পলাশরাঙা প্রভাতফেরি
পলাশফুলে রঙ ধরেছে,
এসেছে ফের বসন্ত
খোকনসোনা শিখেছে যে
লিখতে কেমন হসন্ত।
লিখতে লিখতে জিগায়, বাবা,
পলাশগাছের ডালেতে
কে হঠাৎ এই রঙ ছিটালো,
গাছ ভরা তাই লালেতে?
চুপটি করে রই যে আমি,
নেই জানা এর উত্তরই;
খোকন আমার ঝামটি মেরে
বলে ওঠে, ধুত্তোরি!
তাও জানো না? তবে শোনো
আমিই বলি—এই সে লাল,
যে-লালেতে ভিজেছিল
ফেব্রুয়ারির সেই সকাল।
দুপুর ভিজে রাঙা হয়ে
উঠেছিল কারবালায়
বরকতের মা হুহু করে
কেঁদেছিল তার জ্বালায়।
সেই থেকে সব লাল হয়েছে
পলাশ জবা শিমুল সব
রাঙা হয়ে উঠেছে ফের
বীর বাঙালীর শোকোৎসব।
পলাশরাঙা প্রভাতফেরি
শোকের প্রতিধ্বনিতে
সোনার এ-লাল কিনতে হলো
বরকতেরই শোণিতে।
বরকতের গান
কাকের ভাষা কা কা কা
গরুর ভাষা হাম্বা
আমার ভাষা অ-আ শুনে
বলে তারা, ‘থামবা?’
আমি বলি, ‘থামবো কেন?’
বলে, ‘ওরে বুদ্ধু!
এখন থেকে বলতে হবে
উর্দু, শুধু উর্দু।’
‘বাংলা আমার ভাষা, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে
কে আমাকে শাসায়, আমি
লড়ি বাঘের সঙ্গে।’
যেই বলেছি, অমনি তারা
ঝরিয়ে দিলো রক্ত
ভাষায় ভাষায় যুদ্ধ হলো,
যুদ্ধ সে-কি শক্ত!
কেউ দ্যাখেনি যুদ্ধ এমন
পশ্চিমে কি পূর্বে
ইতিহাসের চাকা বুঝি
উল্টো এবার ঘুরবে।
ঘুরলো তা-ই, অবাক চোখে
দেখলো চেয়ে বিশ্ব
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
মহাকালের দৃশ্য।
মহাকালের বক্ষ ফুঁড়ে
হঠাৎ জেগে উঠলো
লক্ষ মিনার, সেই খুশিতে
কৃষ্ণচূড়া ফুটলো।
শহীদ মিনার প্রাণের মিনার
সারা পৃথিবীর সে
আমায় খোঁজো? আমায় পাবে
এই মিনারের শীর্ষে।
মৃত্যুহীনদের গান
যারা ছিলো বেঁচে,
মরেই তারা গেছে;
দিকে দিকে অমর হয়ে
ঘুরছে শুধু তারা
মাতৃভাষার জন্যে জীবন
দিয়েছিল যারা।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
কি যে হলো ঢাকায়—
সেই ঘটনা ঘুরতে লাগলো
মহাকালের চাকায়।
যেই শুনলো সেই ঘটনা
আঁৎকে উঠলো শোকে—
কেউ শোনেনি আগে এমন,
কেউ দ্যাখেনি চোখে।
হায়েনারা মুখোশ পরে
দিয়েছিল হানা
খেয়ে ফেলবে বাংলা ভাষা
যেন মজার খানা।
এ বা কেমন পশু রে ভাই
ভাষা এলো খেতে!
সেই পশুকে রুখতে সবাই
এলো মিছিলেতে।
ছুটলো গুলি, উড়লো খুলি,
বইলো রক্তস্রোত
লুটিয়ে পড়লো মহাকালের
বক্ষেতে বরকত।
রফিক শফিক এবং সালাম
ইতিহাসে লেখালো নাম
রক্তে ভেজা বর্ণমালার
শার্ট জড়িয়ে গায়ে
পৌঁছে গেল অমরলোকে
এক পায়ে দুই পায়ে।
সবাই মরে গেছে,
তারাই আছে বেঁচে।