কাজী জহিরুল ইসলাম
আমাদের ছেলেবেলায় বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে কেবল জসীম উদদীনের নিমন্ত্রণ এবং ফররুখ আহমদের পাঞ্জেরী পাঠ্য ছিল। ফলে অন্য কোনো বাংলাদেশী কবির কবিতা পড়ার সুযোগ হয়নি। একটু বড় হয়ে যখন কবিতার গলি ঘুপচিতে হাঁটতে শুরু করি তখনই আবিস্কার করি বাংলা কবিতার এক অজানা ভুবন যা ছাত্রদের কাছে কখনোই উন্মোচিত হয়নি।
আল মাহমুদের খোঁজ আমাকে দেয় ছেলেবেলার বন্ধু সামসুজ্জামান। ৮৪/৮৫ সালের কথা। জামান একদিন ঘোষণা করে ওর নাম রিজভী। বড় ভাইয়ের শ্যালিকা সীমা ওকে এই নাম দিয়েছে। সীমার সাথে ওর গভীর প্রেম। সীমাদের বাড়ি মগবাজারের মধুবাগে, পাশেই থাকেন আল মাহমুদ। রিজভী আমাকে অনেকদিন বলে বন্ধু, চল, আল মাহমুদের বাসায় যাই। এই রিজভীই পরে প্রখ্যাত গীতিকার আহমেদ রিজভী হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালে রিজভী তরুণ কন্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীকে পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করে। ডলিদের মহাখালির বাসায় আমরা অনেকেই যেতাম। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র ছেলে রিজভী। ঘটনাটি যে ও-ই ঘটাবে তা কেউ চিন্তাও করেনি।
রিজভীর সঙ্গে আল মাহমুদের বাসায় আমার যাওয়া না হলেও আমি আল মাহমুদের কবিতার প্রতি আগ্রহী হই। তাঁর ‘সোনালি কাবিন’ এবং ‘কালের কলস’ বই দুটি জোগাড় করে আদ্যোপান্ত পাঠ করি। তাঁর গদ্যের বই পানকৌড়ির রক্ত পড়ে রীতিমত ভক্ত হয়ে যাই। এরপর যেখানেই আল মাহমুদের বই পেয়েছি সাথে সাথেই সংগ্রহ করেছি, যেসব ঈদ সংখ্যায় আল মাহমুদের কবিতা বা গদ্য ছাপা হয়েছে সংগ্রহ করে পড়েছি।
আল মাহমুদের সাথে আমার প্রথম কথা হয় ১৯৯২ সালে, সাপ্তাহিক পূর্ণিমা পত্রিকার অফিসে। ছোটখাটো মানুষ, গুটুর গুটুর করে হাঁটেন, কথাবার্তাও তেমন ইম্প্রেসিভ না। অন্য কবি/সাহিত্যিকদের মতো তেমন আড্ডাবাজ তো নয়ই। তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার তেমন আগ্রহ আমার হয় না।
আমার প্রথম বই পুরুষ পৃথিবী-র পাণ্ডুলিপি তৈরী হওয়ার প্রায় চার বছর পর, ১৯৯৮ সালে বইটি বের হয়। এর একটি প্রকাশনা উৎসব করতে চাই। ততোদিনে আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি যার কবিতা আমাকে নিবিড়ভাবে অধ্যায়ন করতে হবে তিনি আল মাহমুদ। কাজেই আমার প্রথম কবিতার বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে আল মাহমুদকে চাই। স্যুভেনিরের জন্য আল মাহমুদের লেখা চাই। মাহমুদ ভাই তখন দৈনিক সংগ্রামে যোগ দিয়েছেন। তাঁর খোঁজে আমি সংগ্রাম অফিসে যাই। তিনি সানন্দে আমার বইটি গ্রহণ করেন এবং এর ওপর ছোট্ট একটি লেখা তৈরী করে দেন। ‘পুরুষ পৃথিবী’-র ওপর সেই স্যুভেনিরে আরো যারা লিখেছিলেন তাঁরা হলেন ফজল শাহাবুদ্দিন, আবদুল মান্নান সৈয়দ, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন প্রমূখ।
মতিঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠান হয়। মাহমুদ ভাই বক্তৃতা করেন। টেবিল টকে আল মাহমুদ ইম্প্রেসিভ না হলেও আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় তিনি অসাধারণ। আমার কবিতার প্রশংসা যেটুকু করলেন তা হচ্ছে ‘সম্ভাবনা’। বইটিতে ২০টি সনেট ছিল, তিনি সনেটগুলো এড়িয়ে গিয়ে অন্য কবিতাগুলোর প্রশংসা করেন। বাংলা কবিতার ধারাবাহিক পাঠ একজন তরুণ কবির জন্য অতীব জরুরী, এই কথা বলেন। আমি তাঁর প্রতিটি উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। তিনি এই উপমহাদেশের পুরাণ-আখ্যানসমূহ পাঠ করতে বলেন, আমি ততোদিনে গীতা, রামায়ণ পড়ে ফেলেছি, মহাভারত পড়তে শুরু করি। তিনি কোরআন, বাইবেল, তওরাত পড়তে পরামর্শ দেন, আমি চারটি প্রধান আসমানি কিতাবই নিবিড়ভাবে অধ্যায়ন করি। সেই অনুষ্ঠানে ফজল শাহাবুদ্দিন, আবদুল মান্নান সৈয়দও ছিলেন। এঁদের তিনজনের সঙ্গেই আমার নিবিড় সখ্য গড়ে ওঠে। তবে ২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত আমি সবচেয়ে বেশি আড্ডা দিয়েছি ফজল ভাইয়ের সাথে।
২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর আল মাহমুদই আমার প্রধান সুহৃদ, প্রধান বন্ধু, সব কিছু। মাঝে মাঝে নয়, আড্ডা হত প্রায় প্রতিদিনই। তিনি খেতে পছন্দ করতেন, আমাদের বাসায় ব্যতিক্রমী কিছু রান্না হলেই মুক্তি বলতো, মাহমুদ ভাইকে নিয়ে আসো। নাদিরা ভাবীর সাথেও মুক্তির একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁর ছোটো কন্যা জিনিয়ার জন্য ভালো পাত্র খুঁজে দেবার জন্য মাহমুদ ভাই আমাদের অনুরোধ করেন। তেমন যোগ্য পাত্র অবশ্য আমরা খুঁজে দিতে পারিনি। জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, এমন কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান নেই যেখানে মাহমুদ ভাই থাকতেন না। এমন কি মাহমুদ ভাইয়ের জন্মদিনও পালন করেছি আমাদের বাসায়। সেই অনুষ্ঠানে নির্মলেন্দু গুণ যোগ দিয়েছিলেন। মাহমুদ ভাইকে নিয়ে আমরা যখন আড্ডা দিতাম, দেশের অনেক প্রখ্যাত এবং তরুণ কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক উপস্থিত থাকতেন। তাঁরা নানানভাবে মাহমুদ ভাইকে বিব্রত করতে চাইতেন, মাঝে মাঝে তিনি খেপতেন, অধিকাংশ সময়ই হাসতেন। রাজনৈতিকভাবে মাহমুদ ভাইকে অনেকেই অপছদ করলেও তাঁর সান্নিধ্য পাবার ব্যকুলতা তাঁদের মধ্যে আমি দেখেছি।
তিনি আমাকে প্রায়ই বলতেন, ইশক বলে একটা জিনিস আছে। ইশকের সাধনা করার চেষ্টা করো। ২০০৪-এ আমার জন্মদিনে তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেন, ‘কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা ও তারুণ্যের প্রতি আমার পক্ষপাত’। লেখাটি ১০ ফেব্রুয়ারী ২০০৪-এ দৈনিক জনকন্ঠের সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়। এটি কবি আল মাহমুদের প্রবন্ধের বই ‘কবির সৃজন বেদনা’ -তেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি আমাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। একদিন বলেন, তোমাকে স্বার্থপর হতে হবে, বুঝলে কবি। আমি তো অবাক। স্বার্থপর না হওয়ার চেষ্টাই তো আমি সারাজীবন করছি। তিনি বলেন, তোমাকে বুঝতে হবে কখন আড্ডা ছেড়ে উঠে আসতে