spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতামা বিষয়ক কবিতা গুচ্ছ

লিখেছেন : তৈমুর খান

মা বিষয়ক কবিতা গুচ্ছ

তৈমুর খান

১. মা

মায়ের কবরের ঘাস তুলে এনে ঘরে রাখি
যেখানে নশ্বর দেহ হয়ে গেল মাটি
সেই ঘাস মাটির কবিতা
সেই ঘাস মরমি প্রকাশ

আলো ও সময় চলে গেলে
ভেঙে পড়ে ঘরের দুয়ার
তবু ঘরে মা থেকে যায়
রোজ পাহারা দেয় মায়ের বাতাস

কবরের ঘাসে ঘাসে জন্মান্তর ফেরে
স্নেহের অলিন্দ জুড়ে জেগে থাকে
রাতের আকাশ … ..

২. শীতের কাঁথা

এই শীতে একখানি কাঁথা
সেলাই করে করে
সেলাই করে করে
চলে গেছে মা
এই কাঁথা মুড়ি দিয়ে রোজ
আমিও আকাঙ্ক্ষা সেলাই করি
শব্দ সেলাই করে করে কবিতা বানাই
উপলব্ধিগুলি কচ্ছপের মতো চলাফেরা করে

অন্ধকার ঘরে বিষণ্ন বদনখানি কার?
চেয়ে চেয়ে শুধু আমাকেই দ্যাখে—
শোভারা এল না কেউ
তুলোর পোশাক পরে ওরা সব দূরে দূরে থাকে
ওদের শীতের বারান্দায় রোদের চাকুরা পাহারা দেয়

আমরা আদিম সুচ-সুতো খুঁজে খুঁজে
একখানি শীতের কাঁথা উপহার দিতে চাই
আমাদের নব্য প্রজন্মকে

৩. আত্মপরিচয়

ঘুরপাক খেতে খেতে
ঘুরপাক খেতে খেতে
একটা আধা শহরে বাড়ি
অবেলার কাক,হাটুরে ফেরিওয়ালা
আর বিক্রি হওয়া মেয়ে
একে একে ফিরে এলে দেখা হয়

যে যার মতন জল মাপে
দু একটা রাজনৈতিক শিকারি
মোড়ে মোড়ে কথা কাটাকাটি করে
মেয়ে পাচার হওয়া সংবাদে
মেতে ওঠে চায়ের দোকান

চোখের সামনে যেটুকু সামান্য আলো
তাও অন্ধকার হয়ে যায়
ছেঁড়া আত্মাটুকু রিফু করতে বসি
ঐশ্বরিক বিশ্বাসের সুতো নষ্ট হয়ে গেলে
কোথায় পাব আর?
বিজ্ঞাপনে দেখি সব তিল তাল হয়ে ঝরে
কোথাও নেই সুসমাচার!

তবুও শহর
গ্রাম থেকে বাবা নদী আনে
মা সেই নদীতে ধরা পড়া মাছ
আমি ও আমার বউ মৎস্যগন্ধা
লুকিয়ে রাখি সমূহ গোপন সংবাদ!

৪. মা

ঝাঁঝালো দুপুরে মায়ের চ্যালাকাঠ যখন পিঠে পড়ত
ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতাম দূরের গাছতলায়।
খিদে হজম হয়ে যেত ,তবু বাঁশের ডালে কাক বসলে ফিরে আসতাম—
ঘরের উঠোনে এসে মায়ের কাছেই বলতাম : কই কী আছে দাও!
থালা-বাসন ছুঁড়ে ফেলে মা বলত, আমাকেই খা!
তারপর শুরু হত বাবাকে গালিপাড়া—
অনেক অনেক রাত অবধি গালি চলত।
কখন রাক্ষস-খোক্কসের পেটে ঘুমিয়ে যেতাম!
মা নিজে-নিজেই মাথায় জল ঢেলে ঠান্ডা হত।
কেমন করে রাতের তারাগুলো মায়ের মাথায়
ঢুকে যেত আর মাথা গরম করে দিত তাই ভাবতাম।

আজ আর মা নেই । কোনও কোনও নিশুতি রাতে
এখনও মনে হয় কেউ জল ঢালছে মাথায়….
বাতাসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাচ্ছে….
মায়ের মৃতগলা স্পষ্ট বেজে উঠছে:
‘এই খোকা ,ঘুমালি ! উঠে আয়,কচুশাক
সেদ্ধ হয়ে গেছে!…’

৫. মা চলে যাবে

বাবা রোজ মাকে ডাকে
মা সেই ডাক শুনতে পায়
ভোররাতে স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠে
আর ঘুম আসে না কিছুতেই তার

মা-ও চলে যাবে—
বাক্সভর্তি পুরনো কাপড়চোপড়গুলি
একে একে বউ-বিটিদের বিলি করে দেয় থালা-বাটি-ঘটি যা ছিল সব ভাগ হয়
শুধু পানের বাটাটি থেকে যায় মা’র

পানের বাটা কে নেবে মা?
—জানি না, জানি না আমি!

আমরা কেউ পান খাওয়া শিখিনি
আমরা কেউ জরদা খাওয়া শিখিনি
মা কথা বললে পান-জরদার গন্ধ পাই এখনও

মা চলে যাবে—
বহুপথ হাঁটা ক্ষয় হওয়া বাবার চপ্পল জোড়া মা দ্যাখে আর বলে, আমিও খালি পায়ে যাব…

আমাদের মাথার ওপর রাত আসছে
রাতের আয়োজন টের পাচ্ছি
বাবা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মায়ের অপেক্ষায়

৬. আমাদের সংসার

বউ আছে, সন্তান আছে, ইটের গাঁথুনি দেওয়া ঘর
উঠোনে পাখি নামে রোজ, পাখিরা সব বৈরাগ্য খেচর
নিরিবিলি ভিক্ষা চাইতে আসে
আমি তাকে ব্যাকরণ পড়াই
মূর্খ রাত, মূর্খ দিন কিছুই বোঝে না
দুঃখ এসে সংসার চালায়।

ঈশ্বরের দোকান থেকে নুন কিনে আনি
আমাদের আলস্য ভেজাভাত
আমরা সবাই অবতার,অমৃতের স্বাদ পাই
দুঃখ এসে হাসে, ওরাও তো মনখারাপের ভাই!

চারিদিকে কাঁথা বুনছে মা
অনেক শীতে আমাদের কাঁপন থামাবে
স্বপ্নে দুলবে সব ইচ্ছার পোষা ময়ূরেরা
বাতাবি লেবুর গাছে রোদ পড়বে
অলৌকিক বিশ্বাসের সোনালি রোদ্দুরেরা…..

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সাদ আব্দুল ওয়ালী on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
নয়ন আহমেদ on ৩টি কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
রাবেয়া আখুঞ্জী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা
সাদ আব্দুল ওয়ালী on লজ্জাবতী ও অন্যান্য কবিতা