তাজ ইসলাম
১.
আওয়ামীলীগ
……….
আওয়ামীলীগ প্রধান পতিত, পলাতক সাবেক বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী পলাতক অবস্থান থেকে নানারকম কথা বলেন।এসব কথার আকার ইঙ্গিত ফিরে আসার। বেলা শেষে গুজব বলে প্রতীয়মান হয়। প্রশ্ন হল কেন তিনি এমন গুজবের আশ্রয় নেন?
ইতোমধ্যে তার একাধিক অডিও কল ফাঁস হয়েছে।
এসব কল রেকর্ড গোয়েন্দা কর্তৃক ফাঁস হলে তিনি নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন। বারবার ফাঁস হওয়ায় মনে হয়নি প্রশাসনের তৎপরতায় ফাঁস হচ্ছে। এতটা কাঁচা হওয়ার কথা না। একবার ধরা খেলে দ্বিতীয়বার অবশ্যই সতর্ক হতেন। বারবার একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তিতে ধরে নেওয়া যায় এগুলো তাদের পরিকল্পিত চাল। আবারও প্রশ্ন কেন এমন করে?
দুটো বিষয়েরই একই জবাব।
৫ আগস্টের পর আওয়ামীলীগ মাঠ আউট। নেতাকর্মী যারা ছিল সব গ্রাউন্ড ফ্লোরে। পলাতক,চুপ,ভীত,সন্ত্রস্ত সব মিলে আওয়ামীলীগ দেশ শূন্য। গুজব ও কল রেকর্ডের মাধ্যমে তারা অস্তিত্বের জানান দেন। বলতে চেষ্টা চালান ‘ আছি রে ভাই আছি’।
দলীয় নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসে।এই বুঝি আবার ক্ষমতায় চলে এল। প্রতিপক্ষ বা বিপ্লব ও আন্দোলন পক্ষ সাবধান হয়। সতর্কতা স্বরূপ রাস্তায় থাকে। আওয়ামীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার উপলক্ষ পায়।এক দিন দু দিন আওয়ামীলীগের নামটা জনতার চোখে থাকে। একদম নাই থাকার চেয়ে ফাঁকা বুলির থাকাটাও এ মূহুর্তে তাদের জন্য কল্যাণকর। এ জন্যই গুজব,কল রেকর্ড ও বায়বীয় কর্মসূচী মাঠে ছেড়ে দেয়।
পরিকল্পনায় আরও অনেককিছুই থাকতে পারে। ঘনঘন নড়াচড়া করে,প্রতিপক্ষকে নাড়িয়ে ক্লান্ত করা।এবং মনে ধারণা জন্মানো যে, ‘ কিছুই হবে না’। কিছুই হবে না এরপর হঠাৎ কিছু হবে। হওয়ার কসরত করবে। এ জন্য সবসময়ই সতর্ক থাকতে হবে। তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে অব্যহতভাবে। চলমান সময়ের সব ঘটনার অন্তরালে আওয়ামীলীগের কুচক্রী হাত স্পষ্ট হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত।
আওয়ামীলীগ এখন যা করছে তা রাজনীতির নামে কুটচাল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতি করার সামর্থ্যই তাদের নাই।করতে পারবে কি পারবে না প্রশ্নটা বৈধতা অবৈধতার। তারা তাদের অযোগ্যতা,অক্ষমতার কারণেই রাজনীতির প্রশস্ত পথে অনুপস্থিত। বিপ্লবীদের কিছু ভুল সীদ্ধান্তের কারণে আওয়ামীলীগ আবার রেসে ফিরতে চেষ্টা চালাচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তারা জানতে চান জুলাই গণহত্যার অপরাধ, মানবতা বিরোধী অপরাধ, সন্ত্রাস,সহিংসতা দায়ে আওয়ামীলীগ নীতিগতভাবে এদেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না। অনেকে বলেন আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ হবে কি না,আওয়ামীলীগকে জনগণ চায় কি চায় না একটা গণভোট হোক।
গণভোটের দাবী তোলেন সংস্কৃতির অঙ্গনের কেউ কেউ।
নির্বাচনে পরাজিত হওয়া,আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আর স্বৈরাচার,ফ্যাসিস্ট সরকার একটা দেশে নৃশংস গণহত্যা, মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ করা,দেশকে কার্যত গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া,অতঃপর গণবিস্ফোরণের মুখে পলায়ন দুটো এক পাল্লার হিসাব নয় কিছুতেই। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সদলবলে পালাতে বাধ্য হয়েছে। একটা দেশের ক্ষমতাসীন দলের সকল এমপি -মন্ত্রী- সান্ত্রী, নেতা,উপনেতা, পাতি নেতা পালিয়ে যাওয়া,আত্মগোপনে চলে যাওয়া কিছুতেই স্বাভাবিক ঘটনা নহে। ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল পর্যায়ের। ৫ আগস্টে আওয়ামীলীগকে সর্বস্তরের জনতা রায় দিয়ে রেখেছে। রায়ের প্রতিফলনই হাসিনার পলায়ন। জনগণের সে রায় হাসিনা,তার দল উপদল সবকিছুর বিরুদ্ধে।
কাজেই এ বিষয়ে গণভোটের যৌক্তিকতা নাই।আইনি যে বিষয়ের কথা বলা হয় তা তৈরী করে দিয়েছে বিপ্লবীরাই। বিপ্লবীরা যদি সে সময় নিজেরা ক্ষমতা গ্রহণ করে খোল নলচে সব পাল্টিয়ে ফেলত,ফেলার খুব সহজ সুযোগ ছিল। আওয়ামীলীগ তো দূর কী বাত যেসব রাজনৈতিক দল এখন ফাঁকফোকরের দোহায় দিচ্ছে অন্তত আগামী দু তিন বছর টু শব্দ করার সাহস দেখাত না। সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলে বহুবিধ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারলে গণভোটের পরও একশনে যাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব দ্বিধায় ভুগতে হতে পারে। আওয়ামীলীগ দল হিসেবে রাজনীতি করতে পারবে।নিষিদ্ধ হবে তারা তাদের কর্ম ফলে।তাদের অতীত তাদের গলার কাঁটা। পনের বছরে একেকটা ঘটনার বিচার খাড়া করলেই আওয়ামীলীগ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।আওয়ামীলীগের সৌভাগ্য তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। বিডির হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা ফাঁপড়ে পড়বে।শাপলা কাণ্ডের কোন নড়াচড়া নাই।জুলাই আগস্টের জন্য তারা যা প্রাপ্য তা পায়নি। কেন পায়নি এর জবাব অনেক দীর্ঘ।একটা কারণ হল দীর্ঘ সময়ে প্রশাসনের স্তরে স্তরে তারা রেখে গেছে সুযোগ্য ল্যাসপ্যান্সার। আরেকটা অন্যতম কারণ হল মধ্যবর্তী সরকারের নিস্ক্রিয়তা। আওয়ামীলীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে এই সরকারের নার্ভ একদম শিথিল। আওয়ামীলীগকে জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে উৎখাত করেছে আওয়ামীলীগ পুনরায় রাজনীতি করার জন্য নয়। জনতার রায়ে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ। আইনে কেবল তারা হবে সাজাপ্রাপ্ত। নিষিদ্ধ হবে কি হবে না এমন গণভোট শুধু জনতার সাথে আরেকটা অনিচ্ছাকৃত পুতুল খেলা। ৫ আগস্টের পর যা হয়েছে তা নিয়ে এখন আফসোস করে লাভ নাই।সামনে আওয়ামীলীগকে আর নিষিদ্ধ করার চিন্তা করারও দরকার নাই।শুধু মাত্র বিচার প্রক্রিয়া মজবুত করলে এমনিতেই তারা অঘোষিত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
এই কাজটা দায়িত্বে সাথে করলেই হল। কিন্ত অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সেটাও হবে না।
২.
প্রথম আলো
……………
প্রথম আলো নিয়ে তুমুল কথা হচ্ছে। প্রথম আলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য এ পত্রিকাটি বন্ধের দাবী উঠছে। কর্মসূচির মাধ্যমে দেশ প্রেমিক পক্ষ তাদের দাবী জানিয়ে আসছে। তারা সরকারের কাছে দাবী পেশ করছে প্রথম আলো বন্ধের।
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা এই দাবী করছে।
আমরা অবশ্য বন্ধের আগে অন্যভাবে ভাবি। প্রথম আলোর প্রতিপক্ষ যারা তাদের হাতে কি একটা মিডিয়া আছে? প্রথম আলো যা বলে তার জবাব তাদের হয়ে কেউ সেই মিডিয়ায় দিতে পারবে?
অথবা সেই পক্ষের লোকেরা এমন কাউকে অর্থ,সুযোগ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে যে তিনি তারা প্রথম আলোর প্রতিটা কথার জবাব দিবে?
প্রথম আলো যে কারণে আলোচিত তার বিপরীত কারণ আলোচনা করে তাদের একটি মিডিয়া কেন দাঁড়াল না? এগুলোওতো ভাববার বিষয়।প্রথম আলো যখন বন্ধের দাবী উঠেছে তাহলে নিশ্চয়ই ফৌজদারী অপরাধ করেছে।কেন তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা গেল না। এই যে প্রশাসনে প্রথম আলো বান্ধব আছে সেখানে প্রথম আলোর প্রতিপক্ষ বান্ধবের শূন্যতার দায় কার? এসব কিছু নিয়ে ভাবলেও নিজেদের অক্ষমতা চিহ্নিত হবে। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যেসব এক্টিভিটি চালু আছে সেসব ছাড়াও আরও কিছু কাজ জারী রাখতে হবে। প্রথম আলো কারা পড়ে? কারা কিনে? কেন কিনে? তাদের পাঠের টেবিলে আপনাদের পত্রিকা পৌছে দিতে হবে।সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রথম আলো কেন ক্ষতিকর দেশ ও জাতীর জন্য তা ব্যপক আকারে জানাতে হবে। পাঠক না থাকলে, লেখক না থাকলে এক সময় এমনিতেই তার প্রভাব পড়বে।দেশ বিরোধী একটি পত্রিকায় যারা লেখে তাদের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। সব শেষে সবকিছুর পরও যদি প্রথম আলো টিকে থাকে তাহলে সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করে যেতে হবে।
৩.
চিন্ময় দাশ
…………..
চিন্ময় দাশকে গ্রেফতার করেছে সরকার। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করে চিন্ময়ের জন্য আইন আদালত জামিন বিচারিক সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।বিচার পাওয়া,জামিন চাওয়া থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়নি। সে বাংলাদেশী নাগরিক।আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।তার আগেই ভারত তার পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বসেছে।আঁচ করা সহজ হয়ে যায় চিন্ময়ের খুঁটির জোর। মাঠে ময়দানে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে কথা চাউর হয়েছে পতিত সরকার ও ভারতের র য়ের চালে চিন্ময় দাশ দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করেছিল। বিষয়টি স্পষ্ট হবে সামনে।তার আগেই ভারত,ইসকন,আওয়ামীলীগের ছদ্মবেশীদের তৎপরতায় দাবীর সত্যতা স্পষ্ট হয়েছে। তার শক্তির একটা নমুনা হল গ্রেফতার অবস্থায় আসামীর গাড়িতে থেকে হ্যান্ডমাইকে ভাষণ।
৪.
ইসকন
……….
ইসকন সন্ত্রাসী সংগঠন, সাম্প্রদায়িক সংগঠন। অতিসহজেই তারা নিজেদের চরিত্র প্রকাশ করে দিল চট্টগ্রামে। চট্রগ্রামের আদালতের আইনজীবীকে হত্যা করেছে ইসকন।ইসকনকে নিষিদ্ধের জোর দাবী ওঠেছে। হয়তো নিষিদ্ধ হবে,কিংবা হবে না।তার আগে জনতার করণীয় ইসকনের মুখোশ একদম উন্মুক্ত করে দেওয়া।তাদের সমস্ত কার্যক্রম জনগণের সামনে তুলে ধরা।অপকর্মের ফিরিস্তি প্রচার করা।
ইসকন ও তাদের গডেরা পরিকল্পিতভাবে এদেশে দাঙ্গা লাগাতে চায়। তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আর তাদের ছাড়ও দেওয়া যাবে। আইনজীবী হত্যার জবাব তাদের কাছ থেকে আদায় করতেই হবে।অবিলম্বে চিহ্নিতদের গ্রেফতার করতে হবে। ইসকনের হাতে আওয়ামী হাত যুক্ত হয়েছে কিনা এটিও খতিয়ে দেখতে হবে। পতিত সরকার দেশকে অস্থিতিশীল করতে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে কাজ করতে পারে। এইসব কথা মাথায় রেখেই রাজনীতি করতে হবে।আওয়ামীলীগকে নিয়ে ভাবতে গেলেই পনের বছরের সাথে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী ষড়যন্ত্র হিসাব কষে সামনে চলতে হবে। এই সচেতনতা বিপ্লবের মাঠে ময়দানে যারা ছিল তাদের সবার মাঝেই থাকতে হবে। সাপ মরে এখন লেঙুরে বিষ। সচেতন না থাকলে এ বিষেই নীল হতে হবে।সাধু সাবধান।