মানুষ কখনো নদী
এত জল নিয়ে কেনো চলে পথ? দুই কূল জুড়ে স্বপ্ন, বৃক্ষ, গুল্ম, মাঠ, নানারঙ শাড়ি, পাশে রেখে ছুটে যায় স্রোত, মোহনার লোভে।
ভাঙ্গাঢেউ, গুণটানা গান, হাটবার, খেয়া পারাবার, খরার খোলস।
ঝাঁপ দিলে বুকে– কাছে টেনে নেয়। ভীষণ আপন করে ধুয়ে দেয় শরীরের দাগ। মন থেকে কিছু কিছু মুছে যায়, কিছু কিছু খসে যায়। হয়তো তোমার স্মৃতি। বিকেল পোড়ানো প্রণয় আগুন। কতোবার পুড়ে পুড়ে ফেলে দিতে জলে। পুনরায় কতোবার পাঠিয়েছ প্রণয় সাঁতারে। মনে হতো তুমি অন্য নদী। অন্য তীর। মাঝে মাঝে নারী হয়ে ওঠো, মাঝে মাঝে নদী। মৃত্তিকার পথ ধরে প্রেম খুঁজে খুঁজে ছুটে যাও মোহনার দিকে। প্রেমিকের লোনাস্বাদে রতিতৃপ্তি খুঁজে পেতে দেও জলের অঞ্জলি।
ভারী বৃষ্টির বুননে গলা ডোবা বান। ক‚ল থেকে দূরে, আরো দূরে। ধান নেই, জমি নেই, ধু-ধু, বাতাসের শিৎকার। চাষীরা কোথায়? ঘরে বসে জাল বোনা। অভাবের গৃহে গিন্নি দেখে গোলাজুড়ে দুশ্চিন্তার ভাপ। সাপরঙা লেজ নাড়ে। নদীরা সংগ্রামী। চাষীরাও। ঘাম-কষ্ট বীজ পুঁতে পুঁতে মাটি থেকে সোনা তোলে। সেখানে বানের তুলি কিছুটা সময় কেড়ে নেয়। তবু জীবনের দীর্ঘ চরে চাষী শুধু চাষ করে যায়, সোনা তোলে বারবার। তার পাশে কোন প্রতিকূল চিরস্থায়ী বন্দবস্ত নেই। তার কাছে নদী যতো তিক্ততার , ততো বলে দেয় মাটি সিক্ত হোক।
নদীরা কখনো চাষী হয়ে ওঠে, কখনো মানুষ। ভাঙাগড়া খেলে। গন্তব্যের দিকে ছুটে যেতে একরোখা ষাঁড়। আর বিজ্ঞ ঘ্রাণ শুঁকে ঠিক ঠিক স্বীয় পথ চিনে নিতে পারে।
মাঝে মাঝে নিজেকেই মনে হয় নদী। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ভিতরে কতশত নদী। হয়তো আমরা সকলেই নদী, গন্তব্যের খোঁজে ছুটে যাই জীবনের স্রোত ঠেলে। হতে পারে মানুষ কখনো নদী, নদী কখনো মানুষ।
রাত
আঁধার ঘুমিয়ে আছে রাতের শরাবে
জোছনা নেশায় একমুখ ভালোবাসা
ঝিঁঝি পোকার সুরের অন্তরা সঞ্চারী ঠোঁটে মেখে
যৌবনের দোরে দাঁড়ায় ভোরের প্রতীক্ষায়।
রাত! দিনের গেলাসে ঢালা তরল সোহাগ
আঁধারিয়া বরফ কুচির ছোঁয়া পেয়ে আরো নেশাতুর
বরফের সাথে সময়ের কী অপূর্ব মিল!
বরফের কুচি গলে গলে আর বরফ থাকে না
সময়ের কাঁটা ঘুরে ঘুরে বিগত সময়ে মিশে যায়
একটি ফসিল পড়ে থাকে চেতনার বিছানায়
স্বপ্নের শরাব- ডেকে আনে আঁধারের ঘুম।
রাতের শরাব গিলে নির্ঘুম সময়
পেছনে পেছনে ছায়ার আদলে চলে
কখনো কখনো ঘুমের বালিশে মাথা রাখি
কখনো কখনো অতিরিক্ত গিলে
কাটাই নির্ঘুম রাত।
রাত! প্রেমের ডোবায় সন্তরণী সুরা
দাঁড় করে রঙিন ভোরের মুখোমুখি।
কুটা
কুটা। বাতাসে নিঃশব্দে
উড়ে উড়ে নাচে, কোষে কোষে ঘোরে
খড়-কুটা!
বাড়ে, ক্রমাগত বাড়ে
কুটা কুটা উচ্চারণে
বায়ু ভারী
নাক জ্বলে
নাকের বিদ্রুপ শুনে শুনে
হায়াহীন বিড়ালের ঢঙে কুটা ওড়ে!
কেন?
আসলে কুটার কী প্রয়োজন?
গায়ে কি সুগন্ধি মাখা?
যেনো প্রোটিন সমৃদ্ধ স্বাদে কুটা ওড়ে!
শুধু শুধু ওড়ে, নৃত্য করে করে ওড়ে
দুর্বৃত্তের জামা গায়ে
হিসাবের দশমিকে দশমিকে ওড়ে
হাটে-বাজারে, অফিসে-আদালতে, দাম্পত্য ছাতায়
চিন্তা-চেতনায় কুটা ওড়ে
চোখ বন্ধ করে কুটা ওড়ে!
বড়ই নির্লজ্জ কুটা
বুদ্ধিহীন, সংক্রামক
অলিতে গলিতে ছায়া ফেলে
নীতির বালিশে তিলা ফেলে
শৃঙ্খলার স্তরে স্তরে নোখ নোখ সুড়সুড়ি কাটে
মিনমিনে কুটা
কুটা ওড়ে
আনাচে কানাচে কুটা ওড়ে!
যদি একনজর তোমাকে দেখি
যদি সমগ্র পৃথিবীসহ দুধের সাগরে সাঁতরাই
মাছের সোনালি জামা গায়ে
প্রবালের আগ্রহ মিশিয়ে
অতলের পাহাড় পর্বত ঘুরে ঘুরে
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।
সীমান্ত শৃঙ্খল ভেদ করে
রাষ্ট্রশক্তির পুলিশি চোখে উপেক্ষার আঙ্গুল ঘুরিয়ে
যদি পাখিদের মত উড়ে উড়ে
দেখে আসি নায়াগ্রা প্রপাত, আটলান্টিকের বরফ প্রণয়
হিমালয়ের শিখর, মরু সাইমুম, সাইবেরিয়ার পাখি
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।
যদি নোবেল প্রাইজ হাতে এসে পড়ে
যদি জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হই
যদি বাংলাদেশী কবি নজরুল, ফিলিস্তিনি ইয়াসির আরাফাত,
ইরাকের মুকতাদা আল সদরও বনে যাই
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।
যদি টমা হক, ক্রুজ মিসাইল,
আণবিক সাবমেরিন চাষের উর্বরতা খুঁজে পাই
যদি পৃথিবীর যাবতীয় মারণাস্ত্র ধ্বংসের সনদ পেয়ে যাই
যদি আনন্দের হ্রদে পুঁতে ফেলি যন্ত্রণার যত ঘর-বাড়ি
তারচেয়েও তারচেয়েও বেশি সুখ পাব যদি একনজর তোমাকে দেখি।
কবিতাগুলো ভালো লেগেছে