তৈমুর খান
১
প্রয়াস
——————–
সৃজন সাহিত্য পত্র ‘প্রয়াস’(নববর্ষ ১৪৩১) ১২ বছরে পদার্পণ করল। ধারাবাহিকভাবে পত্রিকাটির প্রয়াস লিটিল ম্যাগাজিনের একটা অহংকার বলা যেতে পারে। সাজানো গোছানো প্রতিটি সংখ্যায় নামিদামি সকল শ্রেণির কবি-লেখকেরাই লিখে আসছেন। এই সংখ্যাটিও বেশ সমৃদ্ধ একটি সংখ্যা। কবিতা-ছড়া, গল্প-অণুগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ সব মিলিয়ে ১৪১ জন জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। মানস চক্রবর্তী, উৎপলকুমার ধারা, সজল বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপনকুমার বিজলী, আভা সরকার মণ্ডল, অভিজিৎ বেরা, আশিসকুমার নন্দী, দীপক জানা, নজর উল ইসলাম, গৌতম ঘোষ-দস্তিদার,তপন চক্রবর্তী, দীপঙ্কর বেরা, তূয়া নূর,চন্দন মিত্র, স্বপন মুখোপাধ্যায়, বিপাশা সমাদ্দার, তুষার ভট্টাচার্য, প্রভাত সরকার, কিরণময় নন্দী, প্রণতি মণ্ডল, বন্দনা কুণ্ডু, রঞ্জিত দাস, সুভাষ সিংহ, উত্থানপদ বিজলী, বাবলু কাজি, চন্দন চক্রবর্তী, বনশ্রী চট্টোপাধ্যায়, সবুজ পরিমল, সুতপা ব্যানার্জি,দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, বেগম শামিমা আক্তার, ভুবনেশ্বর মণ্ডল, রাজশ্রী দে, অন্তরা ঘোষ,প্রবাল সেন, জয়ন্তকুমার মল্লিক প্রমুখ দীর্ঘদিন ধরে লিখতে থাকা পরিচিত মুখগুলি রয়েছেন। সুনির্বাচিত পত্রিকার লেখাগুলিও বেশ আকর্ষণীয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক কয়েকটি লেখাও চোখে পড়বে। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের ইতিহাস নিয়ে এই সংখ্যার সম্পাদকীয়ও বেশ মূল্যবান। যোগাযোগ: শ্রীমন্ত জানা, মুচিশা,দক্ষিণ ২৪ পরগণা-৭৪৩৩৭৭, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। মূল্য ১৩০ টাকা।
২
নতুন মুখ
————————-
১২ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা ‘নতুন মুখ’(নববর্ষ ১৪৩১) পত্রিকাটির একটি ভিন্নতর আবেদন রয়েছে। ছোটদের সচিত্র ষান্মাসিক সাহিত্যপত্রিকা হিসেবে এটি প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কচিকাঁচারা লেখালেখিতে আগ্রহ থাকলে তাদের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাতে পারে এই পত্রিকায়। তাদেরই পাশাপাশি নামকরা কবি-লেখকদের লেখাও থাকে। যার ফলে নতুনদের কাছে তা শিক্ষণীয় এবং আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে। যেমন এই সংখ্যায় স্নেহা দাস, প্রিয়ান্বিতা মাইতি, সুদীপ্তা কারক, দীপান্বিতা মণ্ডল, সায়ন্তিকা জানা, অর্ণব ভূঞ্যা, স্নেহাশ্রিতা সরকার, দেবরূপা মাইতি, স্নেহা মণ্ডল প্রমুখ কচিকাঁচাদের পাশাপাশি সুনির্মল চক্রবর্তী, হাননান আহসান, ড.নির্মল করণ, আনসার উল হক, সুখেন্দু মজুমদার, স্বপন চক্রবর্তী, উৎপলকুমার ধারা, অবশেষ দাস, রবিনকুমার দাস, কাজী মুরশিদুল আরেফিন, মধুসূদন ঘাঁটি, মানিকচন্দ্র পাহাড়ি, নরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত প্রমুখ আরও বহু লেখক। ছড়া-কবিতা, গল্প-প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার-গ্রন্থ সমালোচনা প্রভৃতি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষারই লেখকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি লেখার শেষে লেখকের পরিচিতি এবং ছবিও একটা আলাদা আকর্ষণ। সদ্যমৃত ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের স্মৃতিচারণা করেছেন সুচিত চক্রবর্তী। জ্যোতির্ময় সরদার পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের কথা বলতে গিয়ে ১৪ টি আশ্চর্যের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটিয়েছেন। সম্পাদক আশিসকুমার ভূঁইয়া সাহিত্যিক মুকুল মাইতির সঙ্গে আমাদেরও আলাপ করিয়ে দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম কী ছিল তার একটি তালিকা এই সংখ্যায় রয়েছে যা খুবই মূল্যবান। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ছেলেবেলা কেমন ছিল তা নিয়ে লিখেছেন অধ্যাপক সমীরকুমার ঘোষ। কৃষ্ণা বসু জানিয়েছেন তাঁর আন্তরিক শুভেচ্ছা বার্তা। ছড়ায়-গল্পে পাঠকের মন ভরে যাওয়া নানা রসদ ছড়িয়ে আছে পত্রিকার পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। যোগাযোগ: আশিসকুমার ভূঁইয়া, মুড়িগঙ্গা,সাগরদ্বীপ,দক্ষিণ ২৪ পরগনা। মূল্য ৪৫ টাকা।
৩
রোদ্দুর
—————————–
২৫ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা ‘রোদ্দুর’(নববর্ষ ১৪৩১)এর বর্তমান সংখ্যাটি রজত জয়ন্তী বর্ষ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ নিয়ে কলেবরেও বৃদ্ধি পেয়েছে সংখ্যাটি। ১০১ জন লেখক-কবি এই সংখ্যায় কলম ধরেছেন। বৈশাখী ঝটিকার সাথে রাজনৈতিক উত্তাপ্তের কতখানি মিল আছে তারই বয়ান করেছেন সম্পাদকীয় বিভাগে। তবে মানবিক কণ্ঠস্বরেরই জয় জয়াকার ধ্বনিত হয়েছে শেষপর্যন্ত। ছড়া-কবিতা-গল্প লেখকদের নামের পাশে তাঁদের বাসস্থানেরও উল্লেখ থাকায় সহজে বোঝা যায় তাঁরা কোন অঞ্চলের মানুষ। ‘কুসুম কলি’ ছোটদের বিভাগ হলেও বড়রাও ছোটদের মতো লেখেন এবং তাঁদের প্রতিটি লেখাই খুব আকর্ষণীয় হয়। রোদ্দুরের ২৫ বছর নিয়ে দীর্ঘ মূল্যায়ন করেছেন চন্দ্রমহন সিংহ। পত্রিকার পথ চলা কত কঠিন ছিল তা বোঝা যায় লেখাটিতে।আগামী প্রজন্মকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করা এবং সাহিত্যচর্চায় নিরলস ব্যক্তিত্ব দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণা করেছেন বরুণ কর্মকার। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা অনুভূত হয় এতদঞ্চলের মানুষও জানে। আনিস আহমদের লড়াক্কু সংগ্রামময় জীবনের পরিচয় তুলে ধরেছেন অমূল্যরতন মাল। ‘রোদ্দুর’ গ্রামবাংলার শীতের রোদ্দুর হয়েই পাঠকের মনে উত্তাপ ছড়িয়ে দেবে।
যোগাযোগ: মিহির পাল,চালধোয়ানী পাড়া, রামপুরহাট, বীরভূম-৭৩১২২৪, মূল্য ৫০ টাকা।
৪
এখন তমোহা
————————
নবম বর্ষ ‘এখন তমোহা’(নববর্ষ ১৪৩১) ছিমছম রুচিপূর্ণ পত্রিকাটি ৩০ জন কবির কবিতা এবং দুটি ছোটগল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। একটি বিশেষ সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে উত্তরোত্তর একে সমৃদ্ধ করার জন্য সম্পাদক অঙ্গীকারবদ্ধ তা সম্পাদকীয়তে জানিয়েছেন। একটা লিটল ম্যাগাজিনের পক্ষে এটাই বড় গর্বের বিষয়। এই সংখ্যার ৩০ জন কবিই বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল অবদান রেখে চলেছেন। জয় গোস্বামী,মৃদুল দাশগুপ্ত, মন্দাক্রান্তা সেন, উত্তম দত্ত, তৃষ্ণা বসাক, গোলাম রসুল, তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়, সুব্রত মাইতি, খুকু ভূঞ্যা, প্রাণজি বসাক,দেবাশিস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কবিগণের পাশাপাশি সমর সুর, রাজু মণ্ডল, সঞ্চারী গোস্বামী, নিমাই জানা, দেবাশিস হালদার, চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী, শিবালোক দাস,আশরাফুল মণ্ডল, আবদুল বাসার খান, বরুণ বিশ্বাস, শুভদীপ মাইতিও রয়েছেন।বিশ্বজিৎ বাউনা লিখেছেন “ক্ষয়ের নির্মাণ আছে, জল ভেঙে ওড়ে জল-ছাই…/ গোপন প্রেমে ঝরে অরণ্যের আদি ত্রাণ চোলাই।” ইমতিয়াজ মাহমুদ লিখেছেন “আমি মরে গেলে আমার লাশটা বন্ধুদের খেতে দিও।” শেখ আবেদ আলী লিখেছেন “খোলা মাঠে বসে থাকি নীরবতার ভিড়ে/ এখানে খুঁজি জীবনের প্রবেশ প্রস্থান পথ”। রত্নদীপা দে ঘোষ লিখেছেন “প্রদীপের উত্তাপ যদি পুষ্পহীন হয়, তবুও শ্রেষ্ঠ বিষ।” তখন বুঝতে পারি বাংলা কবিতা কতখানি অগ্রসর হয়েছে। একদিকে বোধের সম্মোহন, অন্যদিকে অভিজ্ঞতার করাত শব্দ-ব্যঞ্জনের এমন নিবিড় সংযোগ পাঠকের মনে অদ্ভুত বিক্রিয়া তৈরি করে। সব কবিতাগুলোই ভালো লাগার বিষয় হয়ে ওঠে। দুটি অসামান্য ছোটগল্প উপহার দিয়েছেন মানস সরকার ও অলোক বসু। যোগাযোগ: সম্পাদক সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ৭৫৭/১, নতুনগ্রাম, ৩ নং হরির মাঠ, ডাকঘর মোড়পুকুর, রিষড়া,হুগলি, চলভাষ: ৮৯১০৪৮৮৩৬৪, বিনিময় মূল্য ৩০ টাকা।
#