সিমেট্রি
ওই যে আলো ছুটছে, রক্তমাখা বুলেটের গতি
গেঁথে ফেলছে ছায়া, রাত গিলে নেয় দিনের বিক্রম।
মনের অন্ধত্ব ছাড়া দৃশ্যমান সব কিছু,
সব কিছু ডুবে যায় কোন হিগস ফিল্ডে;
কিছু নাই, তবু আছে সব, তবু আছে-
জীবনের উষ্ণতা, সামুদ্রিক ঝড়।
একটা সিমেট্রি গড়ে নিতে আরেকটা
ভাঙতে থাকে, ফেলে আসা বর্ণমালা
স্মৃতির বিবর থেকে তুলে আনে অতীত মগ্নতা,
বৃক্ষ, পত্রালি, ঘাস, পাখি, নদী ও মেঘ
এমনকি
পড়ন্ত চৈত্রের দুপুর, তাবৎ মখমলের
কারুকাজ নিয়ে পাড়ি দেয় স্বপ্নের দরিয়া।
ওপারে তরমুজের খেতে পোড়া ইট,
পাটনির হাঁক থেমে ধুঁকছে ফেরি ইঞ্জিন।
আপন গরাদের ভেতর বন্দী মানুষের হৃদয়।
টাইম টানেল
১.
ন্যাচারাল ক্লোনিংয়ে মধ্যে গান ভুলে
যাওয়া পাখি,
সে যে গানের পাখি ছিল তা এখন নিজের কল্প-বিলাস
কিংবা স্মরণকোষ থেকে মুছে যাওয়া
ফরেনসিক ইতিহাস।
কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন থেকে
ম্যাকডোনাল্ড এসবের প্রসেসড ফুড
আর মাদাগাস্কারের প্রবাল দ্বীপ থেকে
আনা শৈবালের সুপ খেয়ে
আমরা এখন লালনের গান গাই।
একই মন্ত্র আর প্রলাপের ঘোরে ক্লিশে
আর জঞ্জালে ভরে উঠেছে
মাথার খুলি, নালায়েক ভাবছে
“আমি”র উপরে আর কিছু নাই।
২.
যে যেখানে থাকার কথা সেখানে নাই,
যেখানে আছে বলে দাবী করে সে-
সেখানেও নাই; যেখানে সে আছে
তার চিন্তা তা স্পর্শ করেনি,
না শিল্পে, না কবিতায়, না ধর্ম-সাধনায়;
নিজের সৃষ্টিতেও নাই- কিছু নাই।
অতীতের গান ছাড়া নতুন কোন সুর
নাই, শিল্প তোমাকে ছেড়েছে আগেই,
গান থেমে গেছে, ঢোল থামে নাই।
তুমি আছো, আসলে তুমি নাই
পানির নিচেও আগুন, তোমার কাছে ছাই,
আসলে তুমি নাই, তুমি কেবল হাওয়াই মিঠাই।
সারফেসের নিচে চাপা পড়া পাথর।
সন্ধ্যায় আলোর ফলা
হাওয়ায় ভেসে থাকা জলকণা,
পানির ওপরে মান্দার ফুল-
রক্তে, কোষের ভেতরে ভেসে যায়
ভেসে থাকে প্রাণ;
শূন্যের ভেতরে ভেসে যায় পৃথিবী।
কার ভেতরে কিভাবে ভেসে আছি
সময় ও দূরত্বের ক্ষুদ্র সীমায়
পানির ভেতরে যেন মাছের সাঁতার,
ফাঁকা স্পেস ছাড়া
যা কিছু ধসে পড়ছে,
মনের পালক- খসে পড়ছে
জৈবযৌগ, ধাতব আকরিক – বস্তুর
মৃত্যুর দিকে, ক্রমাগত আমরা ঝুঁকে
পড়ছি; আর এই সুপার কন্ডাক্টিভিটির
দিকে হেঁটে যেতে যেতে পাথর
একটা ম্যাগনেটিক
ক্রাসিং মেশিনে ফানা হইতেছে।
শব্দ ও আলোহীন টানেলে মুহূর্তের
আলো মাত্র ভরহীন ‘আমি’র আভাস,
জানি সেই ঋণাত্মক রাশির বয়ান।
সূচের ছিদ্র দিয়ে হাতির দৌঁড় দেখার
জন্য, এই ভরশুন্য মাধ্যমে ডুবে আছি।
সিভিলাইজেশ্যন নিজেদের কেতাবি
ফেনোমেনা, একটা টাইম জোন।
পৃথিবী একটা টেনিস বল, মৃত্যুর মতো
ভারি এবং আনপ্রিডিকট্যাবল।
একই জমিনে প্রতিদিন
যে কবিতা ঘাস খায়,
এ্যালোভেরার জুস থেকে যে ভাবের পয়দা,
সেইখানে মৃত ঘাস নিয়ে ঘুরতেছে এ কালের কুষ্ঠরোগী।
মল আর নখের আঁচড় রেখে যায় বনের কুতুব।
এখন সেই দিনের পড়ন্ত হাওয়া,
সাব-এ্যাটমিক এজেন্টের ভেতর
হ্যাজম্যাট কোর্তা গায়ে হাঁটিতেছে মানুষ।
আমি এই সন্ধ্যায় আলোর ফলা হয়ে
অন্ধকারে বাইচের নৌকার হাল ধরে
বসে আছি নিঃঝুম।
দেখছি প্লিক্যান লম্বা ঠোঁটে কেড়ে নিচ্ছে কুমিরের গ্রাস,
পৃথিবীর আবছা অন্ধকারে
আয়নায় আমার ছায়ার ওপর ডুবে
আছে সময়ের সব মৌমাছি।
যার কোন ছায়া নাই, আলোয় কিংবা
অন্ধকারে, চৈতন্যের কার্নিশ বেয়ে
ছুটিতেছে দূরে, ম্যাগিলান তারকার
ধুম্র মেঘের আড়ালে, এতো দূরের পথ
যেতে হবে সন্ধ্যার আগে, অবিরাম চলা
পৃথিবীর প্রেমের আরক্ত স্পন্দনে
ভেসে যাচ্ছে জীবন, আরো ভেতরে…
আরো নিষিদ্ধ কিংবা গোপন কন্দরে…।
একলা সোনাইলের ফুল
কোথাও যাই না, কিন্তু কোথাও স্থির থাকি না,
ময়দানে সাদা ভেড়ার মধ্যে একটা সাদা ঘোড়া।
প্রতিসরিত আলোয় ছায়াহীন বিভ্রমের
মধ্যে হয়তো এই পৃথিবীর একটা চাঁদ
নিঃশব্দে হাঁটিতেছে উপবৃত্তাকার।
সময়ের ক্রান্তীয়মান উল্টোদিকে
যেতে যেতে, কোন এক বিন্দুতে
নোঙর তুলছে জাহাজ।
মননে ভাষাহীন জগত বাঙময় হইতেছে
আহা! জীবন- বিলের কিনারে একলা সোনাইলের ফুল,
জলের আয়নার ভাসে সোনার মোহর,
