আমান আবদুহু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্য্য ফেইসবুকে লিখেছে, “আসাদও পালালো? প্রশ্ন শুনে এক আরবি বন্ধু বললো: ‘অবাক হচ্ছো কেন, পালানোতো সুন্নত। আরব দেশের মহাপুরুষদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।'”
আমরা যে বাংলাদেশ চাই, সেই বাংলাদেশে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের এ ধরণের মন্তব্যের কি প্রতিক্রিয়া হবে?
সেই বাংলাদেশে এই বক্তব্যের জন্য কোন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে তাকে কিছুই বলবে না। কিছু করবে না। পরিচিতরা হয়তো তাকে দুই একটা গালি দিবে। থুথু দেবে। ঐটা ব্যক্তিগত পরিচয়ের অধিকারে। কিন্তু অন্যরা কিছু করতে যাবে না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার এই বক্তব্যের তদন্ত করবে। রাষ্ট্র খতিয়ে দেখবে, তার কোন উদ্দেশ্য আছে কি না। হয়তো সে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে চায়। আইন অনুযায়ী তার এ বক্তব্যে অপরাধ হয়েছে কি না। যে কোন সভ্য আইনে হওয়ার কথা। সুতরাং অপরাধের শাস্তি পাবে সে।
তবে এসবই সেই কল্পিত, প্রত্যাশিত বাংলাদেশে। আমাদের বাংলাদেশে কি কি হতে পারে তা আমরা জানি।
একজন আওয়ামী হিসেবে একদিকে সে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের আসাদের পলায়নকে মহান করতে চেয়েছে। অন্যদিকে একজন ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে সে রাসুল সা. এর হিজরতকে টিটকারি করতে চেয়েছে। অত্যাচারী খুনী শাসকের টিকতে না পেরে পালিয়ে যাওয়া এবং মজলুম দুর্বলের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যাওয়া যে সম্পূর্ণ দুই মেরুর বিষয়, যার মাঝে কোন তুলনাই হয়না, এতটুকু যেই বেকুব বুঝে না কিংবা বুঝতে চায় না সেই গর্দভ কিভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়? এইটা তো ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপমান। একই সাথে এই লোক চরম নীচ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সারা পৃথিবীর নির্যাতিত নিরুপায় শরণার্থীদেরকে সে ব্যঙ্গ করেছে। পরিস্কার বিগট্রি এবং জেনোফোবিয়ার পরিচয় দিয়েছে এই লোক।
এইখানে অন্য আরেকটা বিষয় আছে। ভট্টাচার্য্য সাহেব হিন্দু হয়ে এই ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্য দেয়ার জন্য কি বেশি অপরাধী হবেন? যদি তাই মনে করেন, তাহলে আসিফ মহিউদ্দিন, আসাদ নুর, ইব্রাহিম খলীল এইরকম অসংখ্য শাহবাগিদের নাম স্মরণ করেন। সব মুসলমান নাম। তারা আরো অনেক জঘন্য কথা বলেছিলো। সুতরাং এই লোকের হিন্দু হওয়ার বিষয়টা এখানে ধর্তব্য হওয়া উচিত না। বরং তার পরিচয় হলো সে একজন আওয়ামী। পাঁচ তারিখে তার মালকিন পলানোর পর থেকে সে চুলকানিতে আক্রান্ত। তখন থেকে ফেইসবুকে সে অব্যাহতভাবে খুঁচিয়ে যাচ্ছে। এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে শেষ পর্যন্ত। সম্ভবত একটা ঘটনা ঘটিয়ে তারপর ইউরোপ যাইতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিচয়টা তার জন্য প্রচন্ড সুবিধাজনক এখানে।
ভট্টাচার্য্যের ধর্মবিদ্বেষী এবং রাসুল সা. কে ব্যঙ্গ করে দেয়া এই বক্তব্যটা বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমানের পরীক্ষা না। বাংলাদেশী মুসলমানরা এইসব বিষয়ে ঈমানের যথেষ্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফেলেছে। এটা আসলে আসিফ নজরুল এবং মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীদের মতো মন্ত্রীদের নিয়ত এবং যোগ্যতার পরীক্ষা। তারা কি যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, না কি হাসিনার মতো এই ঘটনাকে রাজনীতির ও ষড়যন্ত্রের কাজে লাগাবে, এতে করেও বুঝা যাবে তারা এই দেশের মানুষের পক্ষে না বিপক্ষে। চুপ করে থেকে ‘তৌহিদি জনতা’র হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়াও একটা রাজনৈতিক পদক্ষেপ কিন্তু।