১. জীবন কী? আপনার বর্তমান জীবন, অবস্থান– যা হতে চেয়েছিলেন বা যা হয়েছেন– এসব নিয়ে কোনো আক্ষেপ, অনুশোচনা বা গর্ব হয়?
নাসির হেলাল : এক কথায় জীবন মানে ‘যুদ্ধ’। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ত ও রসূল সা. প্রদর্শিত বিধান অনুসারে জীবন পরিচালনা করার নামই জীবন–বুঝতে পারার পর থেকে সাধ্যানুযায়ী সে মতে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আল্লাহর রহমত ও সাহায্য প্রার্থনা করি।
সনদ অনুযায়ী আমার বর্তমান বয়স বাষট্টি চলছে। চাকরি থেকে অবসরে আছি। লেখালেখি করছি। মাঝেমধ্যে বাংলাবাজার নিজের পরিচালিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে যাই। সে হিসাবে বেকার নই। লেখালেখির মধ্য দিয়ে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি।
যখন বুঝতাম না তখন ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। পরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ালেখা করি। পরে বাংলায় মাস্টার্স করি। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি বা কাজ করা হয়নি। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত হই। পরবর্তীতে সেটাই যেন বিধিলিপি হয়ে দাঁড়ায়। যদিও চাকরি করেছি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনে, তবে পাশাপাশি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতাও সমানতালে করেছি।
না কোনো আক্ষেপ, অনুশোচনা নেই, গর্বও নেই। কারণ আমি একজন বিশ্বাসী মানুষ। আল্লাহ তাঁর মর্জিমত আমাকে যেভাবে পরিচালিত করেছেন তাতেই আমি খুশী।
২. আপনার শৈশব কৈশোর কোথায় কেটেছে? কীভাবে কেটেছে? কোন অব্যক্ত কথা বা স্মৃতি কি মনে পড়ে? তাড়িত করে?
নাসির হেলাল : আমার শৈশব কৈশোরের প্রথম অংশ জন্মগ্রাম যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার বাড়ীয়ালী গ্রামে কেটেছে। এটা ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে যশোর শহরে। ৪র্থ শ্রেণিতে উঠলেই একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। আমাদের এলাকা যুদ্ধ শুরু থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত পুরো নয় মাসই উত্তাল ছিলো। ফলে ওই সময় আমাদের জীবনটাও ছিলো উত্তাল। বিজয় লাভের পরে প্রচণ্ড অভাব, দুর্ভিক্ষ, নানা কারণে শত শত হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু দেখতে হয়েছে। সবদিক বিবেচনায় সময়টা প্রচণ্ড টানাপোড়েনের মধ্যে কেটেছে।
১৯৭৪/৭৫ সালে ৭ম/৮ম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে আমার স্কুল যশোর মুসলিম একাডেমিতে আসা-যাওয়ার পথে দেখতাম রাস্তার ওপর লিফলেট পড়ে থাকতে। অনেক সময় লিফলেটগুলো শিশিরে ভিজে রাস্তার সাথে লেপ্টে থাকতো। ঐ লিফলেটগুলো তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে লেখা থাকতো। উপরে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা থাকতো স্বৈরাচার নিপাত যাক, মুজিববাদ নিপাত যাক। আর একেবারে নিচই লেখা থাকতো– পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি ( সি পি এম এল)-জিন্দাবাদ। তখন তো এসব কথার মানে কিছুই বুঝতাম না। এখনো এ প্রশ্ন আমাকে তাড়িত করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তারা কেনো পূর্ব পাকিস্তান লিখত!
৩. সাহিত্যে এলেন কেন? কীভাবে এলেন? অর্থাৎ এর শুরুটা কীভাবে? কোথায়?
নাসির হেলাল : সাহিত্যে পরিকল্পনা করে আসিনি। আমার নিয়তি আমাকে টেনে এনেছে। আমার পরিবারে শিক্ষিত মানুষ থাকলেও জানামতে লেখালেখির সাথে কেউ জড়িত ছিলেন না। তবে আমার আব্বা বই পড়তেন। আমাদের বাড়িতেও কিছু বইয়ের সংগ্রহ ছিল। সেটা সম্ভবত বড় ভাইয়ের। আর মেজভাই সিংহঝুলি বাজারের একটা পাঠাগার থেকে চাঁদার বিনিময়ে বই বাড়িতে এনে পড়তেন। সেইসূত্রে স্কুল জীবনেই পাঠ্য বইয়ের বাইরে আমার পাঠ্যাবাস গড়ে ওঠে। মনে আছে স্কুল জীবনেই আব্বা আমার হাতে চরিত্র গঠনমূলক দু একটি বই তুলে দেন। উল্লেখ্য যে, দশম শ্রেণিতে পড়াকালে ১৯৭৭ সালে আমি একটা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি। যা এখন ডালপালা বিস্তার করে মহিরুহ আকার ধারণ করেছে।
আসলে আমার পড়ার অভ্যাস থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় একটা ছড়া লেখার চেষ্টা করেছিলাম। পরে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে দুটো গল্প লিখেছিলাম। হাত খুলতে শুরু করে ১৯৮০ সাল থেকে, তখন আমি যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এসময় থেকে লেখালেখি ও সাংবাদিকতার শুরু। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্ফূলিঙ্গ, ঠিকানা, রানার, কল্যাণ, সাপ্তাহিক মুজাহিদ, পূরবী প্রভৃতি পত্রিকায় তখন কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, উপসম্পাদকীয় লিখতাম। মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকাতেও। খুলনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জনভেরী নামক একটি পত্রিকার ঐ সময় যশোর প্রতিনিধি ছিলাম। সেইসূত্রে যশোর প্রেসক্লাবের সদস্যও ছিলাম।