সেই গাঙুরের জলে ডোবা মাছুয়ার
ডিঙ্গা ভাসিয়ে আমি সমুদ্রে নামিয়াছি।
এই কহর কালে সব মগজে খেলছে ‘চেরি পিকিং’।
সব চেনা অচেনা মানুষের ভিড়ে
শেয়ালের পেট থেকে লাফিয়ে বের
হইতেছে মুরগির বাচ্চা ;
হেডলাইট ছাড়া ভ্যাকুয়ামের ভেতর অন্ধকারে ছুটছি,
দূরে পিঙ্গল আগুনের বলয় ক্রমশ নীল
ডার্ক লাইট
ডার্ক ডেথ
হাসপাতালগুলোর দরোজা বন্ধ।
সোনার ডিম পাড়া সব হাঁস উড়ে যায় বিদেশ।
কালপুরুষ হয়ে জেগে থাকি কালবেলা
মেঘের আগেই বজ্র নিনাদ,
মেঘের আগেই বৃষ্টি;
মনের পাখি কান পেতে রয়,
দম নিতেছে কলেরগান।
উড়তে পারি, হয়তো পারি না-
আড়ষ্ট হয়ে আছে গানের পাখি ম্যাগপাই ।
অজ্ঞান হয়ে দেখি, চারদিকে জ্ঞানের সাফাই।
এই যে হাওয়া মউতের গন্ধ মাখা,
বিউগলের সান্দ্র সুরে কাতারবন্দি মানুষ।
ভাপ
গতকাল ছিল আজ নাই
যা যা ছিল দেখা কিংবা না দেখা
আড়াল হওয়ার পরে আজ যা ঠিকঠাক
যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেছে,
এই এলগারিদমের শেষ সংখ্যাগুলো
ভবিষ্যতের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে।
রাতের নদীতে অন্ধকারে আমি
বহুবার জেলেদের জালের শেষে
নির্দেশক বাতিগুলো দেখে তারা
ভেবে দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়েছি,
দূরে কীর্তনখোলায় স্টিমারের সাইরেন
শুনে ভেবেছি সিঙ্গার ফুৎকার।
আকাশ দৃশ্যত একই তবুও গতকালের
আকাশ আজ নাই, আমি এই বিভ্রমের
মধ্যে মানুষের তাবৎ ইতিহাস দেখে
পাথরের ন্যানো গুহায় আলো ফেলে
জীবনের দীর্ঘ, দীর্ঘতর রেখা টানিতেছি।
দেয়ালে ঝুলানো পুরান ঘড়ির
পেন্ডুলামের একটা দৌড় দেখে মনে হয়
আমি তার কোটিতম ভগ্নাংশ সময় এই
পৃথিবীতে পা রেখেছি পর্বতের চূড়ায়,
ভোরের আলোয় মুখরিত পাখির
ডানায় করে ধুমায়িত মেঘের পরে উড়িতেছি।
মাটির নিচে কোলাহল থেমে যাওয়া
সমস্ত প্রাণের অসমাপ্ত তৃষ্ণার ভেতর
এই স্তব্ধ নির্জনতায় শুয়ে আছি,
ডপলার ইফেক্ট থেকে আমার বর্ণালী
আগামীকালের দিকে
ক্রমশ নীল থেকে রক্তাভ-ম্লান।
আগে এবং পরে সবদিকে সমান দূরত্বে
উৎসহীন আলোয়, হয়তো কোন শীতের
রাতে এখনো এই পৃথিবীতে চুলার পাশে
বসে আগুনের ভাপ নিতেছি।
তুমি তার নিরক্ষীয় মাঝি
ঘাসেরা শুয়ে শুয়ে বহুকাল আকাশ দেখছে,
উল্কাবৃষ্টির মতো বিস্ময়বোধ জাগে–
প্রান্ত খুঁজে না পাওয়া কোন বহুভুজ দিগন্তে–
উড়ন্ত মাছি, স্থানাঙ্কহীন একা একা–
কিনারে ভেড়ে না কখনো যে ডিঙ্গা
তুমি তার নিরক্ষীয় মাঝি।
এ নদীর ভেসে ওঠা সব মাছ নিয়ে যায়
নয়া শতাব্দীর ট্যারা ঈগল।
দূরে পাকা রাস্তায় মোটরযানের
শব্দ, চোখে বিজলির মতো কখনো
কখনো আলো এসে পড়ে।
অন্ধকারে কোন কুয়াশার জগতে ডুবে
থেকে পূর্বপূরুষগণ কল্পনায় সেইসব
ফড়িংয়ের খেলা দ্যাখে, যাদের পাখার
কম্পন ঘাসের তড়িৎ স্পর্শে ক্রমাগত
ভেসে যায় আরো জীবন– আরো মুত্যু–
সীমানা পেড়িয়ে। রঙ ও গন্ধহীন অদৃশ্য
ধাতবে ডুবে থেকে পূনর্বার স্বপ্ন দ্যাখো
আবার যদি আনবিক ধূলিমেঘ থেকে
জন্ম নেয় নতুন ঘাসের জীবন।
আগন্তুক পূর্বপুরুষগণ আমার মতো
পৃথিবীকে ভালোবাসতো খুউব
কেউ কেউ হয়তো ছিলেন কবি ও প্রেমিক।
ভোরের কোমল ঘাসে প্রথম নক্ষত্রের আলো
ব্রেইন এটলাসের ভেতর ছড়িয়ে দেয় ক্রান্তীয়
উষ্ণ হাওয়া, পূর্ণিমার সমস্ত রাত জেগে জেগে
এঁকে যাই প্রজাপতির সেই নীল ডানা ।
গোল্ডিলক জোন
(রাইনের মারিয়া রিলকে)
একভাবে দাঁড়িয়ে আছে গাছ, আপাত নিশ্চল– অনেকবার
কোটরে জন্ম নিয়ে উড়ে গেছে পাখি, শরীর বেয়ে উঠে গেছে
শঙ্খচূড়, মৃত্যুর চেয়ে গভীর নীরবতা ছুঁয়ে গেছে সহস্রাব্দের
অন্ধকার, এই গোল্ডিলক জোনের ভেতর ঘুমিয়েছে সব প্রাণ।
সূর্যের আলো মুছে গেলে খেতের আইলে জনা কয়েক শিয়াল
চাঁদের পৃষ্ঠ দেখে উল্লাসে ডেকে ওঠে, যদিওবা জ্যোতিষ্কের
তীরন্দাজ বলিরেখা– ত্রাসে আতঙ্কিত করে পৃথিবীর তাবৎ জমিন–
আমি সেই সন্ধ্যায় হেরিকেনের মৃদু আলোয় হারানো চিঠির
ভাঁজ খুলতে খুলতে একা নি:শব্দে তোমার ইউনিভার্সে ঢুকেছি–
অন্য এক গোল্ডিলকে, ভেসে যাওয়া ডিঙ্গায় আলোর নদীতে।
ওয়ান ওয়ে জার্নি
