মায়াভ্রম
কাকে ভাবতাম, কাকে ভাঙছি!
আর চোরাবালি দিন-রাত্রি অশেষে
কার হাতের নাটাই এ উড়ছি !
তোমার ইচ্ছে হলে পত্র দিও
ডাকপিয়নে খবর নিও–
জলদুপুরে হঠাৎ তোমার খোঁজ;
তোমার ছেড়ে যাওয়া সন্ধ্যাবেলা
বিনিদ্র রাত, কৌতুহলী রৌদ্রুপালা
নাগরদোলায় ঝুলছে ক্যামন রোজ?
আজ জলের দরে বিকিয়ে যাবো–
যতই আয়ু ছন্নছাড়া আয়ুস্মতি হোক
নিজস্বতা বিসর্জনে কিনবে না-কি লোক!
আজ হঠাৎ দেখা’র হাপিত্যেশে
পথের দেয়ায় ছড়িয়ে যাবো–
অগ্নিদাহে হারিয়ে দেবো হাড়হাবাতে শোক।
তোমাকে হারাতে হারাতেই একদিন ঠিক খুঁজে পাবো
হারতে হারতেই দেখো একবার খুউব জিতে যাবো–
তোমায় ভুলতে চেয়েও যেমন রোজই ভীষণ মনে পড়বো…
তেষ্টা পেলেই জলে খুঁজি তোমায়
খুঁজেছে তোমাকে চোখ অতলান্তে অপলক
পলকে চেয়ে দেখি আয়নায় আমিও নিখোঁজ!
স্রোতস্বিনী জলধি ছাড়া ঢেউ ওঠে না
তুমি বিনা এ আমায় খুঁজেও পাই না–
মেঘ পিঠে রোদ নেই, জলেও বৃষ্টি নেই
কেবলই শুনশান আলো-ছায়ায় আঁধার
আজকের বিকেলে ছিল না সঘন সকাল
তুমি আসোনি বলে ছুটি বলো রোজ কার?
আমি সেই বেলা টুকানো মানুষ–
ফেলে যাওয়া টুকিটাকি ক্যাবলই টুকাই
বসন্তে কুড়ায় রঙ, ক্ষুধার্তের আলো–
কেবল তেষ্টা পেলেই জলে খুঁজি তোমায়।
শুধু পুড়তে চাই বলেই অনলেই স্থিতি শ্যাম্পেনে মুখ
জলজ বুকেও নেই ঢেউ নিথর অচেনা স্পন্দনহীন বুক
সে এখন পথের দুয়ারে কুড়ায় বিষাদের সুখ–
দুঃখ ছাওয়া নিখাদ বুকে ফুলেরা ফুটুক; তবু শূন্য আঁচলে সুখ।
জনারণ্যে আঁধার
এক সন্ধ্যের চাল দেবে মা, এক আঁজলা জলে–
কে জানে, আজ খাই না ক’দিন বেদম জ্বরের ঘোরে!
কাল দুপুরে না হয় দিও–
গুচ্ছ কাপড় তাও কাঁচিয়ো
চাইলে দু’কাজ করিয়ে নিও আরও,
যখন বাবু থাকবে না সে ভরদুপুরের ঘর,
হাত পাততে ঘেন্না ধরে- তবু দাঁড়ায় দু’দিন বাদেই পর…
পেটের জালাই সইবো কদিন চোট?
গা’য়ের জ্বালা তবুও সয় অথই ঘূর্ণি হোক-
ক্ষুধার চোখে অন্ধ-আঁধার কালচে নীলার ঠোঁট
মিথ্যে অভিযোগের দায়ে জেলে ঘরের লোক
আইন পাড়ায় ব্যস্ত মশায় উর্দি কালো
হাতেও কালো টাকাও কালো
তবে মানুষগুলো দেখতে যবর বেশ,
আইন বেটির চোখটা বাধা মুখোশ-মোড়ক
আইন নাচায় বেসাতি ঘরের পয়সাওয়ালা চোখ–
গরীবের আইন থাকতে নেই মা, গা-গতরে খাটলেই বেশ
উকিলবাবুর মস্ত মাথা কেসে নাকি অনেক ছ্যাঁদা
জামিন চেলে সাঁঝের বেলা আসবি হররোজ-
দেখবো তখন ভেবেচিন্তে কী করা যায়,আসিস কিন্তু
গেলাম ক’দিন, তা-ও হলোনা! নিত্য বাবুর হাক–
উকিলবাবুর ভন্ড পোশাক উল্টো হাতে নেয় সে প্রসাদ–
পথ ছাড়লাম অন্ধকারের লাল গারদে ভাতার থাকে থাক
কাজ করবো ভাত জুটাবো অম্ল অবসাদ–
তবু অন্য কোথায় পাই বলো মা, ধিঙ্গি মেয়ে কেউ রাখে না
কাজ হলো না পুষ্ট থাকায় শেয়াল, হুলো ঝাপটে ধরে পথ
গতর ঘেঁষে খুঁবলে চেলায়, ধেড়েটা রোজ স্বপ্ন বিলায়!
একলা মেয়ে ভয়ে ভীতু নিশিই পাওয়া দোষ
অন্ধকারে ঘরের মালির নিত্য ফোঁটে রোষ।
নিখোঁজ বসন্ত দুয়ারে
এ বুকে জমানো যত রুদ্ধ জমাট শ্বাস
চোখের পাঁপড়ি ছুঁয়ে সঘন আঁধার বাস–
সে-কি এক বসন্ত ছোঁয়ায় ধুয়ে দিতে পারে?
যদি তুমি ছুঁয়ে দাও ফাগুনের মিহি শ্বাসে মিশে…
কতদিন বসে আছি একাকী দুয়ার খুলে, নেই তুমি
তুমি নেই, নিঃশব্দে আলো চলে যায় দূরের পাড়ায়
অবেলায় লুটিয়ে পড়ে অচেনা এক কৃষ্ণবধূর গা’য়
বসন্তে কুহকী কোকিল ডাকে সে-ও দূর ডালের চূড়ায়।
আলো ও ফেরারী হয়, চিরচেনা পথের দেয়ায়-
নেই তুমি দূরে, আলোর উঠোন জুড়ে তমশা অধরে
তুমি আসো না বলে নাচে না আলোর ঢেউ হাওয়ার দুপুরে
বহুদিন হলো রোদচশমা লাগেনি দুচোখে অভিযোগ ঘিরে।
দুর্বোধ্য কুয়াশায় ধোঁয়াটে ধোঁয়াশায় ধূসর ডানার ঢেউ
তুমি ছাড়া অমন হৃদয় আনচান করেনি কখনো কেউ
হাওয়ায়ও ফোটে না আর মহুয়া সুঘ্রাণ বহুদিন গত
ছুঁয়েও দ্যাখেনি হৃদয় প্রবেশদ্বার অঝোর প্রপাতে কেউ।
শোনো মেয়ে, একটা মুক্ত মেঘের আকাশ দেবে আমায়?
খোলা পাহাড়ের চাঁদের আকাশ- আরশি নয়ন পাড়ায়
একটা জলরঙের ভর দুপুর দিও, হলদে বিকেল পাড়ে
পরস্পর অবয়বে একটু আবীর ছুঁয়ো চোখেরও রোদ্দুরে…
জানে জানুক বেহায়া হাওয়া জানুক সে হরিণী মায়া-
পত্রঝরা মাঘের শেষে পুড়ছে একাকী কায়া অনাচরে
বাতাসে উড়ানো চুল ফাগুনে ভ্রমর কালো হুল অন্দরে
দূরের বসন্তে আজও ডাকছে কোকিল দুয়ারে তার স্বরে।
অহং ও অগ্নিপ্রণয়
আজ শহর জ্বলবে, ফুটবে দাবাগ্নি চিতা ভস্ম-ছায়
পুড়বে আরও লাস্যময়ী অহং ও মদ্যপ কতিপয়-
আজ জ্বলবে শহর পুড়বে পুরাকৃত্তি বিস্ময়!
জ্বলবে আরও জনৈক পাপাচারী সংশয়…
জানতো পরমা, অমন বিদগ্ধ রাতের দুর্যোগেও–
শহরে জমবে মেলা বেসাতি উৎসবে মত্ত জনাকয়
লাল, নীল, হলুদ বিচিত্র বেলুনে উড়বে আকাশ আজও
জমিনে সারিবদ্ধ পিঁপড়ের ট্যাংক জলকেলি মৎস্য-ডানায়
অসংখ্য ফুটবে বাজি টুনিতে সাজবে জোনাক-প্রণয়
চাপা পড়বে সোচ্চার কন্ঠ, লুটবে লুটেরা ধাপ্পাবাজ–
গুলির শব্দে মনে হবে অজস্র আতসবাজির বিস্ময়!
আকাশে উড়বে উড়ুক্কু ফানুস সদ্য দেহগত কান্না আওয়াজ
নিত্যকার শহুরে উড়বে আকাশ-বিরহী বুকচেরা তপ্ত বাতাস
পরমা, অমন নৃশংস রাতের পরেও ফুটবে আলোর আকাশ
সিক্ত শিশিরে দেখো সন্ত্রাসী রোদের আগ্নেয় চাষাবাস–
সুপ্ত বীজের দ্রুততম লুকিয়ে নেয়া প্রকম্পিত দীর্ঘশ্বাস
আজ শহর জ্বলবে জলের বন্দরে জেগেছে অগ্নিপ্রণয়–
পুড়বে অহং ও দাবাগ্নি চিতা উড়বে আকাশে ভস্ম ছায়..
অভিশাপ
অভিশাপ দিচ্ছি, তুমি সুখী হও–
ভীষণ ভীষণ সুখী, প্রমত্ত হাওয়ায়
দোয়ায় কাজ নাও হতে পারে,
এ ভর-সন্ধায় অভিশাপ দিচ্ছি আরও–
ধনে-জনে পত্র-পুষ্প-পল্লবে আচ্ছাদিত হও
নেফারতিথির মত রাজ্যের হাল নাও হাতে
অহিংস আত্মায় আরও জাগতিক হও নারী–
মানবিক কুঁচিই ঝরে পড়ুক অজস্র সুখ মায়াবী
তুমি আঁধারে জোছনার ফুল হয়ে ফোঁটো
দু’চোখ জুড়ে থাক অনন্ত সুখের মহামারী
আমি শত সহস্র অযুত লক্ষ জনম ধরে–
কেবলই ফিরবো তোমাতেই বারংবার হে পৃথিবী
তুমি ফুল হলে যেন আমি বসন্তের রোদ্দুর নিশ্চিত–
যদি নদী হও, তবে জানবে আমিই মোহনায় নিরবধি
জানতো এ পৃথিবী এক ঘোলাটে ধোঁয়াশা বহুরূপী-
এখানে প্রাণের শুশ্রূষার চেয়ে মৃত্যুব্যয় অধিক বেশী
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত নিষ্পেষণ আজও
তবুও গাজা সাংবাদিক ফাঁসে মোসাদের স্পাই নারী!
ভালবাসা সত্যিই কী বিপর্যয়! কী বীভৎস বিস্ময় তুমি!
বাংলা ভারত কাঁটাতারে ঝুলে আমার মানচিত্র ফেলানী।
অধম অহংএ করো না নারী নির্বোধ শ্বাসের আহাজারি
ও চোখে জোছনা ধরো অধরে দ্বীপ্ত সূর্য কামনা গুড়িগুড়ি
তোমার আঙুল ছুঁয়েই জানুক আগামি শিশু পৃথিবী জননী–
তুমি সুখী হও; ভীষণ ভীষণ সুখী- অভিশাপ দিচ্ছি তুমি সুখী হও
আমি শত সহস্র অযুত লক্ষ জনম ধরে–
কেবলই, ফিরবো তোমাতেই বারংবার অবধি
শিশিরের শব্দে গড়িয়ে পড়ুক দ্রুত মানবিক রীতি
অভিশাপ দিচ্ছি সুখী হও, দোয়ায় কাজ নাও হতে পারে…
দারুণ সব কবিতা।ভালো লেগেছে।
কবিতাগুলো অসাধারণ।রাজা ভাইয়ের কবিতাগুলো একরাশ মুগ্ধতা ছড়ায়।