spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার 'বাংলা রিভিউ' : পর্ব--৯

লিখেছেন : মাহমুদ নোমান

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার ‘বাংলা রিভিউ’ : পর্ব–৯


| মাহমুদ নোমান |

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পরে ঘটে যাওয়া স্বাধীনচেতা মনোভাবে কয়েকটি পক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অন্যান্য সেক্টরের কথা না-বলে বলতে চাচ্ছি শুধু লেখকসমাজের কথা–- এতোদিন যাঁরা বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে চলেছিল তাঁদের অদ্ভুত রকম খোলস পাল্টানো দেখে হতচকিত, তাঁদের দক্ষতা চমৎকার; যেমন আগে বিপরীত মত ও পথকে আটকানোর জন্য ট্যাগ দিত রাজাকার, রাজাকারের বাচ্চা অথবা জামায়াত বলে আর এখন কিছু বললে লীগ! তদুপরি এখন জামায়াত কিংবা রাজাকার বললে কী খুশির উপচানো ঠেলা মুখাবয়বে! অথচ গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে বৈষম্য দূর করতে, পরমতসহিষ্ণুতা আনয়ন করার আন্দোলন ছিল; আমি মনে করি যে সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁরা ভুল দেখিয়ে দেবে সবার আগে,যখন ভুল দেখিয়ে দিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হয়, সেটিই বৈষম্য অর্থ্যাৎ আওয়ামী সরকারের সময় তাঁদেরকে জি হুজুর জি হুজুর করে চলতে হতো আর এখনও তেমন,কিছু বললে লীগ,দালাল! আমি নিশ্চিত মনে করি একজন কবি কোনো দলের নয়, মানুষের কল্যাণে সহায়তা করতে পারেন তাই বলে বিক্রি হয় না,এখানেই প্রকৃত কবির সাথে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী সমর্থিত তেলালি লেখকরা সরকার কর্তৃক পুরস্কার পেয়েছে আর এখনকার সরকারের সমর্থিত লেখকরাই পাবেন এসব নিশ্চিত বলা যায়, নাকি উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারবে এমন হিম্মত আছে?
এক শব্দে বললে– নেই, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে যখন বিশেষ বস্ত্রে পাট ক্ষেতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়! সম্প্রতি লেখকদের দৌড়ঝাঁপের দারুণ গতি দেখে তাজ্জব বনে গেছি। সংঘবদ্ধ পকেটমারের কথা মনে পড়ে – পকেটমার একজন থাকে না, পকেটমারের সাথে সহযোগী থাকে, এরা পকেটমারের পিছনে ধর ধর করে চিল্লায়ে পকেট কেটে যাওয়া লোককে নিরাপদে নিয়ে যায়, নিজেদেরও সুরক্ষিত রাখে এভাবে। এখন বেশিরভাগ লেখকই অন্যের গায়ে পড়ে ট্যাগ দিতে এগিয়ে আসছে নিজেদের হীনমন্যতা আড়াল করতে; তারা জানেই না প্রকৃত কবি কোনও নির্দিষ্ট দলের নয়, কেননা মানুষ মাত্রই ভুল করবে আর যারা নিজেদেরকে ভুলের উর্ধ্বে বলে তারা নিশ্চিত শয়তান! যেসব কবি অন্যকে ট্যাগ দিয়ে ফায়দা লুটে তাদের লেখাই তো হয় না দিনশেষে কয়েকটা নামেমাত্র পুরস্কার পাওয়া ছাড়া কিন্তু সাহিত্য সমাজ বিনষ্ট করে; সাহিত্য সমাজের বাইরের লোকেদের কাছে লেখকদের মান- ইজ্জত ধুলায় মিশিয়ে দেয়…

এদেশের এমন কালচার কোনও পক্ষাবলম্বন না-করে চলা দুরূহ ব্যাপার একজন কবির জন্য; কেননা সব পক্ষই সন্দেহ করে, চাপায় পড়ে তবে আশার কথা এই চিপায় যন্ত্রণায় লেখাটা হয়ে উঠে। সে জীবন বড়ই বেদনাময়,কাঁটায় কাঁটায় ভরা…

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গণ-অভ্যুত্থানের সময়ের আর্তি যেকোনও বিবেকবান লেখককে জাগিয়ে তুলেছে। এখানে কাউকে হটিয়ে দিয়ে কৃতিত্ব নিয়ে কর্তৃত্ব নেওয়ার কিছু নেই বরঞ্চ ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়ে নতুন আগামী সুন্দর করতে তৎপর হওয়া সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে ‘বাংলা রিভিউ’ এর আয়োজনে ১৬আগস্ট ‘ আবু সাঈদের বুক ও অন্যান্য’ শিরোনামে প্রকাশিত কবি এনামূল হক পলাশের কবিতাটি উল্লেখযোগ্য; কেমন নম্রতায় গভীর বোধের আলো ঝেড়েছেন কবিতাটিতে, বিগত দিনের সব অপারগতা অপরাধ স্বীকারও করেছেন, এমন কবির কবিতা মঙ্গলজনক সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য —
আবু সাঈদ,
তোমার চিতিয়ে রাখা বুকই আমার বুক।
ক্ষমা করে দিও ভাই আমার
ক্ষমা করে দিও পুত্র আমার
তোমার কবরে আমি সহযাত্রী হতে পারিনি।
– আবু সাঈদের বুক;এনামূল হক পলাশ)

‘আবু সাঈদের বুক ও অন্যান্য কবিতা’ শিরোনামে আরও লিখেছেন কবি রাজা আবুল কালাম আজাদ ও আকিব শিকদার। কবি রাজা আবুল কালাম আজাদের কবিতাটি একটু ব্যতিক্রমে লালের বৃত্তান্ত খোলাসা করেছেন রিদ্মিক চলনে সত্য উঁচিয়ে ধরে, ভেঙে দিয়েছেন অযথা অতি ভাবের দেয়াল, সহজে হৃদয়ে পশে যাওয়া ছিল উদ্দেশ্য–

লালের নেশায় নিলাম ছুটি,
আমরা ক’ভাই পিঠাপিঠি!
– লাল দিয়েই লিখো মহাকাল; রাজা আবুল কালাম আজাদ)

‘আবু সাঈদের বুক ও অন্যান্য কবিতা’ শিরোনামে শেষ কবিতাটি কবি আকিব শিকদারের ‘একজন কেউ ছিল’… গীতল ভাষার সুষম বণ্টনে যাঁর যাঁর সামর্থের সবটুকু দিয়ে প্রতিটি মুক্তির সংগ্রাম শেষে কারও কারও খোঁজ থাকে না, কেউ খোঁজ নেয় না এমন অনেকে আছে, যাঁরা নিজেকে জাহির করতে পারেন না; কবিতাটিতে যে অভিমান টোকা দিতেই পারে আপনার বোধের খেয়ালে–

হারিয়ে গেল, ছায়ার মতো যে জন ছিল সাথে
মিছিল শেষে ঘরে ফেরা অজুত জনতার স্রোতে।
–একজন কেউ ছিল;আকিব শিকদার)

০২.
মুক্তিকামী মানুষের মুখপত্র ‘বাংলা রিভিউ’ ১৯আগস্ট প্রকাশ করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ‘পালাও পালাও এবং অন্যান্য কবিতা’ শিরোনামে সমৃদ্ধ তিন কবির কবিতা। লিখেছেন কবি মাহবুব হাসান, শাহীন রেজা ও শান্তা মারিয়া। প্রত্যেকে নিজ কবিতার গুণে উল্লেখযোগ্য কবি; বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে কবি শাহীন রেজা বেশ দাপটের সাথে কাব্য সংসার সামলিয়েছেন। বেশ কয়েকটি কবিতা পেয়েছি এই আন্দোলনকে উপলক্ষ করে। ১৯শে আগস্ট “বাংলা রিভিউ’তে প্রকাশিত শাহীন রেজার কবিতাটি মুগ্ধ’ এর শহীদ হওয়া নিয়ে আন্তরিক স্মৃতিচারণের মহড়ায় হৃদয় স্পন্দিত করা পরিবেশ সৃজিত করেছেন–
আমার নানী মৃত্যু পর্যন্ত বিরত ছিলেন পাকা পেঁপে খাওয়া থেকে–
আমিও কি দূরে থাকব পানি পান থেকে ;

আমৃত্যু, আর অন্ধকারে আঁকতে থাকব ঘাতকের নাম নিঃসীম ঘৃণায়।
– মুগ্ধ’র জন্য এলিজি;শাহীন রেজা)

‘পালাও পালাও এবং অন্যান্য কবিতা’ শিরোনামের কবিতাটি লিখেছেন কবি মাহবুব হাসান। বক্তব্যের দৃঢ়তার মধ্যে শাণিত বোধের অভূতপূর্ব সম্মিলন যেন, স্বৈরাচারীর নিপীড়ন আর পলায়ন এক সূতোয় গেঁথে দিয়েছেন চমৎকৃত ভাষার সুষম বণ্টনে —

তুমি গণবিচ্ছিন্ন
কায়দা-কানুন আর রীতির বেড়া ভেঙে
ক্ষেতের ফসল তছনছ করে
মত্ত হস্তিনী তুমি ছিলে আমাদের,
জনসমুদ্রের বিপরীতে তুলেছো দেয়াল পুলিশের,
লেলিয়ে দিয়েছো সন্ত্রাস হেলমেটে পুরে ছাত্রলীগের শির,
দিয়েছো হুংকার অপত্য স্নেহের রঙে গড়ে তোলা পিতৃভূমি,
এই গাছপালা সবুজ ধানচারা, রাখালের বাঁশি,
দক্ষিণের দৈত্য-দানোর রাঙানো চিৎকার
ফুৎকারে উড়ে যায় সুনামির তোড়ে—
পালাও পালাও তুমি
– পালাও পালাও ; মাহবুব হাসান)

‘পালাও পালাও এবং অন্যান্য কবিতা’ শিরোনামের শেষ কবিতাটি লিখেছেন কবি শান্তা মারিয়া। স্বভাবতই সহজ সুন্দর সরল বয়ানে ভাবিত কল্পজগত বলে দিতে পারে শান্তা মারিয়ার কবিতা। শব্দ নিয়ে টানাহেঁচড়ার কোনও বাতিক নেই, শব্দের ভেতর থেকে স্পন্দমান বোধ তুলে দেন গাম্ভীর্যে —
তোমরা অনিঃশেষ
মানচিত্র ধরে রাখা তোমরাই
মৃত্যুঞ্জয়ী বাংলাদেশ ।
— রক্তের নকশিকাঁথা বাংলার মাটি; শান্তা মারিয়া)

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

কাজী জহিরুল ইসলাম on কাজী জহিরুল ইসলাম এর কবিতা
এড. শাহানারা স্বপ্না on লেট ফ্যাসিজম
Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প
নয়ন আহমেদ on যুদ্ধশিল্প