spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদলিটল ম্যাগাজিনজেগেছে অরাজনৈতিক প্রজন্ম

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

জেগেছে অরাজনৈতিক প্রজন্ম


তাজ ইসলাম

‘ সূত্রমতে, আয়নাঘর হলো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দফতর ডিজিএফ আই এর আওতাধীন এক গুপ্তঘর। যেখানে নিরাপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে মাসের পর মাস বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়’। এই কথাগুলো একটি গল্পের অংশ। গল্পটি ছাপা হয়েছে ‘ সাহিত্য সৌরভ ‘ নামে একটি ছোট কাগজে। ৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশ আয়নাঘরের মতো বহুবিধ নিপীড়ন, নির্যাতনী ঘর অতিক্রম করে এসেছে। আওয়ামী দুঃশাসনের পনের বছর বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ,দেশপ্রেমিক জনতা মুখোমুখি হয়েছে হত্যা,গুম,ক্রসফায়ারসহ নানা রকম আওয়ামী নির্যাতনের। তারপর এলো জুলাই।জুলাইয়ের গণবিস্ফোরণে রাজনীতি,রাজপথ উত্তপ্ত হয়। রক্তাক্ত জুলাই পাড়ি দিয়ে অর্জন করে বিজয়। এই বিজয়ে ইসলামপন্থী, আলেম ওলামা- তলাবাদের অংশগ্রহণে অন্য অধ্যায় তৈরী হয়। তারা রাজপথে নিজেদের অংশগ্রহণকে ইতিহাসে উজ্জল অধ্যায় রচনা করে। রাজপথে লড়াকু সৈনিকেরা মিছিল তুলেছে মুষ্টিবদ্ধ হাত।কবি লিখেছেন কবিতা।সাংবাদিক লিখেছেন প্রতিবেদন। কেউ পিছিয়ে থাকেননি,কেবল আওয়ামী দোসররা ছিল ব্যতিক্রম। বিজয় পরবর্তী শিল্প সাহিত্য এর প্রভাব তাই স্পষ্ট। গল্পেও তার স্পষ্ট ছোঁয়া।সাহিত্যের বিপ্লবোত্তর কাগজগুলোতে জুলাই আগস্ট আসে ঘুরেফিরে। ইতিহাসের স্বার্থে এর প্রয়োজনও আছে। সকলে নিজ সামর্থ্যে কাজ করে গেলে এক সময় ইতিহাসের বিশাল উপাদানে পরিনত হবে।নতুবা নিজেরা হারিয়ে যাবে।ইতিহাস হবে বেহাত।
সাহিত্য সৌরভে প্রকাশিত অনেক লেখার শিল্পমান নিয়ে তুল্যমূল্য আলোচনা করলে হয়তো নেতিবাচক কথা আসবে। বিশেষত কবিতা। হয়তো অনেক কবিতা কবিতা হয়ে ওঠেনি। আমরা শিল্পমূল্যের হিসাবে যাচ্ছি না। আমরা কাজগুলোকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছি। এবং এ আশাবাদও রাখছি যারা সক্রিয়, যারা কাজ করছেন ও করবেন সকলে পরবর্তী কাজগুলোতে গুরুত্ব দিবেন শিল্পের সর্বোচ্চটুকু উপহার দিতে।আর অগ্রাধিকার দিবেন আন্দোলনকে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও ঘটনাসমুহ লিপিবদ্ধ করতে।
যে কাজগুলো করা হবে সেগুলোই যেন রেফারেন্স উপযোগী তথ্যে ও তত্ত্বে।