হয়। বন্ধুরা টেনে ধরবে কিন্তু তোমাকে উঠে যেতে হবে। তোমাকে লিখতে হবে। না লিখে শুধু আড্ডাবাজী করে কেউ সাহিত্যে টিকে থাকতে পারে না। কবি শহীদ কাদরীও একদিন আড্ডা ছেড়ে উঠে আসা প্রসঙ্গে বলছিলেন, শামসুর রাহমান তাঁকে বলেছিলেন, আড্ডা ছেড়ে উঠে যান, লিখতে বসুন। নাহলে কবিতা চলে যাবে। কিন্তু শহীদ কাদরী তাঁর কথা শোনেননি। আমি কিন্তু আল মাহমুদের কথাটি সারা জীবন ধরেই মনে রেখেছি। আমি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি, না লিখলে লেখক বেঁচে থাকে না। লেখককে সচল থাকতে হয়।
আল মাহমুদ সম্পর্কে শহীদ ভাইয়ের কাছে শোনা একটি মজার ঘটনা বলি। একদিন মাহমুদ ভাই টেবিলের ওপর লাফ দিয়ে উঠে পায়জামা গুটিয়ে নিজের উরুতে চাটি মেরে বলেন, আমার বউয়ের উরু এশিয়ার নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উরু। শহীদ ভাই বলেন, তাই নাকি, তাহলে তো দেখতে হয়। এ কথা বলে শহীদ ভাই উঠতে গেছেন, অমনি মাহমুদ ভাই চিৎকার শুরু করেন, নাদিরা ভাগো, ভাগো, শহীদ আইতাছে। অনেক বছর পর শহীদ ভাই যখন বাংলাদেশে যান তখন আবার আল মাহমুদের বাসায় যান। মাহমুদ ভাই বলেন, তোর শহীদ চাচা আইছে মুরগা কাট মুরগা কাট। তো রান্না বান্না হল, ভাবী ট্রে-তে করে খাবার নিয়ে এলেন। শহীদ ভাই তখন বলেন, ভাবী সেই তো আইলেন, বুড়া হৈয়া আইলেন।
মাহমুদ ভাই আমাকে দাউদ হায়দার সম্পর্কে একটি ইন্টারেস্টিং ঘটনা বলেন। ১৯৭৪ সালে আল মাহমুদকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার গ্রেফতার করে। তিনি এক বছর জেল খাটেন। তিনি আক্ষেপ করে আমাকে বহুবার বলেছেন, জেল বড় খারাপ জায়গা। মানুষকে শেষ করে দেয় একেবারে। গণকন্ঠের সম্পাদক হিসেবে যখন মাহমুদ ভাইকে গ্রেফতার করা হয় তখন একই জেলে দাউদ হায়দারও ছিলেন। একদিন সন্ধ্যায় জেলখানায় একটি কালো বিড়াল দেখে দাউদ হায়দার ভয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে মাহমুদ ভাইয়ের কাছে চলে আসেন। মাহমুদ ভাই তখন তাঁকে বলেন, দাউদ, তুমি একটা বিড়ালকে ভয় পাও আর আল্লাহকে ভয় পাও না! পরে অবশ্য দাউদ ভাই আমাদের নিউ ইয়র্কের বাসায় এলে একদিন এই ঘটনা তাঁকে বলেছিলাম। তিনি বলেন, ডাঁহা মিথ্যে কথা।
মাহমুদ ভাই আমাকে বলেন, তুমি পৃথিবীর যেখানেই থাকো না কেন ঢাকা এবং কোলকাতার কবিরা কবিতায় কি তরঙ্গ তোলে তা তোমাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কখনোই ঢাকা এবং কলকাতার কবিতার স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেও না। আমি আফ্রিকা থেকে ছুটিতে ফিরে এলেই তিনি আমাকে আফ্রিকার কালো নারীদের কথা জিজ্ঞেস করতেন। কালো বা শ্যামলা নারীদের প্রতি তাঁর দূর্বলতা ছিল। কেন ছিল এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। শৈশবে যে নারী তাঁকে সাহচর্য দিয়েছেন, লালন পালন করেছেন, তিনি ছিলেন এক কালো নারী। এই দূর্বলতা তাঁর মধ্যে সারাজীবন ছিল। অনেকেই তাঁকে নারীদের প্রতি আসক্তির কথা জিজ্ঞেস করেছেন। তিনি উত্তরে একটি কথাই বলতেন, আমার ঘরে ফ্রিজ ভরা ঠান্ডা পানি আমি কেন ড্রেনের পানিতে মুখ দেব?
