………………
জল-সন্ত্রাস
জাকির আবু জাফর
………………
দেখেই চিনেছি পানি নও, তুমি জল
তোড়জোড়ে প্রতিশোধের ভয়ংকর উন্মাদনা
ডম্বুর গেট উদম করে নৃত্য করছো আমাদের সাধাসিধে সরল জনপদে
কি চাও অহিংস নেতার বিদ্বেষি ঢেউ!
আমাদের বৃক্ষরাজি শেকড়ে দাঁড়াক–
কখনো চাওনি তুমি
আমাদের রৌদ্রছায়ায় থাকুক ঐতিহ্যের ঘ্রাণ–
চাওনি এটিও
জাতি হোক আত্মবোধে উজ্জীবিত
হোক স্বাধীনতায় সমুন্নত শির–
তুমি চাওনি কোনোদিন
ইতিহাসের কথা কি আর বলবো–
সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতেই তোমার যত ভয়
অথচ সত্য ছাড়া আর কিছুই গ্রহণের অঙ্গীকার নেই আমাদের
তাই জলেও জ্বলছে দেখো ক্ষোভের আগুন!
তুমি তো জল-সন্ত্রাস
আমাদের গ্রামগুলোর নিশ্বাস ডুবিয়ে রেখেছো
আমাদের সাধারণের দৈনন্দিন জীবন বন্দী করেছো
তলিয়েছো আমাদের ফসলি সবুজ
দেখোনি আমাদের গ্রামগুলো কী ভদ্র নিরীহ!
এ নিরীহ বুকের ভেতর কেমন দ্রোহের আগুন
ঝাঁ দাউদাউ দুরন্ত দহন, এখনো বোঝোনি বুঝি!
এইতো মাত্র কদিন– রাজপথে জ্বলজ্বলন্ত হলো মহাকাব্যিক অভ্যুত্থান বারুদ
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কীভাবে উড়ে এলো আমাদের বিপ্লবের পাখিরা
কীভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে রাজপথ কাঁপিয়ে এলো বিস্ময় আবাবিল
একবার জ্বলে উঠলেই রক্তলিপ্সু ডাইনিকেও খোঁপা ছেড়ে পালাতে হয়
লাগেজ ভর্তি করে নিতে হয়– জিঘাংসা নৃশংসতা অবিচার ও অন্যায়ের বাকল
শয়তানের শিং আর আমাদের বিবেচ্য নয়
আজাজিলের পাছায় থাপ্পড় মারার
কওয়ত ও কৌশল বীরত্ব দিয়েছে আমাদের!
আমাদের তারুণ্য এখন পৃথিবীর নতুন মিছিল,
জগতের তাবত স্বৈরাচারীর কানে স্লোগান– বাংলাদেশ, বাংলাদেশ!
এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে কাতর এখন উপমহাদেশ
এই বুঝি মসনদে আঁকা হবে তারুণ্যের তুফান
আমাদের নিরীহ জনপদের ঠাঁইটুকু ডুবতেই পারে
কিন্তু ন্যায় ও স্বাধীনতার পক্ষে তাক করা আমাদের হৃদয় ডুববে না কোনোদিন !
………………
নয়ন আহমেদ
ভারত, তোমাকে
……………….
তুমি এবার বিদায় হও
আমার শিল্পকলা থেকে —
ছলাকলার ছল থেকে
আর্তনাদ আর ব্যথা থেকে
আমার এই রাস্তা থেকে
দুয়ার থেকে
এই বাড়িটার দরজাঘেরা বাতাস থেকে
নকশাকরা আকাশ থেকে
এবার বিদায় হও—
তুমি এবার বিদায় হও।
আমার ভাবনা আমি ভাবি
বেলনা বেলি
দিন বা রাতে;
পান্তাভাতে ঘি—
তোমার তাতে কী!
তুমি এবার বিদায় হও।
তুমি এবার বিদায় হও।
নাক গলানো বন্ধ করো;
নিজের নাকটা সামলে ধরো—
বোনকে নিয়ে
সবুজ সবুজ;
আমার বাড়ির হৃদয়ভরা
চোখের দিকে আর চেয়ো না!
এবার বিদায় হও।
তুমি এবার বিদায় হও।
তুমি এবার বিদায় হও
আমার দুঃখের আংটা থেকে —
কষ্টগুলোর কষ থেকে
শোক আর সুখের শেকড় থেকে
রঙধনুকের কৌটো থেকে
ব্যথিত এই ব্যাপ্তি থেকে
ধুলোয়ভরা স্বস্তি থেকে
দোয়েল দোয়েল শান্তি থেকে;
তুমি এবার বিদায় হও —
তুমি এবার বিদায় হও।
ভারতঘেঁষা রাশিরাশি হেই চেতনা,
এবার বিদায় হও —
তুমি এবার বিদায় হও।
২৬ আগস্ট ২০২৪
…………………
নিখোঁজ কাকের অকবিতা
তাজ ইসলাম
…………………
প্রতিদিন ভোরে টিভি চ্যানেল থেকে বের হত একটি কাক
চৌচালা ঘরের টুইয়ে বসে
অবিরাম ডাকত কা কা কা
সোশ্যাল মিডিয়ায়,অনলাইন প্লাটফর্মে, নিউজ পোর্টালের ডালপালা থেকে
পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে যেত একটি কাক।
কাপড় শুকানোর দড়িতে বসে সে কাক
অবিরাম ডেকে যেত কা কা কা।
দুপুরের ভাতঘুম ভাঙার বিরক্তি নিয়েই বলে উঠতেন তিনি ” মরার কাউয়া শুধু কা কা, কা কা করে।
দৈনিকের পাতার হেডলাইন থেকে উড়ে এসে একটি কাক
টেবিলের কাছে বসে ডাকত কা কা কা।
মাঝরাতে অনলাইনে বুদ হয়ে থাকা যুবক
তার ঘুম গিলে খাওয়া মোবাইল থেকে হুট করে বেরিয়ে একটি কাক
ডেকে যেত স্বভাব সুলভ স্বরে বেসুরো গলায় কা কা কা
সে কাকটি এখন নিখোঁজ
কেউ জানে না কোথায় আছে কাকটি
বিমর্ষ পথিকের মতো
ইলেক্ট্রিসিটির খাড়া খাম্বাটা
কাকটিকে খুব মিস করে।
কাকটি তার চারপাশেও তারস্বরে চিৎকার করত কা কা কা।
তখন বিরক্ত হলেও এখন খুব মিস করে।
কাকটিকে ধরে, খাঁচায় ভরে
গলির মুখে রেখে দিলে সেই খাঁচা
হাঁটতে হাঁটতে পথিকের শোনা হত
কাকটি ডাকছে কা কা কা কা ।
দারুণ আয়োজন
এ অসাধারণ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
দারুণ তিনটি কবিতা
আয়োজনটি ভালো লেগেছে খুব। ধন্যবাদ জানাই প্রিয় কবি সাজ্জাদ বিপ্লব