………..
পুরুষপুরাণ
খসরু পারভেজ
………..
রঙিন মুখোশে মুখ ঢেকে রাখি
নিজেকে দেখাতে বড় লজ্জা হয়!
বোনের সম্ভ্রম হারিয়েছে পথে
মায়ের শরীরে কলঙ্কের কালোদাগ
আমার পিতাও নাম লিখিয়েছে ধর্ষকের দলে
কী করে দেখাই কালনেমি-মুখ!
আমার মা ভাত বেড়ে বসে থাকেন পৌষের ভোরে
তাঁর রান্না সালুনের গন্ধ ঘরময় ম–ম করে
আমাকে ডাকেন — খোকা আয় খেয়ে নিবি
আমি যে আমার মায়ের সামনে আসতে পারি না
আমার বোনটি আমার হাতে রাখী পরাবে তাই
সারাবেলা বসে থাকে
আমি বোনের সামনে আসতে পারি না
আমার কন্যারা পিতৃস্নেহ থেকে এখন পালিয়ে বেড়ায়
তাদের চিবুকে আমি তো কোনো চুম্বন রাখতে পারি না!
একদিন প্রেমিক ছিলাম, বুক ভরা প্রেম ছিল
আমার সে প্রেম আজ বিসর্জনের জোয়ারে ভাসে
আমার মাধবী আমাকে দেখে পালিয়ে যায়!
আমি প্রেয়সীর কাছে এখন আতঙ্কিত আগন্তুক
মায়ের আঁচলে আমি আমার শৈশব লুকাতে পারি না!
আমার মা-বোন-কন্যা-প্রেমিকার কাছে
আমি এক পাপিষ্ঠ পুরুষ,এই সময়ের এক ভয়াল ভক্ষক
আমি আমার জন্মসত্যকে খুবলে খুবলে খাই
তুমুল ধর্ষক হয়ে বেঁচে থাকি!
পুরুষ জীবন জুড়ে শুধু লজ্জা, এ কী লজ্জা!
………….
নয়ন আহমেদ
আছিয়ার জন্য এলিজি
……………
আছিয়া, বোন আমার! আমি দুঃখিত।
আছিয়া, মা আমার! আমি লজ্জিত।
আছিয়া, কন্যা আমার! মানুষ ও সভ্যতার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
তুমি আমাকে ঘৃণায় ঘৃণায় অভিষিক্ত করো।
আমাদের মুখের ওপর ছুড়ে দাও সাত মহাদেশভরা লজ্জার ফোয়ারা।
না! আমরা পশুধর্মের চেয়ে একচুলও ওপরে উঠিনি।
না! আমরা সভ্যতা বানাতে পারিনি — যাতে ঝিলিক দিয়ে উঠবে কোনো সূর্য—
যাতে মা, মাতৃত্ব আর জ্ঞান সমস্বরে চিৎকার করে বলতে থাকবে — এই তো আমরা!
আমাদের অস্তিত্ব। জগৎ। ভরসা আর বিশ্বাসের আবাসভূমি।
আমাদের সুষমা
আমাদের বোধ
হেঁটে চলেছে শুশ্রূষার পথে।
জাহেলিয়া থেকে কবিতার পথে—
সুন্দরের উদর থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে মহত্ত্বের পথে ।
আমরা পারিনি।
হে। আলোকণা! আমরা পারিনি।
হে জ্ঞান! আমরা পারিনি।
হে বোধ! আমরা পারিনি।
উপহাস করো ঘৃণায়। হে আত্মা , উপহাস করো।
হে আমার ভোর! জড় সভ্যতার ওপর আরো একবার থুতু ফেলে যাও।
তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে একবার লাথি মারো।
তারপর আমাদের হৃৎপিণ্ড থেকে কান্না ঝরুক।
মানুষ — এই ধ্বনি থেকে খসে পড়ুক অস্থি , চর্ম।
মানুষ — এই শব্দ থেকে ঝরে পড়ুক পঞ্চ ইন্দ্রিয়।
লালসা ও লবণ ঝরে পড়ুক।
শুয়োরটা ঝরে পড়ুক।
ভেতরের কুকুরটা ঝরে পড়ুক।
তারপর বলবো — আমি এসেছি বাবা হয়ে।
এসেছি ভাই হয়ে।
আমরা এসেছি আস্থা ও অস্তিত্ব হয়ে।
তারপর— মানুষ! মানুষ।
তারপর — এই রোদের ভাষার মতো সভ্যতা আলো দেবে আমাদের।
আছিয়া, শেষবার আমাকে ক্ষমা করো।
আছিয়া, প্রিয় আত্মা আমার! আমাদের ক্ষমা করো —
যেভাবে ক্ষমা করে পৃথিবী।
যেভাবে উজ্জ্বল উষা।
যেভাবে ক্ষমা করে কবর আর মাটি।
আহা! বোন! আমি দুঃখিত।
১৫ মার্চ ২০২৫
………..
আছিয়া
সাজ্জাদ বিপ্লব
………..
আছিয়া–কোন নাম নয়
আছিয়া–কোন পরিচয় নয়
আছিয়া– পৃথিবীর কোন সন্তান নয়
আছিয়া–কোন মেয়ে নয়
আছিয়া–কারো মা-ও নয়
আছিয়া–বেহেশতের এক ছোট্ট পাখি
যাকে আমরা মৃত বলি না।
প্রতিবাদ চলুক।