সভ্যতার ভিটায় জটা বটের ডালে বসে
আছে ভুতুম ভূত ;
নির্জন মাঠ থেকে অন্ধকারে দেখছি
দূরে কসমিক ইনফার্নো।
পানির ভেতর আকাশ আর নিজের মুখ,
এই আমার আলোর আয়নায় নিজেকে
দেখা, স্টোন এজ থেকে পরাদেহ এখন
ভেসে চলেছে কোয়ান্টাম লিপে।
মেঘ কুন্ডলি পাকিয়ে উপত্যকা,
এক জায়মান গ্যারিসন,
বিচ্ছুরিত শীতল আলোকণা আমার
এই ড্রিম নিরালোকে ভাসিয়েছে।
সময়ের কালো একটা ভয়েড
নতুন দুনিয়ার–
রাতের ফাঁকা স্টেশন, লোহার একটা
বেঞ্চিতে তিনি শুয়ে ছিলেন।
কিছুক্ষণ আগে চাঁদের আলো এসে
পড়েছে হীম পাথরের শরীরে।
সাথে ঠান্ডা একটা হাওয়া,
সাদা চাদরের ওপর আলো
একটা ঝর্না ধারায় মিশে যায়।
তখনও ছায়া ঢেকে ছিল কোন প্রান্তদেশ।
ঘাসের ওপর থেকে সরে এসে সূর্য
তাকে করেছে চুম্বন। চারদিকে
মাইক্রোওয়েভে ডুবে আছে অজস্র
বেতার স্টেশন, শুনতে পাই একটামাত্র টুইন।
মেঘমল্লার এই রাত্রির কুহকের ভেতর
শূন্যতা ভেদ করে যায় মেন্টর ঝলক।
কেউ কিন্তু জানেনা, নিজে কোথা থেকে
আসে এবং কোথায় যায়।
নর্দান লাইট
ছায়ার আপেক্ষিক অন্ধকারে ভাসছে প্রতিকৃতি,
এই আমি বর্ণিল অরোরা, প্রচ্ছন্ন রেখাংশ দিয়ে
এঁকে যাই ক্লাস্টারগুচ্ছ, তোমার মৌন এটলাস।
সব কিছু এখন শিথিল, ভরকেন্দ্র সরে যায়,
মানুষ আর পৃথিবী, চিন্তার সব লেন খোয়াড়ে
মিহি হয়ে আসে স্বর, পেন্ডুলাম শ্লথ হয়ে আসে।
অম্লজান গিলে যতদিন বাঁচা যায়, ঢের আগে
মৃতের হাড় এখনো দাবি করে বেঁচে আছে প্রাণ।
ডানাওয়ালা উভচর ট্যাক্সিগুলো ছেয়ে ফেলছে
পৃথিবীর কক্ষপথ, নেটের ভেতরে শুয়ে আছে
মন, হাইপার রিয়েলিটি থেকে ডাউন সিন্ড্রোম,
চারদিকের সব অপটিক্যাল ভিউ পাল্টে যায়।
অন্ধকার থেকে আসা সব বস্ত অন্ধকারে ফেরে।
চিন্তার কাঠামোর মধ্যে ঢুলে গেছে সায়ানাইড।
মানুষের ভেতরে দ্বন্দ্বমান টেকটোনিক প্লেট।
চেতনায় আগেই ছিল কোয়ান্টেরাইন নিদান।
আমি এই পৃথিবীতে
হাওয়ায় এবং পাখি উড়ে যাওয়ার পথ
ধরে আমি নেমে এসেছি পৃথিবীর এই
জংলায়, হাওরের ধারে, নদীর কিনারায়।
নতুন চর মৃত ভেসে ওঠা চিতল মাছের
পেট,
জনহীন প্রান্তরে সাদা বালুর পরে
চাঁদের আলো খেলছে গোটা মধ্যরাত;
গাঙ্গপাখির ডিম কোথাও কোথাও
জেগে আছে সময়ের অপেক্ষায়।
আমি এই সৌরমন্ডলে একা হয়ে
এসেছি, প্রাচীন শিলায় মিশে গেছে যে
সব প্রাণ, বালুর ওপর দিয়ে গড়িয়ে যায়
তাদের প্রশ্বাস, আমি ঘুমে-স্বপ্নের ভেতর;
যারা নাই তারা জ্যোস্নার আলোয়
খেলছে দাড়িয়াবান্ধা, যাত্রা দেখে
ফেরার পথে কবজি ধরে থাকা কোমল
হাত, কবে সে হয়ে গেছে দূরের জনহীন
অন্য কোন প্লানেটের নতুন চাঁদ।
এই নিসর্গ মাখা আলোয় আমি তার
ঘ্রান পাই নির্জন বালুচরে।
হাইড্রোকার্বন খেয়ে ফেলছে পৃথিবীর
আয়ু, একদিন মৌচাকে জমা হবে বিষ।
পাতাবনে ডোঙ্গা নৌকায় বসে রাতের
নদীতে ছিপ ফেলে ভাবছি বুড়ো এই
পৃথিবীর প্রেম, আর রূপকথার জীবন।
যখন যেভাবে ভেঙে পড়ে
জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে আগুন নিভে
যায়, যদিও সব বস্তু থেকেই জন্ম নিতে
পারে অক্ষয় আগুন।
মানুষের বোধ নিভে যাওয়া
হ্যারিকেনের চিমনির ভেতর ঘুরতেছে
দিক্বিদিক, ঘোড়দৌড়ের সব পাগলা
ঘোড়া উদভ্রান্ত এই পৃথিবীর।
সমস্ত বিপ্লব কালের বাতাসে উড়ে যায়,
চাকা ঘুরছে আর স্থান বদল হওয়ার
মধ্যে পাল্টে যায় সব বিন্দু, এমনকি
কার্দেসিভ স্কেলের চেয়ে ধারণাতীত
গতিতে, আলপসের উচ্চতায় হাইডেগার ও
কার্নপের বিরোধ শেষ পর্যন্ত বাতিল,
আয়ুষ্মান কেউ তার ভবিষ্যৎ দেখতে
পায় না, এইটা তাকে সময়ের কুয়াশায়
ঢেকে রাখে। পোস্ট-মেটাফিজিক্যাল
টাইমে মানুষ দুইটি ক্লাসিক্যাল লাইনে
ভাগ হয়ে যাওয়ার পর একটা ডার্ক
হরাইজন সময়ে পর্দা তুলছে, তোমরা
মৃত্যুর জন্য সারিবদ্ধ হইতেছো, জেনে
অথবা না জেনে যে, জমাট শিলা
আপন ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়
গলতেছে না, একটা গোটা শৃঙ্খলা
ভেঙে পড়ছে। পশ্চিমের সব অবশিষ্ট
অপভ্রংশ পৃথিবীর পূর্ব কিনারে এখনো
মগজে ঘুরে বেড়ায়, আলাস্কা কিংবা
সাইবেরিয়ায় উষ্ণতা বাড়লে সব
জায়গায় ঝাঁঝ বাড়ে। এই প্রহেলিকার
মধ্যে সমস্ত স্থিরতা পৃথিবীর ল্যাবে
তাপ ও চাপ ভেঙে পড়েতেছে।
ইস্তানবুল, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর
থেকে রাবাত ও আন্দালুস হয়ে
লিরিকসহ যা যা প্রতীচ্যে ঢুকেছে তার
রোশনাই কয়েক শতাব্দী পরে গ্রাউন্ড
জিরোতে ফিরতেছে, আবার আবার
পৃথিবীতে শূন্য থেকে গণনা শুরু হবে।
ভাষা আর বেবিলনে ফিরবে না যদিও,
তার একটা অভিন্ন সুর, মৃত্যুর মতো
সমস্ত কন্ঠনালী থেকে বের হবে হয়তো।
ঝড়ের কবলে পড়া সাপ আর ব্যাঙ
একটা টিলায় উঠেছে, চারদিকে থইথই
পানি, ঘূর্ণিতে টেনে নিচ্ছে যাবতীয়
স্থিতি, বাঁচা ও মরার বিন্দুতে সব ঝুলে আছে।
কিছুক্ষণ আগে যে গাছের নিচে ছিলে,
পরে সেটি বজ্রাহত হয়ে ঝলসে গেছে।
দর্শনের সব পাতা মুছে গেছে, টেন
কমেনডেন্ট’র প্রথম বাক্য এখনো সব
আগলে আছে জেনে মানুষের এখনো
চিন্তার পারদ নির্দিষ্ট সীমায় উঠছে এবং নামছে।
বহুবছর আগে রাতের নৌকায় মাঝির
কাছে গল্প শুনেছি, পৃথিবী নাকি
নৌকার মতো ভাসে, নদীর তীর থাকে,
জানি পৃথিবীর মতো মানুষের কোন তীর নাই।
কারাভান
সাদা ফরাসের ওপর পায়ে পায়ে
পৃথিবীতে কালো কালো ছাপ
কল্পনার শব্দগুলো যেন
সাদা কাগজ থেকে নেমে স্বেচ্ছায়
উদভ্রান্ত হেঁটে যায়।
টাইম ট্রাভেলে ঢুকে পড়ে
বাচ্চাগুলো চিলে নেয়ার পর
মুরগিটা এখন চিলের অপেক্ষায়।
রাত নিঃঝুম হলে কসাইয়ের
দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে
ঝিমাচ্ছে দুইটা ষাড়।
মেঘের ফাঁকে ফাঁকে আজ রাতে চাঁদ
উঁকি দিচ্ছে, যেন শীতের রাতে
চাদর মুড়ে একা গুলুইয়ে বসে আছে
শেষ বেলার খেয়ার মাঝি।
আমি যাবো দক্ষিণে আর নদী বাঁক নিচ্ছে উত্তরে,
ভাটার সময়
কেন জানি এই নৌকার গতি বাড়ে,
সমুদ্রের দিকে যাবে।
এই অন্তর্জলি পালায়
হাল ধরে আছে, অদৃশ্য দুইখানি হাত।
বামে পেগাসাস ডানে হাইড্রা নক্ষত্রমন্ডল,
আমি ভুলে যাই,
তাই আগে চলে এই সময়ের কারাভান।
ধ্যান
তুমি ইউক্লিডীয় উপপাদ্য —
চোখ থেকে ভ্রুরুর গোল্ডেন রেসিও,
মনের ইমেজ থেকে ভেসে ওঠা
বিশ্ব নির্মানের সমস্ত আপেক্ষিক বিধান
তোমার বাঙ্ময় জগত কিছুই নেব না —
নেব মন,মৌনতায় ডুবে থাকা সমস্ত ধ্যান।
ঘোর
ছায়া বাড়ছে, নিবিড় হিজলের ডালে
কাঠঠোকরা দিনান্তের অপেক্ষায়,
জীবন ভেসে আছে মাঝ দরিয়ায়,
বলার মধ্যে কিছু থাকে না বলা,
পথের পেছনে পড়ে থাকে পথ
কিছু কিছু ঘোর লাগা দিন
সামনে পেছনে জীবন ঘিরে গায়েবি
আবর্তনে নীল রেখা এঁকে যায়।
চারদিকে অন্ধকার অন্ধকার শীর্ণ
সরল নদীর প্রার্থনায় নত হয়ে
আসা গ্রামের পাশে একা একা
মধ্যরাতের আকাশে জেগে ওঠা চাঁদ
সমস্ত আবর্তনকাল তুলে আনে
সময়ের বিমূর্ত মোহনায়।
ধুসরতার মধ্যে টুকরো টুকরো আলফা
আলোর চলাচল বিষন্নতার মেঘ
জমিয়ে তোলে কবিতার অজস্র ভ্যাকুয়াম,
আরো আরো লাখ বছরের আলোর
যাত্রায় -অন্ধকারে জেগে উঠছে
কোটি কোটি নক্ষত্রের উদ্যান।ওরা
মৃত নদীর ভেতর লুপ্ত বিবর্তনের ইতিহাস।
সব আলো নিভে যাওয়ার পর
আমি নাই কিছু নাই।
রাত্রি
মৃত্যুর দরোজাটা সবার খোলা
ছিটকানিটায় মাঝে মাঝে বাতাসের
টুংটাং, কার্ণিশে হাঁটছে পলাতক বিড়াল।
গায়েবি হাওয়ায় ডুবে ডুবে ঘুম,
পাঁজরের হাড়ের নিচে ধুপধুপ, দূরে
কোন ইঞ্জিনের অন্তিম বিমূর্ত ধ্বনি।
বাইরে ব্যাঙ ডাকছে,বর্ষা আসছে
রাত্রির অন্ধকারে নিমজ্জমান এই উৎসবে
কসমিক এভালেন্স থেকে ছুটে আসা
জটিল যৌগের পরকিয়া টান
তরঙ্গ আর সিম্ফনির মধ্যে পাড় হচ্ছে
তীরহীন মৌনতার নদী।
জীবনের পথ একটি অবস্থান বিন্দু,
পেছনে পথের চিহ্ন মুছে ফেলে
এই চলমান আমি, অগ্নিকুসুমিত সূর্যের
মতো অনন্ত রাত্রি ভেদ করে চলিতেছি,
কোন স্থানাংকের গাণিতিক বিধি
আমাকে পাবে না।
স্তব্ধতার মধ্যে সেইসব কলরব লুকায়িত
যা কেউ শুনতে পারে না।
সমস্ত শব্দের সিম্ফনি মুছে যাওয়ার পর
শোনা যায় পৃথিবীর চলার সুরধ্বনি,
কাছের আলো নিভে যাওয়ার পর আমি
নক্ষত্রের আলো দেখতে পাই।
ডাইমেনশন
স্থান বদলাইতেছে,সময় ও স্থানের
মধ্যবর্তী দূরত্ব বাড়তেছে।
দৃষ্টিসীমায় বাইরে জীবন এক অলীক ভ্যাসেল।
