তৈমুর খান
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (জন্ম ১৮৯৭) বেঁচে থাকলে ১২৬ বছর বয়স হতো তাঁর। কিন্তু আজ কি দেশের এই হাল আমাদের সহ্য করতে হতো? যে নেতাজি মনে করতেন স্বাধীনতার পরও উচ্ছৃঙ্খল অসভ্য জাতিকে সবক শেখাতে বা ঠিকমতো চালনা করতে অন্তত ৫০ বছর আরও চাবুক মারা দরকার। তিনি দেখেছিলেন, সেই সময়ে জাতিসত্তার সংকট কোনখানে। ব্রিটিশ অপশাসনে জাতি দিশেহারা, বিছিন্ন, স্বার্থপর এবং অকৃতজ্ঞও হয়ে পড়েছিল। যে জাতি Spiritual Power-এ সমৃদ্ধ নয় সে জাতি যে প্রকৃতই দুর্বল স্বামী বিবেকানন্দের ভাব-শিষ্য বলে বহু আগেই এ কথা সুভাষ বুঝেছিলেন। তাই তাঁর Man Making Mission এর প্রথম কথাই হচ্ছে ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ। যেখানে দুর্বলতা ও জড়ত্ব, সেখানে ক্ষমা নয়— যুদ্ধই শেষ কথা। তবে আসবে Revolution.
আমাদের দেশে যে বিপ্লব সুভাষচন্দ্র আনতে চেয়েছিলেন তা কি এসেছে? শুধু ফুলমালা আর ধূপের ধোঁয়া ছাড়া নেতাজির কোনো আদর্শই আমরা পালন করতে সমর্থ হইনি। নেতাজি রক্ত দিতে বলেছিলেন স্বাধীনতা লাভের জন্য। কিন্তু রক্ত দিয়ে বীরের স্বাধীনতা লাভ করিনি। সেই কারণে স্বাধীনতার মর্মও আমাদের কাছে উপলব্ধ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। স্বাধীনতা পাওয়া এবং স্বাধীনতা রক্ষা করার তাগিদ কোনোকালেই দেশনেতাদের মধ্যে ছিল না। যতটা ছিল দেশকে শাসন ও শোষণ করার লোভ। তাই কোনো প্রকারে ক্ষমতা দখল করে মহানুভবতার ছদ্মবেশে রাষ্ট্রপ্রধান হবার সেই ট্রেডিশন আজও অব্যাহত। দেশভাগ হোক, জাতি দুর্বল হোক, সাম্প্রদায়িক বিভাজন বজায় থাকুক এবং ধর্ম ও সংস্কৃতির অনৈক্যই হোক জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার পন্থা— ব্রিটিশ নির্দেশিত পথই আজও সমানে অনুসৃত হয়ে চলেছে। নেতাজি যে সমাজতন্ত্রবাদে আপামর জনসাধারণকে একই সরলরেখায় আনতে চেয়েছিলেন, যে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন এবং সর্বোপরি জাতীয়তাবোধ জাগাতে চেয়েছিলেন—সেই প্রচেষ্টা আজ আর নেই। যে পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের সমাজে ওতপ্রোতভাবে আমাদের ভেতর প্রবেশ করে আমাদের ধর্ম-কর্ম, শিল্পকলাকে ধ্বংস করেছে—তারই পুনরুজ্জীবন চেয়েছিলেন নেতাজি। জাতিসত্তার মুক্তি তো সেখানেই। ব্রিটিশ তাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই কাজটিও সম্পন্ন করার ভূমিকা কোনো সরকারই গ্রহণ করেননি। উজ্জ্বল ছাত্রজীবনে ১৯২০ সালে মাত্র ছ-মাস পড়াশোনা করেই নেতাজি বিলেতে আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান দখল করেছিলেন। ইতিমধ্যে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড(১৯১৯) এবং গান্ধীজীর ভারতীয় রাজনীতিতে অসহযোগ আন্দোলন তাঁকে নানাভাবে ব্রিটিশ বিরোধিতায় প্রেরণা দিয়েছিল। তাই চাকুরির প্রলোভন ত্যাগ করেই ১৯২১ সালের ১৬ জুলাই সরাসরি মুম্বাই পৌঁছে গান্ধীজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশমাতৃকার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। অবশ্য এ ব্যাপারে তাঁর রাজনৈতিক গুরু চিত্তরঞ্জন দাশের অবদানই ছিল বেশি। প্রথম জীবনে কংগ্রেস দলে যোগদান এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর কারাবরণ চলতেই থাকে। মোট সাতবার তাঁকে শুধু কারাবরণই করতে হয়।
অগাধ পাণ্ডিত্য, বাগ্মিতা, নেতৃত্বদানের অসাধারণ ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছিলেন সুভাষচন্দ্র বলেই তাঁর দৃপ্ত ও প্রদীপ্ত যৌবনের আবেগে জাতি একজন সঠিক নেতাকেই পেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ পাঠিয়েছিলেন আশীর্বাদ। চিত্তরঞ্জন কাছে টেনে নিয়েছিলেন। সুভাষ সেই শক্তি ও প্রেরণায় গড়ে তুলেছিলেন এক শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। তাঁর জনপ্রিয়তা এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে, কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পদে আসীন থাকাকালেই ব্রিটিশ সরকার পর্যন্ত ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাঁর নীতি-আদর্শ সেইসময়ের কংগ্রেস দলও মেনে নিতে পারেনি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মতো তিনিও চেয়েছিলেন স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ। এই উগ্রপন্থী চিন্তাধারার সঙ্গে আপসপন্থী ও মধ্যপন্থী দলের চিন্তাধারা মেলেনি। ফলে অনিবার্যভাবেই ফাটল ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে। ১৯৩৯ এর ত্রিপুরী কংগ্রেসের অধিবেশনে সুভাষের বিরুদ্ধে জোরালো সাওয়াল চলতে থাকে।সেই সময়ই সুভাষ কংগ্রেসের সভাপতিত্বের পদ ত্যাগ করেন। গড়ে তোলেন নতুন রাজনৈতিক দল—ফরওয়ার্ড ব্লক। ১৯৪০ সালে ফরওয়ার্ড ব্লক ও সারাভারত কিষান সভার যুক্ত উদ্যোগে বিহারের রামগড় নামক স্থানে ‘সমঝোতা বিরোধী’ সম্মেলন আহ্বান করেন। এই বছরই নাগপুর সম্মেলনে একটি অস্থায়ী জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান। তারপর কলকাতায় ফিরে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের জন্য সত্যাগ্রহ শুরু করে গ্রেপ্তার হন। কারাগারে অনশন করেই মুক্তি পান। গৃহে অন্তরিন থাকাকালে ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৪১ সালে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের মধ্য দিয়ে কাবুল হয়ে রাশিয়া প্রবেশ করেন। সঙ্গে ছিলেন কাবুলের পথে উত্তম চাঁদ আর ইউরোপের পথে ডুবোজাহাজে আবিদ হোসেন। রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে অত্যন্ত বিপদের মুখেও তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তিনিই এমন একজন নেতা, যিনি সর্বপ্রথম বুঝতে পেরেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য বিদেশি শক্তির সাহায্য প্রয়োজন। মস্কোয় ১৫ দিন অপেক্ষা করেও মার্শাল স্ট্যালিনের দেখা না পেয়ে ‘শত্রুর শত্রু’ জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা হন। জার্মানিতে এসে একটি অস্থায়ী ভারত সরকার গঠন করে শক্তিশালী বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে প্রচার কার্য চালাতে থাকেন। কিন্তু কখনোই তিনি ব্যক্তিনিন্দা বা ব্যক্তিবিরোধিতা পছন্দ করতেন না। কংগ্রেস ত্যাগ করলেও এবং দেশের বাইরে গিয়ে দেশের জন্য প্রচারে তিনি সেসব প্রসঙ্গ একবারও উত্থাপন করেননি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে জাপানে অপেক্ষমান মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকার গড়ে তুলেছিলেন। তরুণ সুভাষকে পেয়ে তাঁর আরব্ধ কাজের ভার সমর্পণ করেন। সুভাষ ইউরোপ থেকে সমুদ্রপথে সাবমেরিন যোগে আটলান্টিক ও ভারতমহাসাগর পার হয়ে সিঙ্গাপুরে পৌঁছান ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে। জাপানের ধৃত ভারতীয় সৈন্য ও যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে ‘আজাদ-হিন্দ ফৌজ’ গঠন করেন রাসবিহারী বসু। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাহিনীর সর্বময় কর্তৃত্ব নেতাজি সুভাষকে তুলে দেন এবং তাঁকে ‘নেতাজি’ আখ্যায় ভূষিত করেন। ভারতের প্রথম স্বাধীন সেনাবাহিনী ‘আজাদ-হিন্দ ফৌজ’ নেতাজির ব্যক্তিত্ব ও সাংগঠনিক শক্তির পরিচয় আজও বহন করে চলেছে। এই ফৌজ জাপ যুদ্ধজাহাজের সাহায্য নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করে এবং এই দ্বীপপুঞ্জের নামকরণ করে ‘শহীদ দ্বীপ’ ও ‘স্বরাজ দ্বীপ’। নেতাজি তাঁর অসাধারণ দক্ষতায় তাঁর সরকারে সকল ধর্মমত ও ভাষাভাষীকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। রোমান হরফে হিন্দুস্তানি ছিল তাঁদের সকলের ভাষা। ১৯৪৪ সালের জানুয়ারি মাসে রেঙ্গুনে আজাদ-হিন্দ সরকারের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। তাঁর নির্দেশমতো সেখান থেকে অভিযান চালিয়ে উন্নত ধরনের অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত হয়ে ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাস্ত করে ইম্ফল ও কোহিমার পথে অগ্রসর হয়। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণ করার ফলে নেতাজি তাঁর বাহিনীকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। দেশের জন্য যে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেছিলেন, প্রাণ দিতেও তিনি পিছ-পা ছিলেন না। তাই পুনরায় দেশ উদ্ধারের আশায় হাবিবুর রহমানকে সঙ্গী করে সায়গন থেকে তিনি যাত্রা করেছিলেন।
তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল কিনা আমরা জানি না। রেনকোজি মন্দিরের চিতাভস্ম নেতাজির কিনা তাও জানি না। শুধু জানি নেতাজি আর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেননি। বিভিন্ন সময়ে একদল ফন্দি-ফিকিরবাজ মানুষ তাঁকে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে চলেছেন। কখনো শৌলমারির সাধু হিসেবে, কখনো ফৈজাবাদের গুমনামি বাবাকে সুভাষ বলে টেনে এনেছেন। নেতাজির আদর্শের ধারক ও বাহকেরাও আজ অনেকটাই পথভ্রষ্ট। নেতাজি কী চেয়েছিলেন, আজ তাঁরাই বা কী চান এ বিষয়ে কি কোনো মিল আছে? নেতাজি সাধারণ মানুষের কথা শুধু ভাবেননি, কাজেও করে দেখিয়েছিলেন। তাদের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ যেমন শুনেছেন, তেমনি প্রথম থেকেই তাঁর শাসন ব্যবস্থাকে সমাজতন্ত্রের বুনিয়াদ করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা সহযোগী হয়েছেন বা জনগণ যা করেছেন তাঁরা অবশ্যই জানেন সুভাষ কতটা এই দেশের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘তাসের দেশ’ নাটকে যে কয়েকটি গান সংযোজন করেছেন এবং সুভাষকে উৎসর্গ করে লিখেছেন সেখানে একটি উল্লেখযোগ্য হলো:
“…চারিদিক ছায় মেঘে
ওগো নেয়ে, নাওখানি বাইয়ো
…বন্ধন দুর্বার সহ্য না হয় আর
হাঁই মারো, মারো টান হাঁইয়ো”
রবীন্দ্রনাথ দেখে যেতে পারেননি সুভাষ চারিদিকে মেঘের বিস্তারের মধ্যেও ভরাডুবি বন্যায় কিভাবে নাওখানি নিয়ে গিয়েছিলেন। নজরুলের ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’-এর কথাও হয়তো নেতাজির মনে থাকবে। যে নেতাজি এমিলি (স্ত্রী)-কে একবার বলেছিলেন ‘প্রথম প্রেম আমার দেশ’ অর্থাৎ দেশের জন্য ব্যক্তিগত জীবনকে উপেক্ষা করা তাঁর কাছে কিছুই নয়। সেই নেতাজি যে সে-যুগেও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি আহরণকারীদের কাছে বলি হবেন তা বলাই বাহুল্য। সেযুগের কার্টুনিস্টরাও তাঁকে ‘তোজোর কুকুর’ হিসেবেই দেখাতে চেয়েছিলেন। সমগ্র জাতির কাছে আজ তা পরম লজ্জার বিষয়।
আজ দেশে ভণ্ড, মুখোশধারী রাজনৈতিক নেতার অভাব নেই। অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। তাই নেতাজির আদর্শ বা দেশপ্রেম আমাদের কাছে গল্প ও নীতিশিক্ষায় ব্যবহার হয়। কর্মের ভূমিকায় তা আমরা গ্রহণ করি না। দরিদ্র, নিপীড়িত ১৪০ কোটি ভারতবাসী বিবেকানন্দ ও নেতাজিকে মনে-মনেই পূজা করে হয়তো, কিন্তু কখনোই কি দীক্ষা গ্রহণ করে? করলে হয়তো এরকম অন্ধকারের দিকে আমরা যাত্রা করতাম না। চরম এক অস্থিরতা ও সংকটময়তায় আমরা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি। নারীজাতির মান-সম্ভ্রম যেমন রাখতে পারছি না, তেমনি দেশের বা ভারতভূমিরও লাঞ্ছনার একশেষ করে ছাড়ছি। সততা, মূল্যবোধ, মানবিকতা কথাগুলি আর আমাদের তেমনভাবে নাড়া দেয় না। কিন্তু তবু অন্ধকারের উৎস হতে আলোক প্রত্যাশী জীবন বারবার নেতাজির আদর্শে আশ্রিত হতে চায়। অর্ধশিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষও নেতাজির ফিরে আসার অপেক্ষা করে। তাঁর পৌরুষদৃপ্ত বাণী আজও সকলের কানে বাজে ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।’ তারা সকলেই বলতে চায় My leader. দেশে এত সমস্যা, এত মৃত্যু, হানাহানি, ধর্ষণ, সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম হয়তো নেতাজি থাকলে এসবের উত্থানই ঘটত না। উৎসমূলেই তার বিনাশ ঘটাতে পারতেন। অসম সাহসী ছিলেন বলেই এবং প্রকৃত দেশদরদী ও মানবদরদী ছিলেন বলেই নানা অসম্ভবকেও তিনি সম্ভব করে তুলতে পেরেছিলেন। শোনা যায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন ইংরেজ অধ্যাপক ওটেন ভারতবিদ্বেষী প্রচারের জন্য কয়েকটি ছাত্রের দ্বারা প্রহৃত হন। এদের দলে নেতাজির নামও জড়িয়ে যায়। কলেজ থেকে তাঁকেও বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এই ওটেনই সুভাষের দুর্জয় সাহস ও শান্ত, নম্র স্বভাব লক্ষ করেছিলেন। একটি কবিতায় তিনি তাঁকে গ্রিকপুরাণের আইক্যারাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আইক্যারাস মৃত্যু অনিবার্য জেনেও সূর্যের সঙ্গে লড়াই করতে পিছিয়ে আসেননি। ওটেনও বিশ্বাস করতেন সুভাষ কখনোই তাঁকে গোপনে পিছন দিক থেকে আক্রমণ করতে পারেন না।
যাইহোক পৌরুষের প্রতিভূ সুভাষ সমগ্র জাতির কাছে আজও অভিভাবক স্বরূপ। তাঁর সাহসী মস্তিষ্ক এবং বিবেকানন্দের আধ্যাত্মিক আত্মা নিয়েই ভারত আজও স্বপ্ন দ্যাখে। আজও ভুলতে পারি না আমরা আজাদ-হিন্দ ফৌজের স্মৃতিস্তম্ভে উৎকীর্ণ সেই লিপিখানি: “হে স্বদেশবাসী, পথিক, স্মরণ করো এখানে শায়িত বীরদের, কারণ তোমাদের ভবিষ্যৎ সুখের জন্য আজ তাঁরা নিজেদের বিসর্জন দিল।”
এই বিসর্জন আমরা ভুলিনি। ভোজপুরি রমণীদের কন্ঠে এখনো যে লোকসংগীত গীত হয় তাতে শুনতে পাই—
“লক্ষ্মী যা কে নেতাজি সে কহলী
পাঈ হুকুম চলাই গোলী
দুশমন ভরন গুমান মেঁ না।”
অর্থাৎ “লক্ষ্মী স্বামীনাথন নেতাজিকে বললেন, শত্রুপক্ষের প্রতি গুলি চালাতে অনুমতি দিন। এই শত্রুদের অহংকার চূর্ণ করা দরকার।”
তাহলে কে বলবে নেতাজি বেঁচে নেই আমাদের মধ্যে? হয়তো আমরাই তাঁকে আর বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না।
তৈমুর খান। কবি ও প্রাবন্ধিক। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।