spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতারেদওয়ানুল হক এর কবিতা

রেদওয়ানুল হক এর কবিতা

ভিতরবাহির

ভিতরে না ঢুকলে কিছুই বোঝা যায় না,

চেনা যায় না কে কতোটা নির্মম!

কার হৃদয় উপচে পড়ে দয়ার সমুদ্র,

কারটা বিক্রি হয়ে গেছে নির্বেবেক পতিতালয়!

কে কতো বড় লুচ্চা, চোর, বদমাশ!

কার আস্তিনের ভিতর লুক্কায়িত বিষমাখা ছুরি,

কে হিরণ, কে মীরণ– কিছুই বোঝা যায় না।

জানা যায় না অহংকারের কতো বেয়াদব রঙ!

কোন চোখে সীমাহীন আলো-তেজপাতা বাতাস

কে আতি দয়াপরবশ রসুলের মতো

কে অন্ধ ফকির, ভিখারীর চেয়েও ভিখারী!

কারুন, ফেরাউন, নমরুদ–

ভিতরে না ঢুকলে কছুই বোঝা যায় না।

কে শাসক-প্রশাসক, কে শোষক?

মানবতার পুরো উল্টো পীঠ

কোন ফুলে ঘ্রাণ আছে-কোনটায় নেই

কে সিংহশাবক আর কে ছাগলের বাচ্চা?

স্পষ্ট হয় না ভিতরে না গেলে!

একটি বনে কতো ঝোঁপঝাড় থাকে- জঙ্গল থাকে

সাপ-বিচ্ছু আরো কতো কী থাকে!

ভিতরে না ঢুকলে কিছুই বোঝা যায় না,

জানা যায় না নদীর ভিতরে কতো নদী প্রবহমান।

চোখঠোকড়া

চোখঠোকড়াটা চোখ খেয়ে গেছে কাল

চোখ চোখ করে আমি কী যে বেশামাল

হাটে খুঁজি মাঠে খুঁজি কই গেলো চোখ

দেবে গেছে পাও আর ছিঁড়ে গেছে নোখ।

ছিঁড়ে গেছে বুক-পিঠ চিবুক ও মন

কী করে যে পার হবো মরু মাঠ বন?

আরো কতো পথ আছে অজানা নিবিড়

যেখানে মায়ার খেলা ছায়ার শিবির।

যেতে হবে সেইখানে যতো খাক চোখ

বলবো না চোখ গেলো আর তারে রোখ

আর তারে বেঁধে রাখ নীল সুতা পায়

ব্যথায় উঠুক ভরে কানায় কানায়।

চোখঠোকড়াটা জানি ঠোকড়াবে রোজ

আমার মগজে তার বিরিয়ানি ভোজ।

ছায়া এবং ছায়া

লোকটা ছায়ারাজনীতি করে,

তার সংস্পর্শে যে যায় তাকেও সে ছায়া বানায়।

মূলত ছায়া ছায়া খেলতেই ভালোবাসে সে।

হঠাৎ কোনো মানুষ যদি এসে পড়ে তার সামনে,

এবং নুনসমানও বুঝে ফেলে চাতুরীর রহস্য-

তখন সে হয়ে পড়ে ভীতসন্ত্রস্ত!

পুলিশের চোখে আসামী ধরা পরার মতো

হঠাৎই  স্থান ত্যাগ করে;

আর দ্রুতই আরেকটি ছায়ার মধ্যে ডুবে যায়।

ছায়ার ভেতরে ছায়া!

অতঃপর  ছায়া, তৎসংলগ্ন  ছায়া,

এবং অন্য আরেকটি ছায়ার খোড়লে বসে

দিনরাত খেলে সে ছায়াবাজি খেলা।

ছায়ার আড়ালে ঢাকা পড়ে কষ্টার্জিত রোদ

এবং অগণিত প্রেমের সকাল।

চিহ্নহীন

 কেবলই ঝরে যাচ্ছে পাতা

মরে যাচ্ছে গাছ

পাখিদের ডানামেলা নেই

নেই আর সুগন্ধ-সুবাস।

কেবলই পুড়ে যাচ্ছে নদী

গুঁড়ে যাচ্ছে চাঁদ

নেই দেখার মতো কোনো আলো

আনন্দ-উদ্ভাস।

কেবলই দুঃখ দুঃখ ভরা রাত

অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মেঘ

জমা হতে হতে ভারি হচ্ছে আরো

আরো কঠিন বজ্রপাত।

কেবলই ভাঙছে ভাঙছে ঘর

নেই আর এতোটুকু আশ্রয়

সাগর উঠে এসেছে পথে

          লন্ড-ভন্ড জীবন!

কেবলই মৃত্যু মৃত্যু গন্ধ

উটকে আসে নাক প্রতিদিন

স্বপ্ন বা সৌন্দর্য বলো কোথায়? 

সবই এখন ধূসর, চিহ্নহীন।

সবুজ অংক

ওরা পুননির্মাণ জানে না।

যা ভেঙে যায় তা দেখে দেখে বিলাপ করে শুধু।

অথচ একজন যোদ্ধাকে পুননির্মাণ জানতে হয়।

ভেঙে যাওয়া জাহাজের মাস্তুল ধরে ভাসতে ভাসতে

তৈরি হতে হয় পুনরায় যুদ্ধের জন্য।

জানতে হয় বারুদের ছাই থেকে পুনরায় গ্রেনেড

হয়ে ওঠার সবুজ অংক।

উত্তপ্ত গলিত লাভা ছুটে আসাকে মথিত করে

এগিয়ে যেতে হয় সামনে,

জানতে হয় মৃত্যুগুহায় রাত্রীযাপন…

আর যারা জানে, তারাই এগিয়ে থাকে সবসময়।

তাদের ছুঁতে পারে না

ভয়

     দ্বিধা

         দুর্ভোগ

তারা নিঃসংকোচে পাড়ি দেয় ঘূর্ণির সমুদ্র।

আমি বলেই

 শুধু আমি বলেই তোমার কাছে আজো আসি

সকল দুঃখ ভুলে গিয়ে দেই সজোরে হাসি

তোমার চোখের স্বপ্ন হয়ে পানার মতো ভাসি।

আমি বলেই তোমার গায়ে পড়তে দেই না দাগ

শোকের মাটি কামড়ে ধরে চেপে আছি রাগ

আমার যতো বন্ধু-স্বজন হয়েছে কালনাগ।

আমি বলেই আকাশটাকে লাগছে এমন ফর্শা

অঝোরধারায় ঝরছে আবার চাইছো  যখন বর্ষা

তোমার মনে বইছে দারুণ শীতল করা হর্ষা।

আমি বলেই সকল কিছু লাগছে ভীষণ ভালো

উঠোনজুড়ে ঠান্ডা বাতাস মিষ্টি চাঁদের আলো

তারার মিছিল বলছে হেসে একটু সোহাগ ঢালো।

আমি বলেই আমার আমি রাখিনি আর ধরে

অকাতরে আমার সকল দিছি তোমার ঘরে

এই নিশীথে একলা-একা পাতার মতো ঝরে।

জরুরি এলান

ছেঁড়া স্যান্ডেলটি পুরাপুরি ছিঁড়ে যাবার আগেই

সেলাই করে নাও, নয় তো বাকিপথ হেঁটে যেতে

হতে পারে খালিপায়,

পাড়াতে হতে পারে রাস্তার দুর্গন্ধ ময়লা, কিংবা-

বিঁধে যেতে পারে অসতর্ক লোহার পেরেক।

সাবধান হও এখুনি!

এবং ঠিক করে নাও টর্চের ঘুমন্ত আলো।

সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।

সাপের হিস হিস, চামচিকা-বাদুড়

গায়ে হামলে পড়তে পারে যে কোনো মুহূর্তে।

বুকের যে অংশ ছিঁড়ে গেছে ভালোবাসতে বাসতে,

সে অংশও জোড়া লাগাও পরম ধৈর্যে।

নয়তো ফিকে হয়ে যেতে পারে জীবনের সমস্তটা,

খসে যেতে পারে নক্ষত্রের রুপালি প্রভাত।

ছেঁড়া ঘর, ছেঁড়া ছাতা মেরামত করো তাড়াতাড়ি,

নয় তো পুরোদমে ভিজতে হবে আগামী বর্ষায়।

রেদওয়ানুল হক

রেদওয়ানুল হকের জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১। পিতা মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক আমিরী, মাতা বেগম রহিমা আমিরী। ভাই-বোন ৫ জনের মধ্যে তৃতীয়। বসবাস ঢাকা মিরপুরে। তিনি কবিতা ও ছড়া লেখেন সমানতালে। সম্পাদনা তার বিশেষ কর্ম। ভালোবাসেন ঘুরতে ও নতুন কিছু করতে।

গ্রন্থ’:

বৃক্ষের দীর্ঘশ্বাস     (কাব্য)—প্রকাশিতব্য

ক্যারাবেরা          (ব্যাঙ্গকাব্য)—প্রকাশিতব্য

রেদুমিক             (ছড়াকাব্য)—প্রকাশিতব্য

উড়ে যায় পুড়ে যায়  (ছড়া)—প্রকাশিতব্য

ছক্কাবক্কা              (ছড়া)—প্রকাশিতব্য

মিনিগিনি             (অণুছড়া)—প্রকাশিতব্য

* থোকায় থোকায় ফুল ফুটেছে (শিশুছড়া)—প্রকাশিতব্য

সম্পাদনা:

উত্তরসূরি— সম্পাদক

* নীলসবুজের হাট—পাতা সম্পাদক

*  উৎসঙ্গ— সম্পাদক (যৌথ)

*  ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র কলম —ব্যবস্থাপনা সম্পাদক

সড়ক—নির্বাহী সম্পাদক

*  মাসিক ফুলকুঁড়ি—সহ সম্পাদক (২০০৬-২০১০)

এছাড়া মাসিক প্রত্যাশা, দ্রষ্টা, নিব, নেশা সহ বেশ কিছু পত্রিকা ও বইয়ের বিশেষ সম্পাদনা আছে তার। 

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. বাহ্ চমৎকার রচনাশৈলী !
    শুভকামনা সবসময়ই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