৪. বাংলা ভাষার তথা বাংলাদেশের প্রধান কবিবৃন্দ যেমন : আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী, আবদুল মন্নান সৈয়দ প্রমুখ– তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিলো? তাদের সাহিত্যকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? আর কার সঙ্গে আপনার সখ্যতা বা বন্ধুত্ব বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল বা আছে? তাদের সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বা তাদের সাহিত্য নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
নাসির হেলাল : আপনার প্রশ্নের মধ্যে অনেকটা উত্তর লুকিয়ে আছে। বাংলা ভাষার তথা বাংলাদেশের প্রধান কবিবৃন্দ বলে আপনি যাঁদের আখ্যায়িত করেছেন, একজন অনুজ হিসেবে তাঁদেরকে আমার মাথার মণি হিসেবে মনে করি, সম্মান করি। এঁদের মধ্যে সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, আবদুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখের সাথে আমার বিশেষ সম্পর্ক ছিলো। এ ছাড়াও সৈয়দ আলী আশরাফ, শাহাবুদ্দীন আহমদ, শাহেদ আলী, তালিম হোসেন প্রমুখের সাথেও সম্পর্ক ছিলো।
সৈয়দ আলী আহসান : বাংলা সাহিত্যের এ বহুমুখী প্রতিভাধর কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক, শিক্ষাবিদের সাথে সৌভাগ্যক্রমে আমার পরিচয় ছিলো। তাঁর বাসায় কয়েকবার যাওয়ার এবং একান্তে কথা বলার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। তাঁর সুমার্জিত, গঠনমূলক সাহিত্যালোচনা শুনেছি, তাঁর উপস্থিতিতে আলোচনা করার দুঃসাহস দেখিয়েছি। তিনি অসাধারণ সাহিত্য, শিল্প ও রাজনীতি বোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মতো সর্ববিষয়ে পণ্ডিত বাংলা ভাষায় খুব কমই দেখা যায়। তাঁর জীবদ্দশায় আবদুল মান্নান সৈয়দ আমাকে বলেছিলেন, ‘এ দেশে কারো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হলে তা সৈয়দ আলী আহসানের পায়ে হাত দিয়েই করা যেতে পারে।’
কবি আবুল হোসেন : তাঁকে একটা সম্মাননা ও পুরস্কার দেওয়ার জন্য তাঁর বাসায় কয়েকবার যাওয়া-আসা করতে হয়েছিল। সেইসূত্রে ঘনিষ্ঠতাও একটু হয়েছিল। অত্যন্ত চমৎকার একজন ভদ্রলোক। আমরা যখন ওনার বাসায় যাতায়াত করছিলাম তখন উনার স্ত্রী খুব অসুস্থ ছিলেন। এটা ১৯৯১/৯২ সালের কথ। উনি নিজেই বলেছিলেন ওনার স্ত্রীর ব্যাপারে ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর জন্য যেন আমরা দোয়া করি। ওনার সাথে আমাদের একটা গ্রুপ ছবি আছে। এ ছবিতে কবির সাথে আছেন আবদুল মান্নান তালিব, জামেদ আলী, আবুল আসাদ, মাহবুবুল হক ও আমি।
তিনি ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রধান সারির কবি।
আল মাহমুদ : বর্তমান বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কবি আল মাহমুদ। তাঁকে আমি প্রথম দেখি ১৯৮০ অথবা ১৯৮১ সালে। তখন তাঁর সাথে কোনো কথা হয়নি। তবে তাঁর কথা শুনেছিলাম। এরপর ১৯৮৫ সালে যশোরের একটা রেস্ট হাউজে তাঁর সাথে একরাত কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই -ই পরিচয়। অনেক আবেগ নিয়ে সে রাতে ও পরের দিন প্লেনে তুলে দেয়া পর্যন্ত অনেক কথা-আলাপচারিতা হয়। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে আমি চাকরি নিয়ে ঢাকায় আসি। সেই থেকে কবির ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত সম্পর্ক অটুট ছিলো। কতবার যে তাঁর বাসায় গেছি বলা কঠিন। নানা সাহিত্য সভায়, সাহিত্য সম্মেলনে, বনভোজনে, শিল্পকলা একাডেমি, সংগ্রামের অফিসে গেছি কারণে অকারণে। দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। মৃত্যুর আগেও অনেকবার গেছি তাঁকে দেখতে। আমার ‘মুনসী মেহেরউল্লা: জীবন ও কর্ম’ গবেষণা গ্রন্থটি তাঁর নামে উৎসর্গ করেছি। গ্রন্থটি হাতে পেয়ে তিনি খুব খুশী হয়েছিলেন।
১৯৯২ সালে ‘যশোর জেলায় ইসলাম প্রচার ও প্রসার’ নামে আমার একটি ইতিহাস গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হলে কবিকে একটি কপি দেই। এর দু’দিন পরে দেখা হলে জিজ্ঞেস করি আমার বইটি কী দেখেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘গত দু’দিন তোমার বইটি উল্টেপাল্টে দেখলাম।’ বললাম, কেমন হয়েছে? উত্তরে উনি বললেন, ‘তুমি বোকা নাকি? আল মাহমুদ তোমার বই দু’দিন কেনো উল্টেপাল্টে দেখল বুঝলে না! মিয়া! দশ বছর পর বুঝতে পারবে কত বড় কাজ তুমি করে ফেলেছ।’ আমার ‘শিল্প দিয়ে মোড়া’ কাব্যগ্রন্থটির ফ্ল্যাপিতে তিনি মন্তব্য লিখেছেন।
কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, স্মৃতিকথা, জীবনী, কলাম তিনি যা লিখেছেন তাই-ই পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। সম্ভবত বৈরী পরিবেশে বসবাস করে কোনো কবি এতটা সফল এবং জনপ্রিয় বা পাঠকপ্রিয় অন্য কেউ হতে পারেননি।
ফজল শাহাবুদ্দীন : তাঁর সাথে পরিচয় ছিলো কিন্তু ঘনিষ্ঠতা বলতে যা বুঝায় তা ছিলো না। তিনিও আমাকে চিনতেন। দু’তিনবার তাঁর অফিসে গেছি। একবার একটি ডায়েরি ও একটি সংকলনের কপি গিফট করেছিলেন। দু-তিনবার তাঁর সাথে বসে নাস্তাও করেছি। শেষবার দৈনিক নয়া দিগন্তের আরামবাগ অফিসের নিচের ছোট একটা রেস্টুরেন্টে বসে কথা হয়েছিল। জাকির আবু জাফরও ছিলেন। তিনি প্রচণ্ড আড্ডা পছন্দ করতেন। বসলে উঠতে চাইতেন না।
কবি আল মাহমুদের বন্ধু ফজল শাহাবুদ্দীন ছিলেন সমসাময়িক সময়ের একজন প্রধান কবি।
আবদুল মান্নান সৈয়দ : ঘটনাক্রমে বা সৌভাগ্যক্রমে আবদুল মান্নান সৈয়দের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছিলাম। নানা কারণে, নানা সময়ে তাঁর সাথে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে। নানা সাহিত্য অনুষ্ঠানে তাঁকে পেয়েছি, যখন ডেকেছি না করেননি। তাঁকে কেন্দ্র করে একটা সাহিত্য আড্ডা চালাতাম ১৭১ ডাক্তারের গলিতে বাসাপ অফিসে। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলাম আমি। মূলতঃ এটা ছিলো সাহিত্যের ক্লাস। এখানে উপস্থিত হতেন– সাজ্জাদ বিপ্লব, নাসীর মাহমুদ, নিজাম সিদ্দিকী, সালেহ মাহমুদ, জুলিয়া আবেদীন, সেলিনা ইসলাম, মৃধা আলাউদ্দীন, গোলাম মোহাম্মদ, হাসান আলীম প্রমুখ। আর আমি তো ছিলামই।
আমি একবার অসুস্থ হলে স্যার পিতার মতো আমার দেখভাল করেন। ডাক্তারের কাছে নেয়া পর্যন্ত। কতবার যে বাসায় নিয়ে খাওয়ায়েছেন আল্লাহ ভালো জানেন। তাও আবার আমার পছন্দের খাবার। তাঁর একমাত্র মেয়ের বিয়েতে বাইরের যে ৪/৫ জন ছিলেন তার মধ্যে আমি একজন। তিনি সেচ্ছায় আমার ‘যশোর জেলায় ইসলাম প্রচার ও প্রসার’ গ্রন্থটির আলোচনা করেন। যা সেই সময় দৈনিক সংগ্রামে ছাপা হয়। পরবর্তীতে আলোচনাটি ‘নির্বাচিত কলাম’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়া তিনি আমার ২০০৯ সালে প্রকাশিতব্য ‘আঁধারের মতো সুখ’ কাব্যগ্রন্থের ফ্ল্যাপির জন্য মন্তব্য লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাব্যগ্রন্থটি বিশেষ কারণে আর প্রকাশিত হয়নি। এমনি নানা কারণে স্যারের সাথে রয়েছে কতশত স্মৃতি তার ইয়ত্তা নেই।
মান্নান সৈয়দ ছিলেন সব্যসাচি লেখক। ষাটের দশকের প্রধানতম কবি। সাহিত্য গবেষক হিসেবে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। অসম্ভব পরিশ্রমী একজন কবি গবেষক ছিলেন তিনি।
সৈয়দ আলী আশরাফ : ইনি ছিলেন সৈয়দ আলী আহসানের ছোট ভাই অর্থাৎ সহোদর। এঁদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন মিরপুরের পীর সাহেব শাহ আলী বোগদাদি। সেইসূত্রে তাঁদের পরিবারে পীরপ্রথা এখনো চালু আছে। তাঁরা বৃহত্তর যশোর জেলার মাগুরার (বর্তমানে জেলা) আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আশরাফ সাহেব জীবিত অবস্থায় গদ্দীনশীন পীর ছিলেন। কবি আলী আশরাফ সাহেবের সাথে আমার পরিচয় ছিলো। তিনি যখন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন তখন কি জন্য যেন তাঁর ডাকে গিয়েছিলাম। তাঁর মতো আন্তর্জাতিকমানের ব্যক্তিত্ব আমার মতো একজন নগণ্য তরুণের সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। ওই সময় আমি তাঁর হাতে আমার প্রথম প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ ‘আগুনঝরা ছড়া’ তুলে দেই। পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে– বইটা খুলতেই তাঁর চোখে পড় ‘পীর-১’ ছড়াটি। ছড়াটি এমন–
পীর না ধরলে
পারবি না যেতে বেহেস্তে
বলছে হেসে
খান্দানি পীর গেরেস্তে।
তোরা ওদের
জারিজুরি শুনিশনে
জো না দেখে
রসুন পেঁয়াজ বুনিশনে।
স্যার এটা দেখে বললেন, এটা কি ঠিক হলো? প্রমাদ গুনে বললাম, স্যার! আমি ভণ্ড পীরদের বিরুদ্ধে লিখেছি। ‘পীর-২’ পড়ুন—
পীর দরবেশ / হুজুর চাই জংগী
ক্ষুধার্তদের/ হবে যারা সংগী
তসবিহও চাই তলোয়ারও চাই
দু হাতে
শয়তান যেন চালাতে না পারে
ফুঁ তাতে।
তবু স্যার যেন খুশী হতে পারেননি। যাহোক স্যার ছিলেন বিশ্বমানের ইসলামি পণ্ডিত। ক্যামব্রিজে তিনি ইসলামি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।
তালিম হোসেন : ১৯৮৯ সালে কবিকে বাসাপের (বাংলা সাহিত্য পরিষদ) একটি মাসিক সাহিত্য সভায় প্রধান অতিথি করে এনেছিলাম। কিন্তু তিনি কথা গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না। খেই হারিয়ে ফেলছিলেন। সম্ভবত এর কিছু আগ থেকে তাঁর এ অবস্থা শুরু হয়। এর আগে আমি তাঁর একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। অবশ্য সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় কবি স্ত্রী বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মাফরুহা চৌধুরী সহযোগিতা করেছিলেন। সাক্ষাৎকারটি দৈনিক সংগ্রামের সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়েছিলো। যতদূর মনে পড়ে সেটিই তালিম হোসেনের শেষ সাক্ষাৎকার।
চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান কবি তালিম হোসেনের বাসায় আমার যাতায়াত ছিলো। প্রায়ই তাঁর বাসায় যেতাম। তিনি তাঁর ‘নূহের কিস্তি’ কাব্যগ্রন্থের একটি কপি আমাকে লিখে দিয়েছিলেন। আমি ওই সময় মাফরুহা চৌধুরীর ৩টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলাম। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। কবি তালিম হোসেন অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ ছিলেন।
শাহেদ আলী : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক। জিবরাঈলের ডানা, একই সমতলে– গল্পের নন্দিত রচয়িতা শাহেদ আলী। নান্দনিক ভাষায় তিনি গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের জীবনসংগ্রামকে অত্যন্ত দরদের সাথে তুলে এনেছেন। তিনি মুহাম্মদ আসাদের জগৎ বিখ্যাত বই রোড টু মক্কা’র অনুবাদ করেছেন ‘মক্কার পথ’ নামে। বাঙালি পাঠক বুঝতেই পারবেন না এটি অনুবাদ গ্রন্থ না মৌলিক গ্রন্থ। তিনি ইমাম শামিলের সংগ্রামী জীবনও অনুবাদ করে পাঠকের দরবারে পেশ করেছেন। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে খেলাফতে রব্বানী পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাশভারী মানুষ হলেও অত্যন্ত দরদী মনের মানুষ ছিলেন। তাঁর বাসায় গেছি, আপ্যায়িত হয়েছি। তাঁর ‘নতুন জমিনদার’ গ্রন্থটি আমার হাতে বেরিয়েছিল। গ্রন্থটির নাম আমারই নির্বাচন করা।
শাহাবুদ্দীন আহমদ : বিশিষ্ট নজরুল গবেষক। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন সাহিত্য গবেষক। এককভাবে কাজী নজরুল ইসলামের ওপর এবং তাঁর রচনার ওপর তিনি অনেকগুলো গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা অন্য কেউই করেনি।
তাঁর সাথে ছিলো আমার গভীর সম্পর্ক। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাঁর বাসায় অনেকবার গেছি, খেয়েছি। তিনি আমার বাসায় এসেছেন। আমি তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যে গোলাম মোস্তফা ‘ গ্রন্থের প্রকাশক। তিনি আমার ‘যশোর জেলায় ইসলাম প্রচার ও প্রসার’, ‘ লেখক অভিধান’ ও ‘ফুলের মতো নবী’ গ্রন্থের আলোচনা করেছেন।
৫. আপনি একাধারে একজন কবি-সম্পাদক-গবেষক অর্থাৎ বহুমাত্রিক। আপনার অভিজ্ঞতা ও বিচরণ ক্ষেত্র ব্যাপক ও বর্ণিল। বিচিত্র। এই সামগ্রিক সত্তাকে কিভাবে দেখেন? কিভাবে উপভোগ করেন?
নাসির হেলাল : মজাই তো লাগে। যিনি শুধু কবি বা কথা সাহিত্যিক বা গবেষক তাঁদের সাথে মিশতে গেলে কথাবার্তায় একটু হলেও ভিন্নতা পাওয়া যায়। যারা নানারকম লেখালেখি করেন তাদের সুবিধা হলো সবদিককার জ্ঞান আহরণ করতে পারেন, সংশ্লিষ্ট সবদিককার ব্যক্তিদের কাজের কারণে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। তাকে বাধ্য হয়েই উদার হতে হয়। সবার সম্মান মর্যাদাও রক্ষা করে চলতে হয়। সবদিক সামলাতে গিয়ে তাকে পরিশ্রমী, বিনয়ী, সতর্ক মানুষ হতে হয়। এতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না। এমনিতে শিশু-কিশোরকাল থেকেই আমি বহুমুখী বহুমাত্রিক মানুষ। ফলে আমি আমার কাজকে মর্যাদার চোখে দেখি এবং আনন্দের সাথে উপভোগ করি।
৬. আপনি ছড়া নিয়ে কাজ করেছেন। নিজেও ছড়া লিখেন। ‘যশোর জেলার ছড়া’– একটি বিখ্যাত সংকলন সম্পাদনা করেছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।
নাসির হেলাল : এ সংগ্রহ, সংকলন ও গবেষণা গ্রন্থটি আমার লেখালেখি জীবনের প্রথম দিককার সোনালী ফসল। গবেষণামূলক গ্রন্থ হিসেবে এটি আমার প্রথম রচনা। এর আগে ‘ছোটদের সৈনিক মেহেরুল্লাহ’ ও ‘হাদীসের পরিচয়’ নামে দুটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থ দুটিতেও গবেষণার উপাদান ও কৌশল আছে। দুটি পুস্তিকায় পাঠক নন্দিত হয়েছিল। ‘হাদীসের পরিচয়’ তো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে হৈচৈ পড়ে যায়। ৯৬ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ হিসেবে এর ২২তম প্রকাশ বর্তমানে বাজারে আছে। এ পর্যন্ত এর হাজার হাজার কপি পাঠকের হাতে পৌঁছেছে। যাহোক ‘যশোর জেলার ছড়া’ রচিত হয় ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে। তবে ছড়াগুলো সংগ্রহ শুরু হয় আরো অনেক আগে থেকে। এ ছড়াগ্রন্থে মোট ৮০৭ টি ছড়া স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৬৬৬ টি ছড়া যশোর জেলার লোকছড়া। এ ৬৬৬ টি ছড়ার মধ্যে আমার সংগ্রহ ৪৩৩ টি। অতিরিক্ত ১৪১ টি ছড়া পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে প্রচলিত আছে, যা প্রায় একই রকম, কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া।
গ্রন্থটির ভূমিকা থেকে জানা যায় আমি যখন নবম শ্রেণির ছাত্র তখন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ‘পল্লী সাহিত্য’ প্রবন্ধটি আমাদের পাঠ্য ছিলো। এ লেখাটি পড়ার ফলে লোক সাহিত্যের প্রতি আমার আকর্ষণ বা ভালোবাসা জন্মে। পরবর্তীকালে ১৯৮৫ সালে ড. সামীয়ুল ইসলাম সাহেবের ‘উত্তর বাংলার লোকসাহিত্য’ গ্রন্থটি পড়তে গিয়ে কিশোর বয়সের সেই লোকসাহিত্য প্রীতি বাস্তবরূপ নেয়। আমি লোকসাহিত্য সংগ্রহে নেমে পড়ি। প্রথমে অনভিজ্ঞতার কারণে মনে করেছিলাম ‘যশোর জেলার লোকসাহিত্য’ নামে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করবো। কিন্তু বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম লোকসাহিত্যের নানা শাখা রয়েছে। সব শাখার উপকরণও প্রচুর ছড়ানছিটানো রয়েছে। লোকসাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডার বলা চলে। বুঝলাম একসাথে সবদিকে হাত বাড়ালে অথৈ সাগরে হাবুডুবু খেতে হবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাই প্রথমে ‘যশোর জেলার ছড়া’ এই শিরোনামের গ্রন্থটির চিন্তা করে কাজ শুরু করি। অবশ্য আমার জন্মগ্রাম এবিষয়ে আমাকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ এ গ্রামে ছিলো লোকসাহিত্যের প্রায় সব ধরনের উপকরণ। গ্রামের বেশিরভাগ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছিলেন গল্পবাজ। তাদের ঝুলি থেকে যেন গল্প ফুরাতোই না। তারা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত নানা ধরনের গল্প নাতি নাতনি ও গ্রামের ছোটোদের শোনাতেন। আমি নিজেও ছোটবেলা থেকে অনেক গল্প জানতাম, অন্যদের শোনাতাম। ক্লাসের পাঠ্য ছড়া-কবিতাসহ প্রচুর লোকজ ছড়া মুখস্ত ছিলো। বিশেষভাবে ধাঁধা ধরা ও উত্তর দেয়ার বিষয়ে পারদর্শী ছিলাম। ধাঁধা ধরে আমাকে হারানো মোটেই সহজ ছিলো না। এসব কারণে আমি খুব টকেটিভ হয়ে উঠেছিলাম। ‘যশোর জেলার ছড়া’ লিখতে গিয়ে আমার ঝুলি, আমার বাড়ির ও গ্রামের শিশু-কিশোর এবং বৃদ্ধ বৃদ্ধারা খুব উপকারে এসেছিল। সাথে সাথে ঐ সময় আমি ঝিনাইদহের মহেশপুর হাইস্কুলের শিক্ষক থাকার কারণে আমার ছাত্ররাও সহযোগিতা করেছিল। গ্রন্থটি প্রকাশ যদিও ঢাকার সিন্দাবাদ প্রকাশনী করেছিল। তবে টাকা দিয়েছিলেন আমার ব্যবসায়ী খালু শ্বশুর জনাব মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দীন। ইনি যশোরের বেনাপোলের মানুষ। তখন ঢাকায় থাকতেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী।
৭. ছড়া ও কবিতার তেমন কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করেন?
নাসির হেলাল : ছড়াও কবিতা। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে ছড়া কবিতার যমজ ভাই না হলেও সহোদর তো বটেই। হ্যাঁ! একথা ঠিক যে, একসময় ছড়া শিশুদের ঘুম পাড়ানি গান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন তা প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছড়াতে এখন সব বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে। তবে ছড়া একটু হালকা চালের হয়ে থাকে, সহজ সরল ভাষায় লেখা হয়। কিন্তু কবিতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাবগম্ভীর ভাষায় লেখা হয়। পাঠকের কাছে অনেক সময় অনেক কবিতা দুর্বোধ্য মনে হয় বা থেকে যায়। ছড়ার ক্ষেত্রে সাধারণত তা হয় না। ছড়া লেখা হয় পাঠকের বোধগম্য ভাষায়।
৮. আপনার পূর্ববর্তী দশকের কবিদের মধ্যে কে কে আপনার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ? কেন? বিস্তারিত জানতে চাই।
নাসির হেলাল : আমার পূর্ববর্তী দশক বুঝাতে হলে সত্তরের দশককে বুঝাতে হবে। এ দশকের কবিদের মধ্যে নাম করতে পারি– আবিদ আজাদ, মাহবুব হাসান, সমুদ্র গুপ্ত, ত্রিদিব দস্তিদার, অসীম সাহা, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, নাসিমা সুলতানা, সুরাইয়া খানম, কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, ময়ুখ চৌধুরী, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, জাহিদ হায়দার, আবিদ আনোয়ার, দাউদ হায়দার, আবু হাসান শাহরিয়ার, মিনার মনসুর, ফারুক মাহমুদ প্রমুখ।
আবার এদের মধ্যে আবিদ আজাদ, আবিদ আনোয়ার, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আসাদ মান্নান ও ফারুক মাহমুদই প্রধান। এরা যুগের অস্তিত্ব, সংকট, প্রগতি, স্ফুরণ, প্রেম, মনোজগৎ ওবহির্জগতের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাদের কবিতায় প্রবলভাবে উপস্থিত করেছেন। তবে এ দশকের মূল উচ্চারিত কবি হলেন আবিদ আজাদ।
৯. আদি বাংলা তথা চর্যাপদ থেকে আজ অবধি বাংলা সাহিত্য কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে?
নাসির হেলাল : এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্বাস চর্যাপদই আদি বাংলা। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়। তেমনিভাবে ভাষাও পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার সাথে সাথে বাংলা ভাষাও পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। বাংলা ভাষা আজ পৃথিবীতে সম্মানের আসনে সমাসীন। আমাদের ভাষা আন্দোলনের ফলে প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। এটা আমাদের বড় অর্জন। তবে এখনো জাতিসংঘ বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘের কাছে দাবি করবো বাংলা ভাষার মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে। উল্লেখ্য বাংলা ভাষা এখন প্রায় চল্লিশ কোটি মানুষের মাতৃভাষা।
১০. সাম্প্রতিক বাংলাদেশে, শিল্প-সাহিত্য চর্চায়- কোন কোন চ্যালেঞ্জ আছে বলে আপনার মনে হয়? কীভাবে এগুলি মোকাবিলা করেন?
নাসির হেলাল : চ্যালেঞ্জ তো প্রতি পদক্ষেপে। এখন তো এখানে আগাগোড়া মিথ্যার চাষ হয়। টপ টু বটম সবাই এখন মিথ্যা সত্যের মতো করে বলে। সত্য এখন নির্বাসনে। শিল্পই বলেন আর সাহিত্যই কোনো কিছুই তো যাপিত জীবনের বাইরে নয়। তাই সবক্ষেত্রেই ভূঞা জিনিসের রমরমা রাজত্ব চলছে– দেখুন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এমন সব লোকের ঘোষিত হচ্ছে যাদের অনেকের নামটি পর্যন্ত অনেকেই জানেনা। অথচ পুরস্কার পাওয়ার মতো প্রতিভাবান শিল্পী সাহিত্যিকের অভাব নেই। কিন্তু ওই যে রাজনীতি, দলীয় লোক নয়, আদর্শের মিল নেই– তাদেরকে পুরস্কার দেয়ার থেকে ছাগল-গরুকে দেয়া ভালো।
যা বলতে চাই বলতে পারছি না, যা লিখতে চাই লিখতে পারছি না। আমাদের দেশের মসজিদের খতিবরা এখন বয়ান দেয় কোন দোয়া পড়লে লক্ষ কোটি সওয়াব হবে। আর মুনাজাতে মসজিদ কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি সদস্যদের কার সর্দি হয়েছে, তাদের কোন আত্মীয় জ্বরে ভুগছেন, সেসব ভয়াবহ অসুস্থতার জন্য করুণস্বরে দোয়া করেন। তাদের মৃত পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তা না হলে চাকরি নট। আমরাও অনেকটাই সেরকম কৌশলে চলছি।
১১. আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোনটি? কবে প্রকাশিত হয়েছিল? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো?
নাসির হেলাল : আমার প্রথম প্রকাশিত বই ‘ছোটদের সৈনিক মেহেরুল্লাহ।’ ১৯৮৫ সালে, যশোর থেকে। শহীদুল আযম নামে আমার এক বন্ধুর টাকায় এটি প্রকাশ হয়েছিল। এতে তথ্য উপাত্ত থাকলেও মানসম্মত ছিলো না। তবু আমি প্রচণ্ড আবেগ আপ্লূত ছিলাম। এর কভার করেছিলাম খুলনাতে গিয়ে স্টিলের ব্লকে। তখনও প্রযুক্তির এত জয়জয়কার শুরু হয়নি। নিজেকে মনে করছিলাম বিশাল কিছু।
১২. সাহিত্যে আপনি কা উত্তরাধিকার বহন করেন?
নাসির হেলাল : আমি তো আমার মতো কাজ করি। তাই বলবো সবার আবার কারও নয়। আমি আমার।
১৩. এ যাবৎ সর্বমোট আপনার কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে? এর মধ্যে কোনটি বা কোন কোন কাজকে বা বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?
নাসির হেলাল : এ যাবৎ আমার ছোট বড় মিলিয়ে ১২০টির মতো বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার কাছে তো সবই ভালো। তবে পাঠক, সমালোচক এবং আমার বিবেচনায় গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে যশোর জেলার ছড়া, যশোর জেলায় ইসলাম, বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদ, লেখক অভিধান, বাংলা ভাষায় মুহাম্মদ সা. চরিত, মহেশপুর জীবন ও জনপদ, কালের সাক্ষী বারোবাজার, ঈদ উৎসব : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ, মুনসী মেহেরউল্লা জীবন ও কর্ম– ভালো কাজ বলে মনে করি।
জীবনীগ্রন্থের ক্ষেত্রে– ফুলের মতো নবী, বেহেশতের সুসংবাদ পেলেন যাঁরা, সেরা মুসলিম বিজ্ঞানী, আমাদের কবি আল মাহমুদ– প্রভৃতি।
আর কবিতা/ছড়ার ক্ষেত্রে ‘কবিতায় আমপারা’ কে উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলা যায়।
১৪. সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্বন্ধে বলুন।
নাসির হেলাল : সদ্য প্রকাশিত বই দু’টি। ‘আমাদের কবি আল মাহমুদ’ ও ‘একাত্তরের টুকরো স্মৃতি’।
‘আমাদের কবি আল মাহমুদ’ কিশোর তরুণদের জন্য লেখা হলেও এটি বড় ছোট সবারই কাজে লাগবে। আল মাহমুদের জন্মের পূর্ব থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত জীবনের নানা উত্থান-পতনের চিত্র এ বইতে তুলে ধরা হয়েছে। অতএব তাঁকে জানতে হলে সবার জন্য বইটি সহায়ক হতে পারে।
‘একাত্তরের টুকরো স্মৃতি’ বইটি আমার চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি তখন ১১/১২ বছরের কিশোর। যা দেখেছি এ বইয়ে তা তুলে ধরেছি। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে পাকবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে আমি ও আমার মেজভাই মারাত্মকভাবে আহত হই। এখনো আমার শরীরে ক্ষত চিহ্নগুলো জ্বলজ্বল করছে।
১৫. আপনি নিজেকে কোন্ দশকের কবি-লেখক মনে করেন?
নাসির হেলাল : আমার লেখালেখির শুরুই আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে। উত্থান নব্বই দশকের শুরু থেকে। এজন্য আমি দ্বিধান্বীত যে, আমি আসলে কোন্ দশকের? তবে আশির দশকের বন্ধুরা তাদের দিকে টানে বেশি। নব্বই দশক নিশ্চুপ। তাই যারা ডাকে তাদের দিকে আছি।
১৬. আপনার সমকাল নিয়ে বলুন।
নাসির হেলাল : পঞ্চাশের দশকের কবি লেখকরা যা দিতে পেরেছেন, নানা কারণে ষাট ও সত্তরের দশক তা দিতে পারেনি। বলা হয় ষাটের দশকটা নষ্ট সময়। প্রায় সব কবি লেখকরা ছিলেন বিপথগামী। সত্তরের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান দেখতে পাওয়া যায় না। সেখানে আশির দশকে একদল বিশ্বাসী কবি সাহিত্যিকের দেখা মেলে। যেজন্য বলা হয় আশির দশক কাব্যসাহিত্যে আদর্শের দিকে বাঁক বদলের দশক। আমি এ দশকের কবি-লেখকদের নিয়ে উৎফুল্ল।
১৭. আপনি কবিতায় মিথ, ধর্ম ও ধর্মীয় অনুসঙ্গ ব্যবহার করা বিষয়ে কি ভাবেন? বিশেষত ইসলামিক বিষয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি ব্যবহার করা বিষয়ে?
নাসির হেলাল : আমার মতে কোনো কিছুই অব্যবহারযোগ্য নয়। যদি কোনো কবি তার শক্তিমত্তা দিয়ে তা করতে পারেন তো সমসাময়িককালে সমালোচিত হলেও পরবর্তী সময়ে তা গৃহীত হবে। নজরুলকে সমালোচনা করা হয়েছে না? যারা সমালোচনা করেছেন তারা আজ কোথায়? তাদের অনেকের তো নাম-গন্ধও নেই। ধর্মীয় মিথ বা অনুসঙ্গ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ফররুখ, ইরানের কবিরা– সাদী, রুমি, শিরাজী, ওমর খৈয়াম লিখেছেন না? আল্লামা ইকবাল, বিশ্বের অন্যান্য কবিরা লিখেছেন না? তাঁরা কি হারিয়ে গেছেন, না যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে আছেন? কিসের জোরে? যারা বলে ধর্ম বা ধর্মীয় অনুষঙ্গ নিয়ে লিখলে সাহিত্য হয় না। তারা ধর্ম বিরোধী নাস্তিক অথবা সংশয়বাদী। বিশেষ করে এমতের উদগাতা কমিউনিজমের ধ্বজাধারী কমিউনিস্টরা। তাই এ সব আমলে না নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যাওয়া উত্তম।
১৮. আধুনিকতা ও উত্তর আধুনিকতা বলতে আপনি কি বোঝেন? বাংলাদেশের কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাই।
নাসির হেলাল : আধুনিকতা হলো যুক্তিভিত্তিক জ্ঞান। এর বিপরীতটাই উত্তর আধুনিকতা।
আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এখনো আমরা বেশিরভাগেরই ক্ষেত্রে আধুনিকতার ভেতরেই আছি। এর মানে এ নয় যে, এর বাইরে কিছু নেই।
১৯. আপনার লেখালেখিতে দেশি/বিদেশি কবি সাহিত্যিকের কারো কোনো প্রভাব কি আছে?
নাসির হেলাল : সচেতনভাবে কারো অনুসরণ করিনি। মনের অজানতে কারো কোনো প্রভাব পড়েছে কি না বলতে পারবো না। আমার লেখার মধ্যে সরলতা কাজ করে। সাধারণত কঠিন শব্দ এড়িয়ে চলি। আমার গবেষণাও সহজ সরল। আমার লেখা যদি পাঠক না বুঝতে পারে, তবে তা লিখে লাভ কি?
২০. কোথায় আছেন? কী করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।
নাসির হেলাল : আমার পূর্ব পুরুষ হযরত শাহ কারার আল বোগদাদি আল কোরাইশি বাগদাদ থেকে দিল্লী হয়ে সপ্তদশ শতকের প্রথমে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে লাখেরাজ সম্পত্তির বরাদ্দ নিয়ে যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে ‘বগা’ নামক গ্রামে আস্তানা গাড়েন। এটা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মগ্রাম সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রাম। তাঁর সাথে পাঁচশো শিষ্য ছিলেন বলে কথিত আছে। তাঁর মাজার ও সঙ্গী সাথীদের কবর এখনো সেখানে আছে।
সনদ মোতাবেক ১৯৬২ সালের অক্টোবরের ৮ তারিখ যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার বাড়ীয়ালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী আমি হজের দিন জন্মগ্রহণ করি। দিনটি ছিলো রবিবার দিবাগত রাতের ভোরবেলা। তার মানে সোমবার। অঙ্কশাস্ত্রের নিয়মমতে ঐ দিনটা পড়ে ১৯৬০ সালের ৬ জুন। হজের দিন জন্ম বলে আমার নাম রাখা হয় মোঃ জিলহজ আলী। এটাই আমার দাপ্তরিক নাম।
আমার পিতা নাসির উদ্দীন বিশ্বাস এবং মাতা নূরজাহান বেগম নূরী। অবশ্য আমাদের পূর্ব পুরুষের নামের সাথে মোল্লা পদবী যুক্ত। আমাদের বাড়িটিও মোল্লা বাড়ি নামে পরিচিত। অনেকে মাওলানা বাড়িও বলে। আমার পূর্ব পুরুষদের আগমন হয়েছিল ইসলাম প্রচারক হিসেবে, সেজন্য সম্ভবত তাদেরকে স্থানীয়রা মোল্লা বলেই ডাকতো। আর সেখান থেকেই মোল্লা পদবীর উদ্ভব।
আমরা ৭ ভাই ৫ বোন মোট ১২ ভাইবোন। ৮ জন জীবিত আছি। আল্লাহ আমাদের ৩ জন সন্তান দান করেছেন। ২জন মেয়ে ১জন ছেলে। বড় মেয়ে কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করছে। মাঝে ছেলে, ঢাবি থেকে বের হয়ে একটি বেসরকারী ব্যাংকের অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। আর ছোট মেয়ে ঢাবিতে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। স্ত্রী মেহেরুন নেসা মিলি, গৃহীনি।
অবসরে আছি। ঢাকার মধুবাগ, হাতিরঝিলে ভাড়া বাসায় বসবাস করছি। বাংলাবাজারে ছোট একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে মাঝে মাঝে বসি। এখন পড়াশোনা আর লেখালেখি এই তো কাজ। আর গ্রামের বাড়িতে আমার গড়া একটি পাঠাগার, একটি সমাজকল্যাণ সমিতি আছে। তার খবরদারিও করতে হয়।
২১. আপনি কখনো কি কোনো পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত লিখুন।
নাসির হেলাল : চাকরি সূত্রে দৈনিক নয়া দিগন্তের ইসলামী পাতা ‘ইসলামী দিগন্ত’ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে ২০২০ পর্যন্ত সম্পাদনা করেছি। ১৯৮৬–১৯৮৮ সাল এ সময়ে আমি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলাম। ঐ সময়কালে মহেশপুর থেকে ‘সীমান্ত’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য ম্যাগাজিন আমার সম্পাদনায় প্রকাশ হতো। যার ৩টি সংখ্যা মহেশপুর থেকে প্রান্তিক সাহিত্য পরিষদ প্রকাশ করে। পরে ‘সীমান্তে’র আরও দুটি সংখ্যা ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। এরপর ‘পালকি’ নামে একটি লিটলম্যাগ ঢাকা থেকে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো। যার ৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। এমনকি তিনি এটির তদারকিও করতেন। ‘সীরাত বিষয়ক গ্রন্থ প্রদর্শনী স্মারক’ এর ৫টি সংখ্যা আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ৷ কুরআন রিসার্চ ফাউণ্ডেশন থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগ ‘সত্যসন্ধ্যানী‘র ২টি সংখ্যা আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ‘চারণ’ ও ‘সাম্প্রতিক’ নামে দুটি লিটল ম্যাগের ১টি করে সংখ্যা আমি ও কবি গোলাম মোহাম্মদ বের করেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে চারণের সম্পাদক আমি ছিলাম এবং সাম্প্রতিকের সহকারী সম্পাদক ছিলাম। অন্যদিকে সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘সাহিত্য সংস্কৃতি’, ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মারকের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কবি হাসান আলীম সম্পাদিত ‘ আশির দশক : জ্যোতি জোসনার কবি’ শিরোনামের সংকলনটির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। নাম ছাপা না হলেও চাকরির দায়িত্ব হিসেবে ২৯ বছর ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ইসলামী বিশ্বকোষ বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ব্যাপকভাবে সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলা সাহিত্য পরিষদে কর্মরত অবস্থায়ও সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছি।
২২. লিটলম্যাগাজিনের সংঙ্গা কী? এনিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।
নাসির হেলাল : যে কাগজে বা ম্যগাজিনে প্রান্তিক কবি সাহিত্যিকের লেখা যত্নের সাথে ছাপা হয় তাকেই লিটলম্যাগ বলে। সাহিত্যের ছোট কাগজ, এটাই লিটলম্যাগের সংজ্ঞা। যে কাগজ সাহিত্যান্দোলনকে জীবিত রাখার জন্য সাহিত্যপ্রেমি তরুণরা প্রকাশ করে। অবশ্য অনেক সময় বড়রাও প্রকাশ করে থাকেন। সাধারণত লিটলম্যাগ দীর্ঘজীবী হয় না। তবে এ লিটলম্যাগকে কেন্দ্র করেই কবি-সাহিত্যিকেরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে উঠে আসেন।
২৩. অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিন চর্চাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
নাসির হেলাল : এখন তো অনলাইনের যুগ। যুগের সাথে তাল মেলাতে না পারলে তো পিছিয়ে পড়তে হয়। সব কিছুর ভালোমন্দ থাকে। তবে বিবেচক মানুষ ভালোটাই বেছে নেন। প্রিন্ট মিডিয়া অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষ দ্রুতগামী হয়ে পড়ছে। ফলে পুরাতনকে ফেলে নিত্যনতুন যা কিছু তা গ্রহণ করছে।
অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিনকে আমার কাছে সময়ের অগ্রসর সন্তান বলে মনে হয়। যারা এর সম্পাদনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন তারা যদি এটিকে সুপথে পরিচালিত করতে পারেন, তবে অবশ্যই তা কল্যাণকর হবে, সময়ের সুসন্তান হবে। তাই আমি অবশ্যই অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিনকে ভালো দৃষ্টিতে দেখি।
২৪. আগামী দিনের সাহিত্য কেমন হবে আপনার দৃষ্টিতে?
নাসির হেলাল : আমি আশাবাদী মানুষ। দেশীয় ও বৈশ্বিক কারণে বিশ্বাসীদের পাল্লা ভারী হতে দেখছি। ছোট ছোট শক্তি পরাশক্তির সঙ্গে লড়ছে। আমার মনে হয় পরিবর্তন অবসম্ভাবী। তাই আগামী দিনের সাহিত্য ঐতিহ্য ও বিশ্বাসকেন্দ্রিক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
২৫. কেমন পৃথিবী দেখতে চান?
নাসির হেলাল : অবশ্যই দ্বন্দ্ব সংঘাত মুক্ত সাম্য-মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত একটি উদার পৃথিবী দেখতে চাই। যেখানে কবি-সাহিত্যিকসহ সব মানুষের বৈধ বাক স্বাধীনতা থাকবে। মানুষ হবে মানুষের জন্য। সব মানুষ তার প্রকৃত নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবে। কাব্যময় হয়ে উঠুক আগামীর পৃথিবী।
গ্রহণে সাজ্জাদ বিপ্লব, মার্চ ২, ২০২৪