spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : যশোধরা রায়চৌধুরী

গুচ্ছ কবিতা : যশোধরা রায়চৌধুরী

সমাজমাধ্যম


সামাজিক ছিলে না কখনো
এখন অভ্যাস খুলে ফেলা
প্রস্তুতিপর্বের কাজ শেষ
অভিনয় , চাতুরি ও ছলা

মনে মনে বেহদ্দ একাকী
অথচ বাহিরে হিরোগিরি
টুল পেতে উঠে বক্তিমে
এই বটে বুদ্ধির ছিরি

প্রতিকার প্রতিবাদ রং
কোণে কোণে জ্বালানো মশাল
দূর থেকে দেখেছিলে বলে
দূর থেকে পুড়ে গেছে ছাল

তোমার এ ভল্লুক জীবন
জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেছে
বাকিটা ধ্বংসের বিবরণ
নীরবতা, বসো তার কাছে।

মাথার ভেতরটা সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যাবার পর
তোমার পেটের ভেতর মনে পড়ে

পেটের ভেতর থেকে হড়হড়িয়ে বেরুচ্ছে
যে ডায়ারিয়া
সেভাবে মানুষ কথা বলছে আজকাল।

শ্রবণ হীন বলা, আত্মকথা
যেভাবে ব্লু টুথের মানুষ একাকী বকরবকর করে
মনে হয়না আর বাগিচার উন্মাদ
মনে হয়না হতাশ পথিক
মনে হয়না অরণ্যের রোরুদ্যমান হারিয়ে যাওয়া লোক…

আত্মকথারা হারিয়ে যাচ্ছে
আত্মকন্ডুয়নে
সমাজমাধ্যমের পেটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে
গলগল করে যেভাবে পুঁজ রক্ত
বিস্ফোটক থেকে ফেটে পড়ছে রাগ দুঃখ কান্না
গালাগালি ক্রুদ্ধতা সন্দেহ
বিষ উল্লাস ও ছোবল

অথবা, আরো যা খারাপ
উল্লাসের ছলে বিষ
ধন্যবাদের তলে স্পর্ধা
বিনয়ের তলে অহংকার

দূরে ঘাইহরিণীরা ডাকতে ডাকতে হারিয়ে যাচ্ছে
বুশফায়ারের অরণ্যে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে
ঝরে পড়ছে পতঙ্গের ঝাঁক
আহত গোরুরা হাম্বা ডাক দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে
প্লাস্টিক বর্জ্য খেতে খেতে
জলাভূমির নীরবতা খান খান করে
ডিজে বাজছে আর নাচছে কিশোর কিশোরী
উড়ে পালাচ্ছে পাখির দল

আর আমরা সবাই এ ওর হাত ধরাধরি করার ছলে
গাইছি মৃত্যুর ধর্ষণের ক্ষুধার কান্নার গান
পরস্পরকে ভালবাসার বদলে ঈর্ষা দিয়ে স্নান করিয়ে দিচ্ছি
আমরা এ ওকে দেখে জ্বলছি ঘৃণায়
আহা যেন কত জানে ওরা, ভেবে হেসে কুটিপাটি হচ্ছি , যখন
নিজেই কিছু জানিনা।


লেখার কাছে ফিরে আসা সহজ নয়
আকচাআকচির বিকেলে পার্কে যাচ্ছি
ঘৃণাভর্তি প্যারাম্বুলেটর নিয়ে
আদর দিয়ে দুধ খাইয়ে ঘৃণাকে বড় করে তুলছি যে

তাই লেখার কাছে ফিরে আসা সহজ নয়
লেখা সেই বোরখা পরা মেয়ে
যার নিজের কোন কন্ঠস্বর নেই
যতক্ষণ না তুমি হাত ধরে তাকে এনে দাঁড় করাবে
মঞ্চের মধ্যেখানে
তার হাতে তুলে দেবে তোমার মাইক্রোফোনটা

এই মুহূর্তে তুমি ত স্নান করছ পথের নলে
সে জলের ভেতরে মিশে যাচ্ছে কার না কার চোখের জল
কার না কার হিসি
এই জল শতজল ঝর্ণার ধ্বনি নয়
এই জল কলরোলে বয়ে যাওয়া মানুষের গালি আর চীৎকার আর
পরস্পরকে দোষারোপ
হুড় হুড় করে বয়ে যাওয়া টাইমের কলে
ছড়ছড় করে ছেড়ে দেওয়া পেটখারাপের পায়খানার মত
মানুষ কথা বলছে কথা

কখনো বেদনা, কখনো বালিশ
কখনো আরোপ , কখনো মালিশ
কখনো শিল্প কখনো তরজা এ অঙ্গনে
একা একা কোথা চলিতেছিলাম অন্বেষণে

সমাজ এখানে একা করে দেয়
সমাজকে তবে মূর্খে চালায়
ভীষণ চালাক চালাক দেখতে লোকের সনে…

আরও পড়তে পারেন

4 COMMENTS

  1. যশোধরা অনেক বড়ো কবি । দীর্ঘদিন লিখছেন । কবিতা ছাড়াও ওঁর সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও অবাধ যাতায়াত ।🙏

  2. একেবারে বেপর্দা করে দিল এই গুচ্ছ কবিতা!

  3. যশোধরা বরাবরই সমসময়কে নিজস্ব শব্দে শাসন করেন – খুব নিরুদ্বেগ ঋজু আন্তরিকতায়। কোথাও ভনিতা নেই।

    এইটা আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি। অনুভুতিগুলোকে যাচাই করে নিতে পারি যথেচ্ছ।
    জানি লেখার কাছে ফিরে আসা সহজ নয়। তবু এভাবেই ফিরে আসা – জীবনের কাছে – লেখার কাছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