হাবিলদার রজব আলী
সবুজ সবুজে মাখা মাঠ প্রান্তর
নদী নালা খাল বিলে জীবনের ঘ্রাণ
ফসলের মিঠে হাসি কাড়ে অন্তর
সমাজের পলে পলে সুখে দোলে প্রাণ
বেনিয়ার দল আসে শান্তির দেশে
বেহালা-বাঁশিতে তোলে ভাঙনের সুর
প্রলোভন নিয়ে আসে বুলবুলি বেশে
কৌশলে নিভে দেয় বিশ্বাসী নূর
হতাশার ঘেরাটোপে কান্না বিলাপ
ফেটে ফেটে চৌচির বুকের জমিন
বিপ্লবী কণ্ঠে তুললো আওয়াজ
হাবিলদার রজব আলী সাচ্চা মুমিন
নয়নের কার্নিশে মুক্তির চাষ
রক্তের নদী বেয়ে স্বাধীন আবাস।
হৃদযমুনার জল
হৃদবাগানে সবুজ সবুজ চারা
নিঠুর তুমি কুঠার হাতে আসো
ভয় পেয়ে যাই হারাই যদি সব
তবু কেনো এত্তো ভালোবাসো
দূর আকাশে তারার গানে মাতি
হয়তো তোমার নামটা যাবে মিশে
কোন সে ঝড়ে ভাঙে বুকের ছাতি
স্বপ্নগুলো হচ্ছে সবুজ কি সে?
টলোমলো হৃদ-যমুনার জল
তুমি তবু তুলছো নায়ে পাল
আমার দুহাত কাঁপছে থরোথরো
ভাঙে যদি স্বপ্ন নায়ের হাল?
তাইতো আমি আকাশ তারায় হাঁটি
রাস্তা জুড়ে হাসুক কাঁদা মাটি।
ডাল-ভাতের চাটনী সালাদ
নিরিবিলি সময় হাতছানি দেয় নতুন বৌয়ের মতোন
কাছে ডাকে, প্রেমের গল্প শোনায়
শোনায় বাসর রাতের ঝিকিমিকি তারার গান
আমি তখন নদীর বহতা খুঁজি নীরবতার চোখে
নদীর ভেতরে দেখি অথৈ সাগর
কোলের সুবাসে খুঁজি প্রশান্তির হাওয়া
একটু জিরিয়ে নেই, মৌলিকতার পরশ মাখি
হৈ-হুল্লোড়, কানামাছি কিংবা গাড়ির চিৎকার
আলোর ঝলকানি, রূপের জৌলুশ বিলাসী হৃদয়
সবকিছু পানসে হয়ে আসে জিহ্বার আগায়
চোখের খচখচানি বাড়িয়ে দেয় ধূলিঝড়ের সাইমুম
কানের বিলাসে তালাভাঙার বিকট আওয়াজ
বইপ্রেম কবিতাপ্রেম ঘুমপরিদের
কোমল প্রেমের মায়াবী আঁচলে নিজেকে বাধি
ডাল-ভাতের চাটনি সালাদে তোমাকে মেশাই
রচনা করি জীবনের না বলা গল্পের মতো প্রেমের অনুকাব্য
সোনা মসজিদের চৌকাঠ সাজাই সুগন্ধি প্রেমে
লেবুপানিতে মিটিয়ে ফেলি মন্দা ঢেকুর
সুখের সংসারের এই বেলায় এখানেই বা মন্দ কি বলো!
মনের উঠোনে তুমি
আকাশের রঙধনু হৃদয়ের মাঝে
পিরিতি সুবাস মাখে বাতাসের বুকে
ছড়া গান কবিতার ছন্দে মাতাল
রেলগাড়ি চলমান শুধু সম্মুখে
লুকোচুরি মনটাকে
বেঁধে রাখি আঁচলের ভাঁজে
মুক্তির আলো খুঁজি
খালি হাতে ফিরি নাকো সাজে
ভালোবাসি ভালোবাসি
বৃক্ষের বাকলের মতো
চাঁদমুখো জোছনার
ভালোবাসা মাখো অবিরত
বাতাসের কানে কানে
স্বরলিপি গান হয়ে ফিরে
হতাশার মায়াজাল
তবু কেনো আসে ধিরে ধিরে!
যমুনার ঢেউ বুকে
চোখে ভাসে জোনাকির আলো
মনের উঠোনে তুমি
সুরভিত ভালোবাসা ঢালো।
………..
মাহফুজুর রহমান আখন্দ কবি, গবেষক ও অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর। পেশাগতভাবে ইতিহাস চর্চা করলেও শিল্পসাহিত্য চর্চার নেশা ছাত্রজীবন থেকেই। কবিতা চর্চায় স্বকীয় ভাব-ভাষা নির্মাণে তাঁর পারঙ্গমতা লক্ষনীয়। গীতিকবিতা, ছড়া এবং লিমেরিক চর্চাতেও তিনি বেশ সরস। প্রবন্ধ-সাহিত্যসহ শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিয়মিত লিখছেন। উজান পাখির চোখ, জীবন নদীর কাব্য, মনটা অবুঝ পাখি, চৌকো ফুলের গান শিরোনামের চারটি কবিতার বই, ৮টি ছড়াগ্রন্থ এবং গবেষণামূলক গ্রন্থসহ প্রকাশিত বই ২৩টি। সম্পাদনা করেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ছোটকাগজ : শব্দকলা, মোহনা, সিঁড়ি।
ড. আখন্দ জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৭২ সালের ২৮ ডিসেম্বর গাইবান্ধা জেলাধীন সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে। পিতা মোজাফফর রহমান আখন্দ এবং মা মর্জিনা আখন্দ। এম. ফিল এবং পিএইচ.ডি-সহ তাঁর মৌলিক গবেষণাক্ষেত্র ‘আরাকান ও রোহিঙ্গা’। সংগঠক হিসেবেও তিনি বেশ কর্মতৎপর। বাংলা একাডেমী, এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ ইতিহাস একাডেমি, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। কবিতা বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী পরিচয় সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি এবং শব্দকলার সম্পাদক তিনি।