মুমির সরকার
………….
শব্দের সংগে কথা বলি
(কাঞ্চনজংঘা দর্শন অবলম্বনে)
…………..
প্রত্যেকটি রাত আর দিনের মাঝখানে
অদ্ভুত একখন্ড নিশ্চল সময়–
আঁধার নয় আলোও তো নয় এ যেনো
সময়ের একটি বিপজ্জনক বাঁকে স্থির
দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজংঘা,
রোদরঙা শরীর বেয়ে শীতল মহানন্দা
রোদ্দুর-গন্ধ মুছে ফেলেই নেমে আসে
অনিশ্চিত এক ভূখন্ডে!
আর তারও উপরে বিস্তীর্ণ যে আকাশ,
স্থির সেও; শুধুমাত্র জ্যামিতিক প্রেমে
অভ্যস্ত যে চিল, শূণ্যে বৃত্ত এঁকে-এঁকে
নিচে নামতে থাকে।
এছাড়া আর কোথাও কোন শব্দ নেই।
বুঝি-বা দীর্ঘক্ষয়ে শব্দ’রা শক্তি খুইয়ে
ভীষণ নিস্তেজ এখন!
…………
অথচ এই আমি
…………
ক্রমশ কালো হয়ে ওঠা পৃষ্ঠায় লিখছি
নিস্তেজ সেইসব শব্দ:
প্রেমের ও বিচ্ছেদের,
জীবনের ও মরণের সেতু কিংবা ফাঁদ,
এবং অনুভুত বস্তুর মতোই প্রত্যেকের
বর্ণ আছে;
ঘ্রাণ আছে;
স্বাদ আছে;
ওজন আছে;
দখলে রাখার মত আয়তনও আছে।
………..
তুমি যখন আমার কথা শুনতে পাও না
………..
আমি আর তোমার সংগে কথা বলি না।
তখন কথা বলি শব্দের সংগে-সে শব্দই
আমাকে নিয়ে যায়,
তোমার থেকেও আরো গভীরে তোমার!
………..
একখন্ড নিশ্চল সময়ে
…………
অনিশ্চিত সেই ভুখন্ডে,
সেইসব অগণিত মুমূর্ষু শব্দকে বাঁচাতে
আমি আসলে শব্দের সংগে কথা বলি৷
……….
গ্রাফিতি
………..
এইতো এখানে তখন বানভাসী
জোয়ার– তাজা বুকের রক্ত,
দোয়েল, শালিক, ফিঙ্গের লেজে
তিরতির কাঁপছে উপরে– সে এক
মাথা-উচুঁ লাল কৃষ্ণচূড়া।
নিচে তা’রি সঘন ছায়ায়
একদিন বিকোবে জানি,
গলিমুখে, রাজপথে আর ফুটপাথে
রিকশা ও ভ্যানে, এমন কি বহুতল ভবন-ঝুলন্ত ব্যালকণিতে
কালচে হয়ে আসা ছোপছোপ দাগ
ভাবনা কী ছিলো ওদের,
তা জানিনে।
তাই বুঝি-বা নগরীর দেয়ালে-দেয়ালে,
হাজারো কাঁচাহাতে
রেখা আর ছবিতে,
এঁকে রেখে গেছে গ্রাফিতি।