২০০৭ সালে মাহমুদ ভাই আমার ওপর একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধের শিরোনাম ‘বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ’। এই প্রবন্ধে আমার সাহিত্য কর্মের মূল্যায়ন যেমন করেছেন, সাহিত্যের, বিশেষ করে বাংলা কবিতার, গতি-প্রকৃতি নিয়েও অনেক কথা বলেছেন।
তাঁকে নিয়ে যেসব বিতর্ক আছে, সেইসব বিষয় নিয়ে আমি তাঁকে বেশ খোলামেলা অনেক প্রশ্ন করেছি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন ডাকাতদের গ্রাম বলেছেন, জানতে চাইলে বলেন, শোনো, আমি তখন শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক। আমার অফিসের একটি মেয়ে পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে আসার সময় রিক্সা থামিয়ে ওরা মেয়েটির সব কেড়ে নিয়েছে এবং ওকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করেছে। তিনি জামাতে যোগ দিয়েছেন কিনা, জামাতের উপদেষ্টা কিনা, এইসব প্রশ্নও করি। তিনি বলেন, জামাতের রাজনীতি সম্পর্কে যাদের সামান্যতম ধারণা আছে তাঁরা এই প্রশ্ন করবে না। ওরা কাউকে হুট করেই সদস্য বানায় না। দীর্ঘদিন ওদের সাথে কাজ করতে হয়, ধাপে ধাপে উন্নীত হয়ে সদস্য হতে হয়। আমাকে হেয় করার জন্য এইসব বলা হয়। তিনি সবসময় গর্ব করে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা, তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের একটি উঁচু পদে ছিলেন তাঁর ভগ্নীপতি এইচটি ইমাম, তাঁর কোলকাতার বাড়িতে থেকে তিনি বাঙালি এবং অবাঙালি লেখক-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত তৈরী করার কাজ করতেন। তাঁর কাজটি ছিল মটিভেটরের।
জামাত বা সংগ্রামের সাথে কীভাবে জড়ালেন, এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁর ছেলে একটি মেয়ের সাথে প্রেম করতো। তাঁরা পরিবারের অমতে বিয়ে করে ফেলে। মেয়ের বাবা মামলা করে। ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে টাকা দরকার। কেউ তখন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। সংগ্রাম তাঁকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে এবং লিখে শোধ করে দিতে বলে। এভাবেই তিনি সংগ্রামের সাথে জড়িয়ে যান।
মাহমুদ ভাই আমাকে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন। আমি যেন কিছুতেই অন্ত্যানুপ্রাস বা অন্তমিল সমৃদ্ধ কবিতা লেখা না ছাড়ি। একই কথা আমাকে কবি শহীদ কাদরীও বলেছেন। আমি এই দুই মহীরুহ কবির পরামর্শের মর্যাদা দিতে চাই।
১৯৫৪/৫৫ সালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন এক কিশোর গোলাপফুল আঁকা টিনের বাক্স হাতে নিয়ে রাবারের সেন্ডেল পায়ে দিয়ে ফুলবাড়িয়া স্টেশনে এসে নামে। মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ সেই কিশোরের নাম। তিনিই আজকের বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। সেই টিনের বাক্সে করে তিনি নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের সবগুলো নদী, সবগুলো পাখি, সবগুলো বৃক্ষ। গত ৬ দশক ধরে তিনি সেই গোলাপফুল আঁকা জাদুর বাক্স খুলে আমাদের দেখাচ্ছেন বাংলাদেশের মুখ। আমরা দেখি আর বিস্মিত হই।
ছয় মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা কবি আল মাহমুদের একটি সহজ সরল কবিতা দিয়েই এই লেখাটি শেষ করছি।
কথা বলি আমি ঝরে যায় ঝরাপাতা
হাওয়ায় উড়ছে তোমাদের হালখাতা।
তোমাদের সাথে ব্যবধান চিরদিন
হিসেব নিকেশ মেলে না তো কোনো দিন।
সামনে কেবল খোলা আছে এক পথ
এই পথে কবে চলে গেছে সেই রথ।
রথের মেলায় এসেছিল এক ছেলে
বিস্ময়ভরা চোখের পাপড়ি মেলে।
ওই সেই ছেলে হারিয়ে গিয়েছে মাঠে
তাকে খুঁজে ফিরি হাটেবাটে ঘাটেঘাটে।
তার চোখে জ্বলে আগামী দিনের রোদ
পোশাকে তো তার ছিল সম্ভ্রম বোধ
সাহসের কথা বলতো সে আগে-ভাগে
এখন সে নেই বলো তো কেমন লাগে।
[হারানো ছেলের গীত -আল মাহমুদ]
(২০১৭ সালের লেখা।)