলায় জমায়েত হবো,
আমরাও একদিন পেরেশানে ভুলে যাব নগ্ন সৌরভের হাতছানি,
আমরাও নীরেট শিশুর মতন উলঙ্গ থাকবো!
২৬.
ডাডাবাদ : উল্টোকথা
2.
এ কেমন জন্ম আমাদের?
কামার্ত পুরষ রমনীর যৌনতার বৈধ -অবৈধ ফসল!
কৃষকেরা হাল চাষ করে,
জমিনে যেমন ইচ্ছে চাষ বাস করে নরম কাদায় অথবা
ঝুরঝুরে মৃত্তিকা গহ্বরে বীজ ফেলে মর্জি মাফিক!
শস্য হয় তরতাজা সবুজ আনাজ,ফুল ফলে ভরে যায় নন্দিত নন্দন!
পুরুষ অথবা নারী, সব ওই কৃষকের কাম!
নারীরা সোহাগে যত্ন আদরের জোছনায় চাদ চুম্বনে ভরে
তুলে সন্তানের মুখ চোখ কোমল কপোল!
নারীর জরায়ু জঠরে আদরে
বেড়ে ওঠে তারপর পরম প্রভুর কৃপায়
মাতার কমল শরীর ছিড়ে বের হয়ে আসে!
যোনির কালো রেশমি কাশফুল পরশ নিয়ে কেমন
অপবিত্র পুরুষ রমনী বড়ো অহংকারে দুলে
উঠে রাজপুত্র- রাজকন্যা যেন!
আমাদের জন্ম হতে পারে
অন্য কোন ভাবে অন্য কোন ক্লোনিং -এ,অযোনি জাতক!
অথবা মহান পিতা আদমের মতো পরম প্রভুর
অনন্য অতুল মমতার ঝর্ণা নির্ঝরণে!
২৭.
ডাডাবাদ : উল্টোকথা
3.
এই শহরের সমস্ত মানুষ মারা গেছে
সুন্দরী নারীরাও চলে গেছে মৃতের নগরে
কিছু ধাঙড় কুকুর বেঁচে আছে!
কিছু মানুষেরা অবশ্য দারুণ প্রতিবন্ধী,
তারা কী মানুষ!
চেয়ারটি টেবিলের তলে ঢুকে গেছে
চেয়ারের প্রাণীটিও দারুণ খর্বাকৃতি
সেও আস্তে আস্তে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস হয়ে
নিজেকে হারিয়ে ফেলছে,
সেও তাকে বাচাতে বাচাতে একেবারে অস্তিত্বহীন করে
ফেলছে, বাঁচতে বাঁচতে মরে যাচ্ছে
ঘোর অন্ধকারে পোকামাকড়ের সাথে!
২৮.
ডাডাবাদ : উল্টো কথা
(কুকুরের বাচ্চা)
4.
শহরের রাস্তার উপর কয়েকটি কুকুরের বাচ্চা
তার মায়ের দুধের বাট চুষে চুকচুক করে পেট পুরছে
কোন কোলাহল নেই
দলাদলি মারামারি নেই আটটি বাচ্চার
আহা কেমন সুন্দর সুশৃঙ্খলা
ওরা মানুষের মতো নয়-
ওরা ঘাই মেরে সরিয়ে দেয়না সহোদর ভাই বোন
ওরা কারো জমাজমি, ঘর বাড়ি জবর দখল করেনা
অসভ্য মানুষের মতো
ওরা বিধাতার কি সুন্দর সৃষ্টি
ওরা বড়ো হয়ে নারী নির্যাতন করেনা,ধর্ষণে ওঠেনা মেতে
ওরা গোলাগুলি করেনা রাক্ষস মানুষের মতো,
ওরা কি সৃষ্টির সেরা জীব!
কুকুরের বাচ্চারা মানুষ হবেনা কখনো!
২৯.
ডাডাবাদ : উল্টো কথা
5.
বিকল্প, বৈকল্য
আমাদের মল মূত্র ত্যাগ যদি ঘাম হয়ে বের হতো
তাহলে কেমন হতো?
পরিবেশ অনেকটা ভালো থাকতো,
অশৌচ অশুদ্ধ জীবনের গোপন বিলাশ উবে যেতো!
আমার এমন অসহায় অবস্থা বিরাজ করতো না।
শুদ্ধাচারে ভরে যেতো হয়তো জীবন।
এমন হলে কি পুরুষেরা সভ্য হয়ে যেতো?
হারামি পুরুষগুলো নারীদের কোমলাঙ্গ চর্বনে লেহনে ছিঁড়ে খুড়ে খেতো!
আহা মৃগনাভি কস্তূরী সুগন্ধে চারদিক আমোদিত হতো
অথচ এমন একটা অনন্ত সময় দরকার!
৩০.
আত্ম -জিজ্ঞাসা
১. এই সোনালী শরীরে এই দেহে কী আছে সে অমরতা!
মাটিতে যাবে না মিশে?
আবার জাগ্রত হবে, পাবে কী সেই সোনালী অমরতা?
২.
মাথার ভেতর কেন ঘুরপাক খায়
ক্ষুধা আর অমৃত যৌনতা!–
অবিনাশী আগুনের শেষ কোথায়?
৩.
কেন মরীচিকা দেখে, কেন আলেয়ার পিছে ঘুরঘুর করো,
কেন তোমার অন্তরে শয়তান পেশাব করছে?
৪.
কেন বারবার ভুল করো
কেন বারবার মাফ চাও,
তাহলে তিনি জাগ্রত তোমার হৃদয়ে!
৫.
কেন ভুলে এমন ঘুমিয়ে যাও?
কেন রক্তের ঋণ এ ভাবে ভুলে যাও!
৬.
বেশি সরলতা দেখায়োনা তাহলে সহসা অবমূল্যায়িত হবে!
৭.
তোমার সহজ মন তোমাকে ভোগাবে, কষ্ট দেবে
৮.
সরলতা তারা বোঝেনা, গরল হলে তোমার পায়ের তলে বসবে।
৯.
যারা তোমাকে বোঝেনা বোকার মতো সেখানে যেওনা।
১০.
এক গর্তে দু ‘বার পা দিওনা।
১১.
খালি বোতলে পানি ঢালিও না
কিছুটা থাকলে তা পূর্ণ করো।
১২.
সৃষ্টি কর্তা তার সৃষ্টিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন
মায়ের চেয়েও শতগুণ বেশি ভালোবাসেন।
একজন কবি যেমন তার কাব্য গ্রন্থকে,
একজন শিল্পী যেমন তার শিল্পকর্মকে
আগুনে পোড়াতে পারেন নাএকজন স্রষ্টাও তার শ্রেষ্ঠ শিল্প কর্ম এ মানুষকে পুড়িয়ে নিঃশেষ
করতে চান না।
১৩.
আমরা স্রষ্টার অনুকরণ করি,
স্রষ্টার রঙে রঙিন হই, সৃষ্টি কর্মে মশগুল থাকি!
১৪.
সৃষ্টি করলেই স্রষ্টা হওয়া যায় না
স্রষ্টা হতে হলে অনুকরণ করা যাবে না! আমরা কি সৃষ্টিশীল?
কিছু সৃষ্টি করি, না কি অনুকরণ করি এক মহা স্রষ্টার?
১৫.
হে প্রভু আমাকে অনুকরণ থেকে
বাঁচাও, আমাকে তোমার সমকক্ষ হওয়ার লালসা থেকে বাঁচাও
শিরক থেকে বাঁচাও”
১৬.
তোমাকে বাঘ ছোবল না দিলেও মানুষ কখনো কখনো ছোবল দিতে পারে!
১৭.
আমিও স্রষ্টা একপ্রকার,
আমাতে ঢোকে শয়তান –
আর সেই স্রষ্টায় নেই শয়তান
তবে তার বেহেশতে ছিলো,
আদমের শরীরে কাতুকুতু দিতো!
১৮.
আমি বারবার পাক পবিত্র হই
অথচ আমার লোমকূপে ঢুকে আছে শয়তান –
শয়তান বায়ুত্যাগ করে অশ্লীল প্রকার!
১৯.
কত যে অজু গোছল করি, পবিত্র হওয়ার পেরেশানি আমার শোণিত ধারায় –
অথচ আমার পেটে আর রক্তের ভেতর হারাম সাতরায়!
২০.
কে কোথায় পূণ্যবান?
ভগে যদি ভগবান!
ভগে থাকে নাপাক তরল,
ভগবান কেন হবেনা গরল!
২১.
ইন্দ্র দেব ভগবান
ভগ চিন্হে পূণ্যবান!
ভগ-যোনি তারপর
শত-নেত্র অতঃপর।
২২.
হাসান তোমার রিজিক তো নির্ধারিত,
কেন পেরেশানি, যা হবার তা অবধারিত!
২৩.
আমার কাজ, আমার ইবাদত আমাকেই করতে হবে,
আর কেউ পারবেনা তা করে দিতে এই ভবে।
২৪.
আমার প্রভু আমাকে দেখছেন সর্বদা,
পাপের প্রতি লজ্জা ও হে প্রিয়ংবদা।
২৫.
মৃত্যু তো আমার সমান বয়সী
প্রভুর বিতানে যেতে প্রস্তুতি নিয়েছি।
২৬.
জানিও সকল কাজের সুফল ফলেনা,
সুফল কুফল সব কাজের ওপর চলে না।
২৭.
পরীক্ষার প্রস্তুতি যখন শেষ হবে
তখন পরীক্ষা নিতে ডাক দিও, কাছে নিও!
২৮.
আমি কখন উত্তীর্ন হবো, তা কেবল তুমিই জানো-
ফেল করা ছাত্রের দায়িত্ব শিক্ষকেরও থাকে!
২৯.
তোমার ইচ্ছার অনিচ্ছার বলি আমরা সকলে,
আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই-
সৃষ্টির আবার কিসের স্বাধীন চিত্ত!
৩০.
আমাদের আসলে কোন জ্ঞানের
বড়ত্ব নেই –
সীমাবদ্ধ সরোবরে চোখ বাঁধা মাছ–
কতটা নিজেকে দেখি
অজানা সকলই থেকে যায়!
৩১.
উটের চোখের মতো দ্বিতীয় পর্দা নামিয়ে গোবরা হাওয়ায় চোখ বুঁজে পথ চলি-
যা দেখি তা তো বলিনা, বলতে পারিনা!