শান্তা মারিয়া
ভারতের সাহিত্য অঙ্গনে আমার প্রচুর বন্ধুবান্ধব আছেন। তাদের জন্যই এই লেখা। আপনাদের জানাচ্ছি প্রকৃত ঘটনা কি।
সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আদেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। সরাসরি নিরস্ত্র জনতার উপর গুলি চালানো হয়। গুলিতে নিহতদের মধ্যে শিশু, কিশোর, তরুণ আছেন অনেক। এর প্রতিবাদে ছাত্রদের পাশে রাজপথে নেমে আসেন অভিভাবক ও সর্বশ্রেণীর মানুষ। গণজোয়ারে ভয় পেয়ে পদত্যাগ করে পালিয়ে যায় স্বৈরাচারী হাসিনা এবং তার মন্ত্রীসভার অনেকে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। হাসিনার নির্যাতনের একের পর এক ভয়ংকর সত্য সামনে আসে। “আয়না ঘর” নামের গুমঘরে দশ বারো বছর ধরে মানুষকে গুম করে রাখা, হত্যা, নির্যাতন, ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনা প্রকাশিত হয়।
এরমধ্যে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী ও উটকো লোক আর বেশিরভাগই ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুন্ডারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য শুরু করে কয়েক জায়গায় ভাস্কর্য ভাঙা। এরপর শুরু হয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামীলীগের অন্য নাটক। তারা বলতে থাকে সব জায়গায় ডাকাত পড়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে আগুন দেয়া হচ্ছে। এইসব ঘটনার বেশিরভাগ নেহাত গুজব, আর কয়েকটি ঘটনার কুশীলব পরাজিত স্বৈরাচার। দেশের ভিতর থেকে স্বৈরাচারের দোসররা গুজব ছড়ায়, তারসঙ্গে যুক্ত হয় কিছু ভারতীয় মিডিয়ার ভুয়া নিউজ।
বুঝলেন তো–এই হলো প্রকৃত ঘটনা। এখন আমার ভারতীয় বন্ধুদের প্রতি আরো কিছু কথা বলতে চাই।
ভারতের রাজনীতি, বিভিন্ন দল ও উপদল, সমস্যা সম্ভাবনা যা আছে সেসব বিষয় একান্তই ভারতের নিজস্ব। ভারতের কাশ্মীর, মনিপুরে কি সমস্যা সেটা আপনারাই ভালো জানেন। ভারতে ও পাকিস্তানে কোন দল ক্ষমতায় আসবে না আসবে, আপনারা কাকে জাতির পিতা বলবেন, সেটা আপনাদের বিষয়। আপনারা আপনাদের জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙবেন না গড়বেন সেটাও আপনাদের।
একইভাবে আমাদের দেশে আমরা কাকে স্বৈরাচার বলবো আর কাকে আব্বা ডাকবো সেটা আমাদের বিষয়। কার ভাস্কর্য আমরা গড়বো, আর কারটা ভাঙবো সেটাও আমাদের। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এত টেনশন কেন আপনাদের?
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আপনারা নাক না গলালে ভালো হয়।
কোন কোন ভারতীয় বন্ধু হুমকি দিচ্ছেন কলকাতার বইমেলায় বাংলাদেশের স্টল থাকবে না। কেউ কেউ হুমকি দিচ্ছেন আপনাদের কোন সাহিত্য অনুষ্ঠানে আমরা নিমন্ত্রণ পাবো না।
আপনাদের জানিয়ে রাখছি এতে বাংলাদেশের প্রকৃত ভালো লেখক কবিদের কিছুই আসে যায় না। যারা তৃতীয় শ্রেণীর ও দালাল শ্রেণীর কবি লেখক তারাই আপনাদের নিমন্ত্রণের জন্য লালায়িত থাকেন।
কলকাতার পিঠ চাপড়ানি না পেলেও বাংলাদেশের সাহিত্য টিকে থাকবে এগিয়েও যাবে। আমি মনে করি দুইবাংলার যে ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত বন্ধুত্ব আছে সেটা ধরে রাখুন, তাতে আমাদের সকলেরই সামগ্রিক মঙ্গল।
আরেকটি বিষয় জানিয়ে রাখি, এদেশে সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের রক্ষা করার দায়িত্ব বাংলাদেশেরই। আপনাদের বলছি আমরা সকলেই ভালো আছি। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা রাত জেগে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলেই বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের জন্য আমাদের সরকারই যথেষ্ট।
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জন্য আপনাদের সব আবেগ ভালোবাসা আপাতত বাক্সে বন্দী করুন, নাহলে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভালোবাসা হারাবেন।
আপনারা ভালো থাকুন। আমাদেরও ভালো থাকতে দিন। নিজের চরকায় তেল দিন। বাংলাসাহিত্যের ঐক্যের জন্য কাজ করুন।
২.
নতুন গৌরবে বাংলাদেশ
……….
অনেক আম্মিলীগ-সুশীল হাহাকার করছেন দেশে নাকি অরাজকতা, লুটপাট হচ্ছে। যখন মুগ্ধ, শান্তরা গুলি খেয়ে মরেছে তখন কিন্তু তারা হাহাকার করেননি। আর এখন এটা তো পরিষ্কার যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ইমেজ নষ্ট করার জন্য আম্মিলীগ, গুন্ডালীগ, লুটেরা লীগ জনতার সঙ্গে মিশে লুটপাট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এজন্য বলছি সবাই সতর্ক থাকুন। আর গুজব ছড়াবেন না। আম্মি-সুশীলরা এমন ভাব করছেন যেন দেশ একেবারে রসাতলে গেছে। এটা ঠিক যারা দালাল হিসেবে সুবিধা নিয়েছিলেন তাদের ভাত মারা গেছে। তবে বাংলাদেশ রসাতলে যায়নি। ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারকে হঠিয়েছে। দেশও গঠন করতে পারবে। আর পতিত স্বৈরাচারের জন্য কাঁদবেন না নিজের ঘি পোলাও কম পড়বে বলে কাঁদবেন সেটা আপনার বিষয়। এখন সময় এসেছে প্রতিটি আম্মি-দালালের অবৈধ সম্পদের হিসাব বের করার। তাদের বিচারের আওতায় আনার। ব্যক্তিগত রিভেঞ্জ না নিলেও চলবে। দেশকে আম্মি-দালাল মুক্ত করুন। আরেকটি বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত মায়াকান্না করবেন না। আম্মিলিগ মুক্তিযুদ্ধে ইজারাদারও নয়, সোল এজেন্টও নয়। মুক্তিযুদ্ধ সকলের। গণমানুষের। বাংলাদেশের সকল নাগরিকই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। এখানে বিপক্ষ বলে কিছু নেই। স্বাধীনতার এত বছর পর আর জাতির মধ্যে কোন বিভাজন রেখা টানার কথা চিন্তাও করবেন না। সকল মানুষ, বাংলাদেশের সকল নাগরিক এক হয়ে দেশ গঠন করুন। কে বাঙালি কে পাহাড়ি, কে মারমা, কে সাওতাল, কে হিন্দু কে মুসলমান এসব বিভাজন ছাড়ুন। সবাই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। বিশ্বের বুকে নতুন গৌরবে জাগুক বাংলাদেশ।
৩.
জাতীয় দুশমন সাংবাদিক কারা
………..
আজকাল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতে ঘৃণা ও লজ্জা হয়। এর কারণ সাংবাদিকতা পেশায় এত বেশি দালাল ও দুর্নীতিবাজ অমানুষ রয়েছে যে এই পেশা সম্পর্কে মানুষের ঘৃণা রয়েছে। আজ ৫১ সাংবাদিককে জাতীয় দুশমন ঘোষণা করে তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
প্রেসক্লাবে গিয়েই এই তালিকাটা দেখলাম। চলুন দেখে নেই কারা এই দালাল ও জাতীয় দুশমন সাংবাদিক। প্রথমেই রয়েছে প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন এবং সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের নাম। আরও আছে প্রেসক্লাবের সদস্য প্রভাষ আমিন, জায়েদুল আহসান পিন্টু (ছাত্রদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মিথ্যাচার করেছে), মোজাম্মেল বাবু, আশীষ সৈকত, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সোহেল হায়দার চৌধুরী, ফারজানা রুপা, আরিফ জেবতিক, অশোক চৌধুরী, শাহজান সরদার, সুভাষ সিংহ রায়, আজমল হক হেলাল, আবুল খায়ের, মঞ্জুরুল ইসলাম (ডিবিসি), প্রণব সাহা (ডিবিসি), নঈম নিজাম (বাংলাদেশ প্রতিদিন), খায়রুল আলম (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ও ডিইউজে নেতা), সাইফুল আলম (যুগান্তর), আবেদ খান, সুভাষ চন্দ্র বাদল, জ.ই মামুন, জাফর ওয়াজেদ (পিআইবি), শাহনাজ সিদ্দিকী (বিএসএস)।
তালিকায় আরও নাম রয়েছে, সাইফুল ইসলাম কল্লোল (বিএসএস), পাভেল রহমান, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সৈয়দ বোরহান কবির, শাবান মাহমুদ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মোল্লা আমজাদ হোসেন, শফিকুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, মামুন আবদুল্লাহ (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিডি), সোমা ইসলাম (চ্যানেল আই), শ্যামল সরকার (ইত্তেফাক), অজয় দাশগুপ্ত (সমকাল), আলমগীর হোসেন (সমকাল), শাকিল আহমেদ (৭১ টিভি), রামা প্রসাদ (সমকাল), সঞ্জয় সাহা পিয়াল (সমকাল), ফরাজী আজমল (ইত্তেফাক), আনিসুর রহমান (বিএসএস), স্বপন বসু (বিএসএস), হাসান জাবেদ (এনটিভি), মিথিলা ফারজানা (৭১ টিভি), শবনম আজিম (৭১ টিভি), এনামুল হক চৌধুরী, দিপক কুমার আচার্য ও নাঈমুল ইসলাম খানের।
আমার কথা হলো এই দালাল ও দুশমনদের অবিলম্বে প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করা উচিত। এরা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে দালালি ও দুর্নীতি করে। এরা পতিত স্বৈরাচারের দোসর। এদের দায় আমরা সাধারণ সাংবাদিকরা কেন নেব? এদের কেন আমরা ‘অওন’ করতে যাবো?
আমি গেল ৩০ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি। গত ১৫ বছরে যত দালাল, বদমাশ সাংবাদিক দেখেছি এত আগে কল্পনাও করিনি, চিন্তাও করিনি।
দিনের পর দিন বিনা বেতনে, অর্ধ বেতনে কাজ করতে হয়েছে। অথচ এই দুর্নীতিবাজ দালালগুলো গাড়ি বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট সবকিছুর মালিক হয়েছে।
প্রেসক্লাবের একজন পুরনো সদস্য হিসেবে এবং একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি এদের বহিষ্কারের দাবী জানাই। শুধু তাই নয়, এদের প্রত্যেকের অবৈধ সম্পদের হিসাব প্রকাশ করে এদের আইনের আওতায় আনারও দাবী জানাচ্ছি। এইসব সুবিধাভোগী দুর্বৃত্ত সাংবাদিকের জন্য পুরো সাংবাদিক সমাজের বদনাম হচ্ছে। পুরো পেশা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এদের বিচার চাই।