ছিদ্রপথে পানির মতো ঢুকছে মিথেন হাওয়া।
ধুসর দিনগুলো সময়ের অগণিত
ঢেউয়ে মিশে যায় আর
এই হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে,
উদভ্রান্ত আশা,জিঘাংসা।
আমি মাত্র গাঙপাখি,সভ্যতার এই
সময়ে হাঙ্গরের পিঠে বসে দেখি
শুশুকেরা উঠে গেছে ডাঙায়।
যে সব নক্ষত্রের আলো এখনো
পৃথিবীতে পৌঁছেনি, তারা জানবে না
কে ছিলাম কোথায় ছিলাম।
স্থান ও সময় বদলে যাচ্ছে, যদিও কেউ
টের পায় না,কেওড়ার ঝোঁপের ভেতর
ডুবে গেছে বহু চাঁদ, –
সব বস্তু শূন্য স্থান দখল করে,আমিও
মহাবিশ্বের কিছু জায়গা জুড়ে থাকি,
আমিও এক মহাশূন্যতা, স্তব্ধতায় ডুবে
থেকে দেখি সব ঘুরছে, মানুষেরা
স্থির,আর জীবন্ত সমাধি।
সমস্ত ফলই তার খোসায় আবৃত,
অন্তর্লীণ গতির মাঝে জীবন তেমন
চিরায়ত এক পূর্ণিমারাত।
ক্রিয়েশন
১.
তীরে আছড়ে পড়া মহাসমুদ্রের ছন্দময়
ধ্বনি তরঙ্গ তারই সমগ্র সত্তার
কোলাহল, আর বৃষ্টি পতনের শব্দ সে
তো মেঘ ও বায়ুর কোলাজ, আমি এই
মিলন উৎসবের ত্রিকাল দর্শক, সমস্ত
আলোর বর্ণালী উৎসে এবং অন্ধকারে;
ময়ূরের পাখার জ্যামিতিক বিস্তারের
মতো -গুহা মানবের ইতিহাস থেকে
আমি বেড়িয়ে এসেছি এই শঙ্কিত
উপত্যকায়।এখানে প্রাণহীন
জড়জগতের স্তব্ধতা, মৃত্যুময়তা ও
নিসর্গ থেকে বেড়িয়ে আসে কবিতা।
২.
দূর থেকে মর্মী সে,বলে —
তুমি নীরবতার অধিশ্বর।
আসলে তা নয়, আমি তার মর্মে ডুবে–
থাকা তারই মন, আমিই তুমি — অথবা আমিময়।
আমি তারই মন, তারই চোখ, তারই ইন্দ্রিয় সমুচ্চয়।
তারে তুমি ভাষায় পাবে না,
ভেতরে তাকাও বন্ধু
দ্যাখো তোমার কুসুমিত সমস্ত অঙ্গ ও
গ্রন্থিমূলে আমার লাখো- কোটি চুম্বন।
বর্ষা
বৃষ্টির দিনগুলো আমার নিজের
সম্পূর্ণ একার,
সান্ধ্য আবিলতা,পথের বৈরিতার মধ্যে
পরম বোঝাপাড়া।
প্রাণের সৃষ্টির মতো মৌন নিখিল নিস্তব্ধতায়
ডুবে যেতে যেতে, স্মৃতির বিবর থেকে
তুলে আনি মেঘলা দিন,
পুকুর, নদী, জলেডোবা কোলা, ঘাসের জমিনে
হাঁসের মতো ভেসে থাকি,হয়তো হবো
সূর্য থেকে বহুদূর অন্ধকারে জেগে
থাকা কোন ডার্ক-প্লানেট।
পৃথিবীর এই প্রান্ত ছুঁয়ে জলের ধারায়
গান্ধর্ব কুটুম হয়ে তার কিংবা তাহাদের
হৃদয়ে করিতেছি নিশিযাপন।
আমি বর্ষার রাত্রি হয়ে ডুবিতেছি,
এইখানে এখন রেইপ আর খুনের
জমাট রক্ত ধুইতেছে ক্লান্ত ধারাপাত।
দরবেশ
আইলের ধারে বসেছিল সে,
মুখমন্ডলে তার পর্বতের প্রাচীনতা
খোদাই করা শিলাস্তরের ভাঁজ
গোটা জীবন জমিন চাষ করে,
মাটির দিকে তার দৃষ্টি অবনত।
ঘাসের ওপর গামছা বিছায়ে এই
জমিনের ওপর সেজদা দেয়,
এবং মোনাজাতের সময় মাথা
আকাশের দিকে উঁচু করে।
দরবেশকে জিজ্ঞেস করলাম,
তার কাছে কী জ্ঞান আছে,
যা এই জমিনের মতো উদার
আর আকাশের মতো অসীম।
বললেন,
“মিনহা খালকনাকুম
ওয়াফীহা নুয়ীদুকুম
ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম
তারাতান উখরা।”
শব্দহীন যে গান
শব্দহীন যে গান তোমার মনে
সে গান তুমি কেবল নিজেই শুনতে পাবে।
বাইরের সব গানই সামান্য এবং উপচ্ছায়া।
এই মূহুর্তে যে যে নক্ষত্রের জন্ম অথবা
মৃত্যু হলো,তোমারই সংগীত হয়ে ভেসে বেড়ায়।
টাইমলেস ঘুম
সমস্ত কাঠামো বিমূর্ত হলো যে-দিন
দ্রুতগতি হরিণের পায়ে,
ছিটকে ওঠা বিষাদ বৃষ্টির ধুসর ছাট,
ছায়াপথে অপেক্ষায় থাকা আশ্বিনের
রাত্রি- যুগল নক্ষত্র, নাভিকেন্দ্র থেকে
নেমে আসা তোমার নির্জন দ্বীপে
জেগে থাকে নাশপাতির জটিল দানা-
জীবন তবু কাঁচের পাত্র
অঢেল রূপরাশি-সিলিকন দানা,
হাত থেকে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা নিয়ে
রাঙা আগুন-সন্ধ্যার সমুদ্রে ডুবন্ত সূর্য –
জড়িয়ে ধরে টাইমলেস অন্তহীন ঘুম।
সুগন্ধ আগর
গ্রীবার নিচে ঝুলে আছে নীল ন্যানো চিপস
করাতের নিচে শুয়ে আছি আগরের কাঠ
সামিল থেকে বের হলে আমি চৌকাঠ হবো
ঘরের খাট থেকে আকাশের খিলান হয়ে
ঘুমিয়ে কাটাবো একা আগামী অনন্ত রাত
আগরের ঘ্রাণ কারো চুল থেকে নখ হয়ে
গোপনে বাতাসে ছড়াবে, হৃদয় মরে গেছে
কেউ এমন আর পাবে না হৃদয় গভীরে
শাটলকক টিকেট, ককপিট থেকে দেখা যাবে
আকাশের গায়ে পৃথিবী একক অতি ক্ষুদ্র
কালো তিল,যুদ্ধবাজদের খপ্পরে কাহিল
আমি দিয়েছি আগরের লক্ষ লক্ষ বোতাম
তোমার আব্রু জুড়ে হয়ে আছে রক্ত গোলাপ
নিজের চুল্লিতে হও কবি নিজেই অঙ্গার।
বিমূর্ত মোহনায়
ছায়া বাড়ছে, নিবিড় হিজলের ডালে
কাঠঠোকরা দিনান্তের অপেক্ষায়,
জীবন ভেসে আছে মাঝ দরিয়ায়,
বলার মধ্যে কিছু থাকে না বলা,
পথের পেছনে পড়ে থাকে পথ
কিছু কিছু ঘোর লাগা দিন
সামনে পেছনে জীবন ঘিরে গায়েবি
আবর্তনে নীল রেখা এঁকে যায়।
চারদিকে অন্ধকার অন্ধকার শীর্ণ
সরল নদীর প্রার্থনায় নত হয়ে
আসা গ্রামের পাশে একা একা
মধ্যরাতের আকাশে জেগে ওঠা চাঁদ
সমস্ত আবর্তনকাল তুলে আনে
সময়ের বিমূর্ত মোহনায়।
ধুসরতার মধ্যে টুকরো টুকরো
আলফা আলোর চলাচল
বিষন্নতার মেঘ
জমিয়ে তোলে কবিতার অজস্র ভ্যাকুয়াম,
আরো আরো লাখ বছরের আলোর যাত্রায় –
অন্ধকারে জেগে উঠছে
কোটি কোটি নক্ষত্রের উদ্যান।ওরা
মৃত নদীর ভেতর লুপ্ত বিবর্তনের ইতিহাস।
সব আলো নিভে যাওয়ার পর
আমি নাই কিছু নাই।
লগ এরিয়া
১.
কয়েনটা ফ্লোরে পড়ে ঘুরছে
ধ্বনি আর ঘূর্ণনের প্রতিটি মোমেন্ট
একটি ঘটনা বিন্দু।
একটি স্তব্ধ পাতা থেকে ঝরে পড়া
জলকণায় এতেক প্রতিবিম্বিত।
২
স্বপ্নের মধ্যে উড়তে পারার ঘটনা
নিছক স্বপ্ন নয়, এটি সেই সম্ভাব্যতা
যা প্রাণের অবলোহিত আলোয় ঘুমিয়ে
আছে,সেখানে স্থান ও কাল একীভূত।
৩
চৌহদ্দি না জানা
কোন ঘটনা-বস্তুর
বিষয়ে যে ধারণ –
তার সত্য-মিথ্যা
সেই দর্শকের
অধিগত নয়।
আশা
ঘাস খেতে খেতে ঘোড়া
মাঝে মাঝে মুখ তুলছে
চাবুকের ছায়া দেখে
টানটান শিরা
প্রভুর দাসেরা লিখছে
কালের কবিতা!
এমন পাখিও থাকে
পাখা মেলে, ভুলেছে ওড়া।
আলোর ফরাসে
ঘুমিয়েছে কবি
সময়ের স্পন্দন থেকে
শতাব্দী শেষে হয়তো
বিদীর্ণ পাথরে দেখবো
আলোর নতুন বর্ণালী।
নিউরোসেল থেকে
হাওয়া এখন ঘুটঘুটে অন্ধকারে
তাদেরও ডাকছে, যারা এখনো মরেনি।
সেখানে জোনাকি মিটমিট করে জ্বলছে ;
পাতাগুলো দীর্ঘতর অভিযাত্রায় জমিনকে
আলিঙ্গন করছে।
অবিরাম গতির ভেতর জীবনের গান গেয়ে
জন্ম থেকে কবরের কিনারা দিয়া
শব্দহীন তরঙ্গের মাঝে ভাসতে ভাসতে
ওমেগা বিন্দু পাড় হয়ে গেল।
নির্ভার ঘাসের শরীর থেকে পর্বতের
সু-উচ্চ কিনারায়, সমুদ্রের তরঙ্গ থেকে
গাছের পাতার পাতায় নিমগ্ন আলাপের
স্বর কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড
জুড়ে তার সিম্ফনি রেখে যায়।
যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটা আবেগ, কনশাসনেস।
যার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি সেটা মৃত্যু ;
এই সব রূপান্তরের পরিশেষ আলো।
এখানে চাঁদ ঢেকে দিচ্ছে ভ্যাম্পায়ার,
রক্ত এখানে আগুন,
তার কোন ছায়া নাই,আর কোন ফুটেজেই
বাতাসের এই
অগ্নিকণাদের কোন ছবি নাই, মৃত অথবা
জীবিত কোন ফারাক না থাকা
এই হরর প্লানেট, মানুষের লেখা সব
ইতিহাস, সভ্যতার গালগল্প তুচ্ছতায় ছুঁড়ে
ফেলে উল্টো মাত্রায় ঘুরছে
অন্ধকার কসমিক টানেলে।
পৃথিবী ঘাসের ডগা থেকে গড়িয়ে পড়ো
একটা জলবিন্দু, আমি সেখানে
একটা নিউরো সেলের ভেতরে বসে
লিখছি এই কবিতা ,সবাই–সবকিছু ;
এমনি মানুষ নিরন্তর ছুটছে।
শৈশবে উঠোনে পাটি বিছিয়ে চাঁদের
আলোয় ঘুমিয়ে দেখা এমন অদ্ভুত স্বপ্ন
এখন মেঘের ফাঁকে ফাঁকে উড়ছে।
গাছ
গাছটা যেখানে দাঁড়ানো ছিল আপাতত
সেখানেই, হাঁটিতেছে শেকড়, পৃথিবী,
কন্টিনেন্টাল প্লেট।
হাঁটিতেছে লুনার, তারকারাজি
চলছে শিরা ও ধমনীর রক্তপ্রবাহ,
বাতাস,সমুদ্রের জলরাশি।
লোকারণ্য রাজপথ ফাঁকা,রাত্রি মানেই
স্তব্ধতা, শুনতে পাই নানা মাত্রার কসমিক
তরঙ্গের মূর্ছনা;
রাত্রি আমার নির্জনতার দ্বীপ,
শব্দদূষণহীন, শ্রবনইন্দ্রিয়ের এন্টেনায়
দূরের আলফা তরঙ্গের ধ্বনি
ম্রিয়মান অর্কেষ্ট্রা। আর সেই বিড়াল ছানা,
শীতের রাতে ড্রেনে আটকা পড়ে
থেমে থেমে ভেসে আসা করু৷ অার্তনাদ,
যখন তারে সেখান থেকে তুলে আনা
হলো, শীতে কাঁপছিলো শরীর, মর্মভেদী
সেই চোখে করুণ আর্তি মানুষ ও
প্রাণীরজগতের ছবি হয়ে
উঠলো,ছায়াপথগুলো ঘুরছিলো গ্রানাইট
কর্ণিয়ায়। এখানে জনবহুল এই শহরের
রাত্রিকালীন ফাঁকা সড়কে নিঃসঙ্গ
লাইটপোস্টে পতঙ্গ নির্বাণ প্রাপ্ত হইতেছে,
ত্রিমাত্রিক এই পৃষ্ঠতল থেকে – নৃশংসতার
লেলিহান শিখা উর্ধ্বমুখী –
আর সেই দেকানটাই এই নির্জনতার
খোলা রাখা আছে, শেষের কেনাকাটা
আর কোথাও নাই,
ক্রেতার অপেক্ষায় “শেষ বিদায় স্টোর “
কখনো ঝাপ বন্ধ করে না।
গাছগুলো হাঁটছে,তবে সবদিকে সমান বেগে।
প্রাচ্যের দর্শন অর্গানিক – অলিখিত
অপৌরাণিক, গুরুবাদী ও রুহানি।
গুণবাচক উচ্চারিত সব শব্দের বিপরীত
অর্থের উৎসগুলো লুপ্ত রেখে ভোরের
আলোয় জেগে উঠে দেখি
রাতের কোন এক সময় দানব চাকায় পিষ্ট
হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে মা বিড়াল,
ছানাটির চোখে তার জমাট রক্ত, হয়তোবা
কিছুই না,জীবন সামান্য গ্লাসিয়ার অথবা বরফের কুচি।
সূচনা বিন্দু থেকে
কাটা আঙুল ছুঁয়ে দেখো তোমার কিনা
যখন তা দ্বিখণ্ডিত হয়, তৎক্ষণাৎ তুমি
বুঝতেই পারবে না কী হারালো;
যাতে ভীত না হও, মস্তিষ্ক তোমার
আঙুল শহীদ হওয়ার খবর
গোপন করে যায়।
তোমার হৃদয় যখন ‘সিঙ্গুলারিটির’
মধ্যে পতিত হলো,
সমাধিস্থ চেতনার মধ্যে থেকে তোমার
প্রেম ইউনিভার্স হয়ে উঠলো,
আরো সাহস্রাব্দ পরে তুমি বুঝবে যে,
তোমার কোন টেরিটোরিয়াল বাউন্ডারি নাই,
ধ্যানস্ত হৃদয় যখন তার জন্য শহীদ হয়ে
গেল, তখন একটি মাত্র শব্দই কবিতা
হয়ে ওঠে, আর সময়ের আগে তুমি তার
সন্ধান পাবে না। আলোর অবশ্যই উৎস
থাকে, পাখির ঠোঁটে তৃর্ণখন্ড থেকে
আমি প্রথম তার বাসার খোঁজ পেয়েছি।
এনাটমি
বাতাসে মিশে থাকা জলকণা, আমি
মলিন সন্ধ্যায় শেষ আলোর রেখা।
মনের আয়নায় ভেসে ওঠা চাঁদ।
গাঙের খাড়িতে ডুবে থাকা কোরাল।
বাঁশ বনের রাত্রিকালীন জোনাকি,
গ্যালাক্সি প্রান্তের শেষ নবীন সূর্য।
আশা সিন্ধু তীরে আমি খেয়ার মাঝি
জঙলা ঘাসের ভেতর সারসের ডিম।
বহুদূর অন্ধকারে শতাব্দীর ওপাড়ে
মানুষেরা শুনিতেছে প্রাণের স্পন্দন।
উড়ন্ত পাথরের সিলিকন গুহায় লেখা
আছে তার মৃত্যুহীন সমস্ত ইতিহাস।
সূর্যের মৃত্যুর পরে
মৃত্যুর শামিয়ানার নিচে
গোটা জমিন,
পথে পথে কালো পতাকা,
ঘাতকের ফরমান;
সূর্যের মৃত্যুর
পরে ধূলিমেঘ ঢেলে দেয়
গাঢ় অন্ধকার।
আলোর অপেক্ষায় ঠোঁট
গুজে আছে সময়,
আবার ডানা মেলবে আকাশে,
আলোর পিপাসায় ধুকছে
বনতরু, হিমালয়ের ঠান্ডা
বাতাস গুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে
সাইবেরিয়ায়, মৃত্যুর গুমট
হাওয়ায় দুলছে পৃথিবী।
ধাবমান ফসিল প্লানেট,
নিঃশব্দের ভেতর আমরা
জ্যোৎস্নায় হাঁটছি এখন
নিরুদ্দেশের পথে।
যেন তুষার যুগের
আগে থেকে এইখানে
সংসার পেতে আছি কোন
গুহার অন্ধকারে।
ঘাটের ডিঙ্গি হাওয়ায়
ঢেউয়ের সাথে নাচে,
মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যায়
উল্কার ফায়ারবল,
কান খাড়া করে শুনছি,
ইনফারেড ধ্বনি-তরঙ্গ,
দম বন্ধ হয়ে আসা মৃত্যুর
অনেক শব্দের মধ্যে
আড়াল হয়ে আছে নিসর্গের
মৃয়মান শব্দ-রাশি,
ঘুঙ্গুরের ধ্বনিতে কাঁপছে
রাণীর নিতম্ব
সমস্ত চিৎকার ঢেকে গেছে
নাচের মুদ্রায়।
সবকিছু স্তব্ধতায় মিশে গেলে
অন্ধকারে, নীল আগুনের
ভেতর নিজেকে হারিয়ে
খুঁজিতেছি অন্ধকারে।
তাহাজ্জুদ
অন্ধকার ছুঁয়ে দেখি ঠান্ডা হাওয়ার সেখানে ঝরে পড়ছে কামিনী,
শীতের রাতে খেয়াঘাটে বসে পাটনীর জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার মতো
ডার্ক হরাইজোনে ডুকে পড়ে, উড়ছি সাদা ডানাওয়ালা পাখি।
দিগন্ত ফর্সা হয়ে উঁকি দিচ্ছে আলোর প্রান্ত রেখা, পৃথিবী
ঘুমের মধ্যে এই ইউনিভার্সের সচল একটা ডাকবাক্স,
তাহাজ্জুদ শেষ করে পলিম্যাথ ঢুকে পড়ছেন
একটা টাইমমেশিনে।
রাজপথে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, গলিতে সফেদ শিকারী,
টকটক আওয়াজ নভেম্বরের হালকা শীতের রাতে
মনে হতে পারে নাৎসি বাহিনী ঢুকে পড়েছে ঢাকায়।
কারো বাসায় কড়া নাড়ছে রাজ কোতোয়াল।
কুকুরের ঘেউ ঘেউ, অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে
দূর থেকে গোমরানা কান্নার আওয়াজ আসছে।
….
গোল্লাছুট
যা হারিয়েছে এবং যা হারাবে নিশ্চিত
তার সারাৎসার রয়ে যাবে
হৃদয় নীলিমা জুড়ে।
বস্তু জ্ঞানে অন্ধ কিভাবে ডুবে আছে
লোনাজলে, মাছেরা জেনেছে যা-
আমি বক্ষদীর্ণ করে দেখি
ছুটছে সব ঘূর্ণি স্রোতে।
লোহিত প্রবাহে তুমি শ্বেতকণিকা
পাথরে পাথর ঘসে জন্মেছে
যে আগুন, সমুদ্রে তা নেভে না।
ডুমুরের ছায়ায় তিনটি তারা একজোটে
খেলছে নিরন্তর গোল্লাছুট।
বাবলাগাছ
একটা গাছ আরেকটা গাছকে টপকে যেতে চায়
এইতো গাছের রাজনীতি, জীবনের আগে ফুরিয়ে
যাওয়া একটা দৌড়ে, হীম রাত্রির স্বপ্নের মধ্যে
বরফকুচি, গলনাঙ্কের কাছাকাছি ঘুম ভেঙে যায়।
না এটা মৃত্যু কিন্তু মনে হবে ভেসে উঠছে মহাকাল।
একটা নদী আরেকটা অতিক্রম করতে চায়, এটা
তার জীবন, নাকি নিয়তি এই মিমাংসার আগে
সমুদ্র এসে তাকে সীমানা মুছে দিয়ে নিয়ে যায়।
একটা মানুষ দৌড়াচ্ছে সারাজীবন, বিরতিহীন
নিজের ছায়ার মধ্যে একটা লোভী হায়না তার
পিছুপিছু হা্ঁটছে, ছায়া দীর্ঘ হতে হতে পথ প্রান্তরে
মিশে গিয়ে সন্ধ্যায় একটা ব্লাকহোলে ঢুকে পড়ে।
না বৃক্ষ, না নদী, পৃথিবীতে শুধু মানুষের কবর-
যেখানে স্বেচ্ছায় ঘাসেরা ঢেকে রাখে যাবতীয়
অন্ধকার, উপরে ঝুলে আছে হিজলের গুচ্ছ ফুল
জোনাকিরা নিঃশব্দে আলো জ্বেলে রাখে, দূরে
নিভুনিভু ছায়াপথ, শিথানে একটা বাবলাগাছ।
অন্ধকার বৃক্ষ
‘আমি একটি বন, এবং অন্ধকার বৃক্ষের একটি রাত্রি:
কিন্তু যে আমার অন্ধকারকে ভয় পায় না,
সে আমার সাইপ্রেসের নীচে
গোলাপে পূর্ণ উজ্জ্বল স্তবক পাবে।’
নিটশের জবানে এইভাবে জরাথুস্ত্র
বলেছিলেন।
দুর্গম ও জনবিরল বিচ্ছিন্নতার মধ্যে
আমি যে শূন্যতার অঙ্কুরোদগম দেখছি
তা বর্তমান ও ভবিষ্যতের দূর প্রান্তে
মনে হবে ভাসমান লাইট হাউজ।
গতির তীব্রতায় নিকটবর্তী সব কিছু
ভেঙে পড়ে, মাত্রা বদলে যাওয়ার নিয়মে।
সেই আগুন- যার বর্ণালী নীলাভ, ঘোর
কালো,
ধোঁয়া ও ভষ্ম ছাড়া কেবল ছড়ায় মৃত্যুহীন আলো।
আর এই স্ট্রিং রজ্জু, অনমনীয় তেঁতুলের
ডালে ঝুলে আছে বিপন্ন পৃথিবী।
আমি একটি বন এবং অন্ধকার বৃক্ষের একটি রাত্রি।
হানি বুজার্ড
পৃথিবীর এক ঋতু, মৃত্যুময়তার দিকে অবিচল;
পথ হারায়ে দিক খুঁজতে সূর্যের পেছনে
ছুটছে, মধু মাতাল বাজপাখি।
ভাষা যে ম্যাজিক কিছু প্রকাশ করে
কিছু অবশ্যই আড়াল করবে,
দূর-যাত্রায় এই নেভিগেশন সিগনাল
জানিয়ে দেয় আমি কোথায় আছি।
আমরা তার গতি ও শব্দের কম্পাংক
বিষয়ে জানি না, ঠিক এই মুহূর্তে কোথাও
বৃষ্টি, আবার কোথায় খরায় নাকাল হলো।
স্মৃতি পেছনে টানে, অপেক্ষমান অনিশ্চয়তা-
কবির ঘুম আর জাগরণ সমান্তরাল যাত্রা
আমি ওই হানি বুজার্ড, দ্রাঘিমা রেখায় এক
উড়ালে ছুটছি গোলার্ধ থেকে গোলার্ধে।
পলিম্যাথ
অন্ধকার ছুঁয়ে দেখি ঠান্ডা হাওয়ার সেখানে ঝরে পড়ছে কামিনী,
শীতের রাতে খেয়াঘাটে বসে পাটনীর জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার মতো
ডার্ক হরাইজোনে ডুকে পড়ে, উড়ছি সাদা ডানাওয়ালা পাখি।
দিগন্ত ফর্সা হয়ে উঁকি দিচ্ছে আলোর প্রান্ত রেখা, পৃথিবী
ঘুমের মধ্যে এই ইউনিভার্সের সচল একটা ডাকবাক্স,
তাহাজ্জুদ শেষ করে পলিম্যাথ ঢুকে পড়ছেন
একটা টাইমমেশিনে।
মুগ্ধ স্বর অভিনন্দন 💗❤️💝
বাতেন ভাই ভালো লিখেছেন।
ভালো লাগলো।