তাজ ইসলাম
১৫ ফেব্রুয়ারী আমার কেতাবি জন্মদিন। আমার জন্মদিন পালন করিনি। তেমন কেউ হইনি বলে পালন করার তাগাদা অনুভব করিনি। তবু পালন হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে।এদিন একদল কবি,সুহৃদ সংস্কৃতজন শুভেচ্ছা জানান। গতকাল ভোরে ট্রেনে বসে সোশ্যাল মিডিয়াতেই শুভেচ্ছাবাণী দেখছিলাম। ট্রেন চলছে ব্রাহ্মণ বাড়িয়ার উদ্দেশ্যে। ট্রেন থেকে নেমে দেখা হল কবি গল্পকার সাদমান শাহিদ ও কবি জহির সাদাতের সাথে। সাদমান শাহিদ বললেন আজ তো তাজ ভাইয়ের জন্মদিন! জহির সাদাত যোগ করলেন আজ একসাথে পালন হবে তাজ ভাইয়ের জন্মদিন। আমরা সকাল প্রায় দশটায় গিয়ে পৌছলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মুহাম্মদ সরকারী কলেজ গেটের সামনে।জহির সাদাত আগের রাতে চলে আসছে কিশোরগঞ্জ থেকে।
১৫, ১৬,১৭ ফেব্রুয়ারি মহাকালে মহাকবি আল মাহমুদ স্মরণোৎসব।৩দিন ব্যাপী এই আয়োজন করেছে
‘কবি আল মাহমুদ গবেষণা কেন্দ্র ও স্মৃতি পরিষদ’। আমি এই আয়োজনের প্রথম দিনের বিশেষ অতিথি। বিশেষ অতিথি কবি রহমান মাজিদ।আলোচক সাংবাদিক ও কবি ইমরান মাহফুজ। প্রথম দিনের সভাপতিঅনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ জে এম আরিফ হোসেন। প্রধান অতিথি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক জনাব আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠান উদ্বোধক বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি। স্বাগত বক্তা কবি লিটন হোসাইন জিহাদ।
আমাকে দাওয়াত দিলেন আয়োজকদের পক্ষে কবি অধ্যাপক মহিবুর রহিম।তিনদিনের দাওয়াত। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য একদিনের সম্মতি দিলাম। রহমান মাজিদকে নিয়ে ১৫ তারিখ ভোরে রওয়ানা দিলাম ঢাকা থেকে। শাহবাগ পৌছে রহমান মাজিদকে কল করে জানলাম তিনি আগেই কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌছে গেছেন।সময় খুব কম।শাহবাগ নেমে বাইম নিয়ে দ্রুত পৌছে গেলাম আমিও।ট্রেনে টিকিট নাই,বা আছে স্টেন্ডিং। হঠাৎ এক প্যাসেঞ্জার পেলাম তার তিনটি টিকিট আছে।তিনি যাবেন, অন্য দুজন যাবেন না।আমরা নিয়ে নিলাম।এসি কম্পাউন্ড, ভালই হল।যথাসময়ে ট্রেন ছুটছে ট্রেন।আমাদের গন্তব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমি সকালে রওয়ানা দেওয়ার সময় হাফ পিস চালের রুটি খেয়েছিলাম।আগের রাত ছিল পবিত্র শবে বরাতের রাত। গিন্নি হালুয়া রুটি বানিয়েছিল। থেকে যাওয়া রুটির অর্ধেক মুখে দিয়ে রওয়ানা দিয়েছিলাম।আমার পেটে টান পড়েনি।রহমান মাজিদের নাস্তার চাহিদা বাড়লে ট্রেন থেকেই নাস্তা নিলেন।দুজনেই খেয়ে নিলাম।তারপর কফির অর্ডার দিলাম।দশটার আগেই আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে পৌছে গেলাম। অল্প দূরেই নিয়াজ মুহাম্মদ সরকারী কলেজ।মিনিট খানেক হাঁটা পথ। নেমে চা স্টলে বসলাম চা পানের নিয়তে।জহির সাদাত কল করলেন।আমরা চা না খেয়েই চলে গেলাম।কুশল বিনিময় করে আপনার চললাম কবি’র কবর জেয়ারতে।তারা অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্য। আমরা পমের বিশজন একত্র হলাম কবরস্থানে। কবির পুত্র নাতি ভাতিজা ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা একত্র হলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোড়াইল সরকারি কবরস্থানে। কবিপুত্র মোনাজাত করলেন। ফিরে এসে হোটেলে নাস্তা করলাম।কলেজ মাঠে একটা চক্কর দিলাম।ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কবি ইমরান মাহফুজও যোগ দিলেন।এক সাথেই কবর জিয়ারতে ছিলাম।স্থানীয় সাংবাদিক,কবি সাহিত্যিক, কবি পরিবারের সদস্যগণ ছিলেন।কলেজ মাঠ থেকে বের হয়ে সাদমান শাহিদের সাথে শহর ও তার আশপাশ ঘুরলাম।তারপর চলে এলাম সার্কিট হাউজে। সাহাদাত ইব্রাহিম আগেই নির্দেশনা দিয়ে রেখেছিলেন।