spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাকবিতাগুচ্ছ : কাজী জহিরুল ইসলাম

কবিতাগুচ্ছ : কাজী জহিরুল ইসলাম

শীতকন্যা

কুয়াশা-জাল ছিঁড়বো বলে সূর্য দিলো নোখ
শীতকন্যার দুই চোখে জল আব্রুহারা শোক।

নগ্ন শীতের অশ্রুজলে শুভ্র জানুয়ারি
ক্লোজেট থেকে ম্যাগনোলিয়া নামায় রঙিন শাড়ি।
ইতি-উতি চোখ মেলে চায় টিউলিপের পোনা
হাইড্রেঞ্জা তৈরি হাতে গুচ্ছ কাচা-সোনা।

ওভারকোটের বুক-পকেটে চলছে আজব ঘড়ি
লেপের নিচে ফেব্রুয়ারির উষ্ণ জড়াজড়ি।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৬ জানুয়ারি ২০২৩।

বার্ধক্য

বলিরেখা, কপালের কাটাকুটি, কালের কর্ষিত ক্যালিগ্রাফি;
অভিজ্ঞ কলমে লেখা প্রবহমান ঋতুচক্রের অযুত-নিযুত দেহলিপি;
কিংবা বলতে পারো আমার গোপন ঐশ্বর্যের কোড;
যদি তুমি পড়তে পারো তা,
ঐশ্বর্যমণ্ডিত যুথবদ্ধ গুপ্তধন-গুহা খোলার আশ্চর্য চাবিগুচ্ছ পেয়ে যাবে হাতে।

ক্রমাগত আরো আরো অনেক গোপন কোড
লিখে যাবো নশ্বর দেহের ভাঁজে ভাঁজে,
যদি পারো অভিনিবেশের সঙ্গে পাঠ করো,
পাঠোদ্ধার করো
আসিরিয় হরফের দুর্লভ মর্মার্থ,
পারো তো প্রকাশ করো হরপ্পার সীলমোহরে অঙ্কিত
সভ্যতার প্রাচীন অনুমোদন।

আমার দেহের বলিরেখায় কী লিখে রাখিনি আম্রপালির নিষিদ্ধ চুম্বন,
খুঁজে দেখো বিম্বিসার ঘেঁটে, অজাতশত্রুর প্রেম উপেক্ষিত হয়নি মোটেও;

কপালের সুদীর্ঘ আলিফ যদি ক্রমশ খনন করো দক্ষ খনি-শ্রমিকের মতো
পাবে তুমি হেলেনিক গীর্জার প্রাচীন কারুকাজ,
আক্রোপোলিসের নির্মম হেমলক-রহস্য,
দেবী এথেনার পার্থেনন পড়ন্ত সূর্যের দিকে হেলে কোন সত্যের মুখোশ
উন্মোচন করে প্রতিদিন, পেয়ে যাবে সব, সব খুঁটিনাটি।

গলায় শোভিত অর্ধচন্দ্রাকৃতির সুবর্ণ হারগুচ্ছ
কী উজ্জ্বল জ্বলে আছে গভীর আঁধারে,

ওখানে ছোঁয়াও নতুন আঙুল,
খোঁজো সেই মুখ, গোপন সুরঙ্গপথ,
যদি পেয়ে যাও দুর্লভ, জটিল কোড দরোজার
পৌছে যাবে মহাকালের ধুসর নাভীমূলে।

বার্ধক্যের অসাড়, মলিন ধুলোবালি নয়,
সহস্র স্বর্ণাভ গতি,
সময়ের স্রোতধারা
আমার দেহের ঝুলে পড়া ত্বকে;

জুম-ইন করো, টেনে টেনে বড়ো করো,
দেখো, বহমান মানুষ-জন্ম-প্রবাহ কী অদ্ভুত
এক গতি-ছন্দে ছুটে চলেছে বিরতিহীন।

কুঞ্চিত নাসিকা, কানের সুপক্ক লতি, ঝুলে পড়া ভ্রু-যুগল,
কম্পিত আঙুল-গুচ্ছ,
দু’হাতের উল্টোপিঠে ফুলে ওঠা শেকড়ের মতো কয়েকটি শিরা,
ছানি পড়া চোখ, পেটমোটা দুটি আইব্যাগ,
কম্পমান হাঁটু
সুদীর্ঘ মানব সভ্যতার এক উজ্জ্বল গ্রন্থের ততোধিক উজ্জ্বল পৃষ্ঠাসমূহ।

পড়ো তাকে,
ইকরা বিসমিরাব্বিকাল্লাজি খালাক।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৩০ ডিসেম্বর ২০২২।

বৈশাখ এসেছে

ঝড়ের ভেতরে এসে বসে পড়ে নতুন বৈশাখ
পাতারা দোলায় দ্রুত মাতাল বাতাস
পাখিহারা গৃহ, ডানা মেলে খোঁজে রাত্রির আশ্রয়
নিরাপত্তার আজান উচ্চারণ করে
নড়বড়ে করুণ গিরস্থ,
প্রমত্ত ঝড়ের তীব্র আর্তনাদ সহসা বিদীর্ণ।
শীতল মৃত্তিকা আমের মুকুলে, শীলাবৃষ্টিতে, আনন্দে গড়াগড়ি খায়।
তড়পায় নবধারা খালের খলসে পুটির রঙিলা গায়ে।
ধ্যানী বক তুমুল বৃষ্টিতে নিশানা রেখেছে তাক।
নতুন পোয়াতি যুবতীর চোখ চমকায় আকাশের সর্পিল বিদ্যুতে।
আকাশ নেমেছে পুকুরের জলে নাপাক মৃত্তিকা-বস্ত্র ধুতে।

এফ ট্রেন (ম্যানহাটন টু জ্যামাইকা), ৭ ডিসেম্বর ২০২২।

প্রতিবাস্তব কবিতা

মাংসের ভেতরে ডিপফ্রিজ ফুলকপি হয়ে আছে,
মধ্যবিত্ত গৃহিণীদের জ্বলন্ত চুলোগুচ্ছ শব্জি-আনাজ বাগানে ঝুলন্ত বাদুড়,

সারি সারি স্কুলবাস শিশুদের কোলে,
ব্যাকপ্যাকে
শিশুরা রঙিন মলাটের মাঝখানে প্রযুক্তি-সভ্য নতুন পৃথিবীর পাঠ।

সকালের উষ্ণ কফি নবদম্পতির কামপ্রবণ ঠোঁটের উত্তাপ নিঙড়ে নেয় ফোঁটা ফোঁটা।

সেলফোনগুলো সারাদিন আঙুলের স্ক্রিনে টেপাটিপি করে;
ভার্চুয়াল রস ছলকে ছলকে ওঠে আনন্দ-কলসে।

যুগ পাল্টে গেছে
এখন টিভিতে বসে না লেদার সোফাগুলো আর,
আঙুলের গাছেই ফুটছে বিনোদন পুস্প,
গুচ্ছ গুচ্ছ রসালো ওয়েব-সিরিয়াল।

কবিতার জটিল শব্দেরা, উপন্যাসের উর্বশী রম্ভা,
নিয়ত এখন চুমু খায় আঙুলের উষ্ণতায়।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৬ ডিসেম্বর ২০২২।

দখলের মহামারি

আপেলের ভেতরে একটি উত্তপ্ত বুলেট।

মুখ-থুবড়ে পড়েছে স্বপ্নের বেলুন।

সঞ্চিত দখিনা হাওয়া পোড়ে ক্রমাগত শরতের কাশবন
অপরিণামদর্শী গ্রীষ্মের দাহে;
বিষবায়ু ছাড়া শহরে খোলা-জানালা নেই আর।

মাছেদের জন্যে নদী-চিহ্ন বিভ্রম-প্রবাহ
জ্যোৎস্নার বিষণ্ণ চাতালে হাঁসফাস, থিকথিকে গ্রিজ;
মৃত পাখিদের দীর্ঘ মিছিল সৈকতে,
পথকুকুরের তারস্বরে বিদীর্ণ ভয়ার্ত রাত্রির প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা।

অদ্ভুত দর্শন একদল প্রাণীর দখলে দেশ,
তাদের বিষাক্ত ডিমে প্রত্যহ তা দেয় সর্বোচ্চ সনদ,
চেতনার পাখনা ছড়িয়ে।

ডিম ফুটে, তপ্ত কড়াইয়ে ভূট্টার খই,
আরো আরো অদ্ভুত চেতনা-শিশু।

দৃষ্টির উত্তাপে ভষ্ম উপমহাদেশ-সম্প্রীতি, ঐক্যের পলিমাটি,
হাওরের জল-কাদা, নিস্ফলা ধুসর, বন্ধ্যা নারী।

চারদিকে শুধু আজ দখলের তীব্র মহামারি।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৬ ডিসেম্বর ২০২২।

নির্জনতা

এই যে দুপুর
পরস্পরের দৃষ্টিতে রোদ
ছলাৎ ছলাৎ
ভাঙছে ঋতুর ঢেউ

নির্জনতার সঙ্গে এখন
নির্জনতার
আনন্দ সংঘাত,
দৃশ্যপটে
চোখ পেতে নেই কেউ।

দুটি মানুষ
এক টেবিলের এপাশ-ওপাশ
ফিঙ্কি নদীর গোপন জলে
বিচিত্র মাছ
ডুব-সাঁতারে
স্বপ্ন-রেখা আঁকে

যাচ্ছে নদী
একলা হেঁটে
নিজস্ব এক স্রোতের টানে
নুন-সাগরের ডাকে।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১ নভেম্বর ২০২২।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
আমিনুল ইসলাম on কবিতাগুচ্ছ
শিকদার মুহাম্মদ কিব্রিয়াহ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on কবিতাগুচ্ছ
নয়ন আহমেদ on মা দিবসের কবিতা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম on শিপা, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারিনি