আজন্ম কৃতদাস
প্রবাহিত রক্তের কসম! বুকের দুধের কসম, পবিত্রতার
আমার ভালোবাসায় খাঁদ ছিলনা এক বিন্দুও,
এতোটা পথ হাতে হাত রেখে হেঁটে চলে গেছি বহুদূর
মেলবে ডানা সরীসৃপের, যদি ভাগ কর ভালোবাসাতে।
উড়বেনা পাখি আর কোনদিন বোবা হবে কাক-কোকিলও
পৌষমেলার ঢাক ঢোল শুনবে আজন্ম মূক- বখিলও ।
ডাকবেনা ঘুঘু ভরদুপুরে পাতার আড়ালে বসে
গভীর আকাশে ভুবনচিলের ডানা যাবে খসে।
কড়ই গাছে কাঠঠোকরার ঠোঁট ভেঙ্গেছে বহুবার
কেন এ প্রচেষ্টা তার !
নিতান্তই ভালোবাসা শুধু প্রেয়সীর তরে
একবার বাঁধবে বাসা, ডিম দিবে জোড়া দুই
অঙ্কুরিত হবে শষ্যদানা, সুশোভিত হবে ভূঁই ।
খোঁপা খোলা শব্দের কসম! কসম বেণী ও চুলের
কসম সখীর ভালোবেসে দেয়া রজনীগন্ধা ফুলের ।
দেখা যদি পাই একবারও তাকে বলবো না ভালোবাসি
আমি অপরাধী; শাস্তি আমার-আজন্ম কৃতদাসী ।
পোষাক
উত্তরের হাওয়ার সাথে সখ্যতা বেড়ে যায়
নৌকার ছেঁডা পালে লুকিয়ে রাখি গভীর প্রেম
এ আমার দাম দিয়ে কেনা মহা ম‚ল্যবান জার্সি
তুমি আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখ ভয়াল সাগরের ভেতরেও
আমি আঁকরে ধরি, খামচে ধরি তোমার নখ,আঙুল,
বুকের ওপরে খোলা বোতামওয়ালা তোমার জামা ।
আমার আস্থা এই যে– তুমি জিতলেও জেতো, হারলেও জেতো
আমার মহা ম‚ল্যবান জার্সির ভেতরে তুমিই লুকিয়ে থাকো।
ওপারে খোলা প্রান্তর—
মনের বাগানে মাত্রই এসেছে কলি,
আমি কী করে বলি– এ আমার অহংকারের ফসল
চৈত্রের খরতাপে শীতল বর্ষণ, এ আমার ভালোবাসা,
আমার একান্ত কাছে পাওয়া আমারই পোষাক ।
কষ্টের পরগাছা
বিষেরও বিষ আছে মনে
ব্যাথার যন্ত্রণায় বিষ প্রহরে প্রহরে কাতরায়
উঠোনে চরকির জল ঢেলে রাখে ফের
আমি তো পিছলে পরি, পথ চিনিনা বলে।
যে পারো ভুলিয়ে দাও পুরোনো জঞ্জাল!