সার্কিট হাউজে এক রুমে গেলেন ইমরান মাহফুজ। আমরা গেলাম অন্য রুমে। প্রতিটা রুমের নাম ফুলের নাম।আমরা রজনীগন্ধায় প্রবেশ করলাম। গোসল করে কিছু সময় আরাম করলাম। বুদ্ধি করে লুঙ্গিটুঙ্গি নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনটার আগেই আমাদের লাঞ্চের জন্য স্মরণ করল। স্থানীয় ঝুমুর হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম।রহমান মাজিদ কর্মসূত্রে বি বাড়িয়ায় ছিলেন অনেক দিন।খেতে খেতে জানাল এই ঝুমুর হোটেল এ শহরের সেরা হোটেল। খাবার খেয়ে সেরা বলতে দ্বিমত রইল না। অনুষ্ঠান শুরুর আগে কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটায় গেলাম।একেবার মেইন রোড সংলগ্ন তার পৈতৃক বাড়ি। বাড়ির সামনেই মসজিদ।
মসজিদের সামনে রাস্তার সাথেই কতটুকু জায়গা ফাঁকা। এইখানে হতে পারত কবির কবর।কেন হল না এটাই বিস্ময়।
ঢাকায় হতে পারত কবির কবর।হয়নি রাজনৈতিক বিরূপতায়। তাকে দাফন করা হল সরকারী কবরস্থানে। গ্রামে যখন নেওয়া হল তার লাশ তখনও পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়ে মসজিদের পাশেই তাকে কবর দেওয়া যেত।কেন দেওয়া হল না তার অনুমানে বেরিয়ে আসবে বিস্তর ধারণা। আমরা তা অন্য সময় বলব। একটা সাইনবোর্ডে লিখে রাখা যায় কবির পৈতৃক নিবাসের সহজ সনাক্ত করণ লেখা।
সাইন বোর্ডে তীর চিহ্ন দিয়ে রাখা যায় ঐ দিকে কবি আল মাহমুদের কবর।কিন্ত কে দিবে? কে রাখবে? আল মাহমুদ বড় কবি, একথা কি জানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসন? জানলেই কী? কবির প্রতি দায় নেওয়ার তাদের কী দায়! যে কবরস্থানে শায়িত আল মাহমুদ সেখানেও পড়ে আছেন অনাদরেই।একটা ছোট সাইনবোর্ড তার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে খুব কষ্ট করে।অথচ কবরস্থান কর্তৃপক্ষ, পৌর কর্তৃপক্ষ, এলাকাবাসী,তার পরিবার সবার উদ্যোগেই কবরটি স্থায়ী একটি চিহ্নিতকরণের আওতায় আসা জরুরি।
কর্তৃপক্ষের কাছে যদি কবরস্থানের জমির মূল্য অনেক হয় তবে আমরা কবরস্থানের জমিটুকু তাদের দাবীকৃত অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করেই
আল মাহমুদের কবরটি পাকা করে রাখার পক্ষে।এবং জোর দাবী জানাই আল মাহমুদের কবরের উপর যেন অন্য কারও কবর আর দেওয়া না হয়।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকাল ৩ টায়। শুরু হল অনেক পরে।তার আগে চলল আবৃত্তি। উপস্থাপক বারবার ভুল বা এলেমেলো করছিলেন। পরের বার হয়তো আরও স্মার্ট কাউকে উপস্থাপক রাখবেন, নয়তো এই উপস্থাপককেই আরও স্মার্ট হতে হবে। যথারীতি উদ্বোধনী বক্তব্য,প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ,বিশেষ আলোচক কথা বললেন। অনুষ্ঠান চলাকালেই চা,কফি দেওয়া হল।ছবি তুললেন মিডিয়ার লোকজন।লাইভ চলল।যে কথা না বললেই নয় স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।পরের বার আশা করি আরও বেশি স্থানীয় সংস্কৃতজনদের উপস্থিতি বাড়ানোর তৎপরতা থাকবে। আমরা প্রথম দিনের আলোচনা পর্ব শেষ করে মাঠের স্টলগুলো পরিদর্শন করলাম।অতঃপর চলে এলাম স্টেশনে।৬.৪৫ এ ছেড়ে দিল ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।এবার অবশ্য দাঁড়ানো টিকেট ছাড়া উপায় ছিল না।সারাদিনের ব্রাহ্মনবাড়িয়া সফর শেষ করে কবি হিসেবে বলতে গেলে সারাদিনের আল মাহমুদ স্মরণ উৎসব উদযাপন করে আমরা চললাম বেলা শেষে ঘরে ফেরা পাখির মতো।আমাদের ট্রেন চলছে কু ঝিকঝিক,কু ঝিকঝিক….
সারাদিনের অনুষ্ঠানে কে কি বলছি,আগামী দুই দিন কে কি বলবেন সবগুলো হয়তো আমরা পাব কোন এক প্রিন্ট ভার্সনে। আমরা সংস্কৃতজনদের পক্ষ হতে আল মাহমুদ স্মরণোৎসব আয়োজকদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আল মাহমুদ স্মরণ হোক বিভিন্ন আঙ্গিকে,বির্ণল আয়োজনে প্রতি বছর,প্রতি মূহুর্তে।
আল মাহমুদ বাংলাদেশের প্রধান কবি।
এই কবিকে নিয়ে চমৎকার আয়োজন করায় খুব ভালো লাগছে।