আবু জাফর সিকদার
………
পর্ব : এক
……..
আমি ভেবে পেতাম না শেখ হাসিনা ও তার দলবল কেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খেয়ে না খেয়ে সুযোগ পেলেই সমালোচনা করতো, হাসি মশকরার পাত্র বানিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলতো!
পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছি তাকে সর্বগ্রাসী ক্ষমতার নেশায় পেয়ে বসেছিলো। তিনি তার কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীকে খেলার মাঠে রাখতে চাইতেন না। যত দিন গেছে ততই তিনি এই বেপরোয়া নেশায় বুঁদ হয়েছেন।
তার প্রতিপক্ষ টার্গেটে ছিলো প্রথমত জামায়াত, একটি ক্যাডার ভিত্তিক সুশৃঙ্খল দল হিসাবে তাদেরকেই বড় হুমকি হিসাবে নিয়েছিলেন এবং নিয়েছিলেন টেস্ট কেইস হিসাবেও । তাই প্রথমেই ধরলেন তাদেরকেই। তাদের নেতৃত্বকে শেষ করে দলটিকেই দুনিয়া থেকে মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা হলো। তাদের অফিসে-অফিসে তালা, তাদের লোকদের গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ জবরদখল, সাথে গুম, জেল-জুলুমের স্টীমরোলার। এরপর ধরলো আলেম, ওলামা, হেফাজত।
এরপর ধরলো বিএনপি, খালেদা জিয়া, আর তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে পদ্মানদীতে টুপ করে চুবিয়ে শেষ করে দেয়ার মিশন। নেতাকর্মীদের সবাইকে রাখা হলো দৌড়ের উপরে। গুম, জেল, রিমান্ড আর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতেই তাদের জীবন ওষ্ঠাগত।
বাম রাজনীতি ও লাল ফৌজের বরকন্দাজ ইনু-মেনন-বাদল- দিলীপ বড়ুয়া মার্কা দলগুলো দিয়ে হালচাষ করিয়ে তারপর জুম্মান কসাইয়ের কাছে পাঠিয়ে শ্রাদ্ধ বা জেয়াফতে লাগানোর ব্যবস্থাপত্র প্রস্তুত করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ কিনা তারাও চলে গেছে ভোগে ! জাতীয় পার্টির এরশাদ-রওশন-কাদের মিয়াদেরও নাচের পুতুল সাজিয়ে নাচিয়েছেন বেশ আয়েসে, আর নাচুনে বুড্ডা ও বুড়িরা ভাবতো যেমনে নাচাও, তেমনে নাচি পুতুলের কী দোষ!
কাস্তে হাতুড়ির কমু কমরেডগণ, উদীচী আর চারুকারুর কালচারাল ফেরিওয়ালারা এবং আলু পটল মার্কা মিডিয়া টাইকুনদের কথা আর কী কমু! এরা পুরোটাই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লম্ফঝম্প দিতে দিতেই ১৬ টা বছর পার করে দিয়েছে, মগর বুঝেই ওঠতে পারেনি ডিঙিখানা উজানে বাইবে না কি ভাটিতে টানবে।
এই যখন অবস্থা, আশা নেই, ভরসা নেই কে দেখাবে আশা, কে দেখাবে পথের দিশা! ভয়ের সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেয়া হলো রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। চরম ফ্যাসিবাদের এক গহীন অন্ধকারে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।
তথাকথিত সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের নামে তামাশা করে করে শেখ হাসিনা ৫ বছর, ৫ বছর করে ক্ষমতার মেয়াদ বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন। ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক ও নিরাপদ করার জন্যই দাবার ছক সাজিয়ে মনের আনন্দে খেলছিলেন আর ভাবছিলেন,
–আমি ছাড়া আর কে আছে?
–আমার বাপের শুরু, আমিই শেষ, এর নাম বাংলাদেশ!
সবাইকে এভাবে খেয়ে দিয়ে তিনি মনে মনে ঠিক করে নিলেন এবার না হয় তিনি ডামি-ডামি খেলবেন। ওয়ান পার্টি সিস্টেম, বাকশালের নতুন ভেরিয়েন্ট!
আহা, কী শেষ খেলা খেলাইলি বনমালি! বাকশালের মতো এই লীলাখেলাও বেশি দিন আর কপালে সইলো না!
সবাইকে কুপোকাত করলেও মাঝে মাঝে বোধ হয় দুঃস্বপ্নে দেখতেন ড. ইউনূসকে। তখন তাকেও টুপ করে চুবিয়ে নদীর জলে পবিত্র করে নিতে চাইতেন। কিন্তু বিধি এই আর্জি পূরণে তার সহায় হলো না।
যিনি সব কিছুর উপরে সর্বময় ক্ষমতার নিয়ন্তা তাঁর নির্লিপ্ততা দেখে আমি মনে-মনে ভাবছিলাম তিনি বুঝি কেবল ভদ্র পল্লীতেই থাকেন। আস্তাগফিরুল্লাহ! আমার মতো অজ্ঞ ও অদূরদর্শীদের কি তার পরিকল্পনা বোঝার সাধ্য আছে?
তিনি আসলে দেখছিলেন, অপেক্ষা করছিলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার যারা করেন পৃথিবীতে তাদের আরও একটি টাটকা হাল জামানার দৃষ্টান্ত ডিজিটাল দুনিয়ায় মমি করে রাখার! তিনি মানুষকে সতর্ক করার জন্য সময় পরিক্রমায় এরকম উদাহরণ তুলে ধরেন। যারাই জমিনে দম্ভ করে চলে, অত্যাচার অবিচার করতে যাদের বুক কাঁপে না বরং রসিয়ে-রসিয়ে অন্যদের অসহায়ত্ব দেখে আনন্দ অনুভব করে, তাদের শেষ পরিণতিটা কেমন হয় তা তিনি দুনিয়াতেই নির্ধারণ করে দেন।
……….
[চলবে]
ফ্যাসিবাদের পতনের বেলাভূমিতে যেন আর কোন হুতুমপেঁচা না ডাকে!