১.
অলৌকিক সূর্যালোক
কবিতা লিখতে আর ইচ্ছে করেনা এখন
অঝোর ধারায় ভিজে যাওয়া বর্ষায় পাহাড়ি ঢিবির মত
কবিতা নাজুক এবং নরম
কবিতা পারেনা পাপে লিপ্ত
বৃক্ষের শিকড় কেটে দিতে
কবিতা পারেনা উড়ন্ত চঞ্চলা পাখির ধর্ষণ ঠেকাতে
কবিতা পারেনা বাঁচাতে, বাঘের থাবা থেকে আহার
ক্ষুধার্ত শাবকের
তাহলে কবিতা কার জন্য?
কবিতা কি শুধু প্রেয়সীর
বর্ণিল মুখের মানচিত্র আঁকার?
আমি আর কবিতা লিখবোনা
আমার কবিতা হোক আজ থেকে
বন্দুকের নলে ফোটা বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধক
লুন্ঠনকারীর বুকে শানানো ছুরির সুতীব্র আঘাত
আমার কবিতা রাজপথে স্বৈরাচারের
ভিত কাঁপানো বিপ্লবের স্লোগান
আমার কবিতা হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝরানো খুনের দরিয়া।
আজ থেকে নতুন নিয়মে লেখা হবে কবিতার সংজ্ঞা
কবিতা মানেই ঈগলের কঠিন চঞ্চু
বাঘের থাবার মানচিত্র হবে কবিতার আবশ্যক চিত্রকল্প
কবিতার ছন্দ মানে নূর হোসেনের বুকে পিঠে আঁকা মুক্তির ঝংকার
তারপর, বিপ্লবের মহা প্লাবনে ধুয়ে যাওয়া পৃথিবীতে
কবিতার বুকে বিকশিত হবে
অষ্টাদশীর মত অলৌকিক সূর্যালোক।
২০,০৮,২০২০ ইংরেজি
নারায়ণগঞ্জ
২.
ছুড়ে দাও শিশুর চিৎকার
গোলাপের তোড়া হাতে খুনি, ডাকাতের দল
জন সমাগমে, মধু মাখা, অক্লান্ত, উদাত্ত আহ্বানে
চাঁদের জোছনা মাখা নবীন রাতের দুরন্ত স্বপনে
আমাদের ডাকে পাহাড়ি বন্যার মত
যত উর্দি পরা থানার সিপাহী, বিনিদ্র প্রহরী
ছায়াঘেরা বাগানের আবক্ষ দেহের মত
ঘিরে রাখে নিরাপত্তা দিয়ে,
উদ্ভট সম্ভ্রান্ত করে
সংসার – সাজানো বাগান চুরমার করে
ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছে সব
সমতলে গেড়েছে অডিঙ্গানো
ধারালো, কাঁকড় মাখা বাঁধার পাহাড়
মননের উপত্যকা অথবা হৃদয় – মালভূমি
ব্যথাতুর হ্রদে একাকার
চঞ্চলা উড়ন্ত পাখিদের
অসিমে হারিয়ে।
শস্যের খামারে বর্গী শকুনেরা
লুটে নিচ্ছে আরাধ্য সবুজ
আজো গোলাপের তোড়া হাতে খুনি, ডাকাতের দল।
অনেক হয়েছে, ছুড়ে দাও সদ্য জন্মানো এবার
বন্দুকের গুলি ভরে শিশুর চিৎকার
সু তীব্র আলোয় চকচকে উজ্জ্বল হোক
আগামী সকাল।
১৯/১০/২৩ ইংরেজি
৩.
প্রিয় জন্মভূমি
কত দিন তাকে দেখিনি দু’চোখে
হাতের স্পর্শ অথবা মনের ছোঁয়া
চোখের ইশারা হয়নি বহুদিন,
পঞ্চাশে পড়েছে সে এখন
বলুন, পঞ্চাশ কি এমন হলো
তেমন কিছু না, এটাতো এখন বাড়ন্ত সময়
যৌবন লকলক করবে লাউ ডোগার মত
লাবন্য চমকাবে শ্রাবনের বিজলি হয়ে
সেতো তাই হবে, তাই নয়কি, বলুন?
কাল রাতে তাকে দেখেছি হঠাৎ বিবর্ণ ঝলকে
মলিন শাড়ির ফাঁকে বের হওয়া কুঁচকানো যৌবন।
কত আসাদেরা আত্মহুতি দিয়ে
জন্ম দিয়েছিল এই দেশ
অর্ধ শতকের পরেও পেলোনা সে পুর্নাঙ্গ যৌবন।
আমি তার আলিঙ্গন চাই বাহুলগ্ন মাখনের
উদার, উন্মুখ হয়ে আছি প্রাণ খুলে
গনতন্ত্র, সুশাসনে আবৃত মায়ার বিনীত পরশ পেতে।
আমার স্বদেশ, প্রিয় জন্মভূমি
মায়ের মমতা মাখা সুখে তুমি উচ্ছসিত কর এ হৃদয়।
১৬/০১/২০২৪ ইংরেজি
সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
৪.
আমাদের গাছে গনতন্ত্র ধরে
আমাদের গাছে গনতন্ত্র ধরে
কখনো হলুদ কখনো ধুসর
কখনো রঙিন মাকালের মত লাল।
বাংলাদেশে এখন পাওয়া যায়
বারোমাসি গনতন্ত্রের বীজ,
পরিচর্যা লাগেনা কোনো
বীজ বুনলেই সোনালী ফসল তোলা যায় ঘরে।
কোনো ঝড়, প্রাকৃতিক বালা মুসিবতে
ক্ষতি নেই তার, রোগ – জীবাণু সহনশীল
কখনো সখনো কেউ বিরক্তির কারণ হলেই
সে কামড়াতে পারে গলা চেপে নির্দ্বিধায়।
সে বড় সুন্দরী, গরিবের রাঙা যবুতী বধুর মত
পারলে তুমিও একবার ঢিলাতে পারো
গনতন্ত্র গাছে
ফাল্গুনের কুল হয়ে নত হবে দু’পায়ের কাছে।
১৪-০১-২০২৪
সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
৫.
নিমজ্জিত স্বদেশ আমার
আর কোনো কোমলতা নেই
নিবিড় রাত্রিতে ঢাকা সব
নক্ষত্র বেঘোর হারিয়েছে হুশ
প্রান্তিকে জমানো যত শীত, পেঁচার চিৎকার।
মানসে নিকষ রক্তের দূষিত ধারা
হিমাগার হয়ে আছে পৌষের সকাল
গোক্ষূরে জলন্ত দিনের মহিমা
অষ্টাদশী চোখে হানে সুতীব্র ছোবল।
এ কোন রূঢ়তা, পাথুরে মর্মর
বিবেকের নদী গুলো পথভ্রষ্ট ছুটে যায়
সাগরের প্রেম ভুলে পাহাড়ের পাদদেশে
নির্মম প্লাবনে ডুবে যায়
শিশুর পবিত্র সূর্যদয়।
দিকে দিকে পশুত্বের কোলাহলে
নগরে ও গ্রামে উল্লাসে ফুটন্ত ভোর,
রক্ত লালসার ঝলকানো খঞ্জরে
নৃত্য রত বিষ মাখা দাঁতাল প্রহর।
আর কোনো কোমলতা নেই,
বাতাসে মাতাল জারজের হাসি
বানরের করতলে গোলাপের বন,
ময়লার ভাগারে ভাসমান একা
যুবতী সন্ধার কায়া।
ঘন ঘোর অন্ধকারে
ডুব সাঁতারে অবাঞ্চিত,
নিমজ্জিত স্বদেশ আমার পাথুরেপর্বত।
09/01/2024
কাঁঠালিয়া বাড়ি,
ধনবাড়ি. টাঙ্গাইল
৬.
আমি কিছুই বলবোনা
আমি কিছুই বলবোনা
এই অত্যাচার, সফেদ নির্ঘুমে
জেগে থাকা চাঁদের সারথি
রক্তাক্ত স্লোগানে মুখরিত
ঝাঁঝালো রাজপথে, পিচ্ছিল, একাকী
অনেক সন্ধার ভিড়ে
নিশি পক্ষির ডাকের মত
বিপ্লবের ঝান্ডা ধরে আছি
জুলুমের ধাড়িবাজ, নীলাভ্র সিপাহী
প্রেমিকার ছুড়ে মারা চুম্বনের মত
তাক করা বন্দুকের নলী
কি উজ্জ্বল ছুটে আসে আমারি বুকের দিকে
শেষ রাতে শুক তারা বড় বড় চোখ করে
তাকালে, দিনের সূর্যের কথাই উজ্জ্বল হয়
ডাহুকের ডাকে পষ্ট হয় অভয়ের বাণী
আমি কিছুই বলবোনা
তোমার এ ছুড়ে মারা বিষাক্ত বল্লম
আমাকে আঘাত করে ফিরে যাবে
তোমার ই বুকে।
৭.
এই শহরে
এই শহরে আদিম, বনেদি সৌন্দর্য্য
মৃত্তিকার গন্ধে, সলাজ উজ্জল
নিয়নের রাঙ্গা কৃত্রিম আলোর মত
পথে প্রান্তে নিশি কন্যা ফুটে থাকে
বেওয়ারিশ গাছে, সড়ক বাতির নিচে
গতরে, দেহের দহলিজে রাক্ষসের হাহাকার
নিউ মার্কেট, টাউন হলের সাজানো বাজার
কারওয়ান বাজারের হস্তি মার্কা আড়তের
থরে থরে নানা ব্যন্জন সম্ভার
জিহ্বায় জেগে ওঠে ক্ষুধার্ত আমার আমি
সিংহের হিংস্রতা, রাত ভর কুড়ে কুড়ে খায়
বৌ’য়ের আঁচলে বাঁধা সিকি পয়সার সম্মান
হেঁচকা টানে খুলে নেয়, পকেটে নিবৃতে
পড়ে থাকে ইঁদুরের লাশ
গৃহের অলিন্দে, তৈজসে চৌকোণা, ছেঁড়া
বালিশে, বঙ্গোপসাগরে মানুষের তৈরী দুর্যোগে
ভেসে আসা লাশের সমান খরা – হাহাকার
সাজানো ঝলমলে পার্কে
বিশেষ দিবসে উজ্জ্বল, যেন সদ্য বিবাহিতা
পুস্পিত বধুর মুখ
সুখের স্লোগানে সারি সারি ভাসানো সাম্পান
এই শহরে দুর্ভিক্ষের বানে
ভেসে বেড়ানো আদিম
আমি এক বুনো হাঁস
অকাল সন্ধ্যায় আশ্রয় খুঁজেছি
তোমাদের সভ্যতার নির্লিপ্ত চৌকাঠে…..
১৯ / ০৯ / ২০২৩ ইংরেজি
নারায়ণগঞ্জ
৮.
নাগরিক
আকাশ যখন রোদ ঝলোমল দিগন্তরের আলো
হৃদয় আমার দুঃখ ভরা নিঝুম রাতের কালো
পাখপাখালীর মিষ্টি সুরে জগৎ যখন ভরা
আমার ঘরে অন্নহীনে তখন ভীষন খরা
বানিজ্যতে হারিয়েছি ফসল ভরা তরী
খেই হারানো মাঝি আমি এখন কিযে করি
চারিদিকে বেতস বনের কাঁটালো হাতছানি
জোয়াল ভরা কাঁধে আমার ব্যর্থ রথের ঘানি
জায়া আমার অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে রাখে
হতাশ চোখে দিন কেটে যায় হিজল বনের বাঁকে
পকেটে নাই কানাকড়ি যাচ্ছি তবু হাটে
ছেলে দুটি পা গুটিয়ে দিব্যি আরাম খাটে
বাজার ভরা জ্বলছে আগুন মরা মাছের শোক
আমার জন্য বরাদ্ধ কি আছে কোন থোক?
রাষ্ট্র কোথায় ? রাষ্ট্রপতি ,রাষ্ট্র আমার মা ?
আমার জন্য রাষ্ট্র এমন ভুখার উপমা ?
রষ্ট্র জুড়ে অট্ট্রালিকা উন্নয়নের ঢেউ
আমার মত ভুখার খোঁজে থাকেনাতো কেউ।
কি আর করা, রাষ্ট্র আমার, আমি নাগরিক
দেশকে জুড়ে ভালোবাসা, শাসন জুড়ে ধিক।
৯.
বিষ বৃক্ষ
মান্যবর আপনাকে সু স্বাগতম
আসুন উন্নয়ন ও শান্তির মহা সড়কে
আমরা জোটবদ্ধ-মহা শক্তিশালী
আমাদের গতি কন্টকাকীর্ণ করতে যদি
কোন শিশু, পায়রা, হরিণ যা ই আসুক
তাকে পিষে এগিয়ে যাবো
আমাদের লক্ষ উন্নয়ন এবং শান্তি …
একুশ শতকের কাছে অঙ্গীকার
পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ হবে আমাদের
এতে করে যদি আমাদের ডান হাত হয়ে যায় চেঙ্গীস খান
বাম হাত রেজিনাল্ড
তাতেও আপত্তি নেই।
দেখুন বাম দিকে মৃতের পাহাড়
ডানে অপূর্ব জলরাশি
আমরা বীরত্বের কথাই বলবো
মান্যবর সব কিছু আমাদের উত্তরসুরীদের
নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত
যেমন ইরাকের বিদ্ধস্ত মাটি থেকে ঘুম কেড়ে নিয়ে
বানিয়েছি সুখের প্রাসাদ
মাননীয় আসুন
গনতন্ত্রের আড়ালে একটি বীজ বপন করি
যেটা আমাদের সন্তানদের ছায়া দেবে অনাদিকাল
০৮/০৭/২০১৭ ইং
১০.
প্রিয় বাংলাদেশ
প্রিয় বাংলাদেশ
সূর্যের চকচকে আয়না হতো যদি
যদি রজনীগন্ধার মখমল শুভ্রতা নিয়ে
ফুটে থাকতো আমাদের গৃহে
আমি আনন্দের ঝর্ণা হয়ে যেতাম।
স্কুল পড়ুয়া ছেলের আবদার মেটাতে
প্রিয় বাংলাদেশ, যদি উদার সমুদ্র হতো
আমি তরী নিয়ে
পাল তুলে ভেসে যেতাম উল্লাসে, অজানা কোনো দ্বীপে।
রুগ্ন মায়ের দেহের ভাাঁজে
ক্ষুধার রুমালে যদি নক্সি এঁকে দিতো, প্রিয় বাংলাদেশ
তবে আমি নত হয়ে বিনম্র কলার কাঁদি হতাম।
হাসপাতালে, বেডে যখন আমার
দেহের আয়না চুরমার হতে থাকে, যদি
সেবিকার উষ্ণতায় ঝলমল করতো রোদ- প্রিয় বাংলাদেশ
তবে আমি মুগ্ধ হতাম
প্রিয় কুকুরের কৃতজ্ঞতায়।
আমার প্রাণের উত্তাপে যখন, চৈত্রের শরীরে ঝড় ওঠে
প্রিয় বাংলাদেশ! তুমি মুচকি হেসে, আমায় সলাজ উপহাস করো।