spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা ও কাব্যভাবনা : সাযযাদ কাদির

গুচ্ছ কবিতা ও কাব্যভাবনা : সাযযাদ কাদির

[কবি সাযযাদ কাদির এর সঙ্গে ঢাকায় বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হলেও মূলত অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েবজিন–বাংলা রিভিউ (প্রথম পর্যায়ে : ২০১৬ সালে) সম্পাদনাকালে ফেসবুকের কল্যাণে আবারো যোগাযোগ গড়ে ওঠে বাংলাদেশের ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান এই সাহিত্যিকের সঙ্গে। তাঁকে কবিতা ও কাব্যভাবনা পাঠানোর অনুরোধ করলে তিনি ২৯ মার্চ ২০১৬ সালে তাঁর স্বনির্বাচিত একগুচ্ছ কবিতা, কবিতা ভাবনা ও পরিচিতি পাঠান। কিন্তু অনিবার্য কারণে এর মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় আমাদের “বাংলা রিভিউ”। এর কিছুদিন পর ০৬ এপ্রিল ২০১৭ সালে কবি সাযযাদ কাদির চলে যান পৃথিবী ছেড়ে। 

‘বাংলা রিভিউ’ পুনরায় নতুন আঙ্গিকে ও নতুন ওয়েব ঠিকানা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে। 

অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট এর সুবাদে ইমেইল থেকে অনেকের অনেক লেখা কবিতা, গদ্য ও সাক্ষাৎকার উদ্ধার করে পাঠকদের সামনে পেশ করতে থাকি সেসব পুরনো কিন্তু মূল্যবান লেখাগুলো। এর ধারাবাহিকতায় (এখন পর্যন্ত) সম্ভবত শেষ উপস্থাপনা কবি সাযযাদ কাদির এর এই অমূল্য কবিতামালা, কাব্যভাবনা ও স্বপরিচিতি। আমরা জানি না কবি’র এই লেখাগুলো পরবর্তীতে গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে কি-না!

পাশাপাশি, উইকিপিডিয়া বর্ণিত কবি’র পরিচিতি তুলে ধরা হলো। 

–সম্পাদক : বাংলা রিভিউ ]

সামনে রোদ্দুর

ছায়া কোথায়? হাত-পা ছড়িয়ে উদোম হয়ে

রোদ্দুর শুয়ে আছে সবখানে।

কাল রাতে বৃষ্টি ছিল, আজ একটু ছিঁটেফোঁটা নেই

গাছের পাতায়।

পলাতক সব মেঘ।

হাওয়া-ও নেই আজ। তাই

কোথায় পাবে একটু স্নিগ্ধময়তার ছোঁয়াছুঁয়ি?

কিছুটা সুশীতল আরাম?

এখানেই থাকো।

একটু এগিয়ে আসো, আমি বেরিয়ে পড়ি।

বসন্তে একদিন

একবার এমনি এক বসন্তের দিনে

লুশান-এর চূড়ায় উঠে উধাও নীলিমার দিকে তাকিয়ে –

আরেকবার

হুয়াংশান-এর চূড়ায় দাঁড়িয়ে

মনে হয়েছিল

ঝাঁপ দিই মেঘের সমুদ্রে –

উড়ে যাই নিঃসীম অনন্তের বুকে!

একবার ঠিক বুঝেছিলাম একটু পরেই বন্ধ হবে বুকের ধুকপুক

তাই চোখ বুজে ছিলাম আগে থেকেই

একবার মনকে বোঝানোর আশায়

বিছানায় এ পাশ ও পাশ করেছি সারা রাত

একবার জেনেশুনে পান করেছি যন্ত্রণাবিষ

কাতর হয়েছি সয়ে-সয়ে শতেক জ্বালা

একবার মুখ ফিরিয়ে তার চলে যাওয়ার পরও

অপেক্ষায় থেকে নিয়েছি পরম প্রেমের স্বাদ

আবার এক দিন কোনও কারণ ছাড়াই

একাই হেসেছি, একাই গুনগুন করেছি গান

একবার শুধু তাকেই বেসেছি ভাল যে বাসে না

বাসবেও না কোনও দিন

জটলা

ওরা দু’জন। একজনের পরনে হলুদ-কমলা ছাপা শাড়ি।

মেলায় যাওয়ার পথের এখানে ওখানে ছোটখাটো জটলা —

ওগুলো থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলে ওরা।

এ নিয়ে কবিতা লেখার হয়তো কিছু নেই, তবে

আমার মনে হয় শাড়ির আঁচলটা বারবার আঙুলে পেঁচিয়ে

কি যেন ঠিক করে নেয় মহিলা। আর পুরুষটি

হাত বাড়িয়ে তার কব্জিটা ধরে, কি যেন বলে কিছুক্ষণ।

মহিলার হাত সাদা, খালি। পুরুষের চশমায় হঠাৎ

ঝিকিয়ে ওঠে রোদ, তারই একটু ঝিলিক লাগে

মহিলার নগ্ন ফরসা হাতে। ওদিকে জটলা বাড়ে পথে,

শ’-শ’ নরনারী যায় আসে মেলায়। তবে ওই দু’জন

পড়ে না তাদের কারও চোখে। জটলার মধ্যে

থাকে তারা জটলার বাইরে। বিচ্ছিন্ন। তারপর

কোন শূন্যতার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা

মহিলার সাদা হাত, কব্জি ভেসে ওঠে হলুদ-কমলায় – দেখায়

বড় সৌন্দর্যমণ্ডিত। আমাদের চোখে ভাসে ভাসমান হাঁসের গ্রীবা।

পুরুষটি বড় দুঃখী হয় ওই সৌন্দর্য দেখে, অনুতাপ ঝরে

তার কথায়। কি যেন বলে সে, মহিলাও বলে নতস্বরে।

এ ভাবে নিজস্ব এক জটলা হয়ে ওঠে তারা দু’জন।

জানালা বিষয়ক

জানালা নিয়ে

তেমন কিছু বলেন নি কেউ —

কোনও পরতুগিজ বা

পারস্যবাসী কেউ।

কবি বলতে ওই নজরুল শুধু

জানালার ও পাশে দেখেছেন

সুপারি গাছ কয়েকটি, এছাড়া

আই এম পেই বা

আমাদের পাড়ার পানু মিস্ত্রি বা

ও পাড়ার ছানা ছুতারের কাছে

কখনও জানালা সম্পর্কে

শোনা যায় নি কিছু।

তবে আমি দেখেছি

জানালার একটি মুখ কেমন বিহ্বল থাকে

হৈমন্তী জ্যোৎস্না-কুয়াশায় মগ্ন

আকাশের দিকে তাকিয়ে

অন্য মুখ প্রায়ই নিজেকে লুকিয়ে রাখে

নিষ্প্রদীপ-দুর্নীতিতে আক্রান্ত

আমাদের ছোট-ছোট ঘরের দিকে।

শীতের এখনও কিছু দেরি

সারা দিন-রাত

জানালার পরদা ওড়ে

হাওয়ায়

ধুলোবালি জমে টেবিলে–বইয়ে–কাপড়–

কোলাহল আসে।

তবু ভাবি

এই জানালাপথেই তো সম্পর্কিত আছি

ওই দ্যুলোক

আর এই ভূলোকের সঙ্গে।

দেয়ালের মধ্যে–ঘরের মধ্যে

জায়গা করে নেয়া

এই যে জানালা

এ আমাদের সবচেয়ে নিবিড় নিকট।

আপন একান্ত।

এখানে এই এতটুকু ঘরোয়া বিলাসে

সে-ই তো নামিয়ে আনে সুরভরা সুদূর নীলিমা!

আবার সে-ই তো কখনও নিয়ে যায়

আকাশভরা স্বপ্নমায়ায় – বিশ্বভরা প্রাণে!

এ ভাবে এই পথে রোজ

দূরত্বে ও নৈকট্যে

দারুণ একটা মিলমিশ ঘটিয়ে

স্বপ্নেরা আসে যায়

এই প্রাণপাত জীবনে আমাদের।

তবুও জানালার কোনও উল্লেখযোগ্যতা

কোথাও দেখি না কখনও।

চুপচাপ

খুব মনে আছে তোমার সাজগোজ–

তোমার খোঁপার ফুল, মালা

পরনের ঢাকাই শাড়ি

তোমার সেই কেমন গুটিসুটি মেরে বসে থাকা

তারপর সেই ঠাণ্ডা গলায় ‘না’ বলাটা

এখনও মনে পড়ে খুব।

মনে নেই শুধু

তোমার সেই প্রত্যাখ্যানের পর

কেমন কি হয়েছিল আমার।

তবে জানি, এখন তোমার অমন নিষ্করুণ উপেক্ষায়

কিছুই মনে হবে না আমার।

ক্ষোভ দুঃখ ব্যথা বেদনা অভিমান – এ সব

মন থেকে ধুয়ে মুছে ভেসে গেছে কবে!

বছরের পর বছর গেছে কিভাবে কেটে… তারপর

কে কোথায় এখন কে আর জানতে চায়…

কে আর কাকেই বা কি মনে রাখে!

এখন চুপচাপ থাকি, চুপচাপ চলি –

চুপচাপ… একেবারেই চুপচাপ!

মণিমালা সোনামন

তুমি আছো তত্ত্বনিয়ে, আছো পরিণতির সন্ধানে!

জানি ও সব কেয়স থিওরি, বাটারফ্লাই এফেক্ট…

“চাকরি পাওয়ার অনেক উপায় আছে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চাকরি পাওয়া”

প্রজাপতির পাখনার একটু কাঁপন

বাতাসে ছড়িয়ে দেয় যে বিশৃঙ্খলা

ক’ সপ্তাহ পর

হাজার-হাজার কিমি দূরে

সে উচ্ছৃখলতাই নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ভয়ঙ্কর।

মণিমালা সোনামন, আমি ভাবি

জুলাইয়ের এই শেষ দিনে

তোমার ওই ভুরুর কাঁপন নিয়ে–

সেপটেম্বরে তা-ই যদি সর্বনাশা সুনামি হয়ে এসে

লণ্ডভণ্ড করে দেয়

সুমাত্রা-জাভা’র সাগর!

জানি, মাঝরাতে দেয়াল বেয়ে

টিকটিকির সর-সর উঠে যাওয়া

মধ্যদিনে সিংহনাদেরও অধিক।

জানি, বাতাসে উড়ে আসা সামান্য খড়-ও

সময়মতো

ভেঙে দিতে পারে তাবড় নেতাদের

মেরুদণ্ডের হাড়, মুণ্ড, ধড়!

তাই তোমার কঠিন দৃষ্টি, যাকে বলে রোষকষায়িত,

তা দেখে ভাবি

কবে আবার দাঙ্গা লাগে

মেকহিকো বা আরহেনতিনা’র কারাগারে,

গলে যায় গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ!

আর এই যে এখন, এই মুহূর্তে, তুমি

ঠোঁটের কোণে আঁকলে মৃদু রেখা –

দেখো, পৃথিবীর তাবৎ শববাহকের চোখে

তাতেই কেমন ঝিঁকিয়ে উঠেছে

ফুল-ফোটানো আলো।

কবির আঙুলগুলো

আমাদের ভাবনাগুলো কেমন – জানো?

চারপাশের এই আলো, হাওয়া, পানির মতো!

ওরা ঠিকই আমাদের ভেতর থেকে

বাইরে যাওয়ার পথ খুঁজে নেয়…

তারপর সত্যি-সত্যি বেরিয়ে পড়ে…

ছড়িয়ে যায় এদিক-ওদিক।

কি দিয়ে আটকে রাখবে?

ঢুকিয়ে রাখবে খাঁচায়?

উঁচু-উঁচু দেয়াল আর গরাদের মধ্যে?

দাঁড় করাবে কাঠগড়ায়?

কিন্তু মানুষ সবচেয়ে বড়, মানুষের অধিকারও।

তাই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মরে ভাগাড়ে,

কল্লা যায় ঘাতক জল্লাদের।

ইতিহাসের সব স্বৈরাচার, দেখো এখন,

সময়ের পাদটীকা মাত্র।

হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে

প্রতিটি কথা ও কবিতা

– আর কেউ নেই, কিছু নেই।

আছে কবি, আছে কবির সাক্ষ্য –

দেখো ওই

মাটিতে আমানি খাওয়ার গর্ত

শোনো ওই

শিশুর কান্না ওদনের তরে

আরও শোনো

দুধেভাতে সন্তানেরে বাঁচিয়ে রাখার আর্তি।

তাহলে এই হাজার বছর শেষে

জীবনের কোন পাড়ে আমরা এখন?

এ এক বধ্যভূমি সামাজিক অবিচারের…

এখানে অর্থ আর অস্ত্রের অন্যায় শুধু।

কবি? আছে। আমাদেরই একজন সে।

এত অপমান অসম্মান, এত রক্তচক্ষু, তবুও

তাকেই ভয় পায় প্রভুরা –

তার পথে-পথেই বসায় পাহারা।

কিন্তু কবির আঙুলগুলোতে কত শক্তি

তার শব্দে বাক্যে কত বিস্ফোরক

কিছুই কখনও জানে নি ওরা।

এখনও জানে না

একদিন

সব হুঙ্কার হুমকি তর্জন গর্জন মিইয়ে যাবে

সব হামলার মোকাবিলা হবে

সব হুকুমের হলকুম টিপে ধরবে মানুষ!

এ পৃথিবীতে

সত্য ও স্থায়ী শুধু

জীবন। আর জীবনের কবিতা।

একা একজন

এই তো আষাঢ় শেষ, শ্রাবণ আসি-আসি।

আকাশ দিন-রাত কালোয় কালো।

ঝুপ-ঝুপ বৃষ্টি কখনও হঠাৎ।

সন্ধ্যা নামতেই সংবাদে ভরে যায় চারপাশ।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ। মিয়ানমারে জাতিনির্মূল।

পদ্মা সেতুর নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি।

হত্যা ধর্ষণ লুণ্ঠন অগ্নিসংযোগ এখনও অব্যাহত এদেশে।

এভাবে আর কত দিন, বন্ধু? প্রতি দিনই ভেঙে

চুর-চুর হয় সব স্বপ্ন, আশা। আশুলিয়া’য় রক্ত ঝরে।

গুম। খুন। অলীক বন্দুকযুদ্ধ। সীমান্তে লাশ।

কালো টাকা কিনে নেয় ক্ষমতা, তছনছ করে

জনগণের অর্থ-সম্পদ। দাস্যসুখে হাস্যমুখ থাকে

জাতির সুশীল মেধা।

লিখেছো, ‘এ এক উর্বরভূমি অন্যায়ের।’

আরও লিখেছো, ‘আমি অক্ষম, নিঃসঙ্গপ্রায়।’

তোমার কলম ও কণ্ঠ – দিন গেছে দু’টোরই।

রথী-মহারথী সব মেতেছে স্বৈরতায়, লুণ্ঠনে –

এখানে একা তুমি কি আর করতে পারো?

তাই ঘরের আলো নিভিয়ে এখন ডুবে আছো অন্ধকারে।

তবুও ভাবছো।

বাইরে অপার আকাশ,

সেখানেও জেগে আছে একা এক তারা। স্থির। অচঞ্চল।

আকাশের দিকে হাত

এ সবই চলছে, চলে আসছে।

তিনি বলেন, আমার কথা মানতে হবে।

আমি ঘাড় ত্যাঁড়া করে বলি,

কিসের কি কথা? কিসের মানামানি?

তিনি টেবিল চাপড়ে বলেন, মানতেই হবে।

আমি গর্জে উঠি, মানি না – মানবো না।

তিনি ছাড়েন হুঙ্কার, তবে রে…?

তারপর বয়কট

অবরোধ – ঘেরাও –

অবস্থান ধর্মঘট,

কাঁদানে গ্যাস, গরম লাল পানি, লাঠি চার্জ!

ঘরে বানানো কিছু পটকা

এখানে-ওখানে ফাটে বুম-বুম…

ফাঁকা গুলি করে ওঠে ঠা-ঠা-ঠা!

প্ল্যাকার্ড-ফেসটুনে লেখা ¯েøাগান

তুলে নিই মুখে –

সমস্বরে ছুড়ে দিই তাঁর দিকে।

সাইরেন বাজিয়ে এদিক-ওদিক ছোটে অ্যামবুলেন্স!

ততক্ষণে গ্যাস-ধোঁয়ায় চোখ ফেটে আসে পানি…

তবুও মুঠো পাকিয়ে হাত তুলি আকাশের দিকে

আর তখনই

কে একজন ক্লিক করে ক্যামেরায়!

দু’-এক দশক পরে ওই ছবিটা হয়তো দেখবো

কোনও পত্রিকা, বই বা প্রদর্শনীতে –

ভাববো তখন কি যৌবন ছিল আমার!

দুঃখ নিয়ে যাই

এ শহর থেকে চলো সব দুঃখ নিয়ে যাই।

এই ভাঙা অলি-গলি

উপচে পড়া নর্দমা-আবর্জনা

এই যানজট

বিদ্যুৎবিভ্রাট

গ্যাস-পানি সঙ্কট

বাজারে পাগলা ঘোড়া

ফাটকাবাজারে নিঃস্ব আত্মহন্তা

এত সব দুঃখ নিয়ে, চলো, এখনই চলে যাই।

ফুটপাতের বিকলাঙ্গ ভিখিরি

ট্রাফিক মোড়ে অন্ধ বালিকা

ওভারব্রিজে রাতের পসারিণী

বস্তিতে শিশুর কান্না

সকলের দুঃখ নিয়ে চলো যাই এ শহর ছেড়ে।

হাসপাতালের বারান্দায় মুমূর্ষু প্রবীণ

ক্যামপাসে রক্তাপ্লুত তরুণ

ক্ষতাক্ত কিশোরী

চাঁদার ডান্ডা ট্রাক ট্রাফিক টারমিনালে

আরও অনেক দুঃখ নিয়ে যাবো এ শহর থেকে।

এখানে ব্যবহৃত ব্যবহৃত ব্যবহৃত সব কিছু

মহাগ্রন্থ, মহান নেতা

ইতিহাস, চিন্তাধারা

ফুল, ভালবাসা।

তবুও তুমি আছো

প্রিয় পরী প্রাণেশ্বরী আমার,

এখনও কেবল তুমিই আছো।

মৃত্যু বা ধ্বংস

বা

বিস্মৃতি

আরও কত দুঃখ আছে

তবুও, চলো যাই, এ শহর থেকে সব দুঃখ নিয়ে।

কবিতা বিষয়ক ভাবনা

ভাব, ভাষা ও নির্মাণের দিক থেকে নতুন রকম কবিতা রচনা প্রয়াস আমার সচেতন চর্চার শুরু থেকেই। চেয়েছি নিজস্ব ভাবনা, মৌলিক চিন্তন, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে কোনও সত্য উচ্চারণ হোক আমার বৈশিষ্ট্য, না হয় মহৎ ব্যর্থতায় খুঁজবো মহিমা।

কবিতায় মনের কথা লিখতে চাই মুখের ভাষায়। সে ভাষায় চাই সাঙ্কেতিক ব্যঞ্জনা। বানিয়ে-বানিয়ে লিখতে চাই না কিছু। কখনও অশালীন অমার্জিত হতে চাই না। ছন্দমুক্ত মুক্তগদ্য আমার অন্বিষ্ট।

‘আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুরনিশ।’ দলদাস বা রাজলেহী হই নি, হবো না কোনও দিন। আমজনতার একজন হয়ে বেঁচে আছি, এভাবেই বাঁচবো।

জন্ম থেকেই বরণ করে আছি কষ্ট-ক্লেশ, জানি তা-ই থাকবে বরণীয় হয়ে।

সদগুরুর সন্ধান করেছি, পাই নি এখনও। নিজেকেই নিজে নির্মাণ করে চলেছি তাই। পূর্বসূরি সকল কবির সৃষ্টি থেকে শিখি, জানি; তাঁদের কাউকে গৌণ ভাবি না।

পরিচিতি

সাযযাদ কাদির : কবি ও বহুমাত্রিক লেখক।

জন্ম: ১৯৪৭, টাঙ্গাইল।

পেশা: সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা। সাবেক সহকারী সম্পাদক, বিচিত্রা; দৈনিক

সংবাদ; ভাষা-বিশেষজ্ঞ, রেডিও পেইচিং, গণচীন; পরিচালক, বাংলাদেশ প্রেস

ইনস্টিটিউট।

প্রকাশিত বই – 

কবিতা: যথেচ্ছ ধ্রুপদ; রৌদ্রে প্রতিধ্বনি; দূরতমার কাছে; দরজার কাছে নদী; এই যে আমি; জানে না কেউ; বিশ্ববিহীন বিজনে; মণিমালা সিরিজ; বৃষ্টিবিলীন; কবিতাসংগ্রহ। 

গল্প: চন্দনে মৃগপদচিহ্ন; অপর বেলায়; রসরগড়; গল্পসংগ্রহ। 

উপন্যাস: অন্তর্জাল; খেই; অনেক বছর পরে; জলপাহাড়: চার চমৎকার; আঁচ। 

প্রবন্ধ-গবেষণা: ভাষাতত্ত্ব পরিচয়; হারেমের কাহিনী: জীবন ও যৌনতা; রবীন্দ্রনাথ: মানুষটি; রবীন্দ্রনাথ: শান্তিনিকেতন; বাংলা আমার; সহচিন্তন; বিচলিত বিবেচনা; চুপ! গণতন্ত্র চলছে…; ম্যাঙ্গো পিপল উবাচ;

সহস্রক; রমণীমন; রাজরূপসী; নারীঘটিত; সাহিত্যে ও জীবনে রবীন্দ্র-নজরুল।

শিশুতোষ: মনপবন; রঙবাহার; এফফেনতি; উপকথন; উপকথন আরও; উপকথন আবারও;

উপকথন ফের; উপকথন তেপান্তর; উপকথন চিরদিনের; ইউএফও: গ্রহান্তরের আগন্তুক;

সাগরপার; মহাবীর হারকিউলিস; জানা-অজানা বাংলা; তেনালি রামন। 

ভাষান্তর: লাভ স্টোরি; রসচৈনিক। 

স্মৃতিকথা: নানা রঙের দিন। 

সম্পাদনা: শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা; দুষ্প্রাপ্য প্রবন্ধ; এই সময়ের কবিতা; এই সময়ের কবিতা ২০১৪; এই সময়ের কবিতা ২০১৫; শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমের কবিতা।

সম্মাননা: জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০১৬; কলকাতা থেকে বিষ্ণু দে পুরস্কার

(২০১০) ও শৈবভারতী পুরস্কার (২০১৩)।

উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে:

সাযযাদ কাদির (জন্ম: ১৪ এপ্রিল, ১৯৪৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তিনি বাংলা সাহিত্যের ষাটের দশকের অন্যতম কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত।[১]

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়

তিনি ১৯৪৭ সালের ১৪ই এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার মিরের বেতকা গ্রামে তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায়

শিক্ষা জীবন

সাযযাদ কাদির ১৯৬২ সালে বিন্দুবাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৬৯ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্ম জীবন

দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে তিনি করোটিয়া সা’দত কলেজ-এর বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কলেজের চাকরি ত্যাগ করে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৭৮ সালে এটি ত্যাগ করে রেডিও বেইজিং-এ যোগ দেন। ১৯৮০ সালে রেডিও বেইজিং-এর চাকরি ছেড়ে দেন এবং ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় যুক্ত থাকেন। এরপর ১৯৮৫ সালে থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কাজ করেন আগামী-তারকালোক পত্রিকায় পরবর্তীতে এটি ত্যাগ করেন ও দৈনিক দিনকালে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দৈনিক দিনকাল হতে ইস্তফা দিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটে এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত থাকেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।[২]

প্রকাশিত গ্রন্থ

সাযযাদ কাদির শুধু মাত্র কবিতাই নয় গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ-গবেষণা, শিশুতোষ, সম্পাদনা, সঙ্কলন, অনুবাদ সহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • যথেচ্ছ ধ্রুপদ (১৯৭০) – কাব্যগ্রন্থ
  • চন্দনে মৃগপদচিহ্ন (১৯৭৬) – গল্পগ্রন্থ
  • লাভ স্টোরি (১৯৭৭) – অনুবাদ
  • রাজরূপসী
  • প্রেমপাঁচালী
  • হারেমের কাহিনী
  • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধসমগ্র – সংকলন
  • বেগম রোকেয়া প্রবন্ধসমগ্র – সংকলন
  • পৃথিবীর প্রিয় প্রণয়ী
  • অপর বেলায় – উপন্যাস
  • অন্তর্জাল (২০০৮) – উপন্যাস
  • রবীন্দ্রনাথ : শান্তিনিকেতন (২০১২) – গবেষণা
  • রবীন্দ্রনাথ : মানুষটি (২০১২) – গবেষণা
  • নারীঘটিত (২০১২) – প্রবন্ধ
  • খেই (২০১২) – উপন্যাস
  • বৃষ্টিবিলীন (২০১২) – কাব্যগ্রন্থ
  • আমার ভুলবাসা (২০১৭) কাব্যগ্রন্থ

সম্মাননা

১।পশ্চিমবঙ্গের নাথ সাহিত্য ও কৃষ্টি কেন্দ্রিক সাহিত্যপত্রিকা ‘শৈবভারতী’র ৩৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রবন্ধ সাহিত্যে সাযযাদ কাদিরকে শৈবভারতী পুরস্কার দেয়া হয়।[৩]

২। জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০১৯

মৃত্যু : ৬ এপ্রিল ২০১৭ (বয়স ৬৯)

ঢাকা, বাংলাদেশ। 

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. ভালো লাগলো। আলাদা মনে হলো। এভাবে আগে কখনো তাঁকে পড়া হয় নাই। সম্পাদক, বাংলা রিভিউ’ কে অনেক ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

Adv. Shahanara on যুদ্ধশিল্প
নয়ন আহমেদ on যুদ্ধশিল্প
কাজী জহিরুল ইসলাম on কবিতার জন্য নির্বাসন