………..
জাতীয় পশু
………..
শরণখোলায় প্রায়ই বাঘ আসতো; মেয়েটার মনে আছে ঘাড়মটকে নিয়ে যেত ছাগল
যৌবনে চিড়িয়াখানায়
হাড্ডিসার বাঘ;নিস্তেজ চোখ; কোথাও কোনো ক্রোধ নেই …
বার্ধক্যে বাঘ নেই। বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর মাংস
এখন মেয়েটার মনে হয়: জাতীয় পশু মানুষ!
…………
ঘাসের ঘটনা
…………
আমরা ঘাস দেখি না;
যতটা নিবিড়ভাবে দেখে
গবাদিপশু
ঘাসে কী ফুল ফোটে
তাও জানা নেই!
শুধু চিনি ঘাসের বিছানা
অথচ আমাদের সম্পর্কের
গাঢ়চিহ্ন–
স্মৃতি হয়ে ফোটে
ঘাসফুল!
………..
হস্তমুদ্রা
………..
দেখা হয়েছিল জঙ্গলে
আমার কলার প্রতি ঝোঁক দেখে
সম্পর্কটা ভালোবাসায় গড়ায়
আমি চতুর প্রেমিক
ওকে নিয়ে পালিয়ে আসি শহরে;
জায়গা করে নিই সার্কাসে
রাতের মঞ্চ, হাততালির চেয়েও
আমার মোহ পিচ পথে
আমি ওকে বোঝাই খেলার চেয়ে অর্থ বড়
ও তাই
নাককে হস্তমুদ্রা বানিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে!
…………..
সাদা জামা
…………..
ফিনফিনে সাদা জামা
বাতাস গায়ে লাগতেই
সোনালি রোদে পরী উড়তে থাকে
হঠাৎ তুমি নগ্ন হয়ে পরী দেখছো;
নিজেকে কেমন অচেনা লাগে
আর রাস্তায় ভিড় জমে যাচ্ছে
……………
লিভটুগেদার
……………
ডায়াশেসন কলেজের ঘাসে এখনো ফরেস্টারের মেয়ে শোভনার কানের দুল পড়ে আছে!
বোবা ল্যাবএসিস্ট্যান্ট চিৎকার করেও
বিরত করতে পারেনি
আমার কামনায় রক্তিম কবির ঠোঁটকে
গাঢ় চুম্বনের চিহ্ন ল্যাবের আয়নায় আটকে গেছে
ডিব্রুগড়ে বদ্ধঘরে
উড়ে বেড়াত কবিতার ভ্রমর
আমি তার ছায়াসঙ্গী
আমার ভেতর বেকার কবির বসবাস
বয়স তখন তেত্রিশ
অন্ধ দারোয়ানের হাতে স্লিপ পাঠিয়ে
কামিনীগাছের নিচে বিমূঢ় রক্তের উত্তেজনায়
চিতার মতো অস্থির হয়ে উঠতাম আমি আর কবি
কখন শোভনা বাঘিনীর মতো নেমে আসবে…
ফরেস্টার বাবা শিকারে চলে গেলে
পাঠ্যপুস্তকের অনুমতিবিহীন অন্ধকারে
আমি,কবি ও শোভনা খুঁজে ফিরতাম ঘাইহরিণীর ডাক
তখন শোভনা ও কবি বর্তমান
আমি কেবলই পাঠকের ছায়া…
বাস্তবে কবির মৃত্যু হলেও পাঠকের ছায়া জেগে ওঠে
………….
পুরুষবৃক্ষ
…………..
আমাদের সম্পর্কের মধ্যে
গন্ধের ভূমিকা ক্রমশ গভীর হয়ে ওঠে
অফুরন্ত সৌরভে ভরা আমাদের নিঃশ্বাস
ভালোবাসার গভীরে হৃদয়ের স্পন্দন
অনুভব করতে গিয়ে আমি কখনো
বেলি কখনো কামিনী কি হাসনুহানার
গন্ধ পেতাম
আর আমাকে জড়িয়ে ধরে
তুমি বলতে চন্দন!
চন্দনের বাইরে তুমি এই নির্জলা দেহে
অন্য কোনো গন্ধ পাওনি!
গন্ধের মাদকতায় তুমি এতোই মুগ্ধ;
আমার বুক পুড়িয়ে দিতেও দ্বিধা করোনি
বিহ্বল আমার চন্দনকাঠের দেহ;
আমি বেদনার অগ্নিতে
গন্ধ পুড়িয়ে বুঝে যাই
পৃথিবীতে চন্দনই একমাত্র পুরুষবৃক্ষ
…………….
প্রেমবৃক্ষের গন্ধ
…………….
ঘরের কাছেই কামিনী
সৌরভে ব্যাকুল কাটে সন্ধ্যাযামিনী
গন্ধ বুঝতে বুঝতে মন
কামিনী এসেই বলে চলো চন্দন
আফটার সেভনটিফাইভ ব্লাকনভেম্বর
মাসুদুল হক
জেলের স্মৃতিগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক ধূলো
হয়ে যাওয়ার আগে তাজের আঙুল
ছিটকে পড়ে যায় ইতিহাসের পৃষ্ঠায়
সেই থেকে নৌকা বসে পড়ে ডাঙায়
অভ্যুত্থানের মাথায় খন্দকারের স্বাক্ষর
ধানশালিকের পায়ের ছাপ হয়ে উঠলে
নকশীকাথা সেলাই করা রাজনীতির সূচ
গণফোড়াই করতে থাকে ধানের গুদামে
…………….
মন খারাপ করবো
…………….
ভাবছিলাম মন খারাপ করবো জীবনের ওপর
জীবন কেন একটা বাজার হলো?
টাকায় কেনা স্বপ্নগুলো!
হতে পারতো একটা নদী
স্রোত নিয়ে ছুটতো যদি
হতে পারতো ঝর্না
পাহাড়ি নারী
কোথা থেকে আসে
কোথায় যায়
কিছুই যদি বোঝা না যেত
শুধু দৃশ্যের মতো হতো!
কিন্তু জীবন তো বাজার
টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে সবই
আচ্ছা টাকার অসুখ হয় না?
মন খারাপ লাগে না!
বলতে পারে না: “আমি কারো সঙ্গে যাব না
মানুষগুলো তোমরা একদম প্রাকৃত হয়ে ওঠো
একদম আদিম সমাজ”!
সেটাও তো আবার সংগ্রহ নির্ভর জীবন
শিকার আর ভয়!
ভাবছিলাম মন খারাপ করবো
কেন পৃথিবীতে অর্থনীতিবিদের জন্ম হয়!
………….
আর্টফর্ম
………….
গণমানুষের নিয়তিকে পরিহাসের মুখে সেলাই করে
তিনি চলে যেতেন মুখোশ বানানোর কারখানায়।
লাল ইটের জমিনে চক্রবুহ্!
তিনি লেকে ফেলতেন পুঁটির ছিপ
আমরা মন্ত্রমুগ্ধ; প্যাথলজিক্যাল লায়ারে
বিমোহিত নয়নে দেখতাম–
উঠে আসছে মৃতচিতল…
……………
ঘুম আসে না
……………
ঘুমকে জড়িয়ে ধরি।ও পায় লজ্জা!
বিছানায় খায় গড়াগড়ি;পাশে থাকে
জ্যোৎস্না
ঘুম এক হীরাহার
শরীরের বাঁকে বাঁকে মনিমুক্তা!
নিঝুম লবঙ্গের মতো মন
মদরাবিভোর এলাচের চুম্বন
ডুবে যাচ্ছে ঘুমের দুরত্বে
আমি আশ্চর্য তৎপর রাত মিশিয়ে
তবু ঘুম আসে না চোখ ও চিবুকে!
…………….
একটি মৃত্যু
…………….
চন্দনের বন আমি কখনো দেখিনি
সাঁওতাল মেয়েটা
গঞ্জে এলেই চন্দনের গন্ধ পেতাম…
চুলে ওর মাছের কাঁটা; বনময়ূরের পালক
নাকে থাকতো রোদফুল
একখণ্ড চন্দন পুড়িয়ে
আমি মেয়েটাকে ভুলে যাই
…………..
রিলেটিভিটি
…………..
প্রেম খুব খেয়েছে; সূর্য গিলে
চাঁদ বানিয়ে সন্ধ্যা নিয়ে আসে
প্রেম দাঁড়িয়ে থাকে;
অথচ সময় দেখে টালমাটাল হাঁটছে
ব্রিজ ছুটে এসে সাইড দিয়ে যায়;
সময় দেখে প্রেম সাইকেল নিয়ে
হুড়মুড়িয়ে নদীতে পড়ে যাচ্ছে…
………….
হতভম্ব জীবন
…………..
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জীবন ক্রমশ ছোটে…
একটা স্বপ্নও জেগে ওঠেনি
বাস্তবে জীবন দুঃখ নিয়ে সাইকেলে বেড়ায়
দুঃখের ধুঁয়ো বের হয় নিকোটিনের অন্ধকারে
মন খারাপের দিনে হতভম্ব জীবন
দুঃখনদীর ভরা স্রোতে মন ডুবিয়ে কাঁদে