spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাদেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব

দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব

ভুলে যাও

ভুলে যাও– ত্বকী’র কথা

বি ডি আর, ইলিয়াস, ৭ খুন, ফেলানী

ভুলে যাও– দু:খ, কষ্ট, বুকের ভেতর যতো জ্বালানী

ভুলে যাও– ৭ জানুয়ারি, চুরিচামারি, মহামারি

ভুলে যাও– দিগন্ত টি ভি, শাপলা চত্বর, গজামঞ্চ, হেফাজত, মাহমুদুর রহমান, আমার দেশ

ভুলে যাও– হিংসা-বিদ্বেষ।

বাচ্চালোগ, সব ভুইলা গিয়া–

গণতন্ত্র গাও।

২.  

পলিটিক্স

রাজনীতিতে পলিটিক্স ঢুকে গেলে 

এমন-ই হয়–

খোলে না গেটের তালা

পালা সকলে পালা

যে পালায় না সে তো যাবে 

বাঘের পেটে

খাবে মা চেটে পুটে।

৩.

একটি অক্ষর

বাংলা ভাষার সমস্ত অক্ষরের মধ্যে

একটি অক্ষর প্রবল স্বৈরাচারী  হয়ে উঠছে–

ফ্যাসিবাদের মতো।

হ্যা, আমি চন্দ্রবিন্দু ছাড়া হ-এর কথা বলছি–

সমগ্র বাংলা থেকে

আমি একে ছেঁটে দিতে চাই।

আপনার কি মত– জনাব আল মাহমুদ?

৪.

গণতন্ত্র 

গণতন্ত্র এখন আটকে আছে গুলশানে

যেন ভুল টানে ঝুলে আছি– তুমি আর আমি

আর কী নির্লজ্জের মতোই না বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে বত্রিশ নম্বর!

তুমি বলো আমার এখন কি করা উচিত–

চুম্বন না– চপেটাঘাত?

ভাবতে ভাবতে হরতাল ও অবরোধ সফল করতে

আমি চললাম মহাখালী পেরিয়ে– 

মহাকালের দিকে।

৫.

ভোট চোর

চলছে কাঁপা কাঁপা গলায়

মিথ্যাচারের পাণ্ডুলিপি পাঠের আয়োজন–

ভোট চোরের কণ্ঠে।

আজ গণতন্ত্র হত্যা দিবস।

আসুন আশার গুড়ে বালির ট্রাক ঢেলে

আয়োজন সফল করি।

আমাদের সঙ্গে আছেন– দক্ষ গোপালীশ

পাশে দলদাস মিডিয়া আর কুড়ি লক্ষ টাকায়

কেনা গুণী কবি ও সব্যসাচী।

সব্যসাচী না হোক–

নব্যদাসী চর্ব্যচোষ্য লোহ-পোষ্য একদল

কপিকুল।

ভুল হতে পারে আমাদের সম্প্রচারে– কিন্তু

কম প্রচারে আমরা নই বিশ্বাসী।

হিংসাশী ও মাংসাশী প্রাণী আমাদের বলবেন না

আমাদের দাঁতে এখনো লেগে আছে–

চৌধুরী আলম, ডাক্তার জালাল ও ইলিয়াস আলীর মাংসের কণা।

ক্ষমা করবেন খিলাল করতে ভুলে গেছি!

আমাদের হাতে কোনো রক্তের দাগ নেই।

বিশ্বজিৎ নামের কাউকে আমাদের

সোনার ছেলেরা হত্যা করেনি।

বিশ্বজিৎ থাক বা না থাক

আমরা বিশ্ব জিতে গেছি।

করেছি তালপট্টি ছাড়াই বালের সমুদ্র জয়।

ভয় শুধু জনগণ।

আমরা থোড়াই কেয়ার করি এসব আবাল ‘জন’ এবং ‘গণ’ কে।

আমরা কি করিনি আয়োজন

সানি লিওন?

আমাদের জাতির নিওন বাতি

এখন

আমাদের হাতে জ্বলছে।

আসুন, এবার গলা খুলে ধানমণ্ডির

রবীন্দ্র সরোবরে–

মমতাজ সঙ্গীত গাই…

৬.

ক্ষমা করো

ক্ষমা করো রুনি ও সাগর

আমরা কেউ সাগর হতে পারিনি।

পারিনি সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে।

কাছে টানতে বা বাঁচাতে মেঘকে।

আমরা ঝাঁকে ঝাঁকে হয়েছি মঞ্জুরুল আহসান- ইকবাল সোবহান।

সোবহান আল্লাহ! মাসাল্লাহ!! আলহামদুলিল্লাহ!!! 

আমাদের হৃদয় ও মন জুড়ে 

গায় বুলবুলি– চুলখুলি

প্রেস ক্লাব আমাদের দখলে

দখলে হাই কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট

আমাদের ডানে-বায়ে ও গায়ে মুজিব কোট

‘জয়’ এবং ‘বাংলা’ আমাদের হাতছাড়া হলেও

‘জয় বাংলা’কে পেরেছি ‘ভয় বাংলা’য় রূপান্তরিত করতে

আমাদের গর্ব–কালো মাগুর, হাইব্রিড হানিফ

ব্যাংকার হেনরী ও ট্যাংকার ইনু

কে ঠেকাতে পারে এবার শান্তিতে নোবেল? 

আমাদের নেত্রী অনেক মেধাবী ও গুণী–

কে বলে খুনী?

–রুনি…রুনি…রুনি…

আমরা শুনি না।

৭.

একটি জাতি

একটি জাতি কতোটা নপুংসক হলে

একজন নায়েক হাতকড়া পড়ে

একজন বিজিবি হিজিবিজি 

লুঙ্গি পড়ে বসে থাকে মিয়ানমারে

একটি দেশ কতোটা ক্লীব হলে

একজন ফেলানী ঝুলে থাকে কাঁটাতারে

একটি রাষ্ট্র কতোটা রাষ্ট্রহীন হয়ে গেলে

একজন ইউনূস দাঁড়ায় কাঠগড়ায়

আর, আমরা শুনি মোদীর ভাষণ, হিন্দিতে

৮. 

দৌড়

শুনেছি, মোল্লার দৌড় নাকি মসজিদ পর্যন্ত

তোমার দৌড় কত দূর আমরা জানি।

আমরা থামিনি পুণ্ড্রপথে, পলাশীর প্রান্তে, যশোর রোডে…

থামবো না প্রেসক্লাব থেকে মিন্টু রোডে…

রড দিয়ে অথবা হাতুড়ি দিয়ে তুমি যতই পিডাও

এ যাত্রা থামবে না, থামার নয়…

এ পথ একা আমার নয়– 

আমাদের।

মির্জা ফখরুল বা সাঈদী কোনো নাম নয়

নামেরও অধিক সর্বনাম, কারো সর্বনাশ।

আছেন সর্বগ্রাসী এক সর্বনাশী–

তার ধ্বংস হোক।

হোক পতন।

৯.

সুন্দর বন ও আমরা

সুন্দরবন থাকুক আর না থাকুক

আমরা আছি, আমরা থাকছি, আমরা থাকবো

আমাদের ভালোবাসা থাকবে, সন্তান-সন্ততি থাকবে, আমাদের দেশ থাকবে

কোন হিংসুক বা কুচক্রান্তকারী, দেশবিক্রেতা আমাদের পথ আগলে রাখতে পারবে না

আমাদের স্বাধীনতা বেঁচতে পারবে না, আমাদের কিনতে পারবে না

আমরা স্ফিংক্স এর মতো জন্ম নিবো বার-বার

আমরা দাঁড়িয়ে যাবো খাড়া আলিফের মতো সোজা হয়ে,শীর উঁচু করে

আমরা ভেদ করবো শয়তানের তীব্র ফুঁৎকার

আমাদের বিশ্বাস ও কমিটমেন্ট, আকাশ ছোঁয়া…

১০.

দেশ

প্লিজ, কেউ আমাকে বলবেন না

বাংলাদেশের গল্প। বাংলাদেশের কথা।

কেউ আমাকে শোনাবেন না কোন পূর্ব দেশের কাহিনী। উপকাহিনী।

গল্পচ্ছলে হলেও বলবেন না, পৃথিবীর মানচিত্রে এ নামে একটি দেশ ছিলো। সে দেশে মানুষ ছিলো। মানুষ নামের পশুও ছিলো। গাছপালা-প্রকৃতি ছিলো। ঘরবাড়ি ছিলো। আদর-আপ্যায়ন ছিলো। দয়া-মায়া ছিলো। স্বজন ও বন্ধুবান্ধব ছিলো। বাসযোগ্য পরিবেশ ছিলো। আনন্দ ছিলো। উৎসব ছিলো। সব ছিলো…

সুখ ছিলো। দুখ ছিলো। দু:খি মুখ ছিলো। সুখি মুখ ছিলো। মায়া ছিলো। মমতা ছিলো…ইত্যাদি…ইত্যাদি…

আমি কোন অতীত শুনতে চাই না।

প্লিজ, কেউ আমাকে অলীক কেচ্ছা শোনাবেন না, জনাব…

আরও পড়তে পারেন

8 COMMENTS

  1. গজামঞ্চটা বেশ,আমি তো গাঁজামঞ্চ পড়ছিলাম ভুলে।

  2. তোমার কবিতা পড়লাম। ভালো লাগলো। ভালো লাগার কারণ কবিতাগুলোর টেক্সট রাজনৈতিক ও নির্মম সত্য। হত্যার রাজনীতি আমাদের সাহিত্যকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এগুলো তারই নিদর্শন।
    তবে কবিতার যে সব গুণের কথা বলি, সেই অলঙ্কারের বিষয় অনুপস্থিত। তোমার কবিতার ন্যারেশন যদি উপমা চিত্রকল্পে রান্না হতো, তাহলে এর স্বাদ আরো বেশি স্বাদু হতো। এটা আমার ধারণা। তোমার কথাগুলো আমারও। তবে আমি লিখলে তাতে যোগ করতাম এমন কিছু লোকজ ব্যজ্ঞন, যা আমার দেশের মানুষের সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ নিয়ে ব্যঙ্গময় হয়ে উঠতো।
    ভালো থাকো এবং আরো লেখো।

  3. সময়ের দাবি পূরণ করার মত সাহসী লেখা। অভিনন্দন প্রিয় কবি।

  4. অসাধারণ সব কবিতা।
    মেধা আর বোধের নান্দনিক সমন্বয়।

  5. বেশ লেগেছে কবিতাগুলো। সময়ের সাহসী উচ্চারণ! একজন কবি সময়ের এবং সময়কে অতিক্রম করেই যান। একজন কবি বর্তমানকে রুয়ে দেন আগামীর জন্য। আপনি তা-ই করেছেন।
    অভিনন্দন কবি!

  6. কী ভীষণ সাহসী সব উচ্চারণ! প্রতিটা কবিতায় যেন একটা করে মিছিল। পোলিশ কবি চেশোয়াভ মিউশ একবার বলেছিলেন, ‘কাকে বলে কবিতা যদি তা না বাঁচায় দেশ কিংবা মানুষকে।’ এইসকল কবিতা আমাকে ভীষণভাবে প্রাণিত করে। আপনাকে শ্রদ্ধা।

  7. অসাধারণ কবিতা। ঝকঝকে তকতকে ভাবনার কবিতা। সময়ের দ্রোহ নিয়ে লেখা দেশপ্রেমের কবিতা। সত্য হচ্ছে কবিকেই উচ্চারণ করতে হয় দ্রোহ। না হয় জীবন বাঁচেনা। সংস্কৃতি বাঁচেনা। মানবতা বাঁচেনা। দেশ বাঁচেনা। অভিনন্দন কবি সাজ্জাদ বিপ্লব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প
নয়ন আহমেদ on যুদ্ধশিল্প
কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন