এ কে আজাদ
একটি কথাই জানি শুধু পূর্ণ স্বাধীন করব দেশ
এই উড়ালাম বিজয় নিশান মরতে আছি মরব শেষ।
(কাজী নজরুল ইসলাম)
Man is born free
But he is chained every where
(Jean-Jacques Rousseau)
“মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু সর্বস্থানেই সে হয় শৃঙ্খলিত।” তাই তো স্বাধীনতা মানুষের আজন্ম আকাঙ্ক্ষার বিষয়। মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে চায়, কথা বলতে চায়, মত প্রকাশ করতে চায়; চায় মানসিক স্বাধীনতা ও মানবিক স্বাধীনতা, চায় ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা। কিন্তু কোথায় সে স্বাধীনতা? কোথায় সে মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বাধীনতার সুখ? চিরদিনই ক্ষমতাধরদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে মানুষ। নিষ্পেষিত হয়েছে মানবতা। যে সুখ-শান্তির জন্য সীমানা বিভাজন, রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রচলন, সেই শান্তির কপালে চিরদিনই কুঠারাঘাত করেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের উচ্চ শিখরে আরোহণকারীরা। সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষরা চিরদিনই শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষণ করেছে নিচু শ্রেণীর মানুষদের। গরীবের সব চুরি করে বড়রা হয়েছে আরও বড়। আইন কানুনের মারপ্যাঁচের ফেলে গরীব লোকদের নিঃস্ব করেছে সমাজের উঁচু তলার মানুষরা। এই নিপীড়নের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে তৈরি করেছেন প্রতিবাদলিপি। এ সকল অনাচার, অবিচার আর শোষণ থেকে বাঁচার জন্য গেয়েছেন মানুষের স্বাধীনতার গান।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে এই ভারতীয় উপমহাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয় ব্রিটিশ বেনিয়ারা। তার প্রায় দেড়শত বছর পরে নজরুলের জন্ম। বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে এসে পরাধীন এই ভারতীয় উপমহাদেশের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বড় শোচনীয় হয়ে পড়ে। ব্রিটিশদের লাগামহীন উৎপীড়ন, সীমাহীন লোভ আর শোষণ নিষ্পষণের ফলে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে মানুষের জীবন। এমনই এক বঞ্চনাক্লিষ্ট সময়ে বাংলার সাহিত্যাকাশে হ্যলীর ধূমকেতু হয়ে উদিত হন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বাংলার মানুষকে শুনান মুক্তির বাণী, প্রেরণার গান আর প্রলয়োল্লাসের বজ্রধ্বনি। তার কবিতার পয়ারে দেখা মেলে স্বাধীনতার আলোকচ্ছটা।
কাজী নরুল ইসলামের কবিতায় যে স্বাধীনতার চেতনা তা কেবল ভূখণ্ডের স্বাধীনতা বা ভৌগলিক স্বাধীনতাকেই বুঝায় না; বরং তা হলো প্রকৃতপক্ষে মানুষের স্বাধীনতা, মানবিকতার স্বাধীনতা। তার স্বাধীনতার চেতনাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা নিম্নরূপে বিভাজন করতে পারি :
১) মানুষের মানসিক স্বাধীনতা বা আত্মার স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা
২) মানবিক স্বাধীনতা বা মানবতার স্বাধীনতা
৩) সামাজিক স্বাধীনতা
৪) নারী স্বাধীনতা
৫) ধর্মীয় স্বাধীনতা
৭) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং
৮) সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা বা সর্বাত্মক বিপ্লব।
মানুষের স্বীয় আত্মার স্বাধীনতা বা মানসিক স্বাধীনতাই হলো মানুষের সর্বব্যাপী স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। কবি নিজেই তাঁর “বাঙালীর বাঙলা” প্রবন্ধে লিখেছেন–“বাঙালীর মতো জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তি এশিয়ায় কেন, বুঝি পৃথিবীতেই কোনো জাতির নেই। কিন্তু কর্মশক্তি একেবারে নেই বলেই তাদের এই বিদ্যাশক্তি তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাদের কর্মবিমুখতা, জড়ত্ব মৃত্যু ভয়, আলস্য তন্দ্রা নিদ্রা, ব্যবসা বাণিজ্য অনিচ্ছার কারণ তারা তামসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে চেতনাশক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে। এই তম তিমির এই জড়ত্বই অবিদ্যা। এই অবিদ্যা কেবল অন্ধকার পথে, ভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়, বিদ্যাশক্তিকে নিজে মৃতপ্রায় করে রাখে। … অতি প্রাচুর্য আমাদের বিলাসী, ভোগী করে শেষে অলস, কর্মবিমুখ জাতিতে পরিণত করেছে। আমাদের মাছ, ধান, পাট, আমাদের ঐশর্য শত বিদেশী লুটে নিয়ে যায়, আমরা তার প্রতিবাদ তো করিইনা, উল্টো তাদের দাসত্ব করি; এ লুন্ঠনে তাদের সাহায্য করি। …
বাংলা সর্ব ঐশী শক্তির পীঠস্থান। হেথায় লক্ষ লক্ষ যোগী মুনী ঋষী, তপস্বীর পীঠস্থান সমাধী; সহস্র ফকির দরবেশ, ওলী গাজীর দর্গা পরম পবিত্র। হেথায় গ্রামে হয় আজানের সাথে শঙ্খ ঘণ্টা-ধ্বনি। এখানে যে শাসনকর্তা হয়ে এসেছে সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। বাংলার আবহাওয়ায় আছে স্বাধীনতা মন্ত্রের সঞ্জীবনীশক্তি। …বাঙালী সৈনিক হতে পারলো না। ক্ষাত্র শক্তিকে অবহেলা করলো বলে তার এই দুর্গতি, তার এই অভিশপ্তের জীবন।” এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে তিনি শিখিয়েছেন মুক্তির আর সাহসের বাণী। তিনি বলেছেন-“বাঙালীকে, বাঙালীর ছেলেমেয়েকে ছেলেবেলা থেকে শুধু এই এক মন্ত্র শেখাও–
এই পবিত্র বাংলাদেশ বাঙালীর, আমাদের
দিয়া প্রহারেন ধনঞ্জয়
তাড়াব আমরা, করি না ভয়
যত পর দেশী দস্যু ডাকাত রামাদের গামাদের।
বাংলা বাঙালীর হোক, বাংলার জয় হোক, বাঙালীর জয় হোক।”
কবি নজরুল ইসলাম বিশ্বাস করতেন- ‘দস্যু, ডাকাত, রামাদের, গামাদের’ হাত থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে হলে আগে চাই মানসিক স্বাধীনতা অর্জন, আগে চাই আত্মার স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সেই চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হলে আলস্য এবং জড়ত্ব থেকে নিজের আত্মাকে আগে স্বাধীন করতে হবে। তাই তো তিনি লিখেছেন:
আজাদ আত্মা, আজাদ আত্মা! সাড়া দাও, দাও সাড়া,
এই গোলামীর জিঞ্জির ধরে ভীমভেগে দাও নাড়া। [আজাদ ]
পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে প্রত্যেক মানুষকে আগতে জাগতে হবে। নজরুলের ভাষায়–
আমরা যদি না জাগি মা
ক্যামনে সকাল হবে
তোমার ছেলে উঠলে গো মা
রাত পোহাবে তবে। (আমি হব)
“মায়ামুকুর” কবিতায় তিনি লিখেছেন–
ভাঙ্গো ভাঙ্গো এই ক্ষুদ্র গণ্ডি, এই অজ্ঞান ভোলো
তোমাতে জাগেন যে মহামানব, তাহারে জাগায়ে তোলো।
তিনি আরও লিখেছেন–
থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগতটাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। [সংকল্প]
মানব ও মানবিকতার স্বাধীনতা নজরুল চেতনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। নজরুলকে বিদ্রোহী কবি বলে অনেকেই খাটো করে দেখেন। প্রকৃতপক্ষে নজরুল হলেন মানুষের কবি, মানবতার কবি। নজরুলের সমগ্র চেতনার জগতে কেবল মানুষের ব্যাপকতা। মানুষকে অনেক বড় করে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। ১৮ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মানুষ হলো শ্রেষ্ঠ, আশরাফুল মাখলুকাত।
ইসলামের সুমহান বাণীও তিনি স্মরণ করেছেন তার মানবপ্রেমে সিক্ত কবিতায় :
আজ ইসলামী ডঙ্কা গরজে ভরি জাহান
নাই বড়ো ছোট-সকল মানুষ এক সমান।
এবং
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান। [মানুষ]
কিন্তু এই মানুষের ভেতরে যদি মানবিকতা না থাকে, মানুষের ভেতরে যদি মানবতা না থাকে, তাহলে মানুষের মনুষ্যত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বড় ফিকে হয়ে যায় মনুষ্যত্বের দাবি। তাই তো মানবতার দাবি নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম দাঁড়িয়েছেন নিপীড়িত মানুষের পাশে। মানুষের দুঃখে কবির কোমল হৃদয় হয়ে ওঠে ব্যথাতুর। নির্যাতিত মানুষের জন্য পলিমাটির মতো কবির নরম হৃদয় হয় ক্ষতবিক্ষত। উদার আকাশের মতো দুই নয়নে নামে বারি ধারা :
দেখিনু সোদিন রেলে
কুলি বলে এক বাবুসাব তারে ঠেলে দিলো নিচে ফেলে।
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি করিয়া জগত জুড়িয়া কি মার খাবে দুর্বল? [কুলি মজুর]
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে কৃষক শক্ত মাটির বুকে লাঙল চালায়, অর্ধাহারে অনাহারে পরিশ্রম করে জমিতে ফসল ফলায়, সেই কৃষকের সন্তান যখন খাবার না পেয়ে কান্নাকাটি করে, তখন ব্যথাতুর হয়ে ওঠে কাজী নজরুলের হৃদয়। তাই তো তিনি লিখেছেন–
তোর গাঁয়ের মাঠে রবি ফসল ছবির মতো লাগে
তোর ছাওয়াল কেন খাওয়ার বেলা নুন লঙ্কা মাগে? [চাষী]
ব্রিটিশ বেনিয়রা এ দেশকে দখল করে নেয়ার পরে এ দেশের মানুষকে যারপর নেই নির্যাতন করেছে। এই দেশের সম্পদকে ব্যবহার করে হয়েছে ধনী, আর এ দেশের মানুষকে মেরেছে ভাতে-আহারে। তেত্রিশ কোটি মানুষের খাবার কেড়ে নিয়ে রাতারাতি বেনিয়ারা হয়েছে মহাজন আর ক্ষুধায় কাতর হয়ে মরেছে অনাহারী মানুষ। এই অনাহারী মানুষদের তেত্রিশ কোটি দেবতা বলে আখ্যা দিয়েছেন মানব দরদী কবি। আর নিজের বুকের রক্ত দিয়ে হলেও তাদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন তিনি। অপরদিকে অমানুষ নির্যাতনকারী ক্ষমতাসীনদের সর্বনাশ কামনা করে অভিশাপ দিয়েছেন তিনি।
তিনি লিখেছেন :
প্রার্থনা করো– যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ! [আমার কৈফিয়ত]
এর চেয়ে উত্তম মানবাদীতার উদাহরণ আর কী হতে পারে?
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় যে স্বাধীনতার চেতনা তার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সামাজিক স্বাধীনতা। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক স্বীকৃতি অর্জনে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। বাঙালী হিন্দু সমাজে এক সময় মনে করা হতো যে অপবিত্র বা অচ্ছুত কেউ ছুঁয়ে দিলে জাত চলে যায়। সমাজে শ্রেণীবৈষম্য এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, গরিব গুর্বা মানুষরা ধনীদের হাঁড়ি পাতিলে হাত দিলেই ধনীরা সে হাঁড়ি পাতিলকে অপবিত্র মনে করত, ফেলে দিতো। গরীব শ্রেণীর মানুষেরা ধনীদের ছুঁয়ে দিলে তারা গঙ্গার জলে ম্লান করে নিজেকে পবিত্র করত। এসব শ্রেণীবৈষম্য একজন বিবেকবান কবি কি মেনে নিতে পারেন? তাই তো তিনি লিখেছেন–
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাল জালিয়াত খেলছ জুয়া
ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া
হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি, ভাবলি এতেই জাতির জান
তাই তো বেকুব করলি তোরা এক জাতিকে একশ খান। [জাতের বজ্জাতি]
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় স্বাধীনতার যে চেতনা তার একটা বিশেষ অংশজুড়ে আছে নারী স্বাধীনতা। বর্তমান সময়ে যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলেন, তারা মূলত পুরুষবিদ্বেষী। নারীদের বিজ্ঞাপনের পণ্য বানিয়ে তারা সুবিধা লুটে নেন আর মুখে মুখে নারী মুক্তির কথা বলেন। পক্ষান্তরে, নজরুলের নারী স্বাধীনতার মূল মন্ত্রই হলো নারী পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা। নারী মুক্তির নামে পুরুষের বিরুদ্ধে তিনি খড়গ ধরেননি। বরং জাতি গঠনে নারী পুরুষের যে অবদান তাকে স্বীকার করেছেন অকপটে। তিনি লিখেছেন–
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণ কর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
নরক কুণ্ড বলিয়া কে তোমা করে নারী হেয় জ্ঞান
তারে বল, আদি পাপ নারী নহে সে যে নর শয়তান।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল ফলিয়াছে যত ফল
নারী দিল তাতে রূপ রস মধু গন্ধ সুনির্মল।
দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস নিশীথে হয়েছে নারী
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে নারী যোগায়েছে মধু।
নর দিল ক্ষুধা নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে
জন্ম লভিচ্ছে মহামানবের মহা শিশু তিলে তিলে।
কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী। [নারী]
ধর্মীয় স্বাধীনতায় অমর বিশ্বাসী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ফলে ধর্মীয় অহিংসা ছিল নজরুল চেতনার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি হলো একটা জাতি গঠনে এক বিরাট সহায়ক শক্তি। তাই তো ধর্মীয় সম্প্রীতির একজন অকাট্য সাক্ষী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলে তাঁর কাছে কিছু ছিল না। তাঁর কাছে সকলেই মানুষ- এটিই বড় কথা। ধর্মীয় ছোট গোষ্ঠী হিসেবে সমাজে যারা নির্যাতিত তাদেরও তিনি টেনে নিয়েছেন তাঁর আকাশের মতো উদার বুকে।
লিখেছেন–
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর বিশ্বের সম্পদ
আমাদেরই এঁরা পিতা পিতামহ এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরই রক্ত কম বেশী করে প্রতি ধমনীতে বাজে।
……
ওকে? চন্ডাল? চমকাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব
ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব। [মানুষ]
‘সাম্যবাদী’ কবিতায় তিনি লিখেছেন–
গাহি সাম্যের গান
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম ক্রীশ্চান
গাহি সাম্যের গান।
স্বধর্ম ইসলামের প্রতি ছিল কাজী নজরুল ইসলামের অবিচল বিশ্বাস। তিনি মনে করতেন ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। আর ইসলামের মূলমন্ত্রণা দাতা দোজাহানের মহান মালিক আল্লাহ তায়ালাই সকল ক্ষমতার উৎস। তাই তো তিনি লিখেছেন–
উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ
আমরা বলিব- সাম্য শান্তি, এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
উহারা চাহুক সঙ্কীর্ণতা, পায়রার খোপ ডোবার ক্লেদ
আমরা চাহিব উদার আকাশ নিত্য আলোক প্রেম অভেদ। [এক আল্লাহ জিন্দাবাদ]
তাঁর মতে–যিনি প্রকৃত মুসলিম তিনি আল্লাহর সৈনিক। তার কোনো মৃত্যুভয় নেই, সে কোন পরাজয় মানে না। মুসলিম কোনো দাসের জাতি নয়। মুসলিম হলো বীরের জাতি। তারা জীবন দিতে জানে, কিন্তু পরাধীনতা মানতে জানে না। অন্যায় অবিচার আর অনাচারের কাছে মাথা নত করতে জানে না।
[লেখক : কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক]