ইফতার
বাবা বসে আছেন তাঁর পড়ার ঘরে
মেঝে জুড়ে চারিদিকে ছড়ানো-ছিটানো বইপত্র ।
মুখ নিচু করে বসে আছেন–
রেহেলে খোলা আদিগন্ত কোরআন শরিফ।
রোজার সন্ধ্যা নেমে আসবে আর কিছুক্ষণ পর
খোলা জানালা থেকে দেখা যায় অস্পষ্ট বোগেনভিলিয়া…
দিনান্তে যে পাখি সন্ধ্যার আশ্রয়ে ফিরবে
এখনো তারা আকাশে ওড়াওড়ি করছে
কেবল একটি দুটি নিঃসঙ্গ কাকের ঘরে ফেরা..
সূর্যাস্তের শেষ আলোয় ঘর উঠোন শান্ত স্থির
জিবরাইলের অলৌকিক ডানা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে মিলিয়ে গেল কাঠবেড়ালির সবুজ দৌড়ে..
নিরম্বু উপবাস ব্রত পালনের ইফতার
বাবার মোনাজাতে দুলে উঠছে সূর্যাস্তের দিগন্তরেখায়..
বাবা কতদিন নেই।
অ সী ম স্প র্ধা য়
পিতার কবর জিয়ারত করতে এসেছে সন্তানের অযোগ্য দুই হাত
সবটুকু ব্যর্থতার কথা জানাতে জানাতে দীর্ঘ ছায়া নেমে আসে
মোনাজাত অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
‘হে প্রভু শৈশব থেকে আমাকে প্রতিপালিত করেছেন আমার পিতা, কবরখানায় শায়িত তাঁর অনশ্বর দেহ–তাকে তুমি ক্ষমা করো’…
দিগন্তবিস্তৃত রোদ্দুর…শূন্যতা ছুঁয়ে নেমে আসছে ফেরেশতার অলৌকিক দীর্ঘ হাত…
সন্তানের ব্যর্থতার ছায়া আরো দীর্ঘ হয়।
হে সরস মাটি, তুমি প্রভুকে বল–
খেজুর বীথির শীতল ছায়া, তুমি প্রভুকে বল–
হে মধ্য দুপুর, প্রণত আমগাছ, তুমি প্রভুকে বল–
এখানে শুয়ে আছেন যে বুজুর্গ পুরুষ আমি তার জন্য প্রার্থনা করি এমন স্পর্ধা আমার নেই…
লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদককে
তরুণ সম্পাদকের অনুরোধে লিখতে হবে যে কবিতা
তার জন্য সমস্ত অক্ষর সাজিয়ে রাখি
সবটুকু ব্যর্থতা দিয়ে …
এক একটি ব্যর্থ শব্দবিন্যাস ভরা স্মৃতি.. কিছু অপমান
কোলন রেফ ড্যাশ আমার সমস্ত শূন্যতা
তরুণ সম্পাদক তোমাকে দিলাম।
শেষ রাত্রির নক্ষত্র আলোয় পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে
আনন্দ- শ্রমণ আমি, প্রেম ও সন্ন্যাস তোমাকে দিলাম…
ঘুম
তাদের বলো
ঘুম পরোপকারী বন্ধুর মতো
অতল দিঘি স্তব্ধতা বিশ্রাম …
মিথ্যেবাদী রাখাল আসবেনা আর গোচারণ ভূমিতে।
দৈত্য
মা শোনো, ওরা আমার কথা কেউ শুনল না
দুপুরবেলা ঝমঝম করে বৃষ্টি এল আর আমি
ঠায় দাঁড়িয়ে দেখলাম কত বৃষ্টি কত বৃষ্টি…
তারপর একটি ধূসর দৈত্য বৃষ্টির ভেতর হেঁটে হেঁটে
লম্বা রাস্তা পার হয়ে গেল, কেউ বিশ্বাস করছে না
কেমন ধূসর আলখাল্লার বোতাম খুলে দাঁড়িয়ে গেল
একটি বিজ্ঞাপন হোর্ডিংএর পাশে
তার ঠিক পাশের দেয়াল ছুঁয়ে সবুজ একটি লতা,
সে কেবলই স্পর্শহীন ভিজছে
তার সঙ্গেও কথা হলো— আমি বললাম কত কথা
সেই ধূসর ফেরেশতা কত কথা বলে গেল
বিজ্ঞাপন সাইনবোর্ড এর পাশে লতাটি একটানা শুধু ভিজছে
কত বাইকের হর্ন স্তম্ভিত থেমে গেল তাই দেখে
আমার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না, মা।