spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যকবি আসাদ চৌধুরী পৃথিবী ছাড়লেন

লিখেছেন : তৌফিক জহুর

কবি আসাদ চৌধুরী পৃথিবী ছাড়লেন

তৌফিক জহুর

আমরা যাঁদের স্নেহ, ভালোবাসায় বেড়ে উঠেছি নব্বই দশকে, সেখানে ষাট দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি আসাদ চৌধুরীও ছিলেন। একজন প্রকৃত মানুষ। কবি। তরুণদের জন্য তিনি সাক্ষাৎ এক লাইব্রেরি। কতো মত ও পথের কথা আমরা জেনেছি তাঁর কাছ থেকে তার ইয়ত্তা নেই। গত পহেলা মার্চ (২০২২) সত্তর দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি মাহমুদ কামাল ভাই বলেছিলেন টাঙ্গাইলে পাক্ষিক কবিতা পাঠ আসরে কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কে ঢাকা থেকে নিয়ে যেতে হবে। এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে হবে আমাকে। ঢাকা থেকে নব্বই দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন, কবি ফাতিমা তামান্না, কবি আরিফ নজরুল, উদ্যান লিটল ম্যাগাজিনের সহকারী সম্পাদক মাহবুব সেতু এবং কবি ফাতিমা তামান্না আপার মেয়ে রিফা মারিয়াম কে নিয়ে আমরা ষাট দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি আসাদ চৌধুরী ভাইয়ের সফর সঙ্গী হয়েছিলাম। সতের ঘন্টা একসাথে কাটিয়ে অনেক কিছু শিখেছিলাম সেদিন। কবিতা, ধর্ম, বিজ্ঞান, সভ্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কতো আলাপ। আসাদ চৌধুরী ভাই যেন জ্ঞানের পিপা উপুড় করে ঢেলে দিয়েছিলেন। 

পৃথিবীর ট্রানজিট সেরে তিনি চলে গেলেন। ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বৃ্হস্পতিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৩, ভোর ২.৫৮ মিনিটে, কানাডার অশোয়া শহরে, লে’ক রিজ হাসপাতালে কবি আসাদ চৌধুরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উল্লেখ, কবি আসাদ চৌধুরী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন৷

সেই সতের ঘন্টা ভ্রমণের লেখাটি এখানে রাখছি শ্রদ্ধায়। 

কবি আসাদ চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মা  সৈয়দা মাহমুদা বেগম। ।

তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।  এছাড়াও আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫); অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২); শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক (১৯৯৯); ত্রিভুজ সাহিত্য পুরস্কার, বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক, অশ্বনী কুমার পদক (২০০১); কবি আবু জাফর ওবায়দুল্রাহ সাহিত্য পুরস্কার ২০০৫, জীবনানন্দ দাশ পদক; অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক; জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৬). বঙ্গবন্ধু সম্মাননা ১৪১৮, শব্দভূমি আজীবন সাহিত্য সম্মাননা (২০১৮) লাভ করেন।

কবিতা

তবক দেওয়া পান (১৯৭৫); বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬); প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬); জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২); যে পারে পারুক (১৯৮৩); মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪); মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫);

আমার কবিতা (১৯৮৫); ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫); প্রেমের কবিতা (১৯৮৫); দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭); নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২); টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭); বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮); বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮). কবিতা-সমগ্র (২০০২); কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩); ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)।

প্রবন্ধগবেষণা

কোন অলকার ফুল (১৯৮২), 

শিশুসাহিত্য

রাজার নতুন জামা (রূপান্তর, ১৯৭৯); রাজা বাদশার গল্প (১৯৮০);

গ্রাম বাংলার গল্প (১৯৮০); ছোট্ট রাজপুত্র (অনুবাদ : ১৯৮২);

গর্ব আমার অনেক কিছুর (১৯৯৬); ভিন দেশের মজার লোককাহিনী (১৯৯৯); তিন রসরাজের আড্ডা (১৯৯৯) কেশবতী রাজকন্যা (২০০০); গ্রাম বাংলা আরো গল্প (২০০০) তোমাদের প্রিয় চার শিল্পী (জীবনী, ২০০০);

জন হেনরি (আমেরিকার লোককাহিনী, ২০০১); মিকালেঞ্জেনো (জীবনী, ২০০১) ছোটদের মজার গল্প (২০০১); সোনার খড়ম (২০০৬);

মুচি-ভ’তের গল্প (২০০৬)।

জীবনী

সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু (১৯৮৩); রজনীকান্ত সেন (১৯৮৯);

স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী (২০০১)।

ইতিহাস

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৩)।

অনুবাদ

বাড়ির কাছে আরশিনগর : বাংলাদেশের উর্দু কবিতা (২০০০);

প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী কবিতা (২০০৫)।

সম্পাদনা

যাদের রক্তে মুক্ত এদেশ (১৯৯১ যুগ্মভাবে);

ছয়টি রূপকথা (১৯৭৯)।

কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে সতের ঘন্টা

যাত্রা হলো শুরু :

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে বের হলাম। গন্তব্য কল্যাণপুর। মোহাম্মদপুর থেকে বেরিয়ে শ্যামলী এসে আটকে গেলাম অফিসগামী মানুষদের বিশাল গাড়ির জ্যামে। অগত্যা বসে বসে কি করবো, সময়কে কাজে লাগানোর জন্য  নেট অন করে কোলকাতার কবি বন্ধু তৃষ্ণা বসাক এর ” অজিত সিং বনাম অজিত সিং ” এর পুরনো এপিসোড পড়তে লাগলাম আবার। কারণ এই লেখাটি পাঠ করতে সিটবেল্ট বেঁধে নিয়ে পড়তে হয়। যেহেতু গাড়িতে সিটবেল্ট বেঁধে বসে আছি তাই পড়তে অসুবিধে হচ্ছে না। পঁচিশ মিনিট পর ট্রাফিক জ্যাম ছেড়ে দিলো।আমি কল্যাণপুরের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গেলাম। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষমান নব্বই দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন, কবি  ফাতিমা তামান্না, কবি  আরিফ নজরুল, মাহবুব সেতু এবং কবি ফাতিমা তামান্নার একমাত্র কন্যা রিফা মারিয়াম। সকলেই গাড়িতে ঝটপট উঠে বসে গেলেন।এবার আমাদের গন্তব্য কল্যাণপুরের এগারো নম্বর রোড।যেখানে বসবাস করেন ষাট দশকের বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কবি আসাদ চৌধুরী। আমরা কল্যাণপুরের  টেকনিক্যাল মোড় দিয়ে ডান দিকের মিরপুরের রাস্তায় প্রবেশ করলাম। হাতের বামে সরকারি বাঙলা কলেজ রেখে ডানদিকের গলিতে আমাদের মাইক্রোবাস ঢুকে পড়লো। আমরা কবি আসাদ চৌধুরীর ১১ নাম্বার রোডের বাসার নিচে দাঁড়ালাম। কবি  আরিফ নজরুল ও উদ্যান লিটলম্যাগের সহকারী সম্পাদক মাহবুব সেতু গেলো কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কে রিসিভ করার জন্য। পনের মিনিট পর কবি আসাদ চৌধুরী তাশরিফ আনলেন। কবি সামনের সিটে বসলেন। শুরু হলো নতুন এক অধ্যায়। আমরা কবিতার জন্য একজন জীবন্ত কিংবদন্তির সঙ্গে যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের গন্তব্য কবিতার শহর টাঙ্গাইল।

কবির সান্নিধ্যে আমরা :

কল্যাণপুর থেকে বের হয়ে টেকনিক্যাল মোড় এ আমাদের গাড়ি আটকে গেলো জ্যামে। গাড়ি জ্যামে আটকে গেলেও আমাদের মুখ ও কান সমানতালে সচেতন। প্রথম প্রশ্ন করলাম কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কে। সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা পাঠ করেন কিনা?? তিনি বলতে লাগলেন, সাম্প্রতিক তরুণদের কবিতা তিনি বেশ মনোযোগ সহকারে পাঠ করছেন। কিন্তু একটি বিষয় তাঁর মনে হয়েছে, ব্রাজিল- আর্জেন্টিনা যেমন সম্পূর্ণ ফুটবল খেলে, তেমনি এখনকার কবিতা সম্পূর্ণ কবিতা মনে হয়না অনেকের। কবিতায় দারুণ উপমা আছে কিন্তু ছন্দ নেই। আবার গদ্য ফর্মেটে লিখতে যেয়ে তাঁরা বুঝতে পারছে না কোথায় থামা উচিত। গাড়ি জ্যাম মুক্ত হয়ে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পার হয়ে আমিন বাজার ব্রিজে উঠে গেলো।নিচে তুরাগ নদী। বালুবাহী অসংখ্য ভলগেট যাওয়া আসা করছে নদী পথে। অজগরের মতো বিশাল একটা সড়ক শুয়ে আছে। আমরা চলেছি সেই সড়কের উপর দিয়ে। নব্বই দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন জানতে চাইলেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপট। কবি আসাদ চৌধুরী ভাই দীর্ঘদিন কানাডা প্রবাসী। তিনি আন্তর্জাতিক বিষয় সম্বন্ধে বেশ ভালো খোঁজ রাখেন। পৃথিবীর অশান্তিময় বিষয় নিয়ে তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে দারুণ কথা বলতে লাগলেন। জার্মানি তে বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বক্তৃতা করেছেন, সে বিষয় এ আমাদের বললেন। আমাদের চোখের সামনে দুনিয়ার ভূগোল ঘুরতে লাগলো কবি আসাদ চৌধুরী ভাই এর কথায়। এরমধ্যে গাড়ি হেমায়েতপুর পেরিয়ে সাভার ছাড়িয়ে নবীনগরে। আমরা চন্দ্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ কবি ফাতিমা তামান্না আপার মেয়ে রিফা মারিয়াম যে সদ্য কলেজের আঙিনায় পা দিয়েছে সে আমাদের আড্ডায় হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো। মারিয়াম বিজ্ঞানের ছাত্রী এ তথ্য জেনে, কবি আসাদ চৌধুরী প্রশ্ন করলেন মারিয়ামের প্রিয় বিষয় কি?? পদার্থ বিজ্ঞান শুনে সামনের সিটে বসা কবি আসাদ চৌধুরী ভাই প্রাচীন বটবৃক্ষের মতো একটু হেলে হেসে বললেন, আমারও প্রিয় সাবজেক্ট পদার্থ বিজ্ঞান। এরপর কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন ভাই সৌরজগত, আকাশগঙ্গা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলেন। কবি আসাদ চৌধুরী ভাইও এ গ্রহ থেকে বের হয়ে আমাদের একটানে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন অন্য এক জগতে। পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য, স্রষ্টার অস্তিত্ব এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তিনি এমন বয়ান করলেন, আমরা বুঝতেই পারিনি কখন একঘন্টা ত্রিশ মিনিট পার হয়ে গেছে। কালিয়াকৈরে এসে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্লান্টের গা ঘেঁষে নিউ ঘরোয়া রেস্তোরাঁয় আমরা কফি বিরতি নিলাম। কবি আসাদ চৌধুরী ভাই ও কবি আরিফ নজরুল আমেরিকানো কফির স্বাদ গ্রহণ করলেন, মুহম্মদ আবদুল বাতেন, ফাতিমা তামান্না, মাহবুব সেতু ও আমি মিল্ক কফি, মারিয়াম ফালুদায় ডুবে গেলো। আমাদের গাড়ির পাইলট হারুন মশায় কি বুঝলো জানিনা, সেও বললো, স্যার ফালুদা খাবো। সেও ফালুদার স্বাদ জিহবায় নিতে লাগলো। আমরা আবার কবিতা নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম। পঞ্চাশের বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কবি আল মাহমুদ এর বেড়ে ওঠা ও ” সোনালি কাবিন” কবিতার জন্মের আতুরাশ্রমের সম্পূর্ণ নতুন কিছু তথ্য পেলাম কবি আসাদ চৌধুরী ভাই এর কাছ থেকে। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কবি আল মাহমুদ এর কবিতা নিয়ে কিছু কাজ করেছিলাম। ২০০৩ সালে স্বচ্ছন্দ্য প্রকাশনী থেকে ” আল মাহমুদ এবং অন্যান্য ” প্রবন্ধের বইটি বের হয় এবং সে সময় ব্যাপক আলোচনায় আসে প্রবন্ধ গ্রন্থটি। কবি আল মাহমুদ অত্যন্ত খুশী হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “নব্বই দশকের কোনো তরুণ কবির হাত দিয়ে আমাকে নিয়ে লেখা  প্রবন্ধের বই এটিই প্রথম”। কবি আল মাহমুদ কে নিয়ে আরো বিশ মিনিট কথা হলো। কোলকাতার সিগনেট প্রেস ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে কবি আল মাহমুদ  গিয়েছিলেন। কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কবি আল মাহমুদ কে নিয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের একটা স্মৃতি বললেন। বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব বিষয়ে ও কবি আল মাহমুদ এর বেড়ে ওঠা নিয়ে । মুহম্মদ আবদুল বাতেন, ফাতিমা তামান্না, আরিফ নজরুল ও আমি অবাক হয়ে কবিতার ইতিহাসের নতুন অধ্যায় জানলাম। ইতোমধ্যে আমাদের কফি শেষ হয়ে গেছে। টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদের প্রাণপুরুষ ও সত্তর দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি মাহমুদ কামাল ভাই ফোন করে জানতে চাইলেন, আমরা কতদূর। আমরা বিল মিটিয়ে বের হয়ে এলাম। এবার গন্তব্য সরাসরি টাঙ্গাইলে কবি মাহমুদ কামাল ভাই এর বাসগৃহে……… যেখানে অপেক্ষায় আরো বিস্ময়। বিপুলা পৃথিবীর কতটুকু জানি মাবুদ!!  গাড়ি চলতে শুরু করলো কবিতার শহরে…….

কবিতার জন্য কবিতার শহরে

এশিয়ান হাইওয়েতে আমরা, যার বুকের উপর দিয়ে একশো কিলোমিটার বেগে দৌড়াচ্ছি। রাস্তার দু’পাশে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। কচি কচি ধানগাছের পাতা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আর আমরা তাকিয়ে আছি ধান গাছের সবুজের ক্যানভাসে। আহা প্রকৃতির তুলির পরশের সৌন্দর্যে বিমোহিত। আমি তাঁর সৃষ্টির সব বিষয়ে পরম আলোড়ন অনুভব করি ভিতরে। রাস্তা এতো মসৃণ আর গাড়ির ভয়াবহ গতি দুটোই যেন আমাকে চুম্বকের মতো টানতে লাগলো। শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী সৃষ্টি রহস্য ও পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে মারিয়ামের সঙ্গে কথা বলছেন। রাস্তার ডানপাশে একটা রেললাইন শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে শীতের শেষ কম্বলের ওম নিচ্ছে আয়েশ করে, একটু পর কোথাও যাবে। বাতেন ভাই তাঁর মেয়ে মারিয়াম কে বললেন, এই রেললাইন দিয়ে হেঁটে গেলে সোজা ঢাকা পৌঁছে যাবে। আরিফ নজরুল ও মাহবুব সেতুও একই কথা বললেন মারিয়াম কে। ধীরে ধীরে মারিয়াম সহজ হয়ে আসছে।প্রথমে গাড়িতে বসে একটু বিব্রত মনে হচ্ছিল এই সদ্য কলেজ পড়ুয়া মেয়েটিকে। দারুণ সব ছবি সে গাড়ির মধ্যে তুলতে শুরু করলো। মাহবুব সেতুর সঙ্গে সবার আগে খুব স্বাভাবিক কথা বলা শুরু করলো। টাঙ্গাইল শহরের সীমানায় প্রবেশ করেই কবি কুশল ভৌমিক কে ফোন করলাম। যথারীতি সে আমাদেরকে শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়াতে বললো। এই বিদ্যালয়ের বয়স একশ পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। আমরা গাড়ি দাঁড় করলাম শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে। কবি কুশল ভৌমিক এলেন।গাড়িতে উঠলেন। এবারে গন্তব্যের রাহবার কবি কুশল ভৌমিক। শহরের রিকশাগুলো চলছে অলস ঘোড়ার মতো। আমরা একটা নীরব গলিতে ঢুকে একটা ছিমছাম বাড়ির আঙিনায় গাড়ি থামালাম। গেটের উপর চকচকে নেমপ্লেটে লেখা আছে ” কান্তা”। অর্থাৎ এ বাড়ির হোমমিনিস্টার।  আমরা সবুজ ঘাস মাড়িয়ে টাইলসের সিঁড়িতে পা রাখলাম। কবি আরিফ নজরুল ও মাহবুব সেতু শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই এর দু’পাশে হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন। আমি ও কবি কুশল ভৌমিক পাশাপাশি। আমরা কবি মাহমুদ কামাল ভাই ড্রইং রুমে আয়েশ করে বসলাম।দরজা জানালা দিয়ে দক্ষিণ মুখী সূর্যের আলো হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকছে।কান্তা ভাবী এলেন। তাঁর সঙ্গে সালাম বিনিময় হলো।কবি মাহমুদ কামাল ভাইয়ের দুধে-আলতা শরীরের রঙ। তিনি সারা ঘরময় ছুটোছুটি করছেন। শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই এর সঙ্গে শুরু হয়ে গেলো ফটোসেশান। তিনিও পরম আনন্দে অনুজদের পাশে দাঁড়িয়ে, কখনো কাঁধে হাত দিয়ে ছবি তুলছেন। টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদের ৩৪৩ তম আসরে আর একটি বিষয় সংযুক্ত হয়েছে। তা হলো কবি তৌফিক জহুর ও কবি কুশল ভৌমিক এর যৌথ কাব্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন। এই সুযোগে আমি ও কুশল শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই ও কবি মাহমুদ কামাল ভাই এর সঙ্গে যৌথ কাব্যগ্রন্থ হাতে বেশ কয়েকটি ছবি তুললাম। কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন ও কবি ফাতিমা তামান্না তাঁদের বই নিয়ে ছবি তুলতে লাগলেন। কান্তা ভাবীও যুক্ত হলেন এই ছবির দুনিয়ায়। ছবি তোলা শেষে দুপুরের ভোজের জন্য ডাক এলো। টেবিলে কোনো জায়গা নেই। দশ আইটেমের ভর্তা, পাবদা মাছ, শিলং মাছ, রুইমাছ, খাসির মাংস, টাঙ্গাইলের বিখ্যাত দধি ও চমচম দিয়ে স্মরণ কালের ভয়াবহ ভুঁড়ি ভোজে অংশ নিলাম, ষাট দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি ও স্যাড জেনারেশন আন্দোলনের প্রবক্তা এদেশের অল্প কয়েকজনের একজন শ্রদ্ধেয় আসাদ চৌধুরী ভাই এর সঙ্গে। খাওয়ার পর নড়াচড়া ভুলে গেলাম আমরা। আমরা আবার সোফায় আশ্রয় নিলাম। এরমধ্যে সোফার এককোণায় মুখে মাস্ক পরে মারিয়াম ঘুমিয়ে গেলো। শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই মারিয়ামকে বললেন,  তুমি ঘরে গিয়ে একটু ঘুমাও। মারিয়াম বললো, না আমি ঘুমাবো না, কিন্তু সে ঘুমিয়ে গেলো, ক্লান্তিতে। জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন মনে পড়ে গেলে, “…. ক্লান্ত করে, ক্লান্ত করে.. “। শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কে বারবার বললাম, আপনি একটু বিশ্রাম নিন। আমরা আজকেই ফিরবো।আপনার একটু বিশ্রাম দরকার। কিন্তু তিনি বসেই আড্ডা দিতে লাগলেন। ধুন্ধুমার বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। কান্তা ভাবীর বিশাল খাদ্যের আয়োজন দেখে তিনি বললেন, তোমরা বলো বাংলা সাহিত্যে দু’জন এসেছিলেন, যাঁরা রান্না নিয়ে বই লিখেছেন। তাঁদের নাম বলো। আমি সৈয়দ আলী আহসান স্যারের নাম বললাম। কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন ভাই দু’জনের নামই বললেন। সৈয়দ আলী আহসান ও সানাউল হক। কুশলের কাছে সেতু( কুশলের বউ)  ফোন করে জানতে চেয়েছে, আমি তাঁর বাড়ি যাবো কিনা!! আমি কুশলের কাছ থেকে ফোন নিয়ে সেতুকে বললাম, এ যাত্রায় হয়তো তাঁর বাড়ি যাওয়া হবেনা। সেতু ব্যাংকে ছিলো।সে বিকেলে ব্যাংক থেকে সরাসরি কবি মাহমুদ কামাল ভাই এর বাসায় চলে এলো, আমার সঙ্গে দেখা করতে।পৃথিবীর সব বোনেরা এক অদ্ভুত মায়ার জগৎ তৈরি করে তাঁদের ভাইয়ের জন্য। সেতুকে কবি আসাদ চৌধুরী ভাই এর পাশে বসিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম। পরে কুশল ভৌমিক ও সেতু দু’জনকে দু’পাশে বসিয়ে মাঝখানে শ্রদ্ধেয় আসাদ চৌধুরী ভাই কে বসিয়ে ছবি তুললাম। এরই মধ্যে কান্তা ভাবী নুডলস, বিস্কিট ও চা নিয়ে এলেন। পেটে এক ইঞ্চি জায়গা খালি নেই। শুধু চা পান করলাম। বিকেলের সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে। কবি মাহমুদ কামাল ভাই আমাকে বললেন, মাগরিবের নামাজের পর পরই অনুষ্ঠান শুরু হবে। কবি রুদ্র মোস্তফা এলেন। চৌদ্দ দিন পর আবার দেখা হলো আমাদের। কুশল ভৌমিক সেতুকে নিয়ে বাড়িতে গেলো মোড়ক উন্মোচনের বইগুলো আনতে। আমরা সন্ধ্যার পর রওনা দিলাম সাধারণ গ্রন্থাগারের উদ্দেশে। কবি মাহমুদ কামাল ভাই আগেই চলে গিয়েছেন অনুষ্ঠানস্থলে। এবার আমাদের রাহবার হলেন কবি রুদ্র মোস্তফা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম নিরালা মোড়ে।সিঁড়ি বেয়ে শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কে নিয়ে তিনতলায় আমরা পৌঁছে গেলাম লাইব্রেরিতে।

টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদের ৩৪৩ আসরের কবিতা পাঠ :

কবি মাহমুদ কামাল ভাই এর উপস্থাপনায় শুরু হলো স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। যেখানে প্রধান অতিথি শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী, সভাপতি কবি তৌফিক জহুর, বিশেষ অতিথি কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন, কবি ফাতিমা তামান্না ও কবি আরিফ নজরুল। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলো লাইব্রেরি রুম। সবাই কবিতা নিয়ে এসেছেন। শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই এর সামনে কবিতা পাঠ করার এমন বিরল সুযোগ পেয়ে সব কবিরা বেশ এক্সাইটেড। ৩৪৩ তম পর্বটি উৎসর্গ করা হয়েছে শ্রদ্ধেয়া কবি কাজী রোজী কে।অনুষ্ঠান শুরুতে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সকলেই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। শুরু হলো কবিতা পাঠ। পনের জন কবি কবিতা পাঠ করার পর বিশেষ অতিথি কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন কিছু কথা ও কবিতা পাঠ করলেন। এরপর বিশেষ অতিথি কবি ফাতিমা তামান্না কবিতা পাঠ করেন। এরপর বিশেষ অতিথি কবি আরিফ নজরুল কবিতা পাঠ করেন। এরপর উপস্থিত কবিবৃন্দ আবার কবিতা পাঠ করতে থাকেন। কবি মাহমুদ কামাল ভাই ঘোষণা দিলেন এখন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে।গাঁদা ফুলের পাপড়ির নিচে ” শব্দের ওন্কার” এলো। সকলেই দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হলো।প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি কুশল ভৌমিক সংক্ষেপে কিন্তু চমৎকার ভাবে ” শব্দের ওন্কার “জন্মের বয়ান করলেন। করোনার প্রথম ধাক্কায় পৃথিবী যখন বেসামাল তখন রাতের পর রাত জেগে কুশল ভৌমিক এবং আমি কিভাবে কবিতা নিয়ে আলাপ করতাম,কিভাবে আমরা একটি কাব্যগ্রন্থ একসাথে করবো এবিষয়ে তাঁর বয়ান ছিলো সৌন্দর্য সুষমার চাদরে আবৃত। কুশল ভৌমিকের বক্তব্যের পর রাত আটটা পয়তাল্লিশ মিনিটে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। জাতি, রাষ্ট্র, বাংলা ভাষা, বাংলা কবিতা নিয়ে তিনি  চমৎকার কিছু স্মরণীয় বক্তব্য রাখেন। এরপর কিছুটা সময় একটু ছন্দ পতন ঘটে অনুষ্ঠানের। কারণ, হঠাৎ করে শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই একটু অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে নিয়ে লাইব্রেরির এয়ারকন্ডিশন রুমে বসানো হয়।দশমিনিট পর আবার তিনি স্বাভাবিক হয়ে মঞ্চে আসেন। ঢাকায় ফেরার তাড়া, রাতের আহার এবং শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কে বাসায় পৌঁছে দিতে হবে, তখন আমার মাথায় শুধু এগুলো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সভাপতির বক্তব্য দেয়ার জন্য যখন ডাক এলো, অতি সংক্ষেপে শুধু বললাম আগত কবিদের উদ্দেশে,  “আপনাদের সবাইকে আমি  হিংসে করি। কারণ, আপনারা আপনাদের শহরে এমন একজন মানুষ কে পেয়েছেন যিনি একাধারে, কবি, সম্পাদক ও খ্যাতিমান সংগঠক।তিনি মাহমুদ কামাল। ” আর দুএকটি কথা বলে সভাপতির বয়ান শেষ করলাম। এবার শুরু হলো পুরস্কার বিতরণের পালা। গত আসরের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেয়ার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা হলো।রাত তখন নয়টা বিশ। আমরা এবার ছুটলাম ষাট দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবি ও স্যাড জেনারেশন আন্দোলনের নায়ক বুলবুল খান মাহবুব ভাই এর বাসায়। যিনি  শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই এর পরম বন্ধু। সেখানে পৌঁছার পর দেখলাম রাজকীয় ডিনার অপেক্ষা করছে। দুবন্ধু একান্তে কিছু সময় কাটালেন। এরপর কিছু ছবি তোলা হলো আবার। তারপর সবাই একসাথে খেতে বসলাম। দ্রুত খেয়ে আমরা বিদায় নিয়ে নিচে নামলাম

 ঢাকা ফিরতে হবে, এবার। রাত দশটা পনের মিনিটে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম সবার কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে। 

রাতের আকাশে তারাগুলো জ্বলজ্বল করছে। রাস্তার দু’পাশে বাতিগুলো নিরবচ্ছিন্ন আলোর বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অন্ধকার। আমরা ফিরছি। পেছনে রেখে এলাম কবিতায় আসক্ত একঝাঁক মানুষ। কবিতায় নিমগ্ন একটা গোটা শহর। এ শহরের মানুষগুলোর আতিথেয়তা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার আঁচল কবিতার মতোই নিষ্পাপ। শান্তির পায়রা ওড়াতে পৃথিবীতে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে কবিতা।কবিতার কোনো বর্ডার নেই। ডানা মেলে উড়ে যেতে পারে দেশ থেকে দেশান্তরে। আমরা ছুটছি ঢাকার উদ্দেশ্যে। রাত গভীর হচ্ছে। নিকষ কালো অন্ধকারের বুক চিরে দুটো হেডলাইটের আলো তীরের বেগে বহুদূর পর্যন্ত পরিস্কার করে রেখেছে। রাস্তার দু’পাশের সবুজ ধানগাছগুলো ঘুমিয়ে গেছে। আকাশের তারাগুলো জেগে আছে। জেগে আছে রূপসী চাঁদ। আমাদের গাড়ির ভিতর ঘুমিয়ে গেছে কবি আরিফ নজরুল, মাহবুব সেতু কিন্তু জেগে আছেন শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই, মারিয়াম, ফাতিমা তামান্না, মুহম্মদ আবদুল বাতেন ও আমি। কবি আসাদ চৌধুরী ভাই তখন বয়ান করছেন একটি জাতির উন্নয়নের জন্য কিভাবে কাজ করতে হয়, মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় কিভাবে ডুবে থাকতে হয়, উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিকবৃন্দের সভ্য হওয়ার পিছনে তাঁদের অধ্যবসায়, পৃথিবীর চেয়ে কতো বড়ো বড়ো গ্রহ আছে এমন সব চমৎকার বিষয় নিয়ে নিশি রাইতে তাঁর কথাগুলো মনে হচ্ছিল কোনো এক আউলিয়ার মধ্যরাতের কালগুজার। আমরা তন্ময় হয়ে শুনছিলাম তাঁর কথা। তাঁর চিন্তা। তাঁর দর্শন। আধুনিক কবিদের কতোটা নান্দনিক পড়াশোনা জানা থাকলে তিনি রাজনীতি, সমাজনীতি, ভূগোল, রসায়ন,পদার্থ বিজ্ঞান, কবিতা, ধর্ম, জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে ক্রমাগত বলে যেতে পারেন, তা কবি আসাদ চৌধুরীর সান্নিধ্যে সতেরো ঘন্টা না কাটালে টেরই পেতামনা। 

তুরাগ নদীর আগে একটা বিশাল ট্রাক জ্যামে আটকে গেলাম। আমাদের মধ্যে ফেরার তাড়া থাকলেও একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম। আমিন বাজার ব্রিজ পার হলেই ঢাকার গাবতলী। সান্নিধ্যের আকুলতা বেড়ে গেলো আরো। তিনি চমৎকার ভঙিমায় বলেই চলেছেন। পঁচিশ মিনিট জ্যামে আটকে থাকার পর আমরা আবার রওনা দিলাম। সরাসরি কল্যাণপুরের এগারো নম্বর রোডে এলাম। মাহবুব সেতু শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী ভাই কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।আমরা গলিমুখ থেকে বিদায় নিলাম। তিনি বারবার বলতে লাগলেন আজকের ভ্রমণটা তিনি খুব এনজয় করেছেন। তিনি অনেকদিন পর তরুণদের সঙ্গে কবিতার জন্য এমন সফর করলেন। তিনি নেমে বিদায় নিয়ে মাহবুব সেতু কে সঙ্গে করে হাঁটছেন। আমরা তাকিয়ে আছি তাঁর গমন পথের দিকে।রাত তখন একটা বাজে। গাড়ি ঘুরিয়ে আমরা ছুটছি মোহাম্মদপুর। মোহাম্মদপুরে আমি নেমে গেলাম। কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন, কবি ফাতিমা তামান্না, কবি আরিফ নজরুল ও মারিয়াম চললো খিলগাঁও তালতলা অভিমুখে। তাঁরা সেখানে নেমে গেলে কবি আরিফ নজরুল যাবে যাত্রাবাড়ি, তাঁর ব্যক্তিগত বাড়িতে। কবিতার জন্য সতের ঘন্টা। কবিতার জন্য পথচলা। কবিতার জন্য কবিতার শহরে।##

আকাশের তারা হয়ে গেলেন আসাদ চৌধুরী। এ হৃদয়ে গেঁথে থাকবে তাঁর সার্বজনীন কথাগুলো। ছবিগুলো থাক। চোখের সামনে অগ্রজের চেহারা ভাসবে। 

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