যখন মস্তক ঝুঁকে থাকে
যখন মস্তক ঝুঁকে থাকে
জগতের অন্য সমস্ত মস্তক না চাইতেও হয়ে যায় উঁচু
সমস্ত দরোজা তার একে একে বন্ধ হতে থাকে
ওদিকে তাবৎ গর্বিত চেহারা স্ফীত চোখে গিলতে থাকে অহংকারী স্বাদ
তখন নেহাত বেঁচে থাকা হয়ে পড়ে কঠিনেরও অধিক
তখন ঝুঁকিতে পড়ে যায় সম্ভাব্য উন্নিত স্ব-কল্প জীবন।
কেন কোন্ দূর্বিপাকে কিসের চক্করে পড়ে নুয়ে গেল মাথা
নুয়ে গেল বুকের গভীরে পুষে থাকা সহজাত আত্মশ্লাঘা
হাতে আর থাকলো না মর্যাদা সম্মানের ফুটো কড়ি
সহসা ছিনতাই হয়ে গেল সর্বাধিক সুপ্রিয় সম্পদ!
এক নয় দুই নয়, সকলেই হয়ে গেল আমার চে’ বড়
সকলকে বানিয়ে দিয়ে নিয়ন্তা আমার
আমার চেতনা পুড়ে হয় খাক দূর্বিষহ নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে!
আমার চারপাশে আর যার ঝুঁকে আছে মাথা
আমি কি তার চে’ বড় কোনভাবে
কিম্বা সে আমার চেয়ে ‘বড়’, এ প্রশ্ন আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়! আর
আমি হন্নে হয়ে নিজেকে লুকোতে ছুটোছুটি করি এদিক ওদিক!
আহ্ কী আগ্রাসী এই অনুভূতি
যার নোয়’নি মস্তক, কি করে সে আমার ব্যথায় হবে সমব্যথি!
আর যার যার মস্তক উন্নত
তারা কি সকলে এক মর্যাদার অধিকারী
তারা উঁচু নিচু হয়না একে অপরের মুখোমুখি?
তবে কে কার চে’ বড়
এ প্রশ্ন উঠাই কেন?
কোন্ মাথা তবে চির উন্নত – স্বভাবে?
এমন মস্তক কি আছে যে নোয়ায় না কোন ভাবে
নাকি মস্তকের কাজ হলো শুধু নুয়ে যাওয়া কারো’র সমীপে!
যে ঝোঁকায় মাথা
যে নির্ভর করে অন্যের ওপর
যার বড় হওয়া ছোট হওয়া শুধু মামুলি ব্যাপার,
আমিও কি এমন কারো’র সামনে ঝুঁকে হয়ে আছি সর্বংসহা নীচু!
তবে ধিক্ আমাকে!
আমি যার সামনে ঝোঁকালাম মাথা, তিনিও লজ্জিত হন–
আমার সম্মুখে অন্য কারো কাছে নোয়াতে মস্তক!
তবে কেউ কি এমন আছে যার সামনে নুয়ে
যে কারো মস্তক হয় স্বভাবে স্বাধীন, আর হয় সমভাবে গর্বিত উন্নত?
কেউ কি এমন আছে যার নেই পরোয়া কিছুতে?
যার নুয়ে যাওয়া নেই
যার উচ্চতার কোনো সমকক্ষতা মেলেনা
আর যিনি কেবলই উঁচু!
যখন মস্তক থাকে পরস্পরে সমান উন্নত
আর নিয়মের অধীনতা শৃঙ্খলার সুনামে রাখে পা
তখন আমার সীমিত উচ্চতা আমাকে অখুশি করে না।
তখন আমার নোয়ানো মস্তক আরো নুয়ে যেতে চায় কারো কাছে
যত নুই ততো হই উন্নত অধিক
এ এক এমন অনুভূতি যা কেবল উন্নত-নোয়ানো মস্তকে দেয় ধরা।
বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
(হ্যামিলটন ডাউনটাউন, কানাডা)
পোড়া রোদ
রোদের ঝালরে পোড়ে নরম নিশান
আমি এক নাবালক; দি-চক্রযান।
রোদ পোড়ে; পোড়া রোদ চলে যায় শস্যের পেটে
আমাকে রৌদ্র করো; যা-টুকুন বাকি আছে লুটেপুটে চেঁটে
রোদেরা দাঁড়াক সটান
আমি এক দ্বিতল প্রাণী ; চলেছি রাস্তা কেটে।
রোদগুলো ভস্ম হলে–পতপত উড়ে যায় মৃত উল্লাস
আমাকে বানিয়ে যায় গজলের সুর;
আমি শুধু ছাঁই গুলো পুষে রাখি আর আভাসে বিভাষে হই রোদ্দুর
রোদের চেহারা ফোটে শস্যের মাঠে; শস্যেরা হাঁটাহাঁটি মাঠে মাঠ
আমি এক নিশানের অপার বাহন;
নিশানে নিশানে বাঁধি পোড়া রোদ; রোদ-পোড়া লাশ।
আমার বাঁধনে ফোটে রোদের দুয়ার
রোদ এক ছোটাছুটি এ ঘর ও ঘর;
রোদ এক রোদ-পোড়া; আর
আমি এক রোদের নিশান; ভস্ম ভস্মিভূত
রোদেরা এখানে বাঁচে; এখানে ওদের সংসার।
আমি কবি আসাদ চৌধুরী
বৈরিতার জন্য যে চেহারা লাগে তা আপনার ছিল না কখনো
বৃষ্টি ভেজা দিনে ছাতা মাথায় বিড়বিড় করতে দেখে
আমিও দাঁড়াই পেছনে, অদ্ভুত সে দৃশ্য
শাহবাগের মোড়ে এতো ভীড়ে কার সাথে কথা বলছিলেন কবি?
আপনি ছুঁয়ে দিলেন বলেই কিনা সেদিনের শাহবাগের পান
চিবোতে চিবোতে আমি অনেকখানি কবি বনে গেছি রাতারাতি
(তবে কি পানের খোশবু অকবিকে করে দেয় কবি?)
আপনার কুর্তাটা, কাঁধের থলেটা আমাকে বহুরোজ হাঁটিয়েছে কবি’র ভঙ্গিতে
আমি কবি আসাদ চৌধুরী, হাহাহাহা!
(ভঙিতে কি হওয়া যায় কবি? তবে তো আমিও।)
মেঘের যে ঘনঘটা আপনার দৃষ্টিতে দেখেছি সেদিন
বাইরের মেঘের কথা বেমালুম গেছি ভুলে।
কি দেখছিলে কবি অমন দৃষ্টিতে?
জাদুঘরের চূড়ায় এমন অদ্ভুত চোখে
আমি আর কাউকে তাকাতে দেখিনি।
আমি তো রোজই হেঁটে যাই হেঁটে আসি
আমার দৃষ্টি কি তবে দেখতে পায় না!
কি দেখছিলেন ওখানে কবি?
দুর্মর আঘাতে ভেঙে দিতে চেয়েছেন এর চূড়া?
নাকি এর সোপানে সোপানে শোষণের অহংকার খুবলে খাচ্ছিলো আপনাকে?
এক ক্ষুন্ন হৃদয় দুর্বহ ভারে শুধু দেখে যায় জাদুঘর
হেঁটে যায় দেখে দেখে এর চূড়া!
যেদিন কাঁধের থলে থেকে
কবি’র গুনাগুনের ফর্দ পড়ে শোনালেন
বোঝালেন কে কবি আর কে নয়
বললেন, লেখক শব্দের অন্তর্নিহিত ভাব আর বৃত্তির বিষয়
প্রিয় কবি, আপনি সেদিন কারোর নাম নিলেন না মুখে।
বিব্রত হবেন ভেবে আমিও সেদিন জানতে চাইনি।
কবি আজ কি বলবেন এই নামগুলো এক এক করে?
কবি, কোন্ ব্যথার প্রকোপ সয়ে গেছো হাস্যোজ্জল চেহারায় আজীবন?
এখনো বুঝিনা, কেনো কষ্ট কসরতের কথা চেপে রেখে বলেছিলে
“মাটিটাকে দিতে চাই নিড়ানি আবার!”
কোন্ সে নিড়ানি, কিসের ফলন হবে তাতে?
একজন কবি’র চে’ অক্ষম চাষি এ তল্লাটে আর কে কে আছে?
প্রজ্ঞাপন দিয়ে কবি বা লেখক কতজন হয়েছেন
তার নাম বৃত্তান্ত নিশ্চিত জানা ছিল তার!
কপালে সতর্ক ভাঁজ রেখে দারুণ সমীহ দেখালেন এক,
দেখালেন ভদ্রতার প্রামাণ্য সমীহ–
বলেননি কারোর নাম।
সেদিনের সে শোভা কবির মুখে চিরকাল ছিল বাঁধা।
একদিন কবিতা পড়তে পড়তে নীরব অশ্রুতে ভাসা চোখে
বললেন “ওমর আলীর কবিতা পড়ো, খোলা মাঠে বসে,
আমিও পড়েছি।
আহ্, কেউ কি আমাকে পড়বে এমন আহ্লাদে, কোনদিন?”
কবি, আজ আপনি না জানলেও আপনাকে আমরা পড়ি, পড়বো,
আমাদের আনন্দের দিনে, কষ্টের দিনেও
ভাঙবার দিনেও গড়বার দিনেও।
অক্টোবর ২০, ২০২৩
আমি এক বহতা নদী
বহতা নদীর পাশে থিতু হয়ে আছি, যদি
মন হয় ধীরস্থির কোনো ভাবে
মনের উদ্বিগ্ন নড়াচড়া ধুয়ে নিতে নদীজলে
এসেছি পেছনে ফেলে ছল জাল মায়া
ভেতরে উত্তাল সমুদ্রের শুনি ডাক
ডাকের ভেতর আছে রাগ ক্ষোভ ঘৃণা
জমে আছে সহস্র দিনের শত অভিযোগ
গুমরে গুমড়ে কাঁদা
লজ্জার অব্যাক্ত শিরোনাম
যদি ধুয়ে যায় কিছু জমে যাওয়া শোক আর দুঃখের প্রলেপ
যদি মুছে যায় কিছু যাতনার অশ্রাব্য অতীত!
আর কোন বহমান ব্যবস্থা আছে কি? যার কাজ শুধু
বদলে দেয়া কষ্টের গল্পটা!
অথবা আমাকে বদলে দেয়া নতুন বিন্যাসে!
আমি আর নিজেকে বদলাতে পারছি কই
আমি তো রাতদিন শুধু হেঁটে যাই আকাঙ্ক্ষার চিকন সুতোয়
চেপে আসা হুকুমের গোলাম না হলে পরে
তাবৎ আসমান ভাঙ্গে মাথার উপর –
হে বহতা নদী, তুমিও কি এমনই ভদ্র –
চাপা কষ্ট ধুয়ে মুছে নিতে হয়ে গেলে জলের বাহন?
তবে তুমি কোথায় বাড়াও হাত
কার কাছে গিয়ে বল তোমাকে বিলাতে কিছু হজমের বড়ি
আর কিছু প্রশান্তির গোপন সবক?
অগাস্ট ১৪, ২০২৩
প্রেম, খবরদার
আর যদি কোন কালে শুনি – প্রেম নিয়ে গেছো কারো দ্বারে
তোমার আস্তিনে কালো ফিতা বেঁধে দেবো
লাল ফিতা বেঁধে দেবো কব্জিতে, উপরে
লিখে দেবো শতশত প্রেমের সুনাম
বহু ঘাটে পানি খেয়ে যা তোমার হয়েছে অর্জন
আর যার হয়নি জানা সেও যাবে জেনে
বাড়ালে প্রেমের হাত, ভেবোনা সে এসে নিয়ে যাবে টেনে!
বনি ইসরাঈল
আমার বলায় কি হবে, তোমার যদি
কানেই পোষলো না
শুনতে চাওয়া না চাওয়ার ইচ্ছা তোমার তো পুরোপুরি আছে
কেবল বলবার উপর হাজারো খড়গ চাপানো চাই, চাই
নৃত্যের আনন্দ নিয়ে খেলে যাওয়া এই এক্কাদোক্কা খেলা
দশ কে বানাতে এক আর এক কে বানাতে দশ
তুমিতো এতটা পারঙ্গম খেলোয়াড়, অংক বিদ্যা
যেখানে কাজেই লাগে না কখনো।
তাই আর আমার বলা’তে লাভ আর ক্ষতি দেখে ভাবি না আমিও।
ধ্বংস সাধনেই যার নয়ন জুড়ায় তার পরিচয়ে পশুরাও পায় লজ্জা
তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সত্যকে পাশ কেটে চলে
সত্য অস্বীকারে এক কঠিন ব্যাধির করে চাষ
দিনে দিনে সুপথে ফেরার তাবত রাস্তা হয় রুদ্ধ
নরম বুকের ভেতর শকুন, শুধু শকুনের হয় জন্ম
যার লালায়িত ছোবল কেবল মানুষের মৃত মাংসেই পেয়েছে স্বাদ
আহ্, এই বীভৎস অরুচি কি করে মানুষে এলো
কি করে রক্তের স্বাদে চোখে মুখে ফোটে বিজয়ের হাসি —
এ তো তোমাদের না দেখলে আমার বোঝাই হতো না
আমার জানাই হতো না মানুষের এমনও কোন জাতি আছে!
আমি জানতে চাই না তোমার কোন নাম অথবা ঠিকানা আছে কিনা
হাজারো বছর অসহিষ্ণু আর বেপরোয়া অসহ্যের চাদর মুড়িয়ে আছ
যুগ যুগান্তরে তুমি যত বেহুদা ঘৃণার চাষ করে গেলে
তার কোন ফিরিস্তি তোমার কাছেও পাবো না আমি জানি
তবু কৌতূহলে প্রশ্ন রাখি
দুনিয়ায় বিভীষিকা ছাড়া তুমি আর কী জন্মাতে পারো?
কারো শান্তি নষ্ট করা ছাড়া তুমি আর কিছু করতে পারো?
কাউকে বেদখল করা ছাড়া
তোমার এমন কোনো মহত্ত্বর কাজ আছে কি জমিনে?
সম্পদ লুন্ঠনে যে যে নয়া তরিকা তোমার আবিষ্কার
তাতে তো তোমার জুড়ি তুমি সহ্য করনি কখনো!
তুমিই তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে গেছো পূর্বাপর।
এত অঘটন যজ্ঞের পরও কি করে নিজেকে ক্ষমা করবে তুমি
চোখ তুলে দেখ কেউ কি তোমাকে ক্ষমা করবার আগ্রহ রাখে
শয়তানের ভাই ছাড়া?
দোসর মিললেও যার মিলে আরেক শয়তান!
কি এমন অভিশাপে ঘর ছাড়া তুমি, ভূমি ছাড়া জমি ছাড়া
দাবি করতে পারো এমন ঠিকানা ছাড়া!
প্রজন্মের পর প্রজন্ম কারোটা দখল করেই
কারো গলগ্রহ হয়েই তোমাকে বাঁচতে হয়
টিকে থাকতে হয় হাতে নিয়ে অভিশপ্ত প্রাণ!
যেখানেই ঢিবি গেড়ে বস
নিত্যদিন কোন ফ্যাসাদ তোমার করা চাই
উত্যক্ত উজাড় করা চাই কারো প্রিয় বসবাস
সমূলে নিধন করা চাই যার ঘাড়ে বসে আছো, তাকে।
এ বৃত্তি কি করে আপন করেছো — তুমি কি নিজেকে দেখো না আয়নায়
তোমার এমন বন্ধু সহচর হলে হতো ভালো
যাকে তুমি আয়নার মতই উপকারী পেতে!
আহ্, তাও তোমার থেকেও নেই।
কোন্ মুখে রাখবে তুমি আয়নার সম্মুখে দাঁড়াবার সে সাহস!
তোমার কি লাজ লজ্জা বলে কিছু নেই?
কতকাল আর নিগৃহীত বেজন্মার মত অপমানিত কাটাবে এখানে ওখানে
আর কত, এবার তো অন্তত নিজেকে সামিল কর মনুষ্য কাতারে
না হলে তো মানব জন্মের অবজ্ঞা তাকে তিলেতিলে খাবে
কেউ আর জন্মাতে চাইবে না এই রূপে
জঙ্গলের পশুদের দেখে কোন একদিন ভেবে নেব ওরা-ই মানুষ বটে।
তোমাদের গ্রাহ্য করবার সমস্ত ক্ষমতা পৃথিবী হারিয়েছে বহু আগে।
অন্যের অস্তিত্ব তোমার বড়ই অসহ্য
নিজ দোষে নিজের চাতাল খোয়ালে
অগণিত দুষ্কর্মের আগুনে পুড়েছ নিজের একখানা বসতি থাকবার অধিকার
কোনো কালে কোনো অঞ্চলে অশান্তি ছাড়া দাওনি কিছু
ভালো প্রতিবেশী চরিত্র তোমার ছিল না কখনো
তবে কোন্ মর্যাদার নামে এখনো বিষাক্ত করে যাচ্ছ পৃথিবীর সব জনপদ
তুমি ছাড়ো এই ভূমি
এই ভূমি শুধু মানুষের
আর মানুষের কল্যাণেই এই ভূমি
অমানুষ মানুষের কাতারে পারেনা করতে বসবাস
এই ভূমি বড় বাঁচা বেঁচে যাবে যদি তুমি পাত্তারি গোটাও কোনদিন।
দখলদার আর লুটেরা শব্দের সৎ আখ্যা তোমাদের নামে গেছে সেঁটে
তোমার নয়ন জুড়ানোর কাজে
এত রক্ততৃষ্ণা
এত ঘৃণা তুমি কি করে হজম করো?
অক্টোবর ২৫, ২০২৩
পরিচিতি
আব্বা-আম্মার দেয়া নাম খানিকটা বড়। লেখালেখি করি নিয়াজ শাহিদী নামে। দুর্ভিক্ষের সময়টাতে হামাগুড়ির বয়স ছিল, লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডারে জন্ম। দুই দশকের মত হল কানাডায় বসবাস করছি। এখন টরন্টোর পাশের একটি শহর হ্যামিলটনে আছি। একটি বেসরকারি কর্পোরেশনে বিজনেস কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ইমিগ্রেশন কনসালটেন্সির করছি।
কোরবানির দুদিন আগে জন্ম বলে বড়আপা দুষ্টুমি করে কোরবান আলী বলে আদর করতেন। সেই বড়আপা ই আমার ডাকনাম টা রাখেন, নিয়াজ। সব ভাই বোনের নামের শেষে শাহিদী যুক্ত হয়েছে আব্বার নাম আব্দুস সহিদ থেকে। যদিও আব্বা “স” দিয়ে সহিদ লিখতেন, আমাদের ক্ষেত্রে তিনি “শ” দিয়ে শাহিদী লিখেছেন, বানানের শুদ্ধতার জন্য।
ছোটবেলায় আমার লেখাপড়া টা গ্রাম আর ঢাকা, ঢাকা আর গ্রাম করে করে একটু ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছিল।
অন্য অনেকের মত আমার জন্ম সাল টাও কাগজপত্রে ব্যতিক্রম করে দিলেন স্কুলের রেজিস্ট্রার সাহেব, তার বদৌলতে না চাইতেও এখনও আমার বয়স আমার চাইতে কিছুটা কম। আল্লাহ এই ভুলের জন্য রেজিস্ট্রার সাহেবকে মাফ করে দিন (যদিও তাঁর উদ্দেশ্য নেহায়েত নেক ই ছিল)।
৯০ দশকের আগে থেকেই লেখালেখি শুরু, ছাপানোও শুরু হয়েছিল জাতীয় পত্র-পত্রিকায়, লিটল ম্যাগ ইত্যাদিতে। নিয়মিতই লিখছিলাম, ছাপাবার তাগিদের চাইতে লেখার তাগিদটাই কেন যেন বেশী অনুভব করেছি সব সময়। এজন্য ক্রমশ বিশেষ অনুরোধ ছাড়া লেখা ছাপতে দেওয়া অনেকখানি বন্ধই করে দিয়েছি, যদিও মনে মনে আমার সময়কার সব লেখকের সাথেই এক ধরনের প্রতিযোগিতা অনুভব করতাম। নিজের প্রেমে নিজেই হাবুডুবু খাওয়ার মত একটা ভাব মনের মধ্যে ছিল আর কি। এখন বুঝি সেই প্রেমের ভাবে তো আর কবিতার লাইন সেদ্ধ হবে না, তাই এখন প্রতিযোগিতা ছাড়াই লিখছি।
যদিও দীর্ঘ এক দশকের মত ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত হিসেব করলে হয়তো ত্রিশটি কবিতাও লিখিনি, অথচ একটা সময় ছিল যখন কোন কোন দিন কয়েকটা লেখাও লিখেছিলাম।
কেন যেন ২০২০ এ এসে মনের এই মন্বন্তরটা আর রাখতে ইচ্ছে করল না। এখন লিখছি, তবে ভয়ে ভয়ে লিখছি, যদি আমার পূর্বেকার লেখার সাথে পরিচিত কেউ বলে– তুমি আবার লেখায় ফিরে না আসলেই হয়তো ভালো করতে।
বলে রাখা ভালো যে মনে মনে প্রতি বছরই একটি করে বই বের করছি। এজন্যই হয়তো এখনো কোনো বই বের হয়নি।