spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েঘাসে ঘাসে রক্তফুল : পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন : আনিফ রুবেদ

ঘাসে ঘাসে রক্তফুল : পাঠ প্রতিক্রিয়া

আনিফ রুবেদ

রাত কালো। তথ্য হিসেবে এ কথা সকলের জানা কিন্তু অনুভূতি হিসেবেও কি সকলের জানা যে রাত কালো? না, তা সকলের অনুভূতির জানাটা নেই। রাত রঙিন অনেকেই জানে। রাত রঙধনু অনেকের কাছে। তাদের রয়েছে প্রচুর আলোক বাতি অথবা হাতে মদের বোতল অথবা চুমুযোগ্য, বাহুলগ্ন প্রিয় মানুষ।
কিন্তু যারা জানে রাত রঙিন কিন্তু এসবের কিছুই নেই তারা সবচে করুণভাবে জানে, রাত কালো, রাত অন্ধকার, রাত বিভীষিকাময়। জানার পর তারা কী করে? বেশিরভাগই পুড়ে মরে অন্তরে অন্তরে। আবার কিছু মানুষ আছেন যারা মনের ভেতর নতুন বিশ্ব গড়ে তোলেন ঈশ্বরের মতো। নিজেই রঙ লাগান রাতের গায়ে।

‘রঙের ভেতর চুবিয়ে রাখি একেকটি আস্ত রাত।’
[আদরনামা]

কয়েকদিন থেকেই কবি উম্মে হাবীবা ‘ঘাসে ঘাসে রক্তফুল’ শিরোনামক পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ালাম দু’চোখে ভর দিয়ে, একমনে তাকিয়ে। দেখার ক্ষেত্রে চোখ তো হেঁটে বেড়ানোর পা আর মন হলো প্রকৃত চোখ।

উম্মে হাবীবার কবিতার সুর স্বর নরমস্য নরম। কিন্তু এ নরমতার শক্তিটা চরম। নরমের ভেতর প্রচণ্ড পাথুরে শক্তি, পাথুরে বর্বরতা, আবার সিক্ত জমির ফলদায়ক উর্বরতা। যেমন স্তন। এর ভেতরেই রয়েছে নরম অনুভব কিন্তু প্রচণ্ড শক্তিধর খাবার। পৃথিবীর মানুষের প্রাথমিক শক্তির উৎস, বেঁচে থাকার প্রথম ভিত্তি।

আগামীকাল যার ঠোঁটে চুমু খাবো
সে কি মনে রেখেছে
গতবছর কোমরের মাপ কতো ছিল।
[মিডল ফিঙ্গার]
প্রেমহীন সঙ্গমের বিরুদ্ধে, দায়ে পড়ে বা দায়ে ফেলে সঙ্গমের বিরুদ্ধে এ এক মৃত্যুবান মারা বাক্য।

কবি উম্মে হাবীবা সমস্ত কিছুকে বিন্দু বিন্দু করে ভেঙে বিছিয়ে দেন দর্শকের সামনে, যেমনভাবে শস্য শুকোতে দেন কৃষাণ-কৃষাণীরা খলানে খলানে। এই বিন্দু বিন্দু করে ভেঙে দেখানোটা কখনোই যা ভাঙা হলো তার পূর্ণ রূপ দেখা থেকে বঞ্চিত করে না।

সেমি টেবিল চৌকিতে তিনভাগে শুই
একদিকে শৈশব
অন্যদিকে কৈশোর
আরেকদিকে যৌবনের প্রেত।
[অসহ্য ঘুম]

ব্যস্ততা কমলে যে করেই হোক
এবার তোমাকে ভালোবেসে ফেলব।
[পাঁচিল ডিঙিয়ে ]

তিনি এমন সহজভাবে অসম্ভব কথা বলেন যেন একগ্লাস জল চাওয়া হলো। পা দিয়ে পথের একটা পাথরকে স্থানচ্যুত করার মতো—
‘আমার জন্য মোহাম্মদপুর আনবেন।’ [মোহাম্মদপুর]
‘ওটা আমার সবশেষ নিশ্বাস ছিলো
বেচে দিয়ে সাঁতার কিনে নিয়েছি।’ [দেরাজ]
‘অনুগ্রহ করে আমার হয়ে শ্বাস নিন।’ [উল বোনা আঙুল]

কবি উম্মে হাবীবার কবিতা পাঠ করলে নতুন একটা রস নিশ্চয়ই পাবেন পাঠক।

এবার একটা কবিতা পড়া যাক—

নুনের খামারি

ব্যারিকেড তুলে দিন
পেটের ভিতর ঢুকে পড়ুক মানুষ
জঠরের চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় নেই
বাঁচতে চাওয়া মানুষেরা কোথায় যাবে
আমি বলছি সব্বাইকে বাঁচিয়ে রাখবো
দু’বেলা দু’মুঠো ভাত
এদের প্রত্যেকে পাবে
নুনের খামারি কখনো মিথ্যে বলে না
নিজের শরীর কেটে রক্ত খাবো
তবু প্রতিশ্রুতির নড়চড় হতে দেবো না

ব্যারিকেড তুলে দিন
আমি বলছি মানুষ আমাকে ভালোবাসে
তাদের হাতেই আমার লড়াইয়ের শক্তি।

ভালোবাসা কবি উম্মে হাবীবা মায়া… কবিতার বিস্তার হোক আরও আরও…

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