প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম

গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম

মানুষ কখনো নদী

এত জল নিয়ে কেনো চলে পথ? দুই কূল জুড়ে স্বপ্ন, বৃক্ষ, গুল্ম, মাঠ, নানারঙ শাড়ি, পাশে রেখে ছুটে যায় স্রোত, মোহনার লোভে।
ভাঙ্গাঢেউ, গুণটানা গান, হাটবার, খেয়া পারাবার, খরার খোলস।
ঝাঁপ দিলে বুকে– কাছে টেনে নেয়। ভীষণ আপন করে ধুয়ে দেয় শরীরের দাগ। মন থেকে কিছু কিছু মুছে যায়, কিছু কিছু খসে যায়। হয়তো তোমার স্মৃতি। বিকেল পোড়ানো প্রণয় আগুন। কতোবার পুড়ে পুড়ে ফেলে দিতে জলে। পুনরায় কতোবার পাঠিয়েছ প্রণয় সাঁতারে। মনে হতো তুমি অন্য নদী। অন্য তীর। মাঝে মাঝে নারী হয়ে ওঠো, মাঝে মাঝে নদী। মৃত্তিকার পথ ধরে প্রেম খুঁজে খুঁজে ছুটে যাও মোহনার দিকে। প্রেমিকের লোনাস্বাদে রতিতৃপ্তি খুঁজে পেতে দেও জলের অঞ্জলি।
ভারী বৃষ্টির বুননে গলা ডোবা বান। ক‚ল থেকে দূরে, আরো দূরে। ধান নেই, জমি নেই, ধু-ধু, বাতাসের শিৎকার। চাষীরা কোথায়? ঘরে বসে জাল বোনা। অভাবের গৃহে গিন্নি দেখে গোলাজুড়ে দুশ্চিন্তার ভাপ। সাপরঙা লেজ নাড়ে। নদীরা সংগ্রামী। চাষীরাও। ঘাম-কষ্ট বীজ পুঁতে পুঁতে মাটি থেকে সোনা তোলে। সেখানে বানের তুলি কিছুটা সময় কেড়ে নেয়। তবু জীবনের দীর্ঘ চরে চাষী শুধু চাষ করে যায়, সোনা তোলে বারবার। তার পাশে কোন প্রতিকূল চিরস্থায়ী বন্দবস্ত নেই। তার কাছে নদী যতো তিক্ততার , ততো বলে দেয় মাটি সিক্ত হোক।
নদীরা কখনো চাষী হয়ে ওঠে, কখনো মানুষ। ভাঙাগড়া খেলে। গন্তব্যের দিকে ছুটে যেতে একরোখা ষাঁড়। আর বিজ্ঞ ঘ্রাণ শুঁকে ঠিক ঠিক স্বীয় পথ চিনে নিতে পারে।
মাঝে মাঝে নিজেকেই মনে হয় নদী। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ভিতরে কতশত নদী। হয়তো আমরা সকলেই নদী, গন্তব্যের খোঁজে ছুটে যাই জীবনের স্রোত ঠেলে। হতে পারে মানুষ কখনো নদী, নদী কখনো মানুষ।

রাত

আঁধার ঘুমিয়ে আছে রাতের শরাবে
জোছনা নেশায় একমুখ ভালোবাসা
ঝিঁঝি পোকার সুরের অন্তরা সঞ্চারী ঠোঁটে মেখে
যৌবনের দোরে দাঁড়ায় ভোরের প্রতীক্ষায়।

রাত! দিনের গেলাসে ঢালা তরল সোহাগ
আঁধারিয়া বরফ কুচির ছোঁয়া পেয়ে আরো নেশাতুর
বরফের সাথে সময়ের কী অপূর্ব মিল!

বরফের কুচি গলে গলে আর বরফ থাকে না
সময়ের কাঁটা ঘুরে ঘুরে বিগত সময়ে মিশে যায়
একটি ফসিল পড়ে থাকে চেতনার বিছানায়
স্বপ্নের শরাব- ডেকে আনে আঁধারের ঘুম।

রাতের শরাব গিলে নির্ঘুম সময়
পেছনে পেছনে ছায়ার আদলে চলে
কখনো কখনো ঘুমের বালিশে মাথা রাখি
কখনো কখনো অতিরিক্ত গিলে
কাটাই নির্ঘুম রাত।

রাত! প্রেমের ডোবায় সন্তরণী সুরা
দাঁড় করে রঙিন ভোরের মুখোমুখি।

কুটা

কুটা। বাতাসে নিঃশব্দে
উড়ে উড়ে নাচে, কোষে কোষে ঘোরে
খড়-কুটা!
বাড়ে, ক্রমাগত বাড়ে
কুটা কুটা উচ্চারণে
বায়ু ভারী
নাক জ্বলে
নাকের বিদ্রুপ শুনে শুনে
হায়াহীন বিড়ালের ঢঙে কুটা ওড়ে!
কেন?
আসলে কুটার কী প্রয়োজন?
গায়ে কি সুগন্ধি মাখা?
যেনো প্রোটিন সমৃদ্ধ স্বাদে কুটা ওড়ে!
শুধু শুধু ওড়ে, নৃত্য করে করে ওড়ে
দুর্বৃত্তের জামা গায়ে
হিসাবের দশমিকে দশমিকে ওড়ে
হাটে-বাজারে, অফিসে-আদালতে, দাম্পত্য ছাতায়
চিন্তা-চেতনায় কুটা ওড়ে
চোখ বন্ধ করে কুটা ওড়ে!

বড়ই নির্লজ্জ কুটা
বুদ্ধিহীন, সংক্রামক
অলিতে গলিতে ছায়া ফেলে
নীতির বালিশে তিলা ফেলে
শৃঙ্খলার স্তরে স্তরে নোখ নোখ সুড়সুড়ি কাটে
মিনমিনে কুটা

কুটা ওড়ে
আনাচে কানাচে কুটা ওড়ে!

যদি একনজর তোমাকে দেখি

যদি সমগ্র পৃথিবীসহ দুধের সাগরে সাঁতরাই
মাছের সোনালি জামা গায়ে
প্রবালের আগ্রহ মিশিয়ে
অতলের পাহাড় পর্বত ঘুরে ঘুরে
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।

সীমান্ত শৃঙ্খল ভেদ করে
রাষ্ট্রশক্তির পুলিশি চোখে উপেক্ষার আঙ্গুল ঘুরিয়ে
যদি পাখিদের মত উড়ে উড়ে
দেখে আসি নায়াগ্রা প্রপাত, আটলান্টিকের বরফ প্রণয়
হিমালয়ের শিখর, মরু সাইমুম, সাইবেরিয়ার পাখি
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।

যদি নোবেল প্রাইজ হাতে এসে পড়ে
যদি জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হই
যদি বাংলাদেশী কবি নজরুল, ফিলিস্তিনি ইয়াসির আরাফাত,
ইরাকের মুকতাদা আল সদরও বনে যাই
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।

যদি টমা হক, ক্রুজ মিসাইল,
আণবিক সাবমেরিন চাষের উর্বরতা খুঁজে পাই
যদি পৃথিবীর যাবতীয় মারণাস্ত্র ধ্বংসের সনদ পেয়ে যাই
যদি আনন্দের হ্রদে পুঁতে ফেলি যন্ত্রণার যত ঘর-বাড়ি
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা