চলো, জেগে উঠি
গভীর রাত্রিতেও শুনি ওদের কান্না
পানি ভেঙে ভেঙে ওরা আসছে
ওরা কাঁদছে হাতে মৃত সন্তান নিয়ে
কান্নার জলে, জলের উচ্চতা বাড়ছে
চলো, আবাবিলের চঞ্চুতে ধরে রাখা পাথরে ঘষে নিই
আমাদের কলমের ধার
কলমে শুষে নেই সহস্র মায়ের কান্নার জল
নজরুলের অগ্নিবীণার দামাল সুরে জেগে উঠি
চলো, জেগে উঠি সুলতানের ঘর্মাক্ত শার্দূল মানব হয়ে।
ইতিহাস
অতঃপর আমি কোন দিকে না তাকিয়ে
সোজা ঢুকে পড়ি শীতলক্ষ্যার সার্ভারে
জলস্ক্রীন টাচ করে অজস্র ফোল্ডারে ঢুকি
ব্ল্যাক ফোল্ডারে শুধু লাশের ফাইল
গুম হয়ে যাওয়া লাশের সারিবদ্ধ ফাইল
আমি ডিলিট করতে চেষ্টা করি
তবে, পারি না।
আমি ভুলে গিয়েছিলাম-
ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না
হোক না তা কোন জাতির কিংবা কোন নদীর।
বনসাই
মায়ের হাতে আগলে থাকা অতুল নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো
তার দুহাতের মুষ্ঠির মাঝে মার্বেল
সে হাঁটছিল। আনমনে একাকী হাঁটছিল
দুচোখে আচমকা বাতাসে ধূলির এক ঝাপটা এলে
অতুলকে তুলে নিলো সবল দুটো হাত
তার চিৎকার শুনতে পেয়েছিল মমতাময়ী মা
কিন্তু মুহূর্তেই তা বাতাসে মিলে গিয়েছিল
মায়ের কোল থেকেই শৈশবেই তারা অপহৃত হয়
অপহৃত হয় কতিপয় পশুদের দ্বারা
তাদের হাত—পা কাটা হয়
তড়পানোর মধ্য দিয়েই তারা ব্যবসার পুঁজি হয়
গলি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে রাজপথে
বিকলাঙ্গ পুতুল হয়ে ফুটপাতে বসে রয়
বসে বসে হৃদয় গোণে একমনে
বট—অশ্বথেরও শৈশব কাটে কারাগারে
হাত—পা কাটা হয়, মাথা ছাঁটা হয়
অতঃপর তড়পাতে তড়পাতে পথবৃক্ষ হয়ে যায়
আমরা সভ্য মানুষ পথশিশুদের নাম দিয়েছি ‘টোকাই’
বিকলাঙ্গ বৃক্ষদের নাম দিয়েছি ‘বনসাই’।
ল্যাম্পপোস্ট
ল্যাম্পপোস্ট জানে রাজপথের ইতিহাস
সাজানো রাজপথের তলদেশে মানব কশেরুকা
অগণিত কশেরুকার বাঁধনে নীল দংশনা টাওয়ার
কখনও দীর্ঘ বিরতিতে
কখনও ঘন ঘন দাঁড়িয়েÑজমাট রক্ত দলার ওপর।
রক্ত—মাংস আর লোনা পানির কংক্রিটে
বেড়ে ওঠে আকাশ ছোঁয়া টাওয়ারগুলো
নিঃস্ব শরীর ঢাকে দীর্ঘ কালো ছায়ায়
বাতাসে বাজে মানবের চিৎকার
হৃদয় গলে নদী
মানবীর বাঁধভাঙ্গা ক্রন্দন।
একের পর এক দাঁড়িয়ে আছে ল্যাম্পপোস্ট
জোড়—বেজোড় সারিতে
দাঁড়িয়ে আছে নির্বাচক সাক্ষী কালের।
সুখ
গলন্ত সূর্যের নিচে কাকের শহর
রাজপথে শুয়ে আছে প্রাণঘাতী রোদ
নির্মেঘ আকাশে পাখি ওড়ে না
গলে যাওয়া জেব্রা কেউ মাড়ে না।
নিস্তব্ধতা ঝুলে আছে বাতাবীর ডালে
একে একে চলে গেছে নীলফুল প্রজাপতি
বিশুষ্ক লেক সিটি কালের প্রহার
সূর্যটা ভেঙে পড়ে শহরের চালে।
আতঙ্কের ছায়া নিয়ে কাঁচাপাকা মুখ
মহাশূন্যের রথে চলে মধুমতি সুখ।