আমি তো কষ্ট পুষে রাখি খাঁচার ভেতর
পুরোনো জীর্ণ পোষাকে
আলমিরার গোপন কোঠরে।
গোপন কথার মত সে এক বিলাপ তোমার
আজ অবধি ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকো,
না বলে ফেলে রাখা চৌকাঠ-
ঘুণে ধরে, উঁইপোকা খায়
এ আমার কষ্টের পরগাছা।
কল্পনা
তোমার রঙিন হাতের মুঠোয় আমার ঘুড়ির লাটাই
অনেক, অনেক, অনেক দ‚রে আর দিওনা ছেড়ে
আমি যদি খুব অবেলা মন্দা সময় কাটাই
আমায় তখন কাছে নিতে হাতটা দিও বেড়ে।
শূণ্যে উড়াল, শূণ্যে জীবন, শূণ্যে আমার মন
কখন, কবে পাব আমি তোমার আলিঙ্গন।
ছায়া হয়ে সঙ্গে থেকো
আদর করে কাছে রেখো,
হঠাৎ যদি বিপদ আসে আমার দিকে তেড়ে
আমায় তখন কাছে নিতে হাতটা দিও বেড়ে।
অসভ্য জোঁক
অনেক দূরের ভায়োলিন কাঁদে অহর্নিশ
ক্লান্ত খোকা বাড়ি ফেরে ঘর্মাক্ত দেহে,
অস্থির হয়ে মা বলেন– কই ছিলি বাবু
আমি তো চিন্তায় চিন্তায় বিভোর।
উদগ্রীব চাহনিতে মায়ার আভরণ জাগে
হতভম্ব, বিহবল মাতৃত্বের বাঁধন
আশার আলো ডুবে গেছে অস্তাচলে
না ফেরার দেশে গেছে নাড়ি ছেঁড়া ধন।
ফিনকি দিয়ে তার মুখাবয়ব আন্দোলিত করে
চাহনিতে ঝাপটা লাগে, বন্ধ হয় চোখ
আজন্ম পাপ? নাকি পাপের ফসল
যে ফসল কেটে নিলো অসভ্য জোঁক।
উন্মত্ত বালক
বালিকা! তোর জন্য একটা কবিতা লিখতে চাই
নীল বর্ণের কবিতা
যে ষোড়শীর প্রেমে উন্মত্ত
উতাল হাওয়ায় দোলে
পিপাসায় চরম কাতর
উচ্ছ¡সিত চোখে চেয়ে থাকে পথে
ছোপ ছোপ পা ফেলা গভীর অরণ্যে
ভয়ে কাঁপে দুরু দুরু।
নলিনীর হাত ধরে বেড়ে ওঠা দুরন্ত কিশোর ।
কখনো সে ফ্রক দেখবেনা ভেবেছিল খুব!
বাঁকা চোখে তাকাতেই ধুপধাপ দুই কিল পিঠের উপর
“ফাজিল ছোড়া”
আমি তো হেসেই দৌড়, আচমকা পড়ে যাই
জমির সীমানা পিলারে হোঁচট খেয়ে ।
নলিনী ! তোমার সীমানা পিলার তুলে ফেল
তুলে ফেল সব সীমানা প্রাচীর
বেড়ে যাক আয়োতন এই কিশোর মনের
আমি যেন ছুটে ফিরি রোজ রোজ
তোমার সীমানার ভেতর, এক উন্মত্ত বালক।
আমি তো জল ঢালি চৌচির এক বিরান মাঠে
নদীর পক্ষ থেকে স্রোতের সাক্ষী ছিল প্রগাঢ়
আষাঢ় থেকে শ্রাবণ গেলে বর্ষার প্রকোপ বাড়ে
বাড়তে থাকে জলের কোলাহল,
তোমার আশ্বিন মাসেও কালবৈশাখী নামে
আমার ভাঙা ঘর উড়ে যায়, উড়ে যায় ঘরের খুঁটি,
টিনের চালা আর চৌকাঠের ছিটকিনি আঁটা খিল।
ক্ষুদে বার্তাগুলো পড়ে থাকে হাতে
কী প্রয়োজন বলো উত্তর দেবার!
দখিনের হাওয়া টান গেছে সে সময়
কালের সাক্ষী হয় বুনো ঝাউগাছ
হালকা আলোয় মোড়া ছাদের দু’পাশের কোণে।
একদিন আমাকেও বলেছিলে–
‘মেঘ’ তোমাকে খুব ভালোবাসে,
অতি আদর যত্ন করে ঢেকে রাখে বাহুর চাদরে।
ঘ্রাণ শুঁকে বলে দেয় যে পথে হেঁটে গেছো তুমি।
সেই ভালোবাসা ফিকে হয়ে গেছে আগেই
এখন সে মেঘ ঝরে গেছে বর্ষা হয়ে প্রবল স্রোতে।
এবার আশ্বিন এলে তোমার শুষ্ক খড়া-
ধুধু মাঠ খা খা করে জলের আশায়-
আমি তো জল ঢালি চৌচির এক বিরান মাঠে।
ঋণ
আমি যদি হেরে যাই, হেরে যাও তুমি
পাথুরে হৃদয় কাঁদে, কাঁদে মরুভূমি।
সমূলে বিনাশ হলে বাঁচবেনা কেউ কোনদিন
ভালোবাসা বেঁচে রয়, ভালোবেসে শোধ হলে ঋণ।।
ভালো লাগলো।
এগিয়ে যাচ্ছেন আরিফ।
শুভ কামনা নিরন্তর।