‘ন্যায় আর অধিকার হেরে গেলে মৎসন্যায়/ ফিরে আসে। মানুষ তখন শুধুই এক সংখ্যা’ এটি সাইফ সিরাজ’র কবিতার কথা। সাইফ সিরাজ কবি,চিন্তক,কথক। সাইফ সিরাজ একজন প্রখ্যাত আলেম। ‘সাহিত্য সৌরভ ‘ আলেম লেখকদের কর্তৃক পরিচালিত, সম্পাদিত সাহিত্যের একটি ছোটকাগজ। সে কাগজেই গ্রন্থিত তার কবিতা’ জেগেছে অরাজনৈতিক প্রজন্ম’। কবি ইতিহাস আশ্রয়ী হয়ে বলেছেন বর্তমানের কথা। সত্য উচ্চারণে তিনি নির্ভীক। ‘ নমরূদ হতে ফেরাউন অনিবার্য সংঘাতে/ এক দিকে ন্যায় আর অন্যদিকে অন্যায়/ এক দিকে মজলুম আর অন্যদিকে জালিম/ ‘ জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্রই যেন চিত্রিত হয়েছে কবিতায়।চূড়ান্ত বাস্তবতা হল আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে এক পক্ষে ছিল আওয়ামীলীগ আর অপরপক্ষে সমগ্র বাংলাদেশ। আওয়ামীলীগ হয়ে ওঠেছিল জালেম, ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার। প্রতিবাদে গর্জে ওঠেছিল সমগ্র দেশ। কবিতায় এই বাস্তবতাটুকুই উপস্থাপিত হয়েছে। কবিতা কখনো কখনো বক্তব্যের জন্য উজ্জল হয়ে থাকে। কখনো চিন্তা ও দর্শনের জন্য। এসবই জীবনের অংশ। যে কবি মানুষ,সমাজ,জাতি, আদর্শ,চিন্তা,দর্শনকে ধারণ করে কথা বলেন, কবিতা লেখেন। সাইফ সিরাজ তার কওমের কথা বলেন। নিজের চিন্তা ও বিশ্বাসের পক্ষে কথা বলেন। শিল্প সাহিত্য মূলত মানুষের জন্যই। সাইফ সিরাজ মানুষ, মানবতা,সত্য ও আদর্শের পক্ষের কবি। তার নির্ভয় ও নির্মোহ উচ্চারণ, ‘ এক দিকে ন্যায় আর অন্যদিকে অন্যায়/ এক দিকে মজলুম আর অন্যদিকে জালিম/ ‘। জালেম পরাজিত ও বিতারিত হয়েছে। মজলুমের হয়েছে জয়।

সাইফ সিরাজের অরাজনৈতিক প্রজন্ম নিয়ে তর্কের সুযোগ আছে। শুরুর অরাজনৈতিক প্রজন্ম শেষতক অরাজনৈতিক থাকছে না। রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অরাজনৈতিক থাকে কি থাকে না এ জবাব অমীমাংসিত থাক।

জয়- পরাজয় ঘটনা,বাস্তবতার কথামালার সমন্বয়ে সম্পাদিত অনেক লিটলম্যাগের একটি ‘ সাহিত্য সৌরভ’। জয়ের আনন্দে তারা বিজয়গাঁথা নিয়ে হাজির হয়েছে পাঠকের দহলিজে। প্রথম বর্ষ- প্রথম সংখ্যা। প্রথম সংখ্যার বিশেষত্ব হল এটি একটি বিশেষ সংখ্যা। সূচনাতেই আছে গদ্যকথা।গদ্যকথা লিখেছেন এহসানুল্লাহ জাহাঙ্গীর,সাব্বির জাদিদ, হাবিবুল্লাহ সিরাজ।হাবিবুল্লাহ সিরাজ তার লেখায় স্মৃতিচারণ করেছেন ‘ কিশোর বীর তাহমিদকে নিয়ে।তাহমিদ জুলাই বিপ্লবের কিশোর শহীদ।পরিসংখ্যান বলে প্রায় দেড় হাজার মুক্তিকামী বীর সন্তান শহীদ হয়েছেন জুলাই বিপ্লবে। তাহমীদ তাদের একজন।প্রাণবন্ত কিশোর। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ৫ আগস্টের বিজয়। হাবিবুল্লাহ সিরাজ বলেন, ‘ রক্ত গাদ্দারি করে না।’ বাক্যটি হতে পারতো সাথীরা রক্তের সাথে গাদ্দারি করে না। কারণ তার পরের বাক্যেই বলতেছিলেন,’ তাহমিদের পবিত্র রক্ত হাতে যারা শপথের কালিমা আওড়িয়ে ছিল; এরাই ৫ আগস্ট ইনকিলাব নির্মাণ করেছে।’ সুতরাং বলা যায় রক্ত ছুঁয়ে যারা শপথ করে, সেসব সাথীরা রক্তের সাথে বেইমানি করে না। ‘ পৃথিবীর ইতিহাস দেখেছে; শাহাদাত ব্যর্থ হয় না হতে পারে না। ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হলো কিশোর বীর তাহমিদের তুলনারহিত আত্মত্যাগের নজরানা।’ গদ্য লিখেছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ। নাঈম সালেহ , আ: জলীল বিন হাবিব, সাব্বির আহমাদ,হুসাইন আহমাদ,আবু আব্বাস,মাহমুদ হুজাইফাসহ অনেকেই ছোটগল্পের ডালা মেলেছেন ‘ সাহিত্য সৌরভে। ছোলগল্পের বয়ানেও আছে জুলাই বিপ্লবের বয়ান। আছে তার নায়ক ও খলনায়কদের চরিত্রের ভিতর বাহির। তা অনুমান করা যায় গল্পের নামকরণ ‘ জুলাই ২০২৪ এবং একজন কবিতার মানুষ’ আওড়িয়ে। গদ্য মুক্তগদ্যের লেখক তালিকা আরও বিস্তৃত। খালিদ নিশাচর,উবাইদুল্লাহ জাফর,আবু আব্বাস,মাহমুদ হুজাইফা,তামীম আল আদনান,যাকারিয়া মুহাম্মদ প্রমুখ আছেন এই বিস্তৃত তালিকায়। আতিক ফারুক খুব সংক্ষিপ্ত দিনলিপি পেশ করেছেন।
যে কোন লিটলম্যাগে কবিতা ও কবির উপস্থিতি লিটলম্যাগের সৌন্দর্যকে ছড়িয়ে দেয় পাঠকের মাঝে।

কবিদের দীর্ঘ মিছিলে আছেন,তানভীর হাসান, নাহিদ সরদার,শেখ জাবেদ,ইবনে সিরাজ,সুপম রায়,চন্দন হাতী, খোদেজা মাহবুব আরা,মাহমুদ মেঘ,মুহাম্মদ তালহা মাহমুদ,রাফি আল আহনাফ,মিলন আব্দুল্লাহ,দেবাশিস তেওয়ারী,আব্দুল্লাহ আল আম্মার,বিদ্যুৎ মিশ্র,শঙ্খশুভ পত্র,জাহিদ তাশফীন,পিয়াস মজিদ আবির হাসান। ছড়া কিংবা কবিতা সময়কে অল্পকথায় পৌছে দেয় সময়ে।অতীতকে বর্তমানে ভবিষ্যতে। ৫ আগস্ট বিপ্লব সফল হয়েছে।তার আগে বিপ্লবীরা বরণ করে নিয়েছেন জুলুম, নির্যাতন ও শাহাদাতের অমীয় পেয়ালা। তখনো একপক্ষ ছিল জুলুমের পক্ষে, জালেমের দোসর হয়ে। ‘ এতো বছর খুব খেটেছো/ মন্ত্রী সাবের পা চেটেছো’/ ( ইসমাইল হোসেন ইফতি)’ তাদেরকেই ইঙ্গিত করে দৃঢ় শব্দে বলেন, তাদের ( ছাড় হবে না ছাড়)।
বিশেষ সংখ্যা। আন্দোলন, বিপ্লব বিষয়ক লেখা ছাড়াও অন্য বিষয়েওর লেখাও গ্রন্থিত আছে।
হাসনাত যুবায়ের তার পদ্য লিখেছেন দেশ ও প্রকৃতি নিয়ে।। তার দেশ এখন তাবেদার মুক্ত,ফ্যাসিস্ট মুক্ত। ‘দেশকে ভালোবাসি’ এ কথা বলাতেও যেন ছিল আগে প্রতিবন্ধকতা। প্রতিবন্ধকতা মুক্ত পরিবেশে সুন্দরকে সুন্দর বলা যায়,সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। হাসনাত যুবায়েররা দরাজ গলায় বলে যান,’ গাছে গাছে শিউলি ফুলের গন্ধে মাতাল হই/ শান্তি সুখের এমন দেশটি কই পাবে গো কই?’।


সাহিত্য সৌরভ : ১ম বর্ষ।১ ম সংখ্যা।সম্পাদক:আ: জলিল বিন হাবিব। অস্থায়ী কার্যালয়: মাহমুদ নগর,সাইনবোর্ড, ডেমরা,ঢাকা।
কাগজটি নিয়মিত হোক।এই প্রত্যাশা রেখে গেলাম।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