রং-এর গন্ধ কী
মাহবুব হাসান
ডাল পোড়া গন্ধ ছেঁকে ধরলো যেন ক্ষুব্ধ মৌমাছি,
গন্ধকে বললাম কী রং তোমার?
সে বিস্মিত! বললো আল্লাহ!
আমি নিজেই এখন বিস্ময়াভূত! ওহ আল্লাহ!
একটি ময়না আপন মনে বকছিলো নিজেকেই, যেন সে নিজেই শাসক ও শাসিত!
ময়নাকে বললাম তোমার কথার রং কী সবুজ না কালো?
সে হাসলো। তার হাসির বিচ্ছুরণ
দিগন্তের চৌদিক সবুজ করে তুললে আমি ধরে নিলাম রংয়েরই অন্য নাম সবুজ
আমার চারপাশে সবুজের হোলি আকাশ থেকে নেমে এলো যেন সে সুপারসনিক যান
সবুজের নিজের কোনো রং নেই,
তবে শাদা সে ভালোবাসে হৃদয় দিয়ে,
সফেদ দাঁড়িয়েছিলো আকাশ মাথায় নিয়ে ,
আমি তাকে রংয়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম,
সে বললো আল্লাহ!
তারপর প্রতিদিন অগণন মানুষের মুখে শুনেছি আল্লাহ
কিন্তু কেউ বলতে পারেনি কি রংয়ের বাহারে তিনি
অপেক্ষা করছেন !
আমি কী অপেক্ষা করছি গন্ধের রংয়ের জন্য।
টাঙ্গাইলের এলাচি লেবুকে বললাম , রমজানের কাচাবাজারে তোমার চাহিদা খুব,
পিপাসার্ত মানুষের তেষ্টায় নুন আর টকের টংকারে
ইফতারের দৌলত হয়ে যায়!
তোমার সবুজ গায়ের যে সুগন্ধি , তার রং কী?
সে সরাসরি চোখ তুলে বললো আল্লাহ।
আমার মাথা খারাপ হতে শুরু করলো;
শ্বাস-প্রশ্বাসের ভেতরে ওই ডাক নাম আমি শুনতে পেলাম।
সবার রং যদি আল্লাহ তাহলে নবী মুহম্মদের রং কী?
নিজেকেই প্রশ্ন করে আমি থতমত খাই!
তিনি তো সৌন্দর্য
তাঁর রং অপার্থিব, গন্ধও!
নামের মতোই অনন্য তিনি
আল্লাহর প্রেরিত মানুষ,
নামের মহিমার মতোই তিনি অনন্য সুগন্ধী!
তুমি কি সেই সুগন্ধির রং জানো?
০৪/০৮/২৪
…..
রোজা
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
সুরা বাকারার কোমল আয়াত থেকে
তুমি দাওয়াত নিয়ে আসো।
মগ্ন আবিদের তুমি কি জান্নাত?
নাকি সবরকারীদের পরীক্ষা নিবে?
শেষে দিবে ডান বা বায়ের সংবাদ?
আমি সারা বছর ব্যাকুল থাকি।
রমজান মাসে রোজা রাখি।
আল্লাহ কি দেবে -জান্নাতিন
তাজরি মিন তাহতিহাল আনহার?
জানি সেও দূরাশ্রয়ী আশা।
অবাধ্যতায় লুকায় মানুষেরা- দিন রাত্রি
পরে কাফেরদের পোশাক আর ভাষা ।
আমি না-খাবারের মধ্যে খাবার হয়ে আছি
না-দেখার মধ্যে দেখা হয়ে আছি,
ভাষা না-ভাষার মধ্যে গুলজার হয়ে আছি।
আমার কি হবে পুলসিরাতের ব্রিজ পার?
সেও এক অজ্ঞান জিজ্ঞাসা
জান্নাত না জাহান্নাম- সে তো নির্ধারণ
করবে- কেবল রহমত আল্লাহ’র।
সেই রহমতের আশায় বুঁদ আছি
তারাবির সিজদায় ক্রমশ লুটিয়ে থাকি।
১০/৩/২৪
…..
বসন্তের শুরু
কাজী জহিরুল ইসলাম
নীল-বেগুনী ক্রকাশ ফুল, গুচ্ছ কিছু শাদা
স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে গৃহের বাড়ালো মর্যাদা।
মেঘের নিচে ছায়া-মায়ার আদুরে মার্চ হাসে
বিহঙ্গেরা এ-মাসটিকে ভীষণ ভালোবাসে।
ঘাসের মাঠে কালো ডানার অচেনা ঝাঁক নামে
ঋতুর লেখা কৃষ্ণ চিঠি গাঢ় সবুজ খামে।
দুলছে চেরি, ওক বৃক্ষ, বসন্ত বাতাসে
কাঠবেড়ালি ডাল-কাণ্ডে ক্ষিপ্ত সন্ত্রাসে।
পূর্ণীলারা শিষ বাজালে ম্যাগনোলিয়া ফোটে
সোনালী ফিঞ্চ খুঁটছে আলো হলুদ মাখা ঠোঁটে।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ১৯ মার্চ ২০২৪
…..
বান্দা
তৈমুর খান
এই চাঁদ ফিরে এলে আমিও নিষাদ হই বিষাদের কাছে
এই আরশের নিচে আজও আশ্রয় খুঁজে খুঁজে
তোমার আনন্দ নেয়ামতে
নিজেকে বিলীন করে চলে যেতে চাই
কতদূর আর? একটি ঈদের পর আরও কোনো ঈদে
ঈমানি আলোর ভোরে জেগে উঠব তবে
আমার কাঙ্ক্ষিত সিয়ামের শেষে পূর্ণ আবেশে
মানব মহিমার দিন সানন্দে ঘোষিত হবে?
হাত ধরে নিয়ে যাবে সবে, বুকের গুঞ্জন শুনবে বুক
হৃদয় উথলে উঠবে হৃদয়ের সংবাদে
আনন্দের যাকাত কেন আনন্দ হবে না?
পবিত্র পরশ নামবে ঈদ মোবারকে!
এ মাটিতে, এ ধুলোয়, এ আকাশে-বাতাসে
সম্মোহন ছড়িয়ে পড়ুক দ্বীনের প্রসন্ন সওগাতে
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা সমূহ মখলুকাতে
আমি একান্ত সেজদায় লুটাই তবে স্রষ্টার জমিনে।
…..
ঈদ
মুহম্মদ মতিউল্লাহ্
মসজিদের মিনার থেকে পশ্চিমে রাঙা আকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন তিনি
তখন বাল্যকাল।সন্ধ্যাবেলা।একটু একটু অন্ধকার
আকাশ কৃষ্ণপক্ষের সমাপন বলছে এবং
মিনার ক্রমশ উঁচু হচ্ছে… কত উঁচু
একটু পরেই নেমে আসছেন ওই তো সিঁড়ি
ভেঙে ভেঙে
ইফতার শেষের সন্ধ্যায় দিগবলয় প্লাবিত অন্ধকারে
শেষ সিঁড়িতে নেমে এসে দীক্ষান্ত ভাষণ শেষে তিনি জানালেন চাঁদ দেখা দিয়েছে আকাশে…
ব্রত পালনের মতো সেই শৈশব আমি যত্নে থুয়েছি।
…..
ঈদের জামা
সায়ীদ আবুবকর
আজও কুঞ্জে হুঞ্জে কালের কুসুম ফোটে
কেবল কুসুমগুলোতে নাসিকা নিশ্চেতন করা সেই
সুরভি পাই না আর।
আজও অরণ্যে অরণ্যে কালের কোকিল গান গায়
কেবল তাদের কণ্ঠ হতে হৃদয় উদাস করা সেই আরণ্যক সুর
কোনখানে যেন হয়েছে উধাও।
আজও সেই নগ্ন চাঁদ, গোলগাল, ওঠে নীল রাতের আকাশে
শুধু তার ঘরছাড়া করা সেই মোহনিয়া রূপ
পড়ে না কোথাও আর চোখে।
ভরা কৈশোরের এক পড়ন্ত বিকেলে, প্রেমে পড়া এক শুভ্র কিশোরীর
কাঁপা কাঁপা দুটি চোখ দেখে মনে হয়েছিল পদ্মফোটা দুটি পতিত পুকুর;
সেই চোখ মনে করে করে, তারপর, কেটে গেছে কত কাল দেবদাস হয়ে—
আজ নারী সমস্ত শরীর খুলে দিয়ে সুঁই ও সুতোর মতো গেঁথে গেলেও, কেমন
পানসে পানসে লাগে সব—মনে হয়, কী যেন কোথায় নেই, চোখের ভেতরে
চোখ নেই, ঠোঁটের ভেতরে ঠোঁট নেই, ভুরুর ভেতরে ভুরু নেই,
নারীর ভেতরে নেই নারী।
আজ ঈদ আসে তেল নুন ও মসলা না দিয়েই রান্না করা গরুর গোস্তের মতো।
পুরনো পাঞ্জাবি পরে ঈদগায় গিয়ে দেখি, নতুন পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে
ছেলেবুড়ো সকলেই ছড়াচ্ছে খুশির আভা। হৃদয়টা ছোট্ট বালকের মতো ক্ষোভে
বুকের ভেতরে শুধুই হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে—দেখে লজ্জায় কুঁকড়ে যাই আমি।
একদিন আমাদেরও ঈদ ছিলো আমের বোলের মতো নতুন জামার গন্ধে
মৌ মৌ করা। একদিন আমাদেরও ঈদ ছিলো জনকের হাত ধরে
আতরের ঘ্রাণ ছড়াতে ছড়াতে ঢেউ ঢেউ জনস্রোতে মিশে যাওয়া।
জনক না থাকলেই অনন্ত হারায় বুঝি নতুন জামার মৌ মৌ করা বাস;
ঈদের ভেতরে থাকে না তখন ঈদ, উৎসবে উৎসবে উৎসবহীন
কেটে যায় বারো মাস;
জীবন যখন উৎসবহীন, জীবন তখন হারায় যে তার মানে,
ফুলের ভেতরে থাকে না তখন ফুল, চাঁদে চাঁদ, গান গানে।
…..
এই ঈদে
নয়ন আহমেদ
এই ঈদে পৃথিবীর যাবতীয় কমলালেবুগণ
গোল হয়ে বসে আছে শুশ্রূষার মতো
আর শৈশবের হরিণেরা মর্মর ধ্বনি তুলে দৌড়াতে দৌড়াতে
এসে গেলো শ্রমজীবী সূর্যোদয়ের বাড়ি বাড়ি।
এই প্রসন্ন সংকেত পেয়ে উচ্ছ্বাসে সবুজ হলো
দুইটি পাতিলেবু গাছ
আর পুকুরের ঘাটপাড়ে ঝিমানো দুপুর;
পৃথিবীর পাড়ায় পাড়ায় মীমাংসিত ভোরের গ্রীবা থেকে ঠিকরে পড়া আলো।
মূলত একটুকরো সহজবোধ্য উৎসব–
যেন ঝুলে আছে কোনো প্রান্তের মায়ের গলায়
হার হয়ে।
বোনের আবেগ হয়ে
ভাইয়ের হৃদয় হয়ে
আর বন্ধনের রজ্জু হয়ে প্রাত্যহিক নিয়মের মতো।
হাঁড়ি-পাতিলের মতো ধ্বনিপুঞ্জ থেকে
রান্নাঘরের ঝনঝন বর্ণমালা থেকে
ক্রমশ বর্ধিষ্ণু হচ্ছে কোনো মানবিক শব্দের গুঞ্জন।
যেন একত্র হচ্ছে মৌমাছির গুপ্ত সংবেদ।
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো শব্দের মতো ঋজু ;
সবচেয়ে ব্যবহৃত দৃঢ় ফিসফাস —
ভালোবাসার বিকিরণ হবে।
৮ এপ্রিল ২০২৪
….
অনিবার্য
মুসা আল হাফিজ
একটা সময় আসবে,বেদনা সঙ্গ দেবে এতো বেশি
মৃত্যুও কাছে আসবে না!
একটা সময় আসবে, নিজেকে বয়ে চলতে পরিশ্রান্ত
তোমার জন্মদিন তোমাকে ভুলে যাবে!
একটা সময় আসবে, দুঃসহ হয়ে উঠবে চেনা ব্যাকরণ
ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠবে শেষ নিঃশ্বাস!
কিন্তু একটা দিন আসবে,যা ভুলিয়ে দেবে
সেই সব দিনের কথা
যেন তারা আসে নাই কোনো দিন!
….
আল্লাহ প্রশস্তি কবিতা
সাজ্জাদ বিপ্লব
ক.
প্রভু, ঢেকে দাও তোমার চাদরে
কেটে যাক জ্বরা, খরা, অমানিশা, রোগ-শোক।
না যেন করি কখনো, লোক–
দেখানো শোক।
ডেকে নাও আদরে।
খ.
আমরা তোমারি
মুখাপেক্ষি।
এই যে, দেখো
আমাদের মুখ ও মুখোশ–
তাক করা
তোমার দিকে।
আমাদের যত
অহঙ্কার ও রঙ, ফিকে–
হয়ে আসে, দিনে-রাতে।
তবু– তুমি থেকো সাথে।
গ.
পৃথিবীতে কত না পুরস্কার
তিরস্কার–
আমাদের সামনে।
আমরা তোমার সামনে
করি আনত–
আমাদের বদন, মেধা ও প্রজ্ঞা।
আমাদের করো গ্রহণ
গহীনে।
তোমার পুরস্কার আমরা
ঠিক-ঠিক নেবো চিনে।
কবি মাহবুব হাসানের কবিতাটি খুব সুন্দর ।
কবিতাটি আবেগে ঋদ্ধ।
অন্য সবার কবিতাও ভালো লেগেছে।