spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : আল ইমরান সিদ্দিকী

গুচ্ছ কবিতা : আল ইমরান সিদ্দিকী

ধারা

‘শাওয়ারহেড’ আঁকা সামান্য একটা ছবি
ভালো লেগে গেল—নাম নিয়েছে ‘রেইনফল’।

কত-না ভাঙা ভাঙা স্মৃতি,
খুব ধীরে, আলতো নাড়িয়ে যায়!

দিনমান তাপিত।
রাতে শূন্যে বেজে ওঠে বীণামণ্ডলী।
বিস্মরণ-দূরত্বে কুণ্ডলিত নেবুলা;
টুপটাপ আলো ফুটে থাকে।
বিস্মরণ থেকে স্মরণের পারে
একে একে ঝরতে থাকে:
কমলা সৌন্দর্য,
মলিন কাঞ্চন,
কালো—
আমার নিঃসীমে ছড়ায়—শ্লথ, সাবলীল।

বলিরেখাময়

ধরে নিয়েছিলাম, বৃদ্ধ লোকটি তার তামাটে মুখ ও এক নিরাকার ঈশ্বর ছাড়া আজ আর কিছুই ধারণ করে না। তার যৌবন, তার ফুলের মতো অগ্নিকণা, সেই কবে অগ্নিকণার মতো ফুল হয়ে শেষে আজ ম্লান পাপড়ি মরণের দিকে মুখ করে আছে! এখন দেখি সে বৃদ্ধ, মাধবীলতার দুলতে থাকা ছায়া নিজের টুপিতে ফ্যালে আর বলে ওঠে, ‘মরহুমার কথা মনে পড়ে’।—হয়তো মনে পড়ে নতুন ঘর, দারুনকশা, কারো ভরাট স্তনের ওপর শিশুর কান্না, কান্নার দাগ, দাগে নিজের হাতটি মমতায় বুলিয়ে যাওয়া। আজ সবই তার স্মৃতি; তার আপন মানস জুড়ে শেষহীন ছায়াবাজি।

মেঘ-বৃষ্টির এই দিনে

বৃষ্টির দিনে সমুদ্রে গেলে তুমি:
মেঘগর্জন ঢেউয়ের শব্দ ঢাকে
বাতাসে মত্ত ঝাউভরা বেলাভূমি
সূর্য ডুবলো মেঘের কুম্ভীপাকে।

আমার দুয়ারে ছোট ছোট সাদা ফুল;
সর্বশরীর থরথর করে কাঁপে;
এতদিনে হলো আবহাওয়া অনুকূল
টানা সাত দিন পুড়ে গেছে কড়া তাপে।

সাব-আর্বান-জীবনে কত কী দেখি:
দেখিনি যা-কিছু অনেক দেখার ভিড়ে—
ভেজা ডাল ছেড়ে উড়ে চলে গেলে পাখি
কাঁপলো সে ডাল কিছু-ক্ষণ ধীরে ধীরে।

হারাবার ভয় ঘিরছে আমাকে এত
তোমার মমতা আনছে না সান্ত্বনা
মেঘ-বৃষ্টির এই দিনে অন্তত
বোঝা গেল আর কমবে না যন্ত্রণা!

তোমাকে পূর্ণরূপে আমি পেতে চাই
সান্ত্বনা কিছু হয়তো থাকবে তাতে;
কত যে চড়াই আর কত উৎরাই
সময় ছেয়েছে ঘাতে আর অভিঘাতে।

ঢেউ

শরীরের অন্ধকার শরীরকে কতদূর প্রসারিত করে?

সমুদ্র শান্ত, সমুদ্র অস্থির।
সোনার সূর্য আর লাল সূর্য
উঠে আসে আর ডুবে যায় ।

কে জানে, কীভাবে শুরু করতে হয় মৌলিক যাত্রা;
সমুদ্রের কাছে এসে
নিজ অনুভূতিকে চিহ্নিত করা,
শরীরকে নিরীক্ষায় টেনে আনা!
আড়ি পেতে রক্তের ঢেউ শুনি;
রক্ত কতকিছু অভ্যাস করে।
অন্ধকারে দেখেছি,
দেখেছি ভোরে সমুদ্রের ঢেউগুলোকে—
ফেটে ফেটে পড়ার আগে-পরে
তারা বহুভাবে বহুবহু ধ্যানভঙ্গিমা গঠন করে!

চোখ
মা আমার, এই দেশে একবার তুমি এসো
বাবাকে নিয়ে
অসংখ্য চেরির ফাঁক দিয়ে
একবার সূর্যোদয় দেখো;

দেখো:
কীভাবে দুপুরে একজন গর্ভবতী ডেফোডিলের সামনে শুয়ে হাসে।
কীভাবে ঝুলন্ত পাখির বাসায় এক কাঠবেড়ালি নিশ্চুপ বসে থাকে।
কীভাবে বালক শিলমাছ একা একা শুয়ে থাকে বালির ওপরে ।

তোমাদের কোনোদিন দেখা হলো না সমুদ্র ও পর্বতমালা!

তোমাদের কথা মনে হলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে
বলো না আমিই তোমাদের চোখ বিশাল দুনিয়াজুড়ে।

আল ইমরান সিদ্দিকী
জন্ম: ০২ অক্টোবর, ১৯৮৩ ইং, নীলফামারি। বর্তমান নিবাস: নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পেশা: ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট।

প্রকাশিত কবিতার বই: কাঠঠোকরার ঘরদোর(২০১৫, চৈতন্য), ধুপছায়াকাল (২০১৮, মেঘ), গোধূলির প্যানোরামা (২০২০, বৈভব), অচির অরোরা (২০২৩, বাতিঘর)।
সম্পাদনা: ওয়েবম্যাগ ‘নকটার্ন’ (যৌথ)।

যোগাযোগ: imran831002@gmail.com, +16096061184

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. কবিতায় প্রবাস যাপন কিংবা প্রবাস প্রকৃতির ছাপ আছে। চেরি ফাঁক দিয়ে গর্ভবতী ডেফোডিল সে ছাপেরই দৃশ্যকল্প।কবিতার বক্তব্য সাবলীল।ভালো লাগছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